কেউ এলোমেলো স্বপ্ন দেখছেন আবার কারো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে৷ তবে প্রায় সকলেই এক ধরনের ক্লান্তি অনুভব করছেন এখন৷ এসবের কারণ খুঁজতে গিয়ে গবেষকেরা করোনা সংকটের সাথে এর সংযোগ দেখতে পাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
করোনার সংকটে সময় মানুষ অন্য সময়ের চেয়ে একটু এলোমেলো বা প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখতে পারে যা স্বাভাবিক, এর ব্যাখাও জানালেন বিশেষজ্ঞরা ৷ ক্রনোবায়োলজিস্ট টিল রোয়নে ব্যার্গ বলেন, ‘‘যারা ভাইরাসের সর্বশেষ খবরগুলো সারাক্ষণ অনুসরণ করে, তাদের মস্তিষ্কে ঘুমের মধ্যেও এই চিন্তাই হানা দেয় ৷ দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা ঘুমের সময় মানুষের সাব কনশাস মাইন্ডে তথ্য হিসেবে জমা থাকে৷ আর এই জমে থাকা তথ্য রাতে স্বপ্ন হয়ে আমাদের অবচেতন অবস্থায় আসে৷’’
টিল রোয়নে ব্যার্গ আরো বলেন, ‘‘আমাদের সমস্ত চিন্তা জুড়ে এখন শুধুই করোনা ভাইরাস৷ করোনা সংকটকালীন সময়ে সামান্য গলা খুসখুসও অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়৷’’ টিল রোয়নে ব্যার্গ সম্প্রতি ‘ঘুমের অধিকার' বিষয়ক একটি বই প্রকাশ করেছেন৷
ঘুম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্স গ্যুন্টার ভেস তার ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘দুঃস্বপ্ন নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, এসব স্বপ্নের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই আবেগজনিত ও নেতিবাচক, যেগুলো কোনো সংকট ছাড়াও মানুষের ঘুমের মধ্যে হানা দেয়৷ করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি ছাড়াই জার্মানির জনসংখ্যার ছয় শতাংশ মানুষ ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন যার চিকিত্সা প্রয়োজন৷ আর সংখ্যাটি এই মুহুর্তে বাড়তে পারে৷ অতিরিক্ত ঘুম যেমন মানুষের মন মেজাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তেমনি খুব কম ঘুমও শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দূর্বল করে দেয়, দুটোই অস্বাস্থ্যকর৷’’ ডা. ভেস ঘুম সম্পর্কে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন৷
‘মিডিয়া হাইজিন’ সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য জানা জরুরি, তবে এক মিডিয়া থেকে অন্য মিডিয়ার খবর জানতে বেশি তাড়াহুড়ো না করাই ভালো৷’’ তাঁর মতে, ঘুমানোর একঘন্টা আগে টিভি, সেলফোন ইত্যাদি বন্ধ করা উচিত৷
‘‘ঘুমের আগের সময়টুকু পরিবারের সাথে কথা বলুন, মজার কোনো সিনেমা দেখুন বা গান শুনুন৷ ভালো বই পড়তে পারেন যা আপনার মনকে আনন্দ দেবে৷’’
এনএস/এসি (কেএনএ)
মানসিক চাপ শরীর ও মস্তিষ্কে যা ঘটায়
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আমাদের ঘুম কেড়ে নেয়৷ মেজাজ তো খারাপ করেই, তাছাড়া মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে৷ বিস্তারিত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AltoPress/Maxppp/T. Lannié
নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়
বিভিন্ন চাপের কারণে মাঝেমধ্যে মানুষের স্ট্রেসে থাকা একেবারেই স্বাভাবিক৷ তবে তা যদি নিয়মিত হতে থাকে, তবে শরীর ও মনে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়ে৷ দেখা দেয় কার্ডিওভাসকুলার, ডায়াবেটিস ও পেটের নানা সমস্যার মতো রোগ৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
গবেষণা
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল মধ্যবয়সি ২,০০০ মানুষ নিয়ে দীর্ঘ আট বছর ধরে একটি গবেষণা করেছে৷ এতে অংশগ্রহণকারীদের স্মরণশক্তি ও চিন্তাশক্তির পরীক্ষা করা হয়৷ তাছাড়াও রক্তে কর্টিসোল বা স্ট্রেস হরমোন টেস্ট করা হয়৷
ছবি: Colourbox/Phovoir
স্মরণশক্তি বা চিন্তাশক্তি দূর্বলের কারণ
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তে কর্টিসোলের মাত্রা স্বাভাবিক বা কম তাদের চেয়ে, যাদের রক্তে কর্টিসোল মাত্রা বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেশি, তাদের স্মরণশক্তি বা চিন্তাশক্তি দূর্বল থাকে৷
ছবি: Colourbox/Wodicka
অতিরিক্ত স্ট্রেসে কর্টিসোলের মাত্রা বেশি
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের অতিরিক্ত স্ট্রেস ছিলো তাদের রক্তে কর্টিসোলের মাত্রা বেশি দেখা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online
যা করা উচিত
স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত ব্যয়াম, খেলাধুলা ও যোগব্যয়াম করা উচিত বলে বিশেজ্ঞরা মনে করেন৷
ছবি: Colourbox
জগিং, সাইকেল
জগিং করলে কিংবা সাইকেল চালালে একদিকে যেমন কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম শক্তিশালী হয়, তেমনি মানসিক চাপও কমে৷ তবে কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা নয় কিন্তু! কারণ এতে ফল হয় উলটো, অর্থাৎ রক্তে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে৷
ছবি: DW/S. Caroline
স্ট্রেসের নেতিবাচক প্রভাব
সারা বিশ্বে আজ ‘বার্নড আউট’ বা স্ট্রেস রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে৷ কর্মক্ষেত্রে চাপ ও প্রতিযোগিতা বাড়াই হয়তো এর বড় কারণ৷ স্ট্রেস বাড়ার ফলে যে কর্মক্ষেত্রে শুধু কর্মীরাই ভোগেন তা নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতেও৷