ঘরে ফেরা দেড় লাখ শ্রমিক আইসোলেশনে
২৯ মার্চ ২০২০সামনে, পিছনে, আশে, পাশে শুধু কালো কালো মাথা। যতদূর দেখা যায় মানুষের ঢল। বাস স্ট্যান্ড ছাড়িয়ে ওভারব্রিজের ওপরে শুধুই মানুষ। কেউ খালি হাতে, কেউ পোটলা-পুটলি সহ, কোলে বাচ্চা। শনিবার এটাই ছিল লকডাউন দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাসের ছবি। দিল্লিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উত্তরপ্রদেশের গ্রামে ফেরার লাইন।
সেই লাইনে কোথায় সামাজিক দূরত্ব, কোথায়ই বা মাস্ক, স্যানিটাইজার! কিছু লোকের মুখে মাস্ক ছিল ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশের মুখ খোলা। কোনওক্রমে নিজের গ্রামে ফেরার তাগিদে, একটু খেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে হাজার হাজার লোক বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে। দিল্লিতে তাঁদের না খেয়ে মরার দশা। উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি সরকার মিলে পাঁচশো বাসের ব্যবস্থা করেছিল। তাতে করেই হাজার হাজার মানুষ নিজ গ্রামে যেতে পারলেন। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত, আপাতত নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারবেন না তাঁরা। সরকারি কোনও জায়গায় আইসোলেশনে থাকতে হবে।
গত কয়েক দিন ধরে এই সব শ্রমিকের দুঃখের কাহিনি ভারতের সব সংবাদমাধ্যমে অনেকখানি জায়গা পেয়েছে। উপায় না দেখে এই শ্রমিকরা কয়েকশ কিলোমিটার দূরে গ্রামের দিকে হাঁটা লাগিয়েছেন। পথে মৃত্যও হয়েছে। শনিবারই দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশে ফিরতে চেয়েছিলেন রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁর ডেলিভারি ম্যান ৩৯ বছরের রণবীর সিং। তাঁর গ্রাম ছিল ৩২৪ কিলোমিটার দূরে। ৫০ কিলোমিটার যাত্রার পরে আর এগোতে পারেননি তিনি। আগ্রার কাছে হৃদরোগে াক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। এক দোকানদার তাঁকে চা ও বিস্কিট দিয়েছিলেন। সেটাও খেতে পারেননি রণবীর।
করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক তো নিজের রাজ্যে ফিরতে পারলেন। এই অবস্থায় উত্তরপ্রদেশ ও বিহার সরকার ঠিক করেছে, যে সব শ্রমিক দিল্লি বা অন্য শহর থেকে ফিরছেন, তাঁদের আপাতত ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। আনন্দ বিহারে তাঁদের একবার পরীক্ষা করেছেন চিকিৎসকরা। জ্বর থাকলে বা খুব বেশি সর্দি, কাশি থাকলে যেতে দেওয়া হয়নি। উত্তরপ্রদেশে পৌঁছলে তাঁদের আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। সব গ্রাম প্রধানকে বলে দেওয়া হয়েছে, শ্রমিকরা ফিরলে তাঁদের যেন গ্রামে ঢুকতে দেওয়া না হয়। সরকারি শিবিরে রাখা হয়। সেই শিবিরে তাঁদের ১৪ দিন রেখে ছেড়ে দেওয়া হবে। খাওয়ার ব্যবস্থা সরকার করবে। উপ মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য জানিয়েছেন, শনিবার সারা দিনে ৬৫ হাজার টেলিফোন কল করতে হয়েছে এই ব্যবস্থাপনার জন্য।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন রাজ্য থেকে উত্তরপ্রদেশে দেড় লাখ শ্রমিক ঘরে ফিরেছেন। যোগী আদিত্যনাথ শনিবার সব জেলা শাসককে নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা যেন ওই দেড় লাখ শ্রমিককে খুঁজে বের করেন এবং তাঁদের শিবিরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। গ্রাম প্রধানদের তালিকা বানাতে হয়েছে। কাজটা কঠিন। বিশেষ করে সরকারি প্রশাসনেরএকটা ঢিলেমি থাকে। খবর আসছে, ইতিমধ্যেই প্রচুর শ্রমিক তাঁদের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু যে ভাবে গাদাগাদি করে তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, বাসে গিয়েছেন, তাতে সেখানে একজন করোনা আক্রান্ত থাকলে, অনেকের মধ্যে ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকছে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তো প্রথমে বলেছিলেন, শ্রমিকদের ফেরার দরকার নেই। তাঁরা যে রাজ্যে আছেন, সেখানেই থাকুন। তাঁদের যাঁরা সাহায্য করবেন, সরকার তাঁদের টাকা দেবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে না বুঝে, তিনিও শ্রমিকদের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন। ১৪ দিন আলাদা রাখার ব্যবস্থা করছেন। চিকিৎসকদের মতে, এটা খুবই জরুরি। না হলে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে যাবে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)