১৪ বছরের কিশোর৷ নিজেই একটি ঘড়ি তৈরি করে শিক্ষকের প্রশংসার আশা করেছিল৷ কিন্তু ঘড়িকে বোমা ভেবে বিভ্রান্তি ছড়ালেন তিনি৷ আহমেদ মোহামেদ রাতারাতি বিখ্যাত৷ ডাক এসেছে হোয়াইট হাউস, গুগল, ফেসবুক থেকে৷
বিজ্ঞাপন
নাম আহমেদ মোহামেদ৷ বাসস্থান টেক্সাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ তাই মুসলিম হিসেবে বৈষম্যের অভিযোগ আরও প্রকট হয়ে উঠছে৷ অনেকে বলছেন শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান হলে সে ঘড়ি বানিয়ে বাহবা পেত৷ কিন্তু সব ভালো যার শেষ ভালো৷ ঘটনাটি আহমেদকে রাতারাতি বিশ্ববিখ্যাত করে তুলেছে৷ #IStandWithAhmed হ্যাশট্যাগ টুইটারে ছড়িয়ে পড়ছে৷ স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নড়েচড়ে বসেছেন৷ তিনি আহমেদকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থিতার লড়াইয়ের ফাঁকে আহমেদকে উৎসাহ যুগিয়েছেন হিলারি ক্লিন্টন৷
গুগল আগামী সপ্তাহান্তে তাদের বিজ্ঞান মেলায় আহমেদকে ঘড়িসহ আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের রাজনৈতিক নেতা ওমর আব্দুল্লাহ প্রেসিডেন্ট ওবামার পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন৷
আহমেদ মোহামেদের ঘটনা সাধারণ টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷
এমন বৈষম্যের ঘটনা মোটেই বিরল নয়৷ সব ঘটনা প্রচারের কেন্দ্রেও পৌঁছাতে পারে না৷ বিশ্বের প্রায় কোনো দেশেই সংখ্যালঘুরা কোনো না কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার হন৷ তবে কমপক্ষে শিশুদের এই জটিল সমস্যা থেকে দূরে রাখতে চান অনেকে৷ এক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের ভূমিকা ও দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – এ বিষয়ে সন্দেহ নেই৷
ঘড়ির কারণে গ্রেপ্তার, তারপরই ‘হিরো’ আহমেদ
ডালাস শহরের ঘরে বসে একটি ঘড়ি বানিয়েছিল আহমেদ মোহামেদ৷ তা নিয়েই শুরু হয়ে গেল হুলুস্থুল৷ প্রথমে গ্রেপ্তার৷ তারপর গ্রেপ্তারের নিন্দা আর আহমেদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ৷ বারাক ওবামাও দাওয়াত দিয়েছে তাকে!
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/V. Bryant
শিক্ষককে খুশি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার
সুদানি বংশোদ্ভূত আহমেদ মোহামেদ ডালাসের একটি স্কুলে পড়ে৷ ঘরে বানানো একটা ঘড়ি সেই স্কুলেই নিয়ে গিয়েছিল ১৪ বছর বয়সি কিশোর৷ লক্ষ্য ছিল শিক্ষক এবং সহপাঠিদের অবাক এবং খুশি করা৷ উল্টো ফল হয়েছে তাতে৷ এক শিক্ষক দেখে প্রশংসা করেছিলেন ঠিকই, তবে একসময় যেই না ঘড়িটির অ্যালার্ম বেজে উঠল অমনি অন্য ক্লাসের এক শিক্ষক ফোন করে দিল পুলিশে৷ তারপরই হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আহমেদকে৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/V. Bryant
প্রতিবাদের ঝড়
নিরীহ, আদুরে চেহারার আহমেদকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার একটা ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ সেই ছবি দেখেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সবাই৷ সবার এক কথা – নিজের বানানো ঘড়ি স্কুলে নিয়ে যাওয়ায় একটি ছেলে গ্রেপ্তার হবে এ কেমন কথা? এ তো ভারি অন্যায়! ছবিতে বাবার সঙ্গে আহমেদ৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/B. Wade
সমর্থনের জোয়ার, ওবামার নিমন্ত্রণ
সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামাও স্কুল এবং টেক্সাস পুলিশের আচরণে প্রতিবাদ জানাতে কুণ্ঠা বোধ করেননি৷ হোয়াইট হাউসে তাঁর সঙ্গে একটু সময় কাটানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ওবামা৷ আহমেদের উদ্দেশ্যে টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘সুন্দর ঘড়ি, আহমেদ! তুমি কি ওটা হোয়াইট হাউসে নিয়ে আসতে চাও? বিজ্ঞান ভালোবাসো তুমি, তোমার মতো শিশুদের আমরা উৎসাহ দিতে চাই৷ ’’
ছবি: Reuters/J. Ernst
গুগল মেলায় বিশেষ আসন
উদ্ভাবনের নেশা আছে এমন কিশোর আহমেদ মোহামেদের জন্য গুগলও দারুণ এক অফার দিয়েছে৷ তারা জানিয়েছে, মিষ্টি ছেলে আহমেদের জন্য গুগল-এর বিজ্ঞান মেলায় একটি আসন ইতিমধ্য বরাদ্দ করা হয়ে গেছে৷
ছবি: www.google.de
সাকারবার্গও আহমেদের পাশে
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গও আহমেদকে কিছুক্ষণের জন্য পাশে চান৷ যখনই সময় হবে আহমেদ যেন একবার ফেসবুকের প্রধান কার্যালয়ে ঘুরে যায় – এই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
নাসায় আমন্ত্রণ
ঘড়িসহ যখন স্কুল থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আহমেদের পরনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা-র লোগো আঁকা টি-শার্ট৷ নাসা তাতে খুবই খুশি৷ তারাও সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছে আহমেদকে৷
ডালাসের স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগে পুলিশ আহমেদকে গ্রেপ্তার করায় হিলারি ক্লিনটনও ক্ষুব্ধ৷ আহমেদ যাতে ভবিষ্যতেও উদ্ভাবনের নেশা না ছাড়ে এমন অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি টুইটারে৷
ছবি: AP
পুলিশের বক্তব্য...
ডালাস পুলিশ বলেছে, আহমেদ মোহামেদের খারাপ কোনো ভাবনা ছিল না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এক মুসলিম কিশোরের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে – সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই এমন ধারণা প্রকাশ করেছেন৷ তবে টেক্সাসের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘এখন সময়টাই এমন যে কোনো কিছুকেই হালকাভাবে দেখা খুব কঠিন৷ তাছাড়া ডিভাইসটা দেখলে কারো কারো সন্দেহ হতেই পারে৷’’
ছবি: Reuters/N. Wiechec
আহমেদ যা বললো...
ডালাস মর্নিং নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কারো প্রতি বিশেষ কোনো অভিযোগ করেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব মানুষের মন ছুঁয়ে যাওয়া ১৪ বছর বয়সি মুসলিম কিশোর৷ নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে তার খুব ভালো লাগে – এ কথা জানিয়ে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে ও শুধু বলেছে, ‘‘আমি একটি ঘড়ি বানিয়েছিলাম৷ আমি ছোটখাট একটা কিছু দেখাতে চেয়েছিলাম....কিন্তু ওরা ভুল বুঝল আর তাই ওটা বোমার মতো কিছু হতে পারে ভেবে গ্রেপ্তার করা হলো৷’’