ঘরোয়া ক্রিকেট না বদলালে বিসিবির নাম বদলের ‘প্রস্তাব'
নোমান মোহাম্মদ
১৮ জুন ২০২১
রোগ ধরে ছিল অনেকদিন৷ এবার বিকারের লক্ষণ৷ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট তো ক্ষমতাবানদের ‘খেলার পুতুল' হয়ে আছে বহুকাল ধরে৷ সাকিব আল হাসানের কাণ্ডে সেটিই জনমানসে আছড়ে পড়েছে প্রচণ্ড ক্ষোভের রূপ নিয়ে৷ অবস্থা কী পাল্টাবে এবার?
বিজ্ঞাপন
পরিকল্পিত হোক কিংবা নিতান্তই ঘটনাচক্রে, আগুনটা ঠিকই জ্বালিয়েছেন সাকিব৷ আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথে প্রথমে স্টাম্পে লাথি মেরে৷ পরের ওভারে তা উপড়ে ফেলে৷ ক্রিকেট মাঠে অক্রিকেটীয় আচরণ যে এটিই সাকিবের প্রথম, তা নয়৷ তবে উটের কাছে কাঁটা গাছের স্বাদ যেমন, সাকিবের কাছে বিতর্ক ব্যাপারটাও তেমন৷ হজম করে ফেলেন অনায়াসে৷
কিন্তু ক্রিকেটের হর্তাকর্তারা সাকিব-কাণ্ড হজম করতে পারছেন কই! জনসাধারণ যে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ওই লাথিতে দেশের ক্রিকেট সিস্টেমের বিপক্ষে এক ‘প্রতিবাদী চরিত্র' খুঁজে নিয়েছে! হয়ত তা আরোপিত৷ কিন্তু কর্তার ইচ্ছায় কর্মে যে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং, প্রভাবশালীদের পছন্দের ক্লাবকে জেতানো-হারানো, বিসিবির ভোটের রাজনীতি- এসব কিছু তো অন্ধকার গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছে লেজে আগুন লাগা সরিসৃপের মতো৷
এলবিডাব্লিউর আবেদনে সাড়া না দেয়ায় সেদিন প্রথম মেজাজ হারান সাকিব৷ ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক জালাল আহমেদ চৌধুরী ব্যাপারটা দেখেন আরো বড় পরিসরে, ‘‘সাকিবের মাথা গরম হবার পেছনে ওই বলের সিচুয়েশন তো আছেই৷ সামগ্রিকভাবে নিজের উপরও হয়ত ও বিরক্ত ছিল৷ নিজে রান পাচ্ছিল না৷ এছাড়া আগে-পরে অনেক কিছু বলেছে৷ বলেছিল, আইপিএল তাকে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে, সেখানে প্রিমিয়ার লিগও সাহায্য করতে পারছে না৷ এরও প্রভাব আছে৷ এছাড়া পরিবার থেকে দূরে আছে অনেকদিন৷ সাকিবের সাম্রাজ্যও অনেক বড় হয়েছে৷ ব্যক্তিজীবন, ব্যবসায়িক জীবন সব কিছুর ব্যাপকতা আছে৷ বয়স, খ্যাতি, বাস্তবতা সব কিছু মিলিয়ে সঠিক মানসিক অবস্থায় সাকিব ছিল না৷ তবে সে যা করেছে, সেটি অপ্রত্যাশিত তো বটেই৷''
জালাল আহমেদ চৌধুরী
আবার এ অপ্রত্যাশিত ঘটনার ভিন্ন একটা মাত্রাও দেখেন তিনি, ‘‘আমাদের ক্রিকেটের যে নগ্ন রূপ আছে, সেটি বহুলভাবে আলোচিত হলো৷ এটি একটি লাভ৷ এখানে আরেকটা জিনিস দেখার আছে৷ যারা ক্রিকেট অনুসরণ করেন, তারা সবাই জানেন এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি৷ কিন্তু দেখা গেল, বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ এত কড়া, ক্লাবগুলো ক্ষমতাবানদের পকেটে ঢুকতে ঢুকতে এমন অবস্থা যে, পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি কিছু খুঁজে পেলো না৷ অথচ অনেক দলকে আমরা বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখেছি; তবে লিখিতভাবে কিছু দিলো না৷ সেটি কালো হাতের কড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে৷ এ''মন থাকলে তো কিছু শোধরানো যাবে না৷''
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতও প্রায় অভিন্ন৷ সাকিবের আচরণ তার কাছে যেমন গ্রহণযোগ্য না; তেমনি ক্লাবগুলোর আচরণেও তিনি বিস্মিত, ‘‘আমি শুনে খুব অবাক হলাম যে, আম্পায়ারিং নিয়ে নাকি ২০১৭ সালের পরে কেউ অভিযোগ করেনি৷ আমি জানি না, এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য৷ এই যে এবার ১২টি ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে৷ কারো কাছ থেকে আম্পায়ারিং নিয়ে নেতিবাচক কিছু নাকি শোনা যায়নি৷ আমার ধারণা, এই ১২টি ক্লাবের মধ্যে কয়েকটি ক্লাব এসবের সুবিধাভোগী৷ অন্যরা এর বিপক্ষে বলার মতো সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেনি৷ কারণ, ক্রিকেটই তাদের জীবিকা, রুটিরুজির একমাত্র পথ৷ বোর্ডকে নাখোশ করে কেউ কিছু বলতে চায়নি৷''
মাঠের ক্রিকেট খেলার আড়ালে ‘অন্য খেলা'ও দেখছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, যার সুদূরপ্রসারী ফল ভালো হবে না বলেই তার আশঙ্কা, ‘‘এখানে কাউন্সিলরশিপের ব্যাপার আছে৷ কোন দল কোথায় গেলে কার কাউন্সিলরশিপ পাওয়া সহজ হবে, এসব হিসাব-নিকাশ আছে৷ সব কিছু মিলিয়েই জিনিসটাকে দেখা দরকার৷ আমরা যদি ধরে নিই, কেউ অভিযোগ করেনি বলে কিছু হয়নি বা হচ্ছে না, তাহলে বলবো যে, সিরিয়াসলি ক্রিকেটের ক্ষতি করছি৷ খুব শীঘ্রই এর ফল ভোগ করতে হবে৷''
সামগ্রিক অবস্থাতে হতাশাই বেশি ঝরে পড়ে এই ক্রিকেট কোচের কণ্ঠে, ‘‘এখন সবার মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা৷ ভালো খেললে ভালো জায়গায় যাবেন, এমন পরিবেশ আর নেই৷ ভালো খেলেন বা না খেলেন, কারো না কারো আশির্বাদ থাকতে হবে৷ সেটি খেলোয়াড় হন অথবা কোচ, অথবা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অন্য যে-ই হোন৷ এটি তো ক্রিকেটের জন্য ভালো না৷ বরং তা ক্রিকেটকে আরো নষ্ট করবে৷''
নাজমুল আবেদীন ফাহিম
সে পচন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলে উপলব্ধি বিসিবির সাবেক পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আল মামুনের, ‘আমাদের ক্রিকেট তো একটা গাছ৷ আম্পায়ারিংসহ যে জিনিসগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে, এগুলো গাছের শেঁকড়৷ শেঁকড়ে পচন ধরলে পুরো গাছেই প্রভাব পড়বে৷ নতুন খেলোয়াড়, নতুন দল তৈরি হবার জায়গাটা সংকুচিত হয়ে যাবে৷ মনে রাখতে হবে, এটি সাকিবের ঘটনা থেকে হঠাৎ শুরু হয়নি৷ অনেক দিনের বাজে চর্চার ফল৷ বোর্ডের আধিপত্য এমন পর্যায়ে গেছে, তাদের হস্তক্ষেপ ছাড়া দ্বিতীয় বিভাগের দল প্রথম বিভাগে উঠতে পারবে না, কিংবা তৃতীয় বিভাগের দল দ্বিতীয় বিভাগে উঠতে পারবে না৷ তাহলে ক্রিকেট এগুবে কিভাবে, বলুন?''
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থায় মন খারাপ হয় এই সংগঠকের৷ সেজন্য কর্তাব্যক্তিদেরই দায়ী করেন রিয়াজ উদ্দিন আল মামুন, ‘‘আমি নিজের প্রতিষ্ঠানে সবসময় একটা নীতি মেনে চলি৷ সেটি হলো, লিডার অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে৷ বেঞ্চমার্ক তৈরি করবে৷ ধরুন, ক্রিকেটে যদি আমার টিম থাকে, তাহলে তার উপরই নিয়ম-কানুন সবচেয়ে কড়াভাবে প্রয়োগ হবে৷ দুঃখের ব্যাপার হলো, এখন ক্রিকেটে অনেকে এসেছেন সোশ্যাল আইডেন্টিটি তৈরি করার জন্য৷ তারা সত্যিকারের সংগঠক কিনা, সন্দেহ আছে৷ যারা সত্যিকারের সংগঠক, তারা সত্যিকারের খেলাই মাঠে চান৷''
সেই সত্যিকারের সংগঠকের অভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট পথ খুঁজে পাচ্ছে না৷ রিয়াজ উদ্দিন আল মামুনও তাই আশা দেখছেন না, ‘‘যুক্তি দিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ দেখি না আমি৷ ক্রিকেটের অবস্থা এতটাই খারাপ৷ অনেক বছরের সাধনার ফলে আমাদের ক্রিকেট এখনকার পর্যায়ে এসেছে৷ এখনকার বাজে চর্চা চলতে থাকলে এটি ক্রমশ আরো খারাপের দিকে যাবে৷''
জালাল আহমেদ চৌধুরী আবার বিসিবি নির্বাচন ঘিরে পরিবর্তনের আশা দেখেন তীর্যকচোখে৷ কারণ তাতে ক্রিকেট সংস্কৃতি পরিবর্তনের ভরসা পান না, ‘‘সামনে নির্বাচনে এখনকার ক্ষমতাসীনরাই জিতবে৷ এরপর চার বছরের জন্য নিশ্চিন্ত৷ তখন হয়ত ভাববে, একটু ভালো কাজ করি৷ আম্পায়ারিং নিয়ে হয়ত কিছু কিছু কাজ করতে পারে৷ কিন্তু এই সংস্কৃতি চালু থাকলে আবার নির্বাচন ঘনালে আবার দুর্নীতি করবে৷'' এখনকার বিসিবির যে কাজের ধারা দেখেন, তাতে তার দীর্ঘশ্বাস বেরোয় অন্য রকম এক প্রস্তাবনায়, ‘‘বোর্ডের আগের নামে ফিরে গেলে ভালো হয়- বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড৷ কন্ট্রোল শব্দটি তো ভুল মনে করে বাদ দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু এখন বোর্ডের সব জায়গায় যেমন নিয়ন্ত্রণ, তাতে আবার কন্ট্রোল শব্দটা যুক্ত করাই যায়৷''
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট পুতুল নাচের মতো যেমন অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণের সুতোয় ঝোলে, তাতে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটা ভেবে দেখা যেতেই পারে!
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পক্ষপাতিত্বের মহামারি
আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন যুগে যুগে সব দেশেই উঠেছে৷ এ থেকে যেসব দেশ ঘরোয়া ক্রিকেটকে বেশি মুক্ত করেছে, ক্রিকেটে তারা তত এগিয়েছে৷ ছবিঘরে ক্রিকেট পরাশক্তিদের অতীত এবং বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘কলুষিত’ বর্তমানের তুলনা...
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/S. Belcher
ডেনিস লিলির ভারত ‘বর্জন’ এবং পাকিস্তান থেকে ‘শিক্ষা’
এক সময় ভারতের বোলিং মানেই ছিল স্পিন, স্পিন আর স্পিন৷ সেই ভারতে পেস বোলার তৈরিতে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী ডেনিস লিলির অ্যাকাডেমির ভূমিকার কথা কে না জানে! সেই লিলি কিন্তু একবারও ভারত সফরে আসেননি৷ পাকিস্তানে টেস্ট খেলেছেন মাত্র একবার৷ তার উপমহাদেশে খেলতে না আসার দুটো কারণ ছিল, এক, মরা উইকেট, দুই, অতিথি ফাস্টবোলারদের আরো ‘মেরে ফেলার’ উপযোগী আম্পায়ারিং!
ছবি: Colorsport/imago images
নিউজিল্যান্ডে মাইকেল হোল্ডিংয়ের লাথি
সাকিব আল হাসান ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘লাথিকাণ্ড’ ঘটিয়ে সদ্য আলোচনায় এলেও এমন ঘটনা টেস্ট ক্রিকেটে ঘটেছে ৪১ বছর আগে৷ ১৯৮০ সালে নিউজিল্যান্ডে আম্পায়াররা এত পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন যে উইন্ডিজ ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিং শেষ পর্যন্ত মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি৷ ডানেডিন টেস্টে জন পার্কারকে আম্পায়ার জন হ্যাস্টি এলবিডাব্লিউ না দেয়ায় রেগেমেগে স্ট্রাইকিং এন্ডের স্টাম্প এক লাথিতে ছত্রখান করেছিলেন হোল্ডিং৷
ছবি: Mike Egerton/empics/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ায় সুনিল গাভাস্কারের ‘ওয়াক আউট’
১৯৮১ সাল৷ মেলবোর্ন টেস্টে ডেনিস লিলির ইনকাটার গাভাস্কারের ব্যাট ছুঁয়ে লাগলো প্যাডে৷ ব্যাক ফুটে চলে যাওয়ায় গাভাস্কার তখন স্টাম্পের সামনেই দাঁড়িয়ে৷ তা দেখে আঙুল তুলে দিলেন রেক্স হোয়াইটহেড৷ গাভাস্কার সেদিন ওপেনিং পার্টনার চেতন চৌহানকে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য মাঠ ছেড়েছিলেন৷ সম্প্রতি গাভাস্কার অবশ্য জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ানরা তাকে ‘ভাগো’ না বললে সেদিন হয়ত আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে একাই মাঠ ছাড়তেন৷
ছবি: AP
দু’বার হিট উইকেট, তবু নট আউট!
১৯৮৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্টে জেফ লসনকে আম্পায়ার আরএ ফ্রেঞ্চ এবং এমডাব্লিউ জনসন অপরাজিত রাখার পণ করেছিলেন কিনা কে জানে! লেগ গ্ল্যান্স করতে গিয়ে লসন গোড়ালি লাগিয়ে স্টাম্প থেকে বেলস ফেলে দিলেন৷ পরের ওভারে মাইকেল হোল্ডিংয়ের ঝড়ো গতির বল সামলাতে গিয়ে আবার একই কাণ্ড৷ অথচ দুবারের একবারও নাকি আম্পায়াররা তা চোখেই দেখেননি৷ সেবার অবশ্য বেশি রাগেননি, স্টাম্পে লাথিও মারেননি হোল্ডিং!
ছবি: Getty Images
নিরপেক্ষ আম্পায়ার: ইমরান খানের ‘উপহার’
আজ যে সব আন্তর্জাতিক ম্যাচে ‘নিরপেক্ষ আম্পায়ার’-এর চল তার শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাত ধরে, ১৯৮৬ সালে৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি টেস্ট পরিচালনার দায়িত্ব সেবার ভারতের ভিকে রামস্বামী আর পিলু রিপোর্টারকে দিয়েছিলেন ইমরান৷ ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ পরিচালনার দায়িত্বও ইংল্যান্ডের জন হ্যাম্পশায়ার আর জন হোল্ডারকে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক৷
ছবি: AP
তবুও মুরালিধরনের ‘চাকিং বিতর্ক’
১৯৯৯ সালে চার্লটন অ্যান্ড ইউনাইটেড ত্রিদেশীয় সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার রস এমারসনের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যে ক্রিকেট ইতিহাসে বার বার আলোচনায় ফিরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ টেস্ট ক্রিকেটে ৮০০ উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরনের ওভারের চতুর্থ বলটা স্কয়ার লেগ থেকে এমারসন কেন যে বল ‘ছোঁড়ার’ অভিযোগে নো ডেকেছিলেন তা আজও অজানা৷ আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদেরও অবাক করেছিল৷
ছবি: AP
ইনজামামের প্রতিবাদ
২০০৬ সালে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের ওই টেস্ট ম্যাচ আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণেই চিরস্মরণীয়৷ চতুর্থ দিন চা বিরতির আগে বল বিকৃত করার অভিযোগ তুলে আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার পাকিস্তানকে নতুন বল নিতে বলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইনজি৷ দল নিয়ে পাকিস্তানের অধিনায়ক মাঠ ছাড়ায় ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করে দেন আম্পায়াররা৷ পরে আইসিসি অবশ্য ম্যাচটাকে ড্র ঘোষণা করে৷
ছবি: Picture-Alliance / Photoshot
এলবিডাব্লিউ না, এসবিডাব্লিউ!
১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া-ভারত অ্যাডিলেড টেস্ট৷ গ্লেন ম্যাকগ্রার শর্ট পিচ ডেলিভারি কী করে এত নীচু হলো, ‘ডাক’ করতে গিয়ে একেবারে বসে পড়া টেন্ডুলকারের কাঁধে লাগলো তা এতদিনেও বলা মুশকিল৷ আম্পায়ার ড্যারিল হার্পারের দেয়া সেই এলবিডাব্লিউ ইতিহাসে স্থান পেয়েছে ‘শোল্ডার বিফোর উইকেট’ নামে৷ টিভি রিপ্লে দেখে আজও অনেকেই বলেন, বল কখনোই স্টাম্পে লাগতো না৷
ছবি: AP
বেন স্টোকসকে আম্পায়ারের ‘উপহার’
২০১৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজের সেই ম্যাচটা সবাই বেন স্টোকসের হার না মানা ১৩৫ রানের ইনিংস আর সেই সুবাদে ৩৫৯ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডের জিতে যাওয়ার জন্যই মনে রাখবে৷ অথচ জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের যখন দুই রান দরকার, ঠিক তখন নাথান লায়নের বলে ‘নিশ্চিত’ এলবিডাব্লি্উ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার৷ অস্ট্রেলীয়দের জোরালো আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন, ইংল্যান্ডও পেয়ে যায় ঐতিহাসিক জয়৷
ছবি: Getty Images/S. Forster
ইতিহাসের নিকৃষ্টতম আম্পায়ারিংয়ের সিরিজ
২০০৫-এর অ্যাশেজেও ছিল বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ছড়াছড়ি৷ ২০২০ সালে ক্রিকেট পাকিস্তান ডটকম-এর এক প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান ড্যামিয়েন মার্টিনের রিটুইট করা ভিডিও এমবেড করা হয়েছে৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সাইমন ক্যাটিচকে লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে এলবিডাব্লিউ দিচ্ছেন পাকিস্তানের আম্পায়ার আলিম দার৷ ড্যামিয়েন মার্টিনের মতে, সেই সিরিজ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম আম্পায়ারিংয়ের জন্য কুখ্যাত৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
রোহিত শর্মাকে আম্পায়ারের ‘দান’
২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মা ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন রুবেল হোসেনের বলে৷ ইমরুল কায়েস ধরেওছিলেন ক্যাচটা৷ কিন্তু আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ‘নো’ ডাকায় বেঁচে যান রোহিত৷ সিদ্ধান্তটা ধারাভাষ্যকার শেন ওয়ার্নের কাছেও অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল৷ ওয়ার্ন বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘এটা নো বল ছিল না, খুবই বাজে সিদ্ধান্ত৷’’
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
ইংলিশ আর অস্ট্রেলীয়দের এক করে দেয়া সিদ্ধান্ত
২০১৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজাকে এমন এক কট বিহাইন্ড দেয়া হলো যে প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন সবাই৷ রিভিউয়েও ভুল সিদ্ধান্ত খারিজ না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড বলেছিলেন, ‘‘এটি ক্রিকেটে আমার দেখা সবচেয়ে জঘন্য সিদ্ধান্ত৷’’ ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন আরো ক্ষেপে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এমন আউট দিলে (প্যাভিলিয়নে) ফিরে আসা অন্যায়৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Griffith
বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে ৪ বলে ৯২ রান
২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে এক্সিওম ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ৪ বলে ৯২ রান দিয়ে খবরের শিরোনামে আসেন বোলার সুজন মাহমুদ৷ জয়ের জন্য এক্সিওমের দরকার ছিল ৮৯ রান৷ কিন্তু ওয়াইড আর নো বল দিয়ে দিয়ে মাত্র চার বলেই ৯২ রান দিয়ে দেন সুজন। লালমাটিয়া ক্লাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে সুজন এমন করেছেন।পরে সুজনকে ১০ বছরের জন্য এবং লালমাটিয়া ক্লাবকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি৷
ছবি: Sikander Ali
বল করার আগেই নো বল!
২০১৭ সালের আরেক ম্যাচে ১.১ ওভারে ৬৯ রান দিয়েছিলেন তাসনিম হাসান। তাকেও ১০ বছরের জন্য আর তার ক্লাব ফিয়ার ফাইটার্সকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। তাসনিমও নাকি পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদেই এমন বোলিং করেছিলেন৷ ক্লাবটির আরো দাবি ছিল, বোলার বল করার আগেই আম্পায়ার নো বল দিয়েছেন এমন ঘটনাও সেবার ঘটেছে৷ লালমাটিয়া এবং ফিয়ার ফাইটার্স ক্লাব দুটির ম্যাচের আম্পায়ারদের মাত্র ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/I. Hitchcock
বিসিবির ‘অন্ধ’ চোখ খুলবে কবে?
২০২০ সালে উইসডেনের এক পডকাস্টে নিল ডায়ার নামের একজন ইংল্যান্ডের কোনো এক স্থানীয় লিগে কাভারে ক্যাচ আউট হয়েও এক ব্যাটসম্যানের বেঁচে যাওয়ার গল্প শুনিয়েছিলেন৷ আম্পায়ারের নাকি মনে হয়েছিল বল প্যাডে লেগে কাভারে গিয়েছে৷ ইংল্যান্ডে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই চেষ্টাতেই প্রাণাতিপাত করে বোর্ড৷ অথচ সাকিবের সাকিবসুলভ লাথিকাণ্ডের পরে বিসিবি সভাপতি জানিয়ে দিলেন, ‘‘আম্পায়ারদের কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি৷’’