পরিবেশ দূষণ নিয়ে সবাই চিন্তিত৷ বনজঙ্গল ও মহাসাগরে দূষণ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা থাকলেও প্রেইরি, স্টেপ ও অন্যান্য অঞ্চলের ঘাসজমির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তেমন মাথাব্যথা দেখা যায় না৷ এক আলোকচিত্রী সেই উদ্যোগই নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ দূষণ রোধ করবে আলোকচিত্রী?
04:18
ঘাসজমির অনাদি অনন্ত জগতে বিচরণের অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ইংগো আর্ন্ট গত ২৫ বছর ধরে সারা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন৷ এখনো পর্যন্ত তাঁর সবচেয়ে বড় প্রকল্পের নাম ‘গ্রাস-আর্ট'৷ ঘাসজমির বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা তাঁর জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ ইংগো আর্ন্ট বলেন, ‘‘ঘাসজমির গুরুত্ব সীমাহীনভাবে অবহেলা করা হয়৷ অথচ বনজঙ্গল ও মহাসাগরের পাশাপাশি ঘাসজমি প্রধান তিন ইকোসিস্টেমের অন্যতম৷ গাছ কাটলে, সমুদ্র দুষিত হলে হইচই শুরু হয়ে যায়৷ কিন্তু ঘাসজমির ক্ষতি হলে তা নিয়ে কেউ তেমন উচ্চবাচ্য করে না৷ এটা সত্যি দুঃখের বিষয়৷ কারণ ঘাসজমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রাণী ও গাছপালার বাসস্থান৷''
রয়েটলিঙেন শহরের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে চলছে ‘গ্রাস-আর্ট' প্রদর্শনী৷ ইংগো আর্ন্ট উত্তর অ্যামেরিকার প্রেইরি ঘাসজমিতে তোলা ছবি দেখাচ্ছেন৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘাসজমির মধ্যে এটি অন্যতম৷ অথচ এককালে ‘গ্রেট প্লেনস' নামের যে বিশাল ঘাসজমি ছিল, তার মাত্র ৪ শতাংশ অবশিষ্ট আছে৷ ইংগো আর্ন্ট বলেন, ‘‘মোষের পালের এমন ছবি তুলতে সেখানে গিয়েছিলাম৷ ধনী অ্যামেরিকানদের প্রেইরিকে নিজেদের বাগান করে রাখার সামর্থ্য রয়েছে৷ মোষগুলিও তাদের৷ ‘গ্রাস-আর্ট' প্রকল্পের মাধ্যমে আমি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঘাসজমি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে চাই৷ এই এলাকাগুলি যাতে ভবিষ্যতে আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত রাখা হয়, সেই লক্ষ্যে আমি হয়তো সামান্য অবদান রাখতে পারি৷''
পরিবেশ রক্ষায় সাতটি চরম বার্তা
দশকের পর দশক ধরে চিত্রকর, সঙ্গীতশিল্পী এবং অ্যাক্টিভিস্টরা তাদের কাজের মাধ্যমে দাগ কেটে যায় এমন সব দৃশ্যমান বার্তা সৃষ্টি করেছেন৷ কখনো কখনো কল্পনার সীমাও অতিক্রম করেছেন৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/P. Armestre
আর্কটিকে কনসার্ট
২০১৬ সালে প্রখ্যাত ইতালীয় পিয়ানিস্ট ও সুরকার লুডোভিকো এইনাউডি আর্কটিকের হিমশৈলের মাঝে একটি ভাসমান মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন৷ গ্রীনপিসের আয়োজনে এই কনসার্টটি ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সে অঞ্চলের মানুষকে সচেতন করা৷ কনসার্টটি উপলক্ষে তৈরি করা ‘এলিজি ফর দ্য আর্কটিক' শিরোনামের একটি নতুন সঙ্গীতও পরিবেশন করেন তিনি৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/P. Armestre
জলে ডোবা আত্মারা
ব্রিটিশ ভাস্কর জেসন ডিকেয়ারস টেইলরের মানব ভাস্কর্যগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সমুদ্র তলদেশের শোভা বাড়াচ্ছে৷ যেমন, পশ্চিম আফ্রিকার লানসারোটের দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি এই ‘মুসিও আটলান্টিকো'৷ এগুলো পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তৈরি৷ প্রতিটি ভাস্কর্য একটি কৃত্রিম প্রবালপ্রাচীর তৈরি করে, যা সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে৷ স্কুবাডাইভারদের কাছেও আকর্ষণীয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/Government of Lanzarote
ডুবন্ত ভেনিসকে রক্ষা করবে এই হাত
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের মতো ডুবে যাওয়ার শঙ্কা আছে ভেনিসেরও৷ সেই শঙ্কাকে তুলে ধরতেই তৈরি করা হয়েছে এই হাত, যা শহরটির গ্র্যান্ড ক্যানেলের পানি ফুঁড়ে বেরিয়ে তুলে ধরেছে ঐতিহাসিক কা' সাগরেডো হোটেলকে৷ ‘সহযোগিতা' নামের এই ভাস্কর্যটি ২০১৭ সালে তৈরি করেছেন ভাস্কর লরেনজো কুইন৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে এখনই কাজে নেমে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছে এই ভাস্কর্যটি৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Reuther
ওয়ালস্ট্রীটে গমের ক্ষেত
ম্যানহাটানের ব্যস্ত শহরতলীতে গমের ক্ষেত– ভাবা যায়! ঠিক এই কাজটিই করেছেন শিল্পী আগনেস ডেনেস৷ ১৯৮২ সালে এই শিল্পী ওয়ালস্ট্রীট ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মাঝে দুই একর জমির ওপর গম লাগান৷ প্রকল্পটির নাম দেন ‘গমক্ষেত– একটি মোকাবেলা'৷ কয়েক মাস ধরে তিনি এগুলোর পরিচর্যা করে ফসলও কাটেন৷ বিশ্বে ক্ষুধা দূর করা ও প্রকৃতির বৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁর এই প্রয়াস৷
ছবি: Kunstraum Kreuzberg/Bethanien/Agnes Denes
রক্তে ভেজা ছোট্ট মৎস্যকন্যা
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের সবচেয়ে বিখ্যাত মূর্তি ‘দ্য লিটল মারমেইড'৷ অথচ সময়ে সময়ে এই মূর্তিটিকে দুষ্কৃতিকারীদের কারণে সহ্য করতে হয়েছে চরম অবমাননা৷ গেল মে মাসে ফারাও দ্বীপে তিমি শিকারের বিরোধিতাকারীরা একে লাল রং দিয়ে ঢেকে দেন৷ এর আগে মৎস্যকন্যাকে শিরশ্ছেদ, হাত কেটে দেয়া এবং উড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Scanpix/I. M. Odgaard
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দেয়াল লিখন
প্রখ্যাত অঙ্কনশিল্পী বাঙ্কসি, যার কাজ ব্রিক্রি হয় হাজার হাজার ইউরোতে, ২০০৯ সালে লন্ডন ক্যানেলে অদ্ভুত একটি দেয়াল লিখন তৈরি করলেন৷ স্প্রে দিয়ে তিনি লিখলেন, ‘‘বৈশ্বিক উষ্ণতায় আমি বিশ্বাস করি না৷'' লেখাটির বৈশিষ্ট্য ছিল এর কিছু অংশ পানির ওপরে, কিছু অংশ নিচে৷ এটি সাড়া ফেলে দেয় এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে একটি চুক্তি করতে উদ্বুদ্ধ করে৷
ছবি: picture-alliance/empics/Zak Hussein
ডিজিটাল শিল্পকর্মে প্রকৃতির হৃদস্পন্দন
‘‘একটি হৃদস্পন্দন, একটি গাছ''– ভার্চুয়াল বন তুলে ধরার নাজিহা মেজটাওই‘র এই কাজটি প্রজেক্টর দিয়ে দেখানো হয়েছিল প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের গায়ে৷ নিজস্ব স্মার্টফোন সেন্সরের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা এই কাজটির ভেতরে ঢুকে দেখেছেন কী নিপুণভাবে শিল্পী হৃদস্পন্দনের সঙ্গে একটি গাছের বেড়ে ওঠাকে যুক্ত করেছেন৷ ২০১৪ সালে প্রকল্পটি শুরু হবার পর হাজারো গাছ লাগানো হয়েছে৷
ছবি: Picture alliance /AP Photo/T. Camus
7 ছবি1 | 7
বিস্ময়কর বিষয় হলো, বাঁশঝাড়ও আসলে ঘাসজমি৷ বাঁশ হলো মিষ্টি ঘাস৷ ইংগো আর্ন্ট বলেন, ‘‘আমি বাঁশের খুব কাছে গেছি৷ অর্থাৎ কয়েক সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের ছবি তুলেছি৷ তারপর বিভিন্ন বয়সের বাঁশের সারফেসের ছবি তোলার চেষ্টা করেছি৷ শুরুতে এক ধরনের ছত্রাক বাঁশকে সুরক্ষা দেয়৷ তারপর সেই ছত্রাকের ত্বক ভেঙে তাজা বাঁশ বেরিয়ে আসে৷ কচি সবুজ রং দেখা যায়৷ কয়েক বছর পর পরিণত অবস্থায় ছত্রাক ও শেওলা গজায়৷''
দেখতে সাধারণ মনে হলেও ঘাস আসলে প্রকৃতির শিল্পকর্ম৷ ইংগো আর্ন্ট তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলির ছবি তুলেছেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যে এভারগ্লেড জলাভূমিতে কীভাবে অ্যালিগেটরের ছবি তোলা যায়? ইংগো আর্ন্ট বলেন, বিপদের আশঙ্কায় আমি নিজে ক্যামেরার পেছনে থাকতে না পেরে ভাবলাম, নিজেই ৫ মিটার দীর্ঘ এক লাঠি তৈরি করে পানির নীচে কাঠামোর সঙ্গে লাগিয়ে রাখি৷ অ্যালিগেটাররা আমার উপস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেবে৷ দুই সপ্তাহ পর আমি তাদের খুব কাছে যেতে পারলাম এবং ক্যামেরার লেন্স অর্ধেকটা পানির নীচে, অর্ধেকটা উপরে রেখে ছবি তুললাম৷''
মঙ্গোলিয়ার স্টেপ অঞ্চলের বিশাল ঘাসজমিও মনে বিস্ময় জাগায়৷ ইংগো আর্ন্ট বলেন, ‘‘পাঁচ সপ্তাহ স্টেপ অঞ্চল চষে বেড়িয়ে দেখেছি, দিনের পর দিন সম্পূর্ণ মানববিহীন ঘাসজমির মধ্য দিয়ে যাওয়া যায়৷ সভ্যতা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন সেই এলাকা৷ স্টেপ অঞ্চলে সম্পূর্ণ অক্ষত ঘাসজমি দেখা যায়৷''
‘গ্রাস-আর্ট' নৈসর্গ ও প্রকৃতিকে এক সার্বিক শিল্পকর্ম হিসেবে তুলে ধরছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অসাধারণ সব ছবি দেখা যাচ্ছে এই প্রদর্শনীতে৷