সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি জরিপে উঠে এসেছে, পথশিশুদের ৬৪ শতাংশই পরিবারে ফিরতে চায় না৷ অন্যান্য কারণের মধ্যে একটি কারণ ‘পারিবারিক অশান্তি’৷
বিজ্ঞাপন
এর কয়েক দিনের মধ্যেই আবার আট বছরের এক শিশুর ৯৯৯-এ ফোন করে মায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ জানানোর খবর ঘোরাফেরা করতে লাগলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ দ্বিতীয় ঘটনাটি আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ অন্যরকম হলেও উন্নত দেশগুলোতে এ ঘটনা বেশ স্বাভাবিক৷ বেশ অনেকদিন আগে প্রবাসী এক বন্ধুর এমন এক অভিজ্ঞতা শুনে খুব হেসেছিলাম৷ অসহায় বন্ধুটির রাগ আরো বাড়াতে নানা কথাও বলেছিলাম৷ নিজের বাচ্চাকে শাসনের নামে মারধর এতটাই প্রচলিত আমাদের দেশে যে এ নিয়ে কাউকে পুলিশের নজরে পড়তে হবে, ব্যাপারটা ভাবনার বাইরে আমাদের৷ তবে সে ঘটনা এখন দেশেও ঘটছে জেনে এর মধ্যেই অনেককে আতংকিত হতে দেখেছি৷ কিন্তু মোটের উপর শিশুদের শাসন আর তাদের উপর নির্যাতনের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আমাদের ভাবনার জায়গাটা কেমন যেন ভাসা ভাসা৷ শিশু অধিকার নিশ্চিতের প্রশ্নে নিম্নবিত্তের সাথে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের মধ্যে মোটাদাগের পার্থক্য থাকলেও ‘পারিবারিক অশান্তি'র পয়েন্টে এসে সবপক্ষই মিলে যাই আমরা৷
শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে যে প্রাণান্ত চেষ্টা, তার বিপরীতে শিশুটির উপর অধিকারবোধ চর্চার সংস্কৃতি আমাদের মজ্জাগত৷ হতদরিদ্র বা নিম্নবিত্ত পরিবার সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতেই হিমশিম খায় আর তাই নিজের বা শিশুর কারো অধিকার নিয়েই খুব বেশি সোচ্চার হওয়ার সুযোগ কম৷ তবে মধ্যবিত্তের সংকট ভিন্ন৷
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের শিশুরা ভালো আছে
শিশু অধিকার বিষয়ে একমাত্র বৈশ্বিক সূচক হলো ‘কিডসরাইটস ইনডেক্স’৷ ২০২২ সালের সবশেষ সূচকে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ৷
শিশু অধিকার বিষয়ে একমাত্র বৈশ্বিক সূচক হলো ‘কিডসরাইটস ইনডেক্স’৷ নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর এই সূচক প্রকাশ করে থাকে৷ সহযোগী হিসেবে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের এরাসমুস ইউনিভার্সিটি রটারডাম৷ শিশু অধিকার বিষয়ে বৈশ্বিক জনমত তৈরিতে এই সূচককে গ্রহণযোগ্য মনে করে জাতিসংঘ৷
মোট পাঁচটি মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়৷ এগুলো হলো শিশুদের জীবনের অধিকার, স্বাস্থ্য অধিকার, শিক্ষার অধিকার, সুরক্ষার অধিকার ও শিশু অধিকার রক্ষার পরিবেশ কেমন৷
২০২২ সালের কিডসরাইটস ইনডেক্সে ১৮৫টি দেশের তালিকা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ আছে ১০২ নম্বরে- যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থান৷ এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আছে দ্বিতীয় স্থানে৷ প্রথমে আছে ভুটান (৯৮)৷ অন্য দেশগুলোর অবস্থান ভারত (১১৫), মালদ্বীপ (১২৭), নেপাল (১২৯), শ্রীলঙ্কা (১৪৭) ও পাকিস্তান (১৪৯)৷
কিডসরাইটস ইনডেক্সের শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, স্লোভেনিয়া ও নরওয়ে৷ জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন অনুমোদন না করায় যুক্তরাষ্ট্রকে এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷
ছবি: imago/McPHOTO/Streu
যেসব দেশে শিশু অধিকারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চাড-এর৷ এর পরের স্থানগুলোতে আছে আফগানিস্তান, সিয়েরা লিওন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ডিআর কঙ্গো, গিনি, এল সালভেদর, পাপুয়া নিউ গিনি ও নাইজার৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/O. Cicek
বাংলাদেশে পথশিশুদের অবস্থা
ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস-এর ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ বলছে, ৩০.১ শতাংশ শিশু পাবলিক বা খোলা জায়গায় (যেমন রাস্তাঘাট, স্টেশন, টার্মিনাল, মাঠ বা পার্ক) থাকে ও ঘুমায়৷ এদের মধ্যে ৭১.৮ শতাংশ পড়তে বা লিখতে পারে না৷ রাস্তায় বসবাসকারী শিশুদের ৮২.৯ শতাংশ পথচারীদের দ্বারা নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়৷ ৪৯.৮ শতাংশ শিশু কাজের জায়গায় সহিংসতার শিকার হয়৷
প্রতিবন্ধী শিশুদের অবস্থা
ইউনিসেফের সহায়তায় বিবিএস পরিচালিত ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ (এনএসপিডি) ২০২১’ জরিপ বলছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের (৫-১৭ বছর বয়সি) মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে৷ মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে৷
ছবি: PFDA-VTC
শিশু শ্রম
ইউনিসেফ ও বিবিএস-এর ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১১.৩ শতাংশ শিশু (৫-১৭ বছর বয়সি) শিশুশ্রম, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বা উভয় ক্ষেত্রেই নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশু শিক্ষা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৭.৪২ শতাংশ৷ প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পন্ন করার হার ৮৫.৮৫ শতাংশ৷ আর মাধ্যমিক পর্যায়ে তালিকাভুক্তির হার ৭০.২৫ শতাংশ৷ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমাপ্তির হার ৬৪.২৪ শতাংশ৷
ছবি: Imago/epd
শিশু মৃত্যু
নবজাতকের (০-২৮ দিন বয়সি) মৃত্যুহার প্রতি এক হাজারে ১৫ জন৷ শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সি শিশুমৃত্যুর হার প্রতি এক হাজারে ২১ জন৷ আর পাঁচ বছরের কমবয়েসি শিশুর মৃত্যুহার প্রতি এক হাজারে ২৮ জন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
10 ছবি1 | 10
আমাদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যতটা না পরিকল্পনা, তার চেয়ে বেশি ঘটনার পরিক্রমা৷ এরমধ্যে প্রথম কয়েক বছরতো শিশুকে নিয়ে আমাদের পুতুল-পুতুল খেলা৷ টুকটুক করে কথা বলতে শেখা শিশুটির আধো আধো নানা কথা মন কেড়ে নেয়৷ তবে ধীরে ধীরে পরিণত মানুষের মতো মতপ্রকাশেই গিয়ে বাধে বিপত্তি৷ ফুলের মত, পাখির মত শিশুটির যে স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব তৈরি হচ্ছে, পছন্দ-অপছন্দ বোধ তীব্র হচ্ছে, এই কথাটাই আমরা মা-বাবারা বেমালুম ভুলে যাই৷ অতঃপর অবধারিত সংঘাত৷ শিশুটির অস্ত্র- কান্নাকাটি, অবাধ্যতা আর বড়দের অস্ত্র- বকাঝকা-মারধর৷
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে মারধরের মতো শাসনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে৷ স্কুলগুলোতে শিশুদের আঘাত না করার নির্দেশনা জারি আছে৷ তবে মজ্জাগত ভাবনা তো অত সহজে যাওয়ার নয়৷ সন্তানদের আমরা এতটাই নিজেদের মনে করি যে তাদের আর আলাদা ভাবা হয় না আমাদের৷ সেটা যে শিশুমনে বিরূপ প্রভাব ফেলে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের বারংবার সতর্কতাতেও আমাদের যেন বিশ্বাস হতে চায় না!
আমাদের শিশুদের জন্য আছে প্রতিযোগিতাপূর্ণ কঠিন শিক্ষাব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের নামে আছে দেখনদারি ও প্রতিযোগিতার চাপ৷ এর বিপরীতে খেলার সময়-সুযোগ বড় ক্ষীণ৷ চার দেয়াল ও চৌকো বাক্সের উপর ভর করেই আমাদের ফুলগুলো বেড়ে উঠে৷ আমরা যারা বাবা-মা, তাদের সময়ও বড় কম৷ ‘কোয়ালিটি টাইম' কথাটা ইদানিং ‘মোটিভেশনাল’ নানা বক্তব্যে ঘুরে ফিরে আসে৷ আমরাও নানা ফর্মুলার এপাশ ওপাশ কাটছাট করে শিশুদের বড় করতে থাকি৷ তবে এসবের মধ্যেও সন্তানকে আলাদা মানুষ ভাবার অবকাশ আমাদের হয়না বললেই চলে৷ অবশ্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নে সববয়সী মানুষেরই হরে দরে এক অবস্থা বঙ্গদেশে৷ তবুও শিশু প্রশ্নে সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই কোন৷ যেমনটা অভিজ্ঞরা বলে থাকেন, ব্লটিং পেপারের মতো সব শুষে নেয় শিশু৷ শিশু প্রশ্নে তাই প্রয়োজন অভিভাবকের সতর্ক অবস্থান৷
এখানটাতেই ফিরতে হবে শুরুর প্রসঙ্গে৷ কেবল পথশিশু নয়, আমাদের আশেপাশের অনেকশিশুই নানা নেতিবাচক প্রভাবের ভেতর দিয়ে দিন কাটায়৷ সেখানে তার চাওয়ার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন আছে, আশেপাশের সবার চাওয়া তার উপর চাপিয়ে দেয়া আছে, এমনকি মায়ের প্রতি পরিবারের সদস্যদের নেতিবাচক, বা আরো এগিয়ে সহিংসতাও আছে৷ অনেকেই তাই পরিবারে বা সবচেয়ে আপন বাবা-মায়ের কাছেই অবমূল্যায়িত হয় মারাত্মক ভাবে৷ পরিবারে শিশু অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজন সব পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চা, প্রয়োজন বাবা-মায়ের মানসিক স্থিতি৷ উন্নত দেশের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ৯৯৯ এ ফোন করাকে উদাহরণ না টেনে শিশুর জন্য ঘর কি করে নিরাপদ করা যায়, তা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন৷ মায়ের বিরুদ্ধে শিশুর পুলিশে অভিযোগের বিপরীতে মাকে এককভাবে দোষী করে শিশুকে দাদা বা নানার বাড়িতে রেখে আসা একেবারে শেষ সমাধান৷ বরং দীর্ঘদিন এ পরিস্থিতি চললে মায়ের পাশাপাশি বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও দায় এতে কম নয়৷
আমরা প্রায়ই কথা বলি শিক্ষাব্যবস্থার চাপ নিয়ে৷ বলি খেলার মাঠ না থাকার কথা৷ যথার্থই এসব বিষয়ে আরো অনেক বেশি কথা হওয়া প্রয়োজন৷ তবে ঘরের পরিবেশও যেন নজর না এড়ায়৷ সাধ্যের মধ্যে নিজেদের ঘরটাই আমরা সবার আগে শিশুবান্ধব করতে পারি৷ নতুন নতুন ফমুর্লার চেয়ে বাবা-মায়ের স্বতঃস্ফুর্ত আহ্লাদের প্রসাদগুণ বরাবরই বেশি৷ তবে তা যেন শিশুর ব্যক্তিত্বকে খর্ব করে না হয়৷
বাবা-মা হিসেবে আমাদের ওপর সমাজের যে চাপ, তা অতিক্রম করে শিশুকে বোঝার মতো মন তৈরিতে অভিভাবকের সতর্ক চেষ্টা প্রয়োজন৷
কাহলিল জিবরান যেমনটা বলেছেন
‘‘তোমরা ওদের মতো হওয়ার চেষ্টা করতে পারো,
কিন্তু তোমরা যেমন-ওদের তেমন করে তুলতে চেয়ো না৷
কারণ জীবন কখনো পেছনে ফিরে যায় না৷’’
বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের শিশু অভিভাবকত্ব আইন
কোন দেশে বাবা, কোন দেশে মা, আবার কোন দেশে দুইজনই শিশুর আইনগত অভিভাবক৷ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর শিশু কার অধিকারে বা সঙ্গে থাকবে তা নিয়েও আইনের পার্থক্য আছে দেশে দেশে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্ডিয়ানশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নিচে হিন্দু শিশুর অভিভাবকত্ব পাবে তার মা৷ বর্তমানে আদালতের রায়ে বাবা-মা দুইজনকেই আইনগত অভিভাবকত্ব দেয়া হয়, যাতে দুইজনের সঙ্গেই শিশুর যোগাযোগ থাকে৷ একক অভিভাবকত্বের প্রশ্নে মাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ যদি মা সম্মতি দেন বা অসমর্থ হন কিংবা শিশু যদি ১৩ বছরোর্ধ হয় এবং নিজে সিদ্ধান্ত নেয় এমন ক্ষেত্রে বাবা অভিভাবকত্ব পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/blickwinkel/K. Wothe
পাকিস্তানে নতুন আইন
১৮৯০ সালের আইন সংশোধন করে ২০২২ সালে নতুন ‘গার্ডিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ২০২০’ পাস করেছে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ৷ এই আইন অনযায়ী, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে সাত বছর বয়স পর্যন্ত শুধু মা অভিভাবকত্বের অধিকার পাবেন৷ আর মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে তা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো বা ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত৷ এক্ষেত্রে মা অসমর্থ হলে যথাক্রমে নানি, দাদি, বোন, খালা, ফুপুসহ নারী আত্মীয়রা অভিভাবকত্ব পাবেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Tabassum
আফগানিস্তানে বাবার অধিকার
‘আফাগানিস্তানের সিভিল ল’ অনুযায়ী ছেলে শিশু সাত বছর ও মেয়ে শিশু নয় বছর পর্যন্ত দেখাশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মায়ের৷ তালাকের ক্ষেত্রে আদালত ভরনপোষণের জন্য বাবাকে মাসে ২০০০ থেকে ৩০০০ আফগান মুদ্রা দেয়ার নির্দেশ দিতে পারে৷ নির্দিষ্ট বয়সের পর অভিভাবকত্ব পায় বাবা বা বাবার দিকের কোনো পুরুষ আত্মীয়৷ এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে চাচা বা চাচাত-ফুপাত ভাইরাও আইনত অভিভাবকত্বের অধিকার পেতে পারে৷
ছবি: Hector Retamal/AFP/Getty Images
জাপানে শুধু একজন
জাপানের পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে সন্তানের অভিভাবকত্ব ও দায়িত্ব যৌথভাবে দুইজনের উপর থাকে৷ তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পর বাবা অথবা মা যেকোন একজন সন্তানের আইনগত অধিকার পান৷ বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ই এই বিষয়ে দুইজনকে একমত হতে হয়৷ না হলে পরবর্তীতে আদালত এই সিদ্ধান্ত দেয়৷ অবিবাহিত বাবা-মায়ের সন্তানের ক্ষেত্রে শুধু মা অভিভাবকত্ব পান৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/Sopa/V. Kam
জার্মানিতে শিশুর স্বার্থ আগে
বিয়ের মাধ্যমে, যৌথ অভিভাবকত্বের ঘোষণা অথবা পারিবারিক আদালতের রায়ে জার্মানিতে বাবা-মা দুইজনই সন্তানের অভিভাবকত্ব পান, অন্যথায় মা অভিভাবক হন৷ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলেও অভিভাবকত্বে সাধারণত পরিবর্তন হয় না৷ তবে ১৪ বছরের উপরের সন্তানের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সম্মতিতে আদালত একজনের অভিভাবকত্ব মঞ্জুর করতে পারে৷ যেকোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিশুর স্বার্থ ও কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয় জার্মানির পারিবারিক আদালত৷
ছবি: imago/photothek/U. Grabowsky
যুক্তরাষ্ট্রে বাবা-মায়ের সমানাধিকার
যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহ বিচ্ছেদের সময় সন্তানের অভিভাবকত্বের বিষয়টিরও সুরাহা হয়৷ সাধারণত বিবাহিত অবস্থায় এবং বিচ্ছেদের পরও সন্তানের উপর বাবা-মায়ের সমান অভিভাবকত্ব থাকে৷ শিশু কার সঙ্গে থাকবে সেটি নির্ধারণে আদালত শিশুর নিজের ইচ্ছা, বাবা-মা, ভাই-বোন ও নিকট আত্মীয়দের মত নেয়৷ থাকার জায়গা, স্কুল, লোকালয় এবং যার সঙ্গে থাকবে তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসহ ‘শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থকে’ অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/J. Lawler Duggan
বাংলাদেশে অভিভাবক পিতা
অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এবং মুসলিম আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে নাবালক সন্তানের অভিভাবক তার পিতা৷ পিতার অবর্তমানে দায়িত্ব পাবেন মা৷ তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত এক রায়ে মাকেও অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বাবা, মা এবং আইনগত অভিভাবক- যে কোনো একজনের নাম ব্যবহার করলেই চলবে৷