ভারত-পকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তো বটেই, উপ- মহাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও রাজনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সামরিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভারতের হামলার পর নিজেদের সামরিক বাহিনীকে তার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান সরকার৷ছবি: Arko Datta/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি ‘গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ' করছে বাংলাদেশ। দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে দুই দেশকে শান্ত ও সংযত থাকা এবং পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশ মনে করে, "আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, যা এই অঞ্চলের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে।”
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়। তাই বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে।
তারা মনে করেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বণিজ্যে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা না কমলে দক্ষিণ এশিয়া এবং বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। এই অঞ্চলকে ঘিরে বিশ্বের শক্তিগুলো যদি সরাসরি অবস্থান নেয়, তাতে বাংলাদেশের জন্য আরো জটিলতা তৈরি হবে বলেও মনে করেন তারা।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার সম্ভাব্য প্রভাব জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, " হয়তো ঢাকার রাস্তায় ভারত-পকিস্তান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে কিছু মানুষ। কিছু ইসলামি দল মিছিল করতে পারে। কিন্তু দেশে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ কোনো পক্ষ নেবে না বলেই আমার ধারণা। আর এখানে যারা এটা নিয়ে রাস্তায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে, তাদের সতর্কতার সাথে হ্যান্ডেল করতে হবে। আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা শন্তির পক্ষে।”
কাশ্মীরে হামলা : স্থানীয়রা যা বলছেন
04:41
This browser does not support the video element.
তার কথা, "যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এখানেবৃহৎ শক্তির খেলা হওয়ার আশঙ্কা আছে। চীন একটি পক্ষ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রও একটি পক্ষ নেবে। ইসরায়েল তো তার অবস্থান এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানও তখন চাইবে বাংলাদেশও তার অবস্থান প্রকাশ করুক। কিন্তু বাংলাদেশকে এসব ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট থাকতে হবে। কোনো পক্ষ নেয়া যাবেনা।”
"আরো বড় যুদ্ধ শুরু হলে এখানে অস্ত্র বিক্রি হবে। দুই দেশের কাছেই অস্ত্র বিক্রি হবে। এখানে অ্যামেরিকা অস্ত্র বিক্রি করবে, চীন করবে। ফলে এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। সকালে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের খবরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষসহ সব মহলই তো এক ধরনের উদ্বেগ অনুভব করছে। এক ধরনের অস্থিরতা তো শুরুই হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর। ওই দুই দেশের ওপর পড়বে, বাংলাদেশের ওপরও পড়বে,” বলেন তিনি।
"যেমন, ভারত সীমান্তে রেড অ্যালার্ট দিয়েছে। তার একটা প্রতিক্রিয়া তো আছে। আমাদের সীমান্তে রেড অ্যালার্ট কেন?”
অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যে কেমন প্রভাব পড়তে পারে?
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস)-এর পরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, "এর দুই ধরনের অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। বাংলাদেশের স্বাভাবিক ব্যবসা -বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আমরা এখন পাকিস্তান থেকেও আমদানি বাড়িয়েছি। এখন জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হবে। এবং ভারতের সাথে যে বাণিজ্য আমাদের, তা প্রধানত স্থল ও জল পথে হয়ে থাকে। পাকিস্তান প্রতিশোধ নেবে বলেছে। এখন যদি তারা ভারতের গুজরাটসহ অর্থনৈতিক হাবগুলোতে হামলা চালায়, তাহলে ভারতের সথেও আমাদের বাণিজ্যে কিছুটা হলেও বাধা তৈরি হবে। আমাদের রপ্তানিও বাধার মুখে পড়তে পারে। আমরা দুই দেশ থেকেই শিল্পের কাঁচামাল আনি । বিশেষ করে, পোশাক এবং ওধুধ শিল্পের জন্য। ফলে এখানে শিল্প উৎপদনের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।”
বাংলাদেশের বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে: মাহফুজ কবির
This browser does not support the audio element.
তার কথা, "এরই মধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইন্স তার রুট পাল্টেছে। এখানে বড় সমস্যা হবে আকাশ ও সমুদ্র পথ নিয়ে। সেটা যদি হয়, তাহলে কিন্তু অন্য দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকটের আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তা তো বটেই, এরই মধ্যে এই অঞ্চলেই অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেছে।”
পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ছুটলেন ফিরোজপুর
ভুল করে পাকিস্তানের সীমান্তে ঢুকে পড়েছিলেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউ। পাক রেঞ্জার্স তাকে বন্দি করে। এখনো মুক্তি পাননি তিনি।
ছবি: Shantanu Chakraborty
হুগলির ছেলে পূর্ণম
হুগলির রিষড়ায় সুশীলচন্দ্র আওয়ান রোডে পূর্ণমের বাড়ি। তিনি বিএসএফের হেড কনস্টেবল। বাড়িতে স্ত্রী, বাবা-মা ও সাত বছরের ছেলে আছে। পূর্ণমের বন্দি হওয়ার খবর পেয়ে গোটা পরিবার উদ্বিগ্ন।
ছবি: Shantanu Chakraborty
ফিরোজপুর সীমান্তের ঘটনা
ফিরোজপুর সীমান্তে ডিউটি করছিলেন পূর্ণম। তখনই তিনি ভুল করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ঢুকে পড়েন। তিনি যখন গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন পাক রেঞ্জার্সরা তাকে ঘিরে ঘরে এবং বন্দি করে। তাকে এখনো মুক্তি দেয়নি পাকিস্তান। উপরের ছবিতে রিষড়ায় পূর্ণমের বাড়িতে বিএসএফের কর্মকর্তারা।
ছবি: Shantanu Chakraborty
পূর্ণমের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা
পূীর্ণমের স্ত্রী রজনী অন্তঃসত্ত্বা। পূর্ণমের বন্দি হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ভয়ংকর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। সোমবার তিনি বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে প্রথমে হিমাচলে বিএসএফ সদরদপ্তরে যান। তারপর ফিরোজপুর যান। কথা বলার পর বৃহস্পতিবার তিনি রিষড়া ফিরে আসেন।
ছবি: Shantanu Chakraborty
কী কথা হলো?
রজনী জানিয়েছেন, ''হিমাচল প্রদেশের কাঁকরায় বিএসএফের হেডকোয়ার্টারের সিও জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা নাকি ঘটতেই থাকে। জম্মু-কাশ্মীরের ঘটনার জন্য ওঁকে ফেরাতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনা হবে।''
ছবি: Shantanu Chakraborty
ফিরোজপুরে কী বলা হলো রজনীকে?
রজনী জানিয়েছেন, হিমাচল থেকে তারা ফি্রোজপুরে যান। সেখানে তাদের বলা হয়, চিন্তার কারণ নেই। পূর্ণম ভালো আছেন। তার উপর নির্যাতন করা হয়নি। তিনি তাড়াতাড়ি যাতে ফেরেন সেই চেষ্টা চলছে। বার বার ফ্ল্যাগ মিটিং চলছে। কথা হচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গেও।
ছবি: Shantanu Chakraborty
সাতদিনের মধ্য়ে না ফিরলে
পূর্ণম সাতদিনের মধ্যে না ফিরলে রজনীকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিএসএফের আইজি-র সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএসএফের কর্মকর্তারা। ফিরোজপুর থেকে বিএসএফের ডিআইজি ও আইজি-র সঙ্গে ফোনে কথা বলানো হয় রজনীর।
ছবি: Shantanu Chakraborty
দিল্লি যেতে পারেন
রজনী জানিয়েছেন, সাতদিনের মধ্যে তার স্বামী না ফিরলে তিনি দিল্লি গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলবেন।
ছবি: Shantanu Chakraborty
বাবা যা বলেছেন
পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ বলছেন, তার ছেলেকে ফেরানোর দায় কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রের কাছ থেকে তিনি কোনো খবর পাননি। তাই উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে।
ছবি: Shantanu Chakraborty
উদ্বিগ্ন মা
ছেলের জন্য চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না মায়ের। চোখ জলে ভরে যাচ্ছে। উদ্বেগ এখন তার সঙ্গী।
ছবি: Shantanu Chakraborty
আত্মীয়র বক্তব্য
পূর্ণমের আত্মীয় সত্যপ্রকাশ জানিয়েছেন, বিএসএফ কর্তারা ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তারা ধৈর্য ধরবেন। অপেক্ষা করবেন পূর্ণমের মুক্তির জন্য। বিএসএফ থেকে এটাও বলা হয়েছে, ভয়ের কোনো কারণ নেই।
ছবি: Shantanu Chakraborty
পহেলগামের পর ভারত-পাক উত্তেজনা
পহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা কিছু ব্যবস্থা নেয়। দুই দেশই সীমান্তে বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে পূর্ণমের বন্দি হওয়ার ঘটনায় তার বাড়ির মানুষের চিন্তা বেড়েছে।
ছবি: Shantanu Chakraborty
11 ছবি1 | 11
"তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে। কারণ, পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম ৬০ দিন। এখন সমুদ্র, আকাশ পথ পরিবর্তন করতে হলে লিড টাইম তো বেড়ে যাবে। আমাদের এখনই এই বিষয়ে ভাবা উচিত,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, "ভারত-পকিস্তান যুদ্ধের প্রথম প্রভাব হলো মনস্তাত্বিক। সেই প্রভাব তো শুরু হয়ে গেছে। আমাদের পাশে দুইটি দেশে যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে তার প্রভাব পড়বে। অনেকেই হয়তো খেয়াল করে না, ভারতে কিন্তু তৈরি পোশাক রপ্তানি আমাদের কম নয়। আবার পাকিস্তানের সাথেও আমাদের ব্যবসা আছে। আমরা দুই দেশ থেকেই তুলা আনি, সুতা আনি। সেটা বাধার মুখে পড়লে আমাদের তৈরি পোশাক উৎপাদনও তো ক্ষতির মুখে পড়বে।”
"এই দুই দেশ ছাড়াও যদি আকাশ ও সমুদ্র পথে বাধা তৈরি হয়, তাহলে তো বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হবে। আর ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিশ্বের শক্তিগুলো যদি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কোনোভাবে, তাহলে কী পরিস্থিতি হবে ভাবাই যায় না,” বলেন তিনি।
তার কথা, "আমাদের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর কী কী প্রভাব পড়তে পারে তার হিসাব এখনো শুরু হয়নি। তবে সরকারের উচিত হবে এখনই সব পক্ষকে নিয়ে বসে একটি আগাম হিসাব করা ও প্রস্তুতি নেয়া এবং একই সঙ্গে বিকল্পগুলোও ভেবে রাখা।”
প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক মনে করেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করতেও বিনিয়োকারীরা সতর্ক হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
তার কথা, "এটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং নিরাপত্তায়ও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এখানে এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হলো বিশেষ করে ভারত তার প্রভাব দেখাতে চাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব কাশ্মীরে হামলার প্রমাণ চাচ্ছে। সরাসরি ইসরায়েল ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যরা কিন্তু এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। তারা হামলার নিন্দা করছে। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে অবস্থান স্পষ্ট হবে।”
"তখন স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে নন-স্টেট অ্যাক্টররাও কাজ করবে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতির ছক বদলে যেতে পারে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়তে পারে,” বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের কথা, "আমার এখনো মনে হয় না এই যুদ্ধ আরো বড় হবে বা এটা খুব প্রলম্বিত হবে। কিন্তু যদি বড় হয়, তাহলে তার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে, বাংলাদেশে পড়বে। এখন পর্যন্ত আমার মনে হয়েছে যুদ্ধের জন্য দুই দেশের নাগরিকদের যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা নাই।”
আমার এখনও মনে হয় না এই যুদ্ধ আরো বড় হবে: ইমতিয়াজ আহমেদ
This browser does not support the audio element.
"আমার মনে হয়েছে ভারত যেহেতু বলছে কাশ্মিরে হামলায়পাকিস্তান জড়িত, তাই মোদীর কিছু একটা করা দরকার ছিল তার দেশের মানুষকে দেখানোর জন্য। তাই একটা কিছু করেছে। যদিও ভারত এটাকে প্রিসিশন ষ্ট্রাইক বলছে। তারা বলছে, পাকিস্তানে জঙ্গিদের ঘর-বাড়ি ও আস্তানায় হামলা করা হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান সেটা মানছে না। তারা বলছে, জনবসতিতে হামলা হয়েছে। এখন এই টেকনোলজির যুগে সঠিক তথ্য থাকলে প্রিসিশন অ্যাটাক সম্ভব। এখন ভারতের হাতে সেই তথ্য আছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন।”
অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরো বলেন," এখন সমস্যা হলো, যদি বড় যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ক্ষেপণাস্ত্র মারা হয়, দুই দেশই পরমাণু শক্তির দেশ। তখন তো পরিস্থিতি অনেক খারাপ হবে। বড় ক্ষতি হবে অর্থনীতির। সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হবে। বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব পড়বে।”
তিনি মনে করেন," কাশ্মিরের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একটা সমর্থন আছে। যদি বড় যুদ্ধ হয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রসেশন হতে পারে। তারপরও কাশ্মীরের বিষয়টা যেহেতু বাংলাদেশের বিষয় না, ফলে এখানে বড় আকারের কিছু হবে বলে মনে করছি না। তবে আমরা আশা করি, আমাদের সরকারের দিক থেকে যাতে এমন কিছু বলা না হয়, যাতে আমরা ঝামেলায় পড়ি।”
"তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া বা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নাই। কারণ, আমরা কূটনীতিতে সেই দক্ষতা, পেশাদারিত্ব অর্জন করতে পারিনি,” বলেন তিনি।
পাকিস্তানে ভারতের হামলা, বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
বুধবার রাতে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী৷ ভারত সরকারের দাবি, ‘জঙ্গি আস্তানা’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে৷
ছবি: Punit Paranjpe/AFP/Getty Images
এটা লজ্জানক, আশা করি দ্রুতই থামবে: ট্রাম্প
বুধবার রাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভারতের হামলার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটি লজ্জাজনক৷ মাত্রই এ বিষয়ে শুনতে পেলাম৷’’ তিনি বলেন, ‘‘তারা দশকের পর দশক ধরে বিতণ্ডায় লিপ্ত৷ আমি আশা করি এটি দ্রুতই থামবে৷’’
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব
হামলার বিষয়ে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘‘লাইন অব কন্ট্রোল, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমানায় ভারতের সামরিক অভিযানের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন৷’’ বিবৃতিতে দু’দেশের প্রতিই সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানানো হয়৷ জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের এমন সামরিক সংঘাত বিশ্ব সামলাতে পারবে না৷’’
ছবি: Richard Drew/AP Photo/picture alliance
‘দুঃখজনক’ বললো চীন
হামলার ঘটনার পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বুধবার প্রথম প্রহরে ভারতের সামরিক অভিযান দুঃখজনক৷ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন৷’’ বিবৃতিতে ওই মুখপাত্র শান্তি রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান৷
ছবি: Pavel Bednyakov/REUTERS
দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জার্মানির
ভারত এবং পাকিস্তানকে উত্তেজনা আর না বাড়ানোর আহ্বান জানিযেছে জার্মানি৷ সেইসাথে দেশটির নাগরিকদের ওই অঞ্চল ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারতের সামরিক পদক্ষেপের পর, দুই দেশেরই দায়িত্বশীল আচরণ করা জরুরি৷
ছবি: Michael Kuenne/PRESSCOV/Zumapress/picture alliance
সংযম প্রদর্শনের আহ্বান ফ্রান্সের
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টিএফ১-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন-নুয়েল বারো সংঘাত ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহান জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ থেকে নিজেদের সুরক্ষা দিতে ভারতের ইচ্ছার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি৷ তবে আমরা অবশ্যই ভারত এবং পাকিস্তানকে উত্তেজনা কমাতে এবং বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা দিতে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই৷’’
ছবি: Magali Cohen/Hans Lucas/AFP/Getty Images
উত্তেজনা নিরসনে সহায়তার প্রস্তাব যুক্তরাজ্যের
ভারত ওবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান অস্থিরতা নিরসনে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ বুধবার রাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এমন প্রস্তাব দেন যুক্তরাজ্যের ট্রেড সেক্রেটারি জোনাথন রেনল্ডস৷ বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বার্তা হলো, আমরা উভয় দেশের বন্ধু. সঙ্গী৷ দুই দেশকে সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত৷’’
ছবি: House of Commons/UK Parliament/PA Wire/picture alliance
‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন করে ইসরায়েল’
ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় বলেন, ‘‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরায়েল৷ সন্ত্রাসীদের জানা উচিত যে, নিরীহ মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর লুকিয়ে থাকার কোনো জায়গা নেই৷’’
ছবি: Valerio Rosati/Zoonar/picture alliance
চাল সরবারাহ নিয়ে উদ্বেগে মালয়েশিয়া
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বা উত্তেজনার ফলে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে চালের আমদানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ডেটুক সেরি মোহামাদ সাবু৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের (ভারত ও পাকিস্তানের) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মালয়েশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জরুরি৷’’ উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার আমদানিকৃত চালের প্রায় ৪০ ভাগ ভারত ও পাকিস্তানের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Thian
‘শান্ত ও সংযত’ থাকার আহ্বান বাংলাদেশের
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ৷ বুধবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের এই উদ্বেগের কথা জানায়৷ একইসঙ্গে দুই দেশকে শান্ত ও সংযত থাকা এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW
পাকিস্তানে ভারতের হামলা
কাশ্মীরে ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার জবাবে যে-কোনো সময়ই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে ভারত- এমন কথা বলা হচ্ছিল৷ এরই ধারাবাহিকতায়, ৭ মে, বুধবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত৷ ভারত সরকার বলছে, সুনির্দিষ্ট জঙ্গি আস্তানায় হামলা চালিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী৷ হামলায় ২৬জন নিহত হয়েছেন বলে পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়৷