ঘরে ঘরে সিনেমা
১৩ নভেম্বর ২০১৭উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন৷ ভারতের সর্বকালের সব থেকে উজ্জ্বল চিত্রতারকা৷ মঞ্চে শাহরুখ খান৷ এই মুহূর্তে দেশের জনপ্রিয়তম তারকা৷ রয়েছেন কমল হাসান৷ দক্ষিণ ভারতীয় ছবির অন্যতম সুপার স্টার এবং সারা দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়৷ এঁদের পাশে দাঁড়িয়ে চিত্র পরিচালক মহেশ ভাট, অভিনেত্রী কাজল৷ কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এর থেকে বড় বিজ্ঞাপন আর হতো না৷ তবে এই প্রচার অবশ্যই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে৷ আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার চেষ্টা তার মধ্যে কম৷ যদিও দেশি-বিদেশি ১৪৩ টি ছবি দেখানোর আয়োজন এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে৷ পাশাপাশি হচ্ছে আলোচনাসভা, প্রদর্শনী৷ এর মধ্যে একটি প্রদর্শনী পুরনো দিনের ফিল্ম ক্যামেরা নিয়ে, যার একটি সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’ শ্যুট করা হয়েছিল যে মিচেল ক্যামেরা দিয়ে, সেইটি৷ এছাড়া গত বেশ কিছু বছর ধরে যেটা চলছে, চলচ্চিত্র উৎসবকে নন্দন–রবীন্দ্র সদন চত্বরে আটকে না রেখে সারা শহরে ছড়িয়ে দেওয়া, একাধিক প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করা, সেটাও এবার হচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যেটাকে বলছেন ‘‘পাড়ায় পাড়ায় সিনেমা৷’’
কিন্তু চলচ্চিত্র উৎসবকে এভাবে সাধারণের ভোগ্য করে তোলা, তার উদ্বোধনে ভারতীয় বাণিজ্যিক ছবির তারকাদের ভিড় নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে৷ অনেকেই বলছেন, ভালো সিনেমা দেখানোর যে লক্ষ্য নিয়ে দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র উৎসব হয়, তা কলকাতা উৎসবের ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে৷ বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র সমালোচক অনিরুদ্ধ ধর যদিও মনে করছেন, এটা খুবই বাঞ্ছনীয় একটা পরিবর্তন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, আগে লোকের একটা ধারণা ছিল যে, চলচ্চিত্র উৎসব মানেই বিশেষ এক শ্রেণির চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের ইন্টেলেকচুয়াল বিনোদনের বিষয়, ওটা আমজনতার বোধগম্য নয়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব সেই এক্সক্লুসিভিটির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে এবং প্রচুর লোক সিনেমা দেখছেন৷ এটা সিনেমার জন্যে খুব ভালো একটা পরিবর্তন৷ যদিও তাতে ভালো সিনেমার দর্শক কতটা তৈরি হচ্ছে, সেটা একটি জরিপের বিষয় বলে মনে করেন অনিরুদ্ধ ধর৷ এবং তিনি এটাও মনে করেন যে, সেটা সারা বছর ধরে চালু রাখার একটা প্রক্রিয়া৷ কেবল একটা চলচ্চিত্র উৎসবের তার শুরু এবং শেষ নয়৷
সুদূর বার্লিন থেকে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিতে আসেন নাজমুন নেসা পিয়ারি৷ আদতে বাংলাদেশের মানুষ নাজমুন ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই চলচ্চিত্রে আগ্রহী৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সঙ্গেও দীর্ঘ সময় তিনি যুক্ত ছিলেন৷ তিনি জানালেন, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে শামিল হওয়ার অভিজ্ঞতার নিরিখে তাঁর মনে হয়, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব কোনও অংশে কম নয়৷ এখানেও অনেক ভালো আন্তর্জাতিক সিনেমা দেখার সুযোগ মেলে৷ পরিসর তৈরি হয় বিশ্ববিখ্যাত পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলার, মত বিনিময় করার৷ নাজমুন সদ্য দেখে বেরিয়েছেন বাংলাদেশের নবীন পরিচালক আবু সাঈদ পরিচালিত ‘ডেথ অফ আ পোয়েট’ ছবিটি৷ এই ছবি ঘিরে দেশি-বিদেশি দর্শকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো৷
এবারের চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে আরও একটি জরুরি বিষয় নিয়ে কথা বললেন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন৷ তিনি কার্যত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর রাজনৈতিক অপচেষ্টাকে সরাসরি আক্রমণ করে বললেন, ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প চিরকালই ঐক্য এবং সংহতির প্রতীক হয়ে থেকেছে৷ এখানে গীতিকার জাভেদ আখতার সিনেমার জন্য ধর্মীয় ভজনের কথা লেখেন, সেই গানে সুর দেন এ আর রহমান এবং কণ্ঠ দেন লতা মঙ্গেশকর৷ ভারতীয় সিনেমার একাধিক ভক্তিগীতি অমর হয়ে আছে যাঁর গলায়, তাঁর নাম মোহাম্মদ রফি৷ এটাই ভারতের চিরন্তন সংস্কৃতি৷ বিবিধের মাঝে মিলনের, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের৷ এটা যেন আমরা না ভুলে যাই৷