বাংলাদেশের সঙ্গে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের সম্পর্ক কী? পশ্চিমা মিডিয়া বাংলাদেশের গার্মেন্টসকর্মীদের কাহিনি কতোটা শোনাতে পেরেছে, বোঝাতে পেরেছে? এসবেরই উত্তর খুঁজবে জিএমএফ৷
বিজ্ঞাপন
সুদূর দক্ষিণ এশিয়ায় কী ঘটছে, তার খবর ইউরোপের মানুষকে দেওয়াটাই কি একটা সূচনা নয়? সেখান থেকেই হয়ত অন্য ধরনের একটা চিন্তাধারা, এমনকি পরিবর্তনের সূচনা ঘটতে পারে৷
রাইন নদের ধারে ‘‘জলের কল''
আগামী ১৭ থেকে ১৯ জুন সেখানেই বসবে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম বা জিএমএফ৷ আমরা – অর্থাৎ বিশ্বের মানুষ – আগামীতে কিভাবে বাঁচবো, কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য করব, তাই নিয়েই হবে আলোচনা৷ ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক ও জিএমএফ-এর উদ্যোক্তা এরিক বেটারমান যেমন বলেছেন: ‘‘জিএমএফ হলো বিভিন্ন পেশার মানুষদের একসঙ্গে আনার একটা প্রচেষ্টা৷ এমন সব মানুষ, যারা সাধারণত পরস্পরের সঙ্গে এক টেবিলে বসেন না, যেমন মিডিয়া, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং উন্নয়নের কাজে সংশ্লিষ্ট মানুষ৷''
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের নির্ঘণ্ট দেখলেই তা বোঝা যাবে৷ যতটা কম বাধ্যবাধকতা থাকে, ততই ভালো, বলেন বেটারমান৷ ‘‘উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা আলোচনার বিষয়সূচি বেঁধে দিইনি৷ বরং বহু ওয়ার্কিং গ্রুপ রেখেছি, যাতে সব অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পান৷ সেটাই হল জিএমএফ-এর বিশেষত্ব৷''
৫০টির বেশি আয়োজন-অনুষ্ঠান, তার মধ্যে ৪০টি ওয়ার্কিং গ্রুপ৷ জিএমএফ-এর ষষ্ঠ সংস্করণে অংশ নিচ্ছেন দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধি৷ মূল বৈঠক বসবে জার্মানির সাবেক রাজধানী বন শহরের তথাকথিত ‘‘জলের কলে'', যে ভবনটিতে এককালে জার্মান সংসদের অধিবেশন হয়েছে৷ সম্মেলনের ভাষা হল ইংরিজি৷ মটো হলো, ‘‘প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ: অর্থনৈতিক মূল্যবোধ ও মিডিয়া''৷
তথ্যকল্যাণী, শিক্ষক ডটকমসহ বিজয়ী যারা
ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড দ্য বব্স-এর ২০১৩ সালের বিজয়ীদের নিয়ে বিশেষ ছবিঘর এটি৷ এই আসরে বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী প্রকল্প জিতেছে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’, শিক্ষক ডট কম পেয়েছে ‘ইউজার প্রাইজ’৷
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
সেরা ব্লগ: লি চেনপেং
চীনা লেখক ও সাংবাদিক লি চেনপেং সেরা ব্লগ পুরস্কার জিতে নিলেন৷ ‘গোটা বিশ্ব জানে’ নামের একটি বই লিখে চীনা কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি৷ বইয়ের প্রচারের সময় মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল তাঁকে৷ প্রতিবাদে তিনি নিজের লেখা থেকে অংশবিশেষ পাঠের সময়ে পরে নিলেন একটি অক্সিজেন মুখোশ৷ ‘নীরব পাঠ’-এর সেই অনুষ্ঠানে তাঁর পরনে ছিল একটি টি-শার্ট, যাতে লেখা ‘আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি’৷
ছবি: Li Ruihe
সেরা উদ্ভাবন: ফ্রিওয়াইবো ডট কম
‘ফ্রিওয়াইবো ডট কম’ নামের মাইক্রোব্লগিং সাইট চীনের সরকারের সেন্সরশিপ প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা দিচ্ছে৷ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনের অন্যতম প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ‘সিনাওইবো ডটকম’-এর সেন্সরমুক্ত সংস্করণে ঢুঁ মারা যায়৷ ফলে ব্যবহারকারীরা জানতে পারেন, কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবেদন মুছে ফেলে৷
ছবি: freeweibo.com
সেরা উদ্ভাবন: শিক্ষক ডটকম
বাংলাভাষার পক্ষে শিক্ষক ডটকম এই বিভাগে ‘ইউজার প্রাইজ’ জয় করেছে৷ মূলত বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বাংলায় অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে শিক্ষক ডট কম৷ এই সাইটটি গড়ে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ রাগিব হাসান৷ ডয়চে ভেলের প্রতিযোগিতা চলাকালে শিক্ষক ডটকমের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৬ শতাংশ৷
সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম: ৪৭৫
মরক্কোর তরুণ প্রজন্মের এক উদ্যোগের নাম ‘৪৭৫’৷ মরক্কোর আইনের ৪৭৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করলেই শাস্তি এড়াতে পারে৷ এই ধারার কারণে ২০১২ সালে ১৬ বছরের কিশোরী আমিনা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ‘৪৭৫’ নামের একটি চলচ্চিত্র এবং ফেসবুক ও ফ্লিকার-এ সোশ্যাল মিডিয়া অভিযান৷
ছবি: Naji Tbel
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স: ফাবি কুয়াসি
প্রতি বছরের মতো এবারও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন এক প্রতিযোগীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যিনি বা যাঁরা মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন৷ এ বছর সেই পুরস্কার পাচ্ছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ টোগো-র মানবাধিকার কর্মী ফাবি কুয়াসি৷ দেশের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় পুলিশ সাংবাদিকদের উপর যে নিপীড়ন চালাচ্ছে, ফাবি সেই সব ঘটনা তুলে ধরছেন তাঁর ওয়েবসাইটে৷
ছবি: fabbikouassi.wordpress.com
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম পুরস্কার: তথ্যকল্যাণী
২০১৩ সালে ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের বিষয় হলো ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ’৷ বব্স প্রতিযোগিতায়ও বিষয়টিকে আলাদা বিভাগের মর্যাদা দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের ‘তথ্যকল্যাণী’ প্রকল্প এবার এই বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছে৷ জুরিমণ্ডলীর কাছে এটা এমন এক ‘বৈপ্লবিক প্রকল্প যার মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলাদেশের অতি দরিদ্র মানুষের নাগালে চলে আসছে৷’
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
সবচেয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক উদ্যোগ: আমি ও আমার ছায়া
ইন্টারনেটে আমাদের গতিবিধির চিহ্ন কতটা থেকে যায়? এই প্রশ্ন নিয়েই কাজ করছে ‘মি অ্যান্ড মাই শ্যাডো’ বা ‘আমি ও আমার ছায়া’৷ ইন্টারনেটে কীভাবে নিরাপদে বিচরণ করা যায় ও তা করতে কী কী জানতে হয়, খেলাচ্ছলে ব্রাউজারের সেটিং বদলানোর মতো সেই সব পথ বাতলে দিচ্ছে এই ওয়েবসাইট৷ এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে ‘ট্যাকটিক্যাল টেকনোলজি কালেক্টিভ’ নামের এক আন্তর্জাতিক সংগঠন৷
ছবি: myshadow.org
সেরা বাংলা ব্লগ: শৈলী
সেরা বাংলা ব্লগ বিভাগে ইউজার প্রাইজ জয় করেছে শৈলী ব্লগ৷ এই জয়ের পর ডয়চে ভেলেকে জানানো প্রতিক্রিয়ায় শৈলী ব্লগের কর্ণধার রিপন কুমার দে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘এটা শুধু আমি না, সকল শৈলার এবং শৈলীর পাঠকদের জন্য খুব আনন্দের খবর৷ শৈলার এবং পাঠকদের ভালোবাসা ছাড়া এই স্বীকৃতি কোনোভাবেই আসত না৷ তাই তাদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা৷ সকলের ভালোবাসা নিয়ে শৈলী আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে এটাই আমার প্রত্যাশা৷’’
ছবি: http://shoily.com/
বাংলা সেরা অনুসরণযোগ্য: সাইফ সামির
‘বাংলা: সেরা অনুসরণযোগ্য’ বিভাগে বিজয়ী সাইফ সামির৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার কর্তৃক লেখক-ব্লগার-সাংবাদিকদের ওপর যে দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে ডয়চে ভেলের মাধ্যমে আমি তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ একজন লেখককে তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশের জন্য আটক করা হবে, রিমান্ডে নেয়া হবে – এটা কি ধরনের কথা?’’
ছবি: Twitter
9 ছবি1 | 9
যে কোনো মূল্যে প্রবৃদ্ধি?
ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক বেটারমান তাঁর উদ্বোধনী মুখবন্ধেই সে প্রশ্ন তুলেছেন: ‘‘ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধি কি একমাত্র প্রবৃদ্ধির মাধ্যমেই সম্ভব?'' এবং সে প্রবৃদ্ধি কি ‘সবুজ', অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব এবং টেঁকসই হতে হবে? এ প্রশ্ন তুলেছেন বন শহরের মেয়র ইয়ুর্গেন নিম্পচ৷ উত্তর যাদের কাছ থেকে পাবার আশা করা যেতে পারে, তাদের মধ্যে থাকছেন বিকল্প নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াকোব ফন উয়েক্সক্যুল৷
এক মার্কিন গবেষক আর এক রুশ সাংবাদিক প্রস্তাব দেবেন: পণ্য আর পরিষেবার মাপকাঠিতে প্রবৃদ্ধির বিচার না করে জাতীয় মঙ্গল ও সন্তোষের মাপকাঠিতে বিচার করা হোক৷ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রশ্নটাকে যুক্ত করার প্রস্তাবও রাখা হবে আরেক তরফ থেকে৷
কেউ মরু বিশেষজ্ঞ, কেউ চীনের ভিন্নমতাবলম্বী
উঠবে জনস্বাস্থ্যের, অথবা জ্বালানির প্রশ্ন৷ ফিলিপিনের টেলিফোন ডাক্তারের সঙ্গে মোলাকাত হবে চাড-এর মানবাধিকার আন্দোলনকারীর; নাইজিরিয়ার ক্যাথলিক যাজকের সঙ্গে দেখা হবে ভারতের গবেষকের৷ নানা দেশের, নানা পেশার, ধর্ম, ভাষা, মতবাদ, মনোভাবের মানুষ৷ আসবেন ডয়চে ভেলের বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫,০০০ ‘‘পুনর্সম্প্রচারকদের'' প্রতিনিধিরা৷ লাস্ট বাট নট লিস্ট, বব্স পুরস্কার বিজয়ীদের দেখা পাওয়া যাবে জিএমএফ-এর এই আসরে৷ আর সকলে মিলে যাওয়া যাবে রাইন নদের বুকে নৌকাবিহারে৷