‘সারোগেসি’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই৷ কিন্তু এমন জটিল বিষয়কে মঞ্চে উপস্থাপন করা সাহসের ব্যাপার বৈকি! আর সেই সাহসটি দেখিয়েছেন জার্মান পরিচালক সোফিয়া স্টেপ্ফ৷ তাঁর ‘গ্লোবাল বেলি’ আপনাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবেই৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে থাকতে থিয়েটারে নাটক দেখা ছিল একটা নেশা৷ সেই নেশা এক পর্যায়ে আসক্তিতে পরিণত হয়েছিল৷ বাংলাদেশে যাঁরা ঢাকা থিয়েটার, আরণ্যক, প্রাচ্য নাট, নাগরিক – এ সব নাট্যদলের নাটক দেখেছেন, তাঁরা জানেন, বড় একটা বিষয়কে অল্প সময়ের মধ্যে মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কী দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তোলেন৷ টিভির চেয়ে মঞ্চ আমার কাছে সবসময়ই আকর্ষণীয়, কারণ, এক্ষেত্রে দর্শক আর অভিনেতার মধ্যে যোগাযোগটা হয় সরাসরি৷
আর এ কারণেই ‘গ্লোবাল বেলি’ নাটকটি দেখার আমন্ত্রণ পেয়ে তা লুফে নিয়েছিলাম৷ একে তো নাটকটি জার্মান এবং ইংরেজি ভাষায়, তার ওপর নাটকটির অন্যতম একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন আমাদের খুব কাছের একজন মানুষ৷ নাটকটি সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা আভাস পেয়েছিলাম তাঁর কাছ থেকেই৷ গবেষণার পুরো ব্যাপারটি জানা ছিল৷ কিন্তু যা দেখলাম, তার সঙ্গে আগের ভাবনাটা ঠিক মেলানো গেল না৷
না, এটা ঠিক নেতিবাচক অর্থে বলছি না৷ পুরোটা বললে হয়ত বুঝতে পারবেন৷ এবারের নাটকটার মঞ্চায়ন হয়েছিল মধ্য জার্মানির শহর কাসেলে৷ নাটকটির ভিন্নতার কারণে ৩০ জনের বেশি দর্শককের স্থান হয়নি সেখানে৷ আর সেই ৩০ জনের মধ্যে আমি আর আমার দুই বান্ধবী ভাগ্যবান৷ নির্দিষ্ট সময়ে গেট খুলে ভেতরে ঢুকলাম৷ ভেতরে ঢুকতেই বিস্ময় – কোথায় মঞ্চ, কোথায় বা আসন! চারপাশে চারটি বড় বড় ‘স্ক্রিন’ লাগানো রয়েছে কাঠের ফ্রেমে৷ ফাঁকে ফাঁকে ছয় জন করে বসার জায়গা৷ মাঝে একটি ল্যাপটপ, একটি টেবিল৷ ব্যাস!
নাটকের শুরুটা হয় কথা ও গানের সংমিশ্রণে৷ যেখানে ‘‘আমার ডিম্বাণু নেই, আমার শুক্রাণু নেই, আমার ‘সিস্ট’ হয়েছে, আমি অনেকবার অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে গেছি, আমি সমকামী’’ – এমন নানা ধরনের মানুষের কথা বলা হতে থাকে৷ বলা হয় যাঁরা সন্তান চান, কিন্তু দত্তক, আইভিএফ বা অন্য কোনো উপায়ে সন্তান নিতে পারছেন না, তাঁদের কথা৷ প্রশ্ন রাখা হয়, তারা কি তবে গর্ভ ভাড়া করতে পারেন? এরপর সারোগেসি কী, কোথায় বেশি সারোগেসি হয়, কত অর্থ লাগে, এর প্রক্রিয়াটিই বা কী – গোটা ব্যাপারটা গান এবং কথার মাধ্যমে জানানো হয়৷
নকল পেটের রমরমা
সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার বিষয় আজ আর নতুন নয়৷ কিন্তু লোকলজ্জা ঢাকতে মাতৃত্বের জন্য মহিলাদের বেছে নিতে হচ্ছে নকল পেট৷ সারোগেসি ও সিলিকন বেলি একই সঙ্গে দিয়েছে মাতৃত্বের স্বাদ এবং সমাজের সংস্কারজাত কটাক্ষ থেকে মুক্তি৷
ছবি: DW/P. Samanta
মা হওয়া মুখের কথা?
মাতৃত্বের সংজ্ঞা পালটেছে৷ ১০ মাস ১০ দিনের গর্ভধারণ নয়, বরং সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার দ্বারা সহজেই মাতৃত্বের আস্বাদ নেওয়া যায় আজকাল৷ তবে রক্ষণশীল সমাজ ও পরিবারের কাছে সেই মাতৃত্বের স্বীকৃতি জোটাতে ভরসা এখন সিলিকন বেলি বা নকল পেট৷
ছবি: DW/P. Samanta
পেট বাণিজ্যে লক্ষ্মী
লিলুয়ার প্রস্থেটিস্ট সুমিত্রা আগরওয়াল দীর্ঘদিন নকল পেট নিয়ে কাজ করছেন৷ পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকেও তাঁর কাছে মানুষ আসেন সিলিকন বেলির সন্ধানে৷ এগুলি শরীরে লাগানোর পর নকল পেট বলে বোঝা মুশকিল হয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
নকল পেট সঙ্গী যখন
পরিবারের কাছে সারোগেসি গোপন করতে সঙ্গী হয় নকল পেট৷ আবার মহিলারা সারোগেট মায়েদের সঙ্গে একই হাসপাতালে পাশাপাশি ভর্তি হন৷ গর্ভধারণের ভান করতে অনেকে নিজের পেট কাটিয়ে সেলাই করিয়ে নেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
কোমরের মাপে
মহিলাদের কোমরের সাইজ অনুযায়ী নকল পেট তৈরি করেন সুমিত্রা৷ অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে পেটের সঙ্গে কোমরও চওড়া দেখায়৷ সেভাবেই তৈরি করা হয় সিলিকন বেলি৷
ছবি: DW/P. Samanta
নকল পেটে মাতৃত্বের অনুভূতি
তিন মাসের গর্ভাবস্থার একটা নকল পেটের দাম কমবেশি ১২ হাজার টাকা৷ গর্ভাবস্থার মেয়াদ বাড়লে সিলিকন বেলির ওজন এবং দামও বেশি৷ সমাজের কটাক্ষ থেকে বাঁচতে মানুষ দাম নিয়ে ভাবেন না৷
ছবি: DW/P. Samanta
ছদ্মবেশে পেট
এতদিন সিনেমার পর্দাতেই সিলিকন বেলির ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল৷ কিন্তু এখন তা মধ্যবিত্তদেরও ঘরে এসে পড়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টাই গোপন রাখা হয়৷ ছবির মতোই একজন মহিলা নিজেকে নকল পেটে ঢেকে নিতে পারেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
স্বীকৃতির শর্টকাট
মা হওয়ার জন্য মহিলাদের বহিরঙ্গে যে পরিবর্তন ঘটে, সেটাকেই সমাজ মান্যতা দেয়৷ ফলে সারোগেসিতে স্বীকৃতি না পাওয়ার ভয়ে সবাই নকল পেট ব্যবহার করতে চায়৷ পোশাকের উপর নকল পেট লাগিয়ে এক মহিলা৷
ছবি: DW/P. Samanta
পোশাকের নীচে
বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারবেন না যে, পোশাকের নীচে কী আছে৷ অর্থাৎ সমাজ জানবে, এই মহিলাই গর্ভধারিণী৷
ছবি: DW/P. Samanta
নকল পেটেও স্বাচ্ছন্দ্য
অনেক কর্মরতা মহিলা প্রেগন্যান্সির জন্য কাজ ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকতে রাজি নন৷ তাঁদের পক্ষে সারোগেসি ও সিলিকন বেলি খুবই লাভজনক৷ সিলিকন বেলি ব্যবহার করে বাসে-ট্রেনে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করা যায়৷ যেটা সত্যিকার গর্ভাবস্থায় মারাত্মক হতে পারে!
ছবি: DW/P. Samanta
বৈধ না অবৈধ?
সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার বিষয়টি সমাজে এখনও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি৷ তাই নকল পেটের সাহায্যে সারোগেসি গোপনও রাখা হয়, আবার সমাজে মাতৃত্বের স্বীকৃতিও জোটে৷ তাই যতদিন সমাজ সারোগেসিকে বৈধতা না দেবে, ততদিন রমরমিয়ে চলবে সিলিকন পেট বাণিজ্য৷
ছবি: DW/P. Samanta
মা হওয়ার তিনটি ধাপ
গর্ভবতী মহিলাদের উদরস্ফীতিকে মাথায় রেখে তিন রকমের নকল পেট বানানো হয়েছে৷ এই ৩-৬-৯ মাসের নকল পেট লাগিয়ে মহিলারা পরিবার ও সমাজের কাছে গর্ভাবস্থার পরিবর্তন দেখান৷ সুমিত্রা জানান, পেট পরিবর্তনের জন্য অনেকেই কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও চলে যান৷ যাতে এই হঠাৎ পরিবর্তন সহজে ধরা না পড়ে৷
ছবি: DW/P. Samanta
নকল পেটের সন্ধানে
আধুনিক সমাজের সর্বস্তরের মহিলার ক্ষেত্রে সিলিকন পেট ভীষণই জরুরি হয়ে পড়েছে৷ তাই নকল পেটের সন্ধানে বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের অপেক্ষা করতে দেখা যায় ডাক্তার সুমিত্রার ক্লিনিকে৷ এ সব ক্ষেত্রে মহিলাদের পাশে থাকেন তাঁদের স্বামীরা৷
ছবি: DW/P. Samanta
12 ছবি1 | 12
পুরো নাটকে চারটি মুখ্য চরিত্র – ভারতীয় এক ডাক্তার, মার্কিন এক সারোগেট মা, ইউক্রেনের জার্মান দূতাবাসে কর্মরত এক কর্মী এবং জার্মান এক সমকামী৷ এছাড়া রয়েছে একটি ভিডিও ইন্সটলেশন, যাতে ক্রিস্টাল ট্রাভিস নামের এক আন্তর্জাতিক দালালের গল্প শুনতে পারবেন আপনি৷ এর বাইরেও কিন্তু আরো অনেক চরিত্র আছে৷ আর সেইসব চরিত্রে অভিনয় করতে হয় দর্শককে! মুখ্য চারটি চরিত্র একেকবারে সেই ছয় জন ছয় জন করে বসে থাকা দর্শকদের দল নিয়ে নিজ নিজ স্ক্রিনের পিছনে চলে যান৷ সেখানে দর্শকদের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র দেয়া হয়৷ কেউ সারোগেট মা, কেউ সন্তান চান এমন দম্পতি, কেউ বা পরিবারের সদস্য তো কেউ৷ ইউক্রেনের জার্মান রাষ্ট্রদূতের সেই কর্মী যেমন দু' জন দর্শককে সারোগেট মা এবং বাকি চারজনকে জার্মানি থেকে যাওয়া দুই দম্পতি হিসেবে চিহ্নিত করেন৷ ধরে নেওয়া হয়, তাঁরা জার্মানিতে সারোগেসি অবৈধ হওয়ার কারণে ইউক্রেনে গেছেন৷ এভাবে একটি ‘সিচুয়েশন' বা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ইউক্রেনে সারোগেসির চিত্রটা তুলে ধরেন অভিনেতা৷
৯ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে আবার পরের অভিনেতার কাছে যেতে হয় দর্শকদের৷ ধরুন, আপনি যদি ইউক্রেনের জার্মান দূতাবাসের কর্মী দিয়ে শুরু করেন, তাহলে প্রথমে ভিডিও সাক্ষাৎকার, তারপর এক এক করে জার্মান সমকামীর ভূমিকায় যিনি অভিনয় করছেন, তাঁর বাড়ি যেতে হবে৷ তারপর যেতে হবে সোজা ভারতের আনন্দ শহরের এক চিকিৎসকের কাছে৷ এরপর আপনি যাবেন একজন মার্কিন সারোগেট মায়ের কাছে, যিনি দর্শকদের মধ্যে থেকে বেছে নেবেন তাঁর স্বামী-সন্তান, এমনকি জার্মানি থেকে আসা এক সন্তানহীন দম্পতিকেও৷ এভাবে চার অভিনেতার চার দেওয়ালের পিছনে আপনিও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে সারোগেসি ব্যাপারটার সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাবেন৷ এক-একটা পরিস্থিতি আপনাকে এক-একটি দেশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে৷
ভারতে সারোগেসির সেকাল-একাল
ভারতে সারোগেসি বা গর্ভ ভাড়া সহজলভ্য ও খরচ কম হওয়ায় বাণিজ্যের বাজার দাঁড়িয়েছে ১৫০০ কোটি টাকার মতো৷ তবে গত বছর এই পদ্ধতিকে প্রায় নিষিদ্ধ করার আইন হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে ভারতের কয়েকটি ক্লিনিকের কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
সারোগেসি আসলে কী?
সারোগেসি হলো সন্তান জন্মদানের জন্য কোনো নারীর গর্ভ ভাড়া নেওয়া৷ এই প্রক্রিয়ায় কোনো সন্তানহীন দম্পতি অথবা কোনো একক মা বা বাবা সন্তানলাভের জন্য কোনো নারীর গর্ভ ভাড়া নিতে পারেন৷ বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে ‘সারোগেট মা’ বা যিনি সেই সন্তান ধারণ করছেন, এতে তাঁর সম্মতি থাকতে হবে৷ সন্তানটি প্রসবের পর অবশ্য সারোগেট মা সদ্যজাত সন্তানকে ঐ দম্পতিকে দিতে বাধ্য থাকবেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
কারা এমন সন্তান চান?
বিদেশি সন্তানহীন দম্পতি, প্রবাসী ভারতীয় দম্পতি, একক বাবা-মা, সমকামী – এমন অনেকেই সারোগেসির জন্য ভারতকে বেছে নেন৷ এমন ভারতীয় দম্পতিরা, যাঁদের ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ-এর মাধ্যমে, অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে সন্তানধারণ করা সম্ভব নয়, তাঁরাও সারোগেসির দ্বারস্থ হন৷ বর্তমানে ভারতে এ ধরনের ক্লিনিক বেশি আছে দিল্লি ও মুম্বইয়ের মতো বড় বড় শহরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
ভারতে সারোগেসির সূত্রপাত
ডা. নয়না প্যাটেল ভারতে প্রথম সারোগেসি বাণিজ্যিকভাবে চালু করেন৷ আহমেদাবাদ থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে আনন্দ শহরে ২০০৫ সালে বাণিজ্যেকভাবে এই কার্যক্রম শুরু করেন তিনি৷ সেসময় থেকেই নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে ডা. নয়না প্যাটেল এক বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় নাম হয়ে ওঠে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
আকাঙ্খা ক্লিনিক
২০১৫ সালে ডা. প্যাটেল একটি ক্লিনিক চালু করেন, ঐ আনন্দেই, যার নাম আকাঙ্খা৷ সারোগেসি, আইভিএফ’সহ অন্যান্য নানা ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে৷ তবে সারোগেসির জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু সুবিধা৷ যেমন শুক্রাণু ব্যাংক৷ এমনকি সন্তান প্রসবের পর সদ্যজাতকে যথেষ্ট পরিমাণ দুধের জোগান দিতে রয়েছে ‘মিল্ক ব্যাংক’-ও৷
ছবি: DW/D. Guha
সারোগেট মায়েরা
আকাঙ্খা ক্লিনিকে সারোগেট মায়েদের গর্ভধারণ থেকে শুরু থেকে প্রসব পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হয়৷ ক্লিনিকের একেবারে নীচ তলায় তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে৷ বর্তমানে সেখানে অন্ততপক্ষে ৭০ জন সারোগেট মা রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৬২ জন সন্তানসম্ভবা৷
ছবি: DW/D. Guha
আকাঙ্খা ক্লিনিকে খরচ
সারোগেসির জন্য এখানে খরচ পড়ে সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৭ লাখ রুপি৷ তবে অর্থটা নির্ভর করে সারেগেট মা এবং ‘ইন্টেনডেড পেরেন্ট’ বা আইপি, অর্থাৎ সেই নিঃসন্তান দম্পতির শারীরিক অবস্থার ওপর৷ এক্ষেত্রে শুত্রাণু বা ডিম্বাণুর প্রয়োজন হলে অর্থের পরিমাণটি বাড়তে পারে৷ এমনকি প্রথমবারে গর্ভধারণ সম্ভব না হলে, এক-একটি প্রতিস্থাপনে বেড়ে যেতে পারে খরচ৷
ছবি: Sam Panthakya/AFP/Getty Images
বিভিন্ন সময় খবরে এসেছে যে ক্লিনিক
আকাঙ্খা ক্লিনিক যেহেতু শুরু থেকেই সারোগেসি নিয়ে কাজ করছে, তাই বহুবার পত্রিকায় খবর হয়েছে এই ক্লিনিক নিয়ে৷ এখানে সারোগেট মায়েরা পান সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ লাখ রুপি৷ এজেন্ট, অর্থাৎ যাঁরা এই মায়েদের জোগাড় করে দেন, তাঁরা পান ২৫ হাজার রুপি৷
ছবি: DW/D. Guha
উরুজেন ক্লিনিক, দিল্লি
দিল্লির চিকিৎসক দম্পতি অশোক ও সুরভী গুপ্তা এই সারোগেসি ক্লিনিকটি চালু করেন৷ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত৷ এই ক্লিনিকে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান পেতে আপনাকে খরচ করতে হবে ১২ থেকে সাড়ে ১২ লাখ রুপি৷ আগে এখানে নিঃসন্তান বিদেশি দম্পতিরাই বেশি আসতেন, তবে বর্তমান দেশি দম্পতিদের অনেকেই আসেন৷
ছবি: DW/D. Guha
অশোক গুপ্তা
উরুজেন এর চিকিৎসক অশোক গুপ্তা৷
ছবি: DW/D. Guha
সারোগেট মা
উরুজেন ক্লিনিকের দু’জন সারোগেট মা৷ এই ক্লিনিকে সেই সব মায়েদের নির্বাচন করা হয়, যাঁদের নিজেদের আর সন্তানের প্রয়োজন নেই এবং যাঁদের আর বাচ্চা হবে না৷ এঁরা সন্তান গর্ভে আসা থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতেই থাকেন৷ তাই এঁরা পুরো সময়টা উপভোগ করেন এবং হাসিখুশি থাকেন৷ এই মায়েরা পান সাড়ে তিন লাখ রুপি৷
ছবি: DW/D. Guha
জেনোম, কলকাতা
কলকাতায় সারোগেসির জন্য এই ক্লিনিকটি সুনাম রয়েছে৷ এই ক্লিনিকে সন্তান পেতে আপনাকে খরচ করতে হবে ১০ লঅখ রুপির মতো৷ আর সারোগেট মায়েরা পান ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ রুপি৷
ছবি: DW/D. Guha
ঐন্দ্রী স্যান্নাল
এই ক্লিনিকটির চিকিৎসক ঐন্দ্রী স্যান্নাল৷
ছবি: DW/D. Guha
কাউন্সেলর
দুই সারোগেট মায়ের মাঝে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি জেনোম ক্লিনিকের সারোগেট মায়েদের কাউন্সেলিং করে থাকেন৷ তবে এই দুই সারোগেট মা এখন এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন৷ সারোগেসির ক্ষেত্রে একজন মা নিজের সন্তানসহ কেবল পাঁচবার গর্ভধারণ করতে পারবেন৷ অর্থাৎ যে মায়ের নিজের দু’টি সন্তান রয়েছে, তিনি আর তিনবার সারোগেট মা হতে পারবেন৷ তবে অস্ত্রপচার বা সিজারিয়ানের মাধ্যমে প্রসব হতে পারবে মাত্র দু’বার৷
ছবি: DW/D. Guha
সারোগেট মায়েদের থাকার ব্যবস্থা
কলকাতায় সারোগেট মায়েদের তিনরকম থাকার ব্যবস্থা রয়েছে – হোম, নিজের বাসা, এমনকি যাঁরা বাচ্চা নেবে তাঁদের বাসাতেও চাইলে থাকতে পারেন সন্তানসম্ভবা সারোগেট মা৷
ছবি: DW/D. Guha
কলকাতার হোম
এই হোমের ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সেখানে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের থাকার পরিবেশ ততটা ভালো নয়৷ তবে সেখানে তাঁকে তাঁর পরিবারের মানুষ দেখতে যেতে পারেন৷
ছবি: DW/D. Guha
সারোগেসি বন্ধে আইন
ভারতে সারোগেসি নিয়ে যে নতুন আইনটি উত্থাপিত হয়েছে, তা অনুযায়ী বিদেশি তো বটেই, দেশীয় নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্যও বাণিজ্যেক সারোগেসি বন্ধ হতে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ আইনটি পাশ হলে, অর্থের বিনিময়ে গর্ভভাড়া নেওয়া আর যাবে না ভারতে৷ কেবল নিঃসন্তান বিবাহিত দম্পতি – যাঁরা মেডিক্যাল কারণে বাবা-মা হতে পারছেন না – একমাত্র তাঁরাই সন্তানের জন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের সাহায্য নিতে পারবেন৷
ছবি: DW/D. Guha
16 ছবি1 | 16
সব শুনে যখন আপনার মনে হচ্ছে সারোগেসির মাধ্যমে একজন নিঃসন্তান মা বা বাবা সন্তান লাভ করতেই পারেন, ঠিক তখনই আপনার সামনে হাজির হবেন তিন জন নারীবাদী৷ তাঁদের মধ্যে তর্ক হবে গান ও কথার মাধ্যমে৷ প্রশ্ন উঠবে, দরিদ্র নারীরাই কেন কেবল সারোগেট মা হন, ধনীরা কেন নন? যাঁরা নিজেদের নারীবাদী বলছেন, যাঁরা বলছেন চাইলেই আমি আমার শরীরকে যেমন খুশি ব্যবহার করতে পারি, তাঁদের কাছে প্রশ্ন তোলা হবে – তাহলে কেন তুমি অন্য কারো সন্তান ধারণ করছো না? দর্শকের মনেও তখন উঠতে থাকে নানা প্রশ্ন: তাহলে কি সারোগেসি পূঁজিবাদকেই উসকে দেয়? দরিদ্র মায়ের গর্ভকে ব্যবহার করা হয় শুধু অর্থের বিনিময়ে?
পুরো নাটকের মধ্যে সেই চার অভিনেতা বা সেই চরিত্রগুলোর সঙ্গে যখন দর্শকের কথোপকথন হয়, তখন আপনি চাইলে তাঁদের প্রশ্নও করতে পারেন৷ যেমন যিনি যুক্তরাষ্ট্রবাসী সারোগেট মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তাঁর কাছে একজন প্রশ্ন করলেন, ‘‘শিশুটি যদি বিকলাঙ্গ বা জিনগত কোনো সমস্যায় ভুগতো, তাহলে কি আপনি সেই সন্তান গ্রহণ করতেন?'' সত্যিই তো, আপনার মনেও কি এমন প্রশ্ন আসে না! কিন্তু অন্য কোনো মঞ্চ নাটকে সেই প্রশ্ন করার সুযোগ কি পান আপনি? এখানেই নাটকটির ভিন্নতা৷
পুরো নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সন্তানহীনদের সন্তান পাওয়ার আকুতি বা আকাঙ্খা৷ কিন্তু পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে এ সম্পর্কে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলোর কথাও৷ তাই জার্মানি বা অন্য দেশে সারোগেসি বৈধ করা উচিত কিনা – সে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছে দর্শকের কাছেই৷ দর্শকই ভাবুক, যোগ-বিয়োগ করে হিসেব মেলাক কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত৷
লেয়া হুইচার, সোনাটা (দেবারতি গুহ), আনে হফমান এবং মাটিয়াস রেঙার – প্রত্যেকেই নিজস্ব চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন৷ তবে দু'জনের কথা না বললেই নয়৷ তাঁরা হলেন লেয়া এবং সোনাটা৷ এই দুই অভিনেত্রী একইসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলেছেন, গান গেয়েছেন, চোখের পলকে বদল ঘটেছে তাঁদের চরিত্রের৷ অথচ দর্শকের কাছে মনে হয়নি যে সেটা আরোপিত৷ দর্শকের সাথে চোখে চোখ রেখে তাঁরা যে অনবদ্য যোগসূত্র রচনা করেছেন, তা আসলেই দুর্দান্ত৷
গানগুলোর কথাও আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে৷ পুরো নাটকটির পেছনে যে বিস্তর গবেষণা রয়েছে, তা আপনি নাটকটি দেখলেই উপলব্ধি করতে পারবেন৷ এ কথা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়৷ সবশেষে এটাই বলতে চাই, সমাজের এমন নানা বিষয় নিয়ে এ ধরনের নাটক হোক বাংলাদেশেও৷ এটা আসলে অনেকটা থেরাপির মতো, যার মধ্যে দিয়ে আপনার মনের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজেই পেয়ে যাবেন৷ আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবেই এ নাটক৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...