1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘরেই শিশু সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ

৮ জুন ২০২২

বাংলাদেশে প্রায় ৯৬ ভাগ শিশু তাদের ঘরেই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও বিভিন্ন স্থানে প্রায় একইভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারা।

Symbolbild Sexuelle Gewalt
ছবি: OBS/Keystone/picture alliance

 শিশু নির্যাতন বিরোধী আইন থাকলেও অধিকাংশ অভিভাবক শিশুকে "সামান্য মারধরকে” প্রয়োজনীয় শাসন বলেই এখনো মনে করেন।

আর শদের মধ্যে পর্ণগ্রাফি দেখার প্রবণতাও বাড়ছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং অভিভাবকদের অসচেতনতাই এর প্রধান কারণ।

শিশু নির্যাতনের এই পরিস্থিতির কারণে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি যেমন বাধাগ্রস্ত হয় তেমনি তাদের মানসিক আচরণেও নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে নির্যাতনের শিকার শিশুরা যেমন হীনমন্যতায় ভোগে তেমনি সহিংস হয়ে ওঠে বলে শিশু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

"মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন” ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত দেশের ১১ টি জেলায় মোট পাঁচ হাজার ৭৪ জন শিশুর উপর একটি জরিপ করে এই তথ্য পেয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া শিশুদের মধ্যে তিন হাজার ১৩৪ জন শহরের এবং  এক হাজার ৯৪০  জন গ্রামের।

জরিপে অংশ নেয়া শিশুদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও কর্মজীবী শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৫.৩ ভাগ শিশু জানিয়েছে  তারা ঘরে, বাইরে , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৫.৮ ভাগ  নিজেদের ঘরে বাবা- মা ও আত্মীয় স্বজনের হাতে এবং শতকরা ৮২ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছে।  আর বাড়িতে যে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে ৮৬.৯ ভাগ শারীরিক নির্যাতনের শিকার বলে জানিয়েছে। যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে হয়েছে ৫৫ ভাগ শিশু।

শাহীন আনাম

This browser does not support the audio element.

জরিপে শতকরা ৩৪ জন শিশু বলেছে যে তারা পর্ণগ্রাফি দেখেছে। যাদের মোবাইল ও ইন্টারনেট কানেকশন আছে তাদের শতকরা ৭৫.১ ভাগ পর্ণগ্রাফি দেখেছে। শতকরা ২৬ শতাংশ শিশু বলেছে যে তারা আত্মীয়দের সাথে পর্ণগ্রাফি দেখেছে।  মানুষের জন্য  ফাউন্ডেশন বলছে অভিভাবক, আত্মীয় ও অনাত্মীয়দের সঙ্গে পর্ণগ্রাফি দেখার কারণে তারা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে বেশি।

শিশু অধিকার ফোরামের সাবেক সভাপতি এমরানুল হক চৌধুরীও বলেন,"বয়স্করা শিশুদের নিয়ে যখন পর্ণগ্রাফি দেখে তখন তাদের উদ্দেশ্যই থাকে যৌন হয়রানি। আর মোবাইল ও ইন্টারেনট সহজলভ্য হওয়ায় শিশুরাও পর্ণগ্রাফি দেখছে। বাড়ির অভিভাবকেরা যখন পর্ণগ্রাফি দেখে শিশুরা সেটা দেখেই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়।

তার কথা,"বাংলাদেশে পরিবারের মধ্যে শিশুদের নির্যাতন ধর্মীয় এবং সামাজিক কারণেই হচ্ছে। এটাকে পরিবারের লোকজন দেখে শাসন হিসেবে। তবে আইন এবং প্রচারের কারণে এখন নির্যাতনের ধরনে কিছুটা পরিবর্তনও আমরা দেখতে পাই। এখন শিশুদের বেধে রাখা হয়, তাদের সঙ্গে কথা না বলা, বকাঝকা করা ইত্যাদি।”

তিনি মনে করেন,"এখন বিছিন্নতার কারণে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই সময়ে শহরে বা গ্রামে পরিবারের বাবা-মা অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত থাকেন। শিশু একা হয়ে যায়। শহুরে শিশু কারুর সাথে মিশতে পারে না। পিতা-মাতাও চাপে থাকেন। ফলে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়। আর শিশুরা ডিভাইসে আসক্ত হওয়ার কারণেও পর্ণগ্রাফি দেখে।”

শিশু নির্যাতনের বিষয়গুলো অনেক সময় গোপন থাকে। পরিবারের মধ্যে হলে তো কথাই নেই। ফলে আইন থাকলেও প্রতিকার পাওয়া যায়না বলে জানান তিনি।

এমরানুল হক চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

শিশুর অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে তাদের প্রতিকারের জায়গা থাকেনা বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। তিনি বলেন,"৯৯৯-এ একটি শিশু যদি ফোন করে অভিযোগ করে তাহলে সেটাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। আর বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে তো অভিযোগ করা কঠিন। কিন্তু শিশুকে মানসিক নির্যাতন করাও অপরাধ। এমনটি শিশুকে কটু কথা বলা, কান ধরে উঠবস করানোও অপরাধ। এটা শুধু আইনে থাকলেই হবে না। আগে প্রয়োজন সচেতন করা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে। কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না। এই ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই।''

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম জানান তারা অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। সেখানে দেখেছেন অনেক অভিভাবকই মনে করেন শিশুদের একটু আধটু চড় থাপ্পড় দিয়ে শাসন না করলে তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এটাকে তারা কোনো অপরাধ মনে করেন না। তারা মনে করেন শিশুরে সুশৃঙ্খল করতে হলে এই "শাসন' করতে হবে।

তিনি বলেন," শিশুদের নির্যাতন ঘরে, বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবখানে হচ্ছে। এটা কমিয়ে আনতে একদম গ্রাম পর্যন্ত প্রচার দরকার। অভিভাবক ও বয়স্কদের এর ক্ষতিকর দিক বোঝাতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে শিশু অধিকার, শিশুর প্রতি আচরণ এই বিষয়গুলো থাকতে হবে। এটা থাকেলে শিশুও তার অধিকার সম্পর্কে জানবে। অভিভাবক ও শিক্ষকেরাও বুঝতে পারবেন।”

শিশুদের এই মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন তাদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। তারা তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক অভিভাবক যে শিশুর প্রতি মানসিক নির্যাতন করছেন তা নিজেরাও বুঝতে পারেন না।  শিশুকে উপহাস করা, তাকে লম্বু বা বেটে বলাও নির্যাতন বলে জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন,"শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে শিশু স্বল্প ও দীর্ঘ দুই মেয়াদেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিকতা, আতঙ্ক, অস্থিরতা, উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা ও বিছানায় প্রস্রাব করা শুরু করবে। তারা মানসিক চাপে থাকে। আর দীর্ঘ মেয়াদে তাদের পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার হয়। তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।  তারা সমাজ ও পরিবারের প্রতি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনা। তাদের উৎপাদনশীলতা কমতে থাকে। যে শিশু সহিংসতা, নির্যাতন ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় যে কিন্তু নিজেও একজন নির্যাতকে পরিণত হতে পারে। ”

তার কথা,"শিশুর সাথে কর্তৃত্ববাদী প্যারেন্টিং নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ প্যারেন্টিং হতে হবে। তার সাথে মিশতে হবে। তার সমস্যা শুনতে হবে। তার সাথে আলোচনা করতে হবে। তাকে কথা বলতে দিতে হবে। কিছু সমস্যার সমাধান তাকেই করতে দিতে হবে। এর মানে এই নয় যে তার ইচ্ছে মত সব করতে দিতে হবে। প্রকৃত বিষয় হলো যে যাতে নিজেকে গুরুত্বহীন মনে না করে সেভাবে তার সাথে আচরণ করতে হবে। তাহলে তার মধ্যেও পরিবর্তন আসবে।”

তবে কোনো শিশু কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হলে তাকে তার কিছু প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত করে তার মধ্যে পরিবর্তন আনা যায়। কিন্তু কোনোভাবেই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবেনা বলে জানান এই মনোচিকিৎসক।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ