সামরিক কোট ন্যাটোর ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শীর্ষ নেতারা লন্ডনে মিলিত হচ্ছেন৷ ট্রাম্প ও এর্দোয়ানের মতো বিতর্কিত নেতাদের উপস্থিতি সম্মেলনের উপর কালো ছায়া ফেলতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
সামরিক জোট ন্যাটোর ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ২৮টি দেশের শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার লন্ডনে মিলিত হচ্ছেন৷ তবে দুই দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে ঐক্য ও সংহতির তুলনায় বেশ কিছু চলমান বিতর্ক প্রাধান্য পাচ্ছে৷ জোটের প্রয়োজনীয়তা ও কৌশলগত লক্ষ্য নিয়ে মতপার্থক্য দানা বাঁধছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটোকে ‘ব্রেন ডেড' হিসেবে বর্ণনা করে সেই সংকটের বর্ণনা দেন৷
এমন প্রেক্ষাপটে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস জোটের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ বিশেষ করে সম্প্রতি সিরিয়ার উত্তরে সামরিক অভিযানকে ঘিরে জোটের মধ্যে চরম মতপার্থক্য দেখা গেছে৷ অক্টোবর মাসে অ্যামেরিকা আচমকা সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর ন্যাটোর আর এক সদস্য দেশ হিসেবে তুরস্ক কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনীর উপর হামলা শুরু করে৷ ন্যাটোর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কোনো সমন্বয় বা ঐকমত্যের প্রচেষ্টা দেখা যায়নি৷
ক্ষমতায় আসার পর থেকে ন্যাটোকে আক্রমণ করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ তিনি বিশেষ করে জার্মানিসহ অন্যান্য সদস্য দেশের উপর মাসুল বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে চলেছেন৷ অন্যদিকে অ্যামেরিকার আর্থিক অবদান কমাতে চান তিনি৷ সেই চাপের ফলে কিছুটা কাজ হয়েছে৷ ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, যে ৯টি সদস্য দেশ ন্যাটোর নীতি অনুযায়ী প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করছে৷ অন্য কিছু দেশও সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে৷
তুরস্কের বর্তমান ভূমিকার কারণে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট দেখা যাচ্ছে৷ ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও যাবতীয় আপত্তি উপেক্ষা করে সে দেশ রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ প্রযুক্তি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ উল্লেখ্য, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলি সাধারণত এমন সামরিক সরঞ্জাম কেনে, যা ন্যাটোর কাঠামোয় খাপ খায়৷ সিরিয়ায় একতরফাভাবে সামরিক অভিযান চালিয়েও তুরস্ক চরম বিরক্তি সৃষ্টি করেছে৷
লন্ডন সম্মেলনে ট্রাম্প কী বলবেন বা করে বসবেন, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ মহাসচিব স্টলটেনবার্গের সঙ্গে প্রাতরাশ করার পর তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন৷ ট্রাম্প, মাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন৷ তবে বুধবারই শীর্ষ নেতাদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রায় ৫০টি সিদ্ধান্তে অনুমোদন জানাবেন তাঁরা৷
ট্রাম্প যখন লন্ডন সফর করছেন, ঠিক তখনই অ্যামেরিকায় তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া নতুন মাত্রা পাচ্ছে৷ কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরের সময় এমন পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প৷
সিরিয়ায় তুরস্কের হামলা, ইইউ-কে এর্দোয়ানের হুমকি
সিরিয়া সীমান্তে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা শুরু করেছে তুরস্ক৷ হামলার নিন্দা উপেক্ষা করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান উলটো হুমকি দিয়েছেন ইইউকে৷ বলেছেন, ‘‘আমরা তাহলে ৩৬ লাখ অভিবাসীকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো৷’’
ছবি: Reuters/C. Allegri
প্রথমে বিমানহামলা
সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য সরিয়ে নেয়ার পরই হামলার প্রস্তুতি শুরু করে তুরস্ক৷ রোববার ট্যাঙ্কসহ তুরস্কের সৈন্য বহরের সিরিয়া সীমান্তের দিকে রওনা হওয়ার খবর জানায় তুর্কি সংবাদ সংস্থা ডিএইচএ৷ তবে হামলা শুরু হয় বুধবার থেকে৷ পদাতিক বাহিনীর হামলার সুবিধার জন্য প্রথমে কুর্দিনিয়ন্ত্রিত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিমান থেকে বোমাহামলা চালানো হয়৷
ছবি: AFP/D. Souleiman
বহু মানুষ এলাকাছাড়া
তুরস্কের হামলা শুরুর আগে থেকেই শুরু হয় বেসামরিক কুর্দিদের এলাকা ছেড়ে যাওয়া৷ অনেক মানুষ ট্রাক বা অন্য গাড়িতে চড়ে, অনেকে আবার হেঁটেই শুরু করেন নিরাপদ স্থানের দিকে যাত্রা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
পিছু হঠছে কুর্দি বাহিনী
বুধবার থেকে তুরস্কের পদাতিক বাহিনীও হামলা শুরু করে৷ বৃহস্পতিবার কয়েকটি স্থানে কুর্দিদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিসি)-এর সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয়৷ বার্তা সংস্থা এপির খবর অনুযায়ী, তুরস্কের পদাতিক বাহিনী এ পর্যন্ত কমপক্ষে একটি গ্রাম থেকে এসডিসি-কে সরে যেতে বাধ্য করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
বন্দি আইএস যোদ্ধাদের কী হবে?
এদিকে বাদ্রান জিয়া নামের এক কুর্দি নেতা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বন্দি আইএস যোদ্ধাদের নিয়ে তারা চিন্তিত৷ তিনি জানান, তুর্কি হামলার ফলে বন্দি আইএস যো্দ্ধাদের পাহারা দিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তার আশঙ্কা, এর ফলে আইএস যো্দ্ধারা ছাড়া পেয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters
হামলার নিন্দা
তুরস্কের এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ৷ জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হাইকো মাস বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইহি ডি মাইয়ো বলেছেন, ‘‘এ হামলা অগ্রহণযোগ্য৷’’ চীন হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘‘সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে৷’’ রাশিয়ার গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পুটিন সরকার সিরিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Hosbas
তুরস্ককে ইইউ-র বার্তা
এক সংবাদ সম্মেলনে ইইউ-র এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘ইইরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে ইচ্ছুক সব প্রার্থীর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে৷ তুরস্ক যদি সত্যিই (এই জোটে) যুক্ত হতে চায়, তাহলে তাদেরও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
এর্দোয়ানের পালটা হুমকি
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ইইউ-র বক্তব্যকে দৃশ্যত আমলেই নেননি৷ জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘‘ওহে ইইউ, জেগে ওঠো৷আমি আবার বলছি, আমাদের এ অভিযানকে যদি তোমরা আগ্রাসন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করো, আমরা তাহলে দরজা খুলে ৩৬ লাখ অভিবাসীকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো৷’’