নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে যেসব জঙ্গি সাজা খাটছে, তারা অন্তর্বর্তী জামিন বা প্যারোলে ছাড়া পাবে না৷ বাড়িতে তাদের যত সমস্যা, যত জরুরি কাজই থাকুক না কেন৷ সোমবার এমনই রায় দেয় ভারতের শীর্ষ আদালত৷
বিজ্ঞাপন
রায় ঘোষণার সময় দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,কেউ যদি নিষ্পাপ, নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে, নৃশংসভাবে হত্যা করার মতো জঘন্য অপরাধ করতে পারে, তাহলে সেইসব হত্যাকারীরা কোনোভাবেই দাবি করতে পারে না যে, পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে৷ যে মুহূর্তে সে এই ঘৃণ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়, সেই মূহূর্তেই তার পরিবার বা সন্তানদের সঙ্গে তার সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়৷ পরিবারের দোহাই দিয়ে সে অন্তর্বর্তী জামিন বা প্যারোল চাইতে পারে না৷ এই যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে. এস খেহার,ডি. ওয়াই চন্দ্রচূড় ও সঞ্জয় কিষাণ কউলকে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চের৷
১৯৯৬ সালের ২রা মে দক্ষিণ দিল্লির ভিড়ে ভরা লাজপতনগর সেন্ট্রাল মার্কেটে এক বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ১৩ জন৷ এছাড়া গুরুতরভাবে আহত হয় ৩৮ জন৷ এই বিস্ফোরণ কাণ্ডের পেছনে ছিল জম্মু-কাশ্মীর ইসলামিক ফ্রন্ট নামে এক জঙ্গি গোষ্ঠী৷ এই সন্ত্রাসী হামলার মূল অপরাধী মহম্মদ নৌশাদসহ ১০ জন জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় তদন্তকারী পুলিশ৷ এরমধ্যে একজন ছিল মহিলা৷ সব অভিযুক্তই ছিল কাশ্মীরি৷ বিশেষ আদালত তিনজনকে ফাঁসি এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷ এর বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করলে দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১০ সালে দু'জনকে মুক্তি দেন এবং একজনের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷ হাইকোর্ট মনে করে,তদন্তের কাজে পুলিশের ঢিলেমি ছিল৷
মুম্বই হামলার ১০ বছর
২৬ নভেম্বর ২০০৮ মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার পর মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেপেঁ ওঠে হোটেল তাজ৷ ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরও জ্বলছিল তাজ৷
ছবি: DW/Ashraf
সন্দেহভাজন ডেকান মুজাহিদিন
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইতে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলা চালায় সন্দেহভাজন জঙ্গি সংগঠন ডেকান মুজাহিদিন৷ ছবিতে ভারী অস্ত্র সজ্জিত ডেকান মুজাহিদিনের দুই সদস্যকে দেখা যাচ্ছে৷ অবশ্য কাসাভ ছাড়া সকলে নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে নিহত হয়৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
হামলার লক্ষ্যবস্তু
গত বছরের নভেম্বরে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এই ম্যাপে৷
ছবি: AP Graphics
তাজের সামনে কড়া পাহারা
সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হোটেল তাজ৷ ঘটনার পর তাজ এর সামনে সেনাবাহিনীর সতর্ক অবস্থান৷(ফাইল ছবি)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যেন প্রাণ ফিরে পেলেন
মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে সন্ত্রাসী রা জিম্মি করে দেশের ও বিদেশের বেশ কয়েকজন নাগরিককে৷ ছবিতে সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসীদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টায় নিরাপত্তা বাহিনী
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসীরা আটক করে বেশ কয়েকজনকে৷ জিম্মিদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
উদ্ধার কাজ
ঘটনার পর তাজ হোটেলের পণবন্দী দশা থেকে মুক্ত করে এক বিদেশী পর্যটককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা কর্মীরা৷
ছবি: AP
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলা
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর পুলিশ একটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশন
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশনের ছবি এটি৷ গত বছরের ২৬ নভেম্বর সন্ত্রাসীরা মুম্বইয়ের একাধিক অভিজাত হোটেল, হাসাপাতালও রেল স্টেশনসহ নয়টি এলাকায় হামলা চালায়৷ এই হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১৬৬জন৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী হামলায় আহত
মুম্বইয়ে বুধবার মধ্যরাতের সন্ত্রাসী হামলায় কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজনকে উদ্ধার করছে নিরাপত্তা কর্মীরা৷ মুম্বইয়ের নয়টি স্থানে এই হামলায় কমপক্ষে ১৬৬ জন নিহত হন (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
আহত
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশনে সন্ত্রাসী হামলার পর আহত একজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশনে পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে আহত একজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী হামলার পর রাস্তায় চেকপোস্ট
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সে সময় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করে৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
স্বজন হারানো মানুষদের আহাজারি
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় স্বজন হারানোর আহাজারি৷ ছবিটি ঘটনার একদিন পর মুম্বইয়ের একটি রেল স্টেশনের কাছ থেকে তোলা৷
ছবি: AP
অবশেষে নিস্তার ...
২৬ নভেম্বরের একদিন পর মুম্বইয়ের তাজ হোটেলের পণবন্দী দশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন দুই বিদেশি পর্যটক৷ তাদের নাম পরিচয় অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি৷
ছবি: AP
তাজ হোটেল, ঘটনার একদিন পর
২৬ নভেম্বর ২০০৮ মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার পর মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেপেঁ ওঠে হোটেল তাজ৷ ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরও জ্বলছিল তাজ৷(ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
ধ্বংসযজ্ঞ
হামলার পর মুম্বই ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
প্রস্তুত সেনা সদস্যরা
মুম্বই হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান৷ ফাইল ফটো৷
ছবি: AP
সর্তক অবস্থান
মুম্বই সন্ত্রাসী ঘটনার দুই দিন পর, তখনও জ্বলছে তাজ৷ সেনাবাহিনীর সদস্যরা কৌশলগত স্থানে সতর্ক অবস্থান৷ (ফাইল ফটো৷)
ছবি: AP
আজমাল কাসাভ
মুম্বই হামলার একমাত্র ধৃত আজমাল কাসাভ৷ (ফাইল ফটো৷)
ঘটনার পর ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রের সে দিনের সংস্করণ৷ (ফাইল ফটো৷)
ছবি: DW/Ashraf
21 ছবি1 | 21
নৌশাদ তার আইনজীবী ফারুক রশিদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে যে, এ মাসের ২৭ তারিখে তার মেয়ের বিয়ে৷ তাই অন্তত মাসখেনেকের জন্য তাকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয়া হোক৷ সে ইতিমধ্যেই ২০ বছর জেল খেটেছে৷ আগে সে কখনও কোনো অপরাধে যুক্ত থাকেনি৷ একমাত্র বোমা বিস্ফোরণেই সে জড়িয়ে যায়৷ নৌশাদের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, আবেদনকারীর সামাজিক বন্ধন খুব গভীর৷ জামিন পাবার পর পালিয়ে যাবার বা ফেরার হবার সম্ভাবনা নেই৷ নৌশাদ জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গত বছর অক্টোবর মাসে দিল্লি সরকারের কাছে মেয়ের বিয়ের জন্য প্যারোলের আবেদন করে, কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি৷ সর্বোচ্চ আদালতের মন্তব্য, আসামির ছেলে আছে না মেয়ে আছে এইসব যুক্তি খাটে না৷ তবে ট্রায়াল কোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করলে সুপ্রিম কোর্ট তা শুনতে পারে এবং তা বিচার করে দেখতে পারে৷ তবে প্যারোলের আবেদন নয়৷ উল্লেখ করা যেতে পারে ২০০৫ সালে দীপাবলির ঠিক আগে দিল্লিতে সিরিয়াল বিস্ফোরণে মারা যায় ৬৭ জন৷ ঐ বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত তিন জনের মধ্যে একজনকে ছাড়া বাকি দু'জনকে কয়েকদিন আগে দিল্লি আদালত ১১ বছর পর বেকসুর খালাস করে দেন৷ দোষী সাব্যস্ত হয় নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য তারিক আহমেদ দার৷ এখানেও আদালত তদন্ত কাজে পুলিশের গাফিলতিকে এ জন্য দায়ী করেন৷ রায় দানে বিলম্বের কারণও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা৷
বিশ্বের ভয়ংকর পাঁচ জঙ্গি সংগঠন
তথাকথিত জঙ্গিদের কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ অনেকেরই ধারণা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-ই সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি গোষ্ঠী৷ কিন্তু বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচি বা গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
বোকো হারাম
ইসলামিক স্টেট বা আইএস নয়, বিশ্বের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৫ সালে আবু বকর শেকাউ-এর নেতৃত্বে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৬ হাজার ৬৪৪ জন মানুষকে হত্যা করেছে৷ তাদের হামলায় আহত হয়েছে ১,৭৪২ জন৷ বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক৷ এছাড়া হাজারো কিশোরীকে অপহরণ করেছে বোকো হারাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S.Alamba
ইসলামিক স্টেট
যদিও বোকো হারাম আইএস-এর তুলনায় বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টির দিক থেকে সবচেয়ে উপরে আছে আইএস৷ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলা হচ্ছে আইএসকে৷ ২০১৫ সালে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৭৩ জন মানুষ এবং আহত হয় ৫ হাজার ৭৯৯ জন৷ ১০৭১টি হামলা চালিয়েছে তারা বিশ্ব জুড়ে৷ আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে সংগঠনটি সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক ও ইউরোপ জুড়ে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তালেবান
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলার সময় এই জঙ্গি সংগঠনটির আবির্ভাব৷ বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জঙ্গি সংগঠন বলা হয় এদের৷ ২০১৫ সালে তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ৪৭৭ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১০ জন৷ গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৯১ টি হামলা চালিয়েছে তারা৷ হিবাতুল্লাহ আকন্দজাদা এখন তালেবানের নেতৃত্বে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Noorullah Shirzada
ফুলানি জঙ্গি গোষ্ঠী
বিশ্বব্যাপী এদের তেমন পরিচিতি নেই৷ এরা নাইজেরিয়ার ফুলা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এদের লক্ষ্য ফুলানির ভূমি মালিকদের হত্যা করা৷ ২০১৫ সালে ১৫০ টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ফুলানি, তাদের হামলায় মারা গেছে ১ হাজার ২২৯ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
আল-শাবাব
বোকো হারামকে যদি আইএস-এর সাথে তুলনা করা হয়, তবে আল শাবাবকে তুলনা করা যায় আল-কায়েদার সঙ্গে৷ পূর্ব আফ্রিকায় এদের আধিপত্য অনেক বেশি৷ সোমালিয়াকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মূল লক্ষ্য৷ গত বছর জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৪৯৬টি হামলা চালিয়েছে, হত্যা করেছে ১ হাজার ২১ জন মানুষকে, আহত হয়েছে ৮৫০ জন৷