বার্সেলোনা বললে কাদের নাম আপনার আগে মনে আসে – গাউডি, মিরো; নাকি মেসি, নেইমার? বর্তমান প্রজন্মের কাছে হয়ত বার্সেলোনা মানে মেসি, নেইমার, কিন্তু হুয়ান মিরোর মতো বিশ্বখ্যাত ভাস্করও জন্মেছিলেন এই শহরে৷
বিজ্ঞাপন
ব্লগার, লেখিকা আলবা ভেন্দ্রেল বার্সেলোনার এল বোর্নে অংশে যেতে খুব পছন্দ করেন, কারণ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় গির্জাটি সেখানে অবস্থিত৷ স্থপতি বেরেঙ্গে দে মন্টেগুট ১৪ শতকে ‘সান্তা মারিয়া দেল মার' নামের এই গির্জাটি তৈরি করেন৷ বর্তমানে এটিই কাতালুনিয়ার একমাত্র কাঠামো, যা পুরোপুরি গথিক নকশা অনুযায়ী তৈরি৷ ভেন্দ্রেল বলেন, ‘‘প্রবেশপথে যে দু'জন রাজমিস্ত্রীকে দেখতে পাচ্ছেন, তারা মন্টজুইক পাহাড় থেকে ঘাড়ে করে পাথর নিয়ে এসে ‘সান্তা মারিয়া দেল মার' গির্জাটি তৈরি করেছে৷''
বার্সেলোনায় আরও আছে ‘কাসা বাত্তিও' ও ‘কাসা মিলা' – গাউডির নকশা করা দু'টি ভবন৷ আরও আছে, ইউরোপের অসাধারণ কয়েকটি স্থাপত্য নিদর্শনের একটি – ‘রেসিন্তে মডার্নিস্তা দে সান্ত পাও'৷ ১৯০২ সালে নির্মিত এই হাসপাতাল কমপ্লেক্সটি ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়৷
বার্সেলোনার ঐতিহ্য শুধু ফুটবল নয়
02:32
হাসপাতালটির মুখপাত্র মের্সে বেলত্রান বলেন, ‘‘হাসপাতালটি এমন জায়গায় তৈরি করা হয়েছিল যেখানে একসময় কিছুই ছিল না৷ তাই লোকজন এলাকাটিকে ‘ন্যাড়া পাহাড়' নামে ডাকতো৷ সে সময়কার অন্যতম উদ্ভাবনীমূলক স্থাপত্য ছিল এটি৷ বার্সেলোনার ‘আইশ্যাম্পল' এলাকার সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে তৈরি করা হয়েছিল হাসপাতালটি৷ ফলে উত্তর ও দক্ষিণ – দুই দিক থেকেই এখানে প্রবেশ সহজ ছিল৷''
ঐতিহ্যবাহী ট্রামে করে শহরের সবচেয়ে উঁচু স্থানে যাওয়া যায়৷ সেখানে ‘টিবিডাবো' নামে একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক আছে৷ সেখানে আছে কারুসেল, ফেরিস হুইল আর মিষ্টিজাতীয় খাবার৷ আর আছে বার্সেলোনার অসাধারণ দৃশ্য৷
ভেন্দ্রেল বলেন, ‘‘বার্সেলোনায় আপনাকে একবার উঁচু, আর একবার নীচুতে নামতে হয়৷ বলতে পারেন, রোমের মতো এটিও সাত পাহাড়ের উপরে অবস্থিত৷''
তাই বার্সেলোনায় যেতে চাইলে সঙ্গে কয়েকটি আরামদায়ক জুতা নিতে ভুলবেন না৷
টেকসই স্থাপত্য
‘গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ফর সাসটেনেবল আর্কিটেকচার’ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে৷ পুরস্কার দেওয়া হয় তেমন স্থপতিদের যারা মানুষ ও পরিবেশের কথা স্মরণে রেখে বাড়ি ডিজাইন করেন৷
ছবি: Andrea Vargas
আনে ফেন্স্ট্রা
নেদারল্যান্ডসের স্থপতি আনে ফেন্স্ট্রা মনে করেন, যাদের জন্য বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, তাদের কথা ভোলা উচিৎ নয়৷ আফগানিস্তান ও ভারতে তিনি যেসব প্রকল্পে কাজ করেছেন, সেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের উপকার করা৷ আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে ফেন্স্ট্রার সৃষ্ট এই প্যাভিলিয়নটিকে তাঁর ‘স্লো আর্কিটেকচার’-এর নমুনা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ তিনি স্থানীয়, এমনকি অদক্ষ শ্রমিক নিয়েও কাজ করে থাকেন৷
ছবি: Anne Feenstra
সালমা সামার দামলুজি
ইরাকি স্থপতি সালমা সামার দামলুজি-র জন্ম বৈরুতে৷ তিনি নতুন বাড়ি তৈরি করেন না, বরং সেই সব প্রাচীন স্থানগুলির সংস্কার করেন, উগ্রপন্থীরা যেগুলি ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে৷ যেমন ইয়েমেনের ওয়াদি দাও’য়ান৷ সালমা সামার দামলুজি যে কোম্পানির হয়ে কাজ করেন, তারা মধ্যপ্রাচ্যের সাংস্কৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে আগ্রহী৷
ছবি: Salma Samar Damluji
ব্যার্ন্ড গুন্ডারমান
যে উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে বিপন্ন, সেখানে কী ধরনের বাড়ি তৈরি করা উচিৎ? জার্মান স্থপতি ব্যার্ন্ড গুন্ডারমান নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ঠিক সেই সমস্যার সমাধান খুঁজছেন৷ শহরটাকে বন্যা থেকে বাঁচাতে হবে, আবার সাগরের সঙ্গে সংযোগও বজায় রাখতে হবে৷
ছবি: Urbia Group
সুরিয়া উম্পানসিরিরতন
থাই স্থপতি সুরিয়া উম্পানসিরিরতন বৌদ্ধ মন্দির ও মঠ নিখর্চায় ডিজাইন করে দেন৷ তাঁর স্থাপত্যে যেন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জীবনধারার প্রতিফলন ঘটেছে, ধ্যান ও প্রার্থনা, কর্ম বা খাদ্যগ্রহণ, সব কিছু ধর্মচক্রের মতো ঘুরে চলেছে...৷
ছবি: Dechophon Rattanasatchatham
সান্তিয়াগো চিরুগেদা
স্পেনের সান্তিয়াগো চিরুগেদা নিজেকে একজন বিদ্রোহী গেরিলা মনে করেন৷ তিনি আর্বান হাউজিং প্রত্যাখ্যান করে নাগরিকদের নিজস্ব উদ্যোগের উপর নির্ভর করেন৷ তাঁর কর্মযজ্ঞের কেন্দ্র হলো সেভিইয়া৷ শহরের লা কার্পা চত্বরে চিরুগেদা একটি ‘মাকড়শা’ সৃষ্টি করেছেন, যার শরীর একটি কনটেইনার ও পাগুলো স্টিলের প্লেট দিয়ে তৈরি৷
ছবি: Recetas Urbanas
আল বর্দে
ইকুয়েডরের আল বর্দে সংস্থার স্থপতিরা তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে স্থানীয় মানুষদের নেয়ার চেষ্টা করেন৷ বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাঁরা অনেক সরকারি ভবন সৃষ্টি করেছেন, যেমন মানাবি প্রদেশের ‘এসপারান্সা দস’, যা কিনা একটি স্কুল৷ স্থানীয় ধীবররা বহুকাল ধরে এভাবে ডালপালা আর বাঁশের কঞ্চি মিলিয়ে তাদের বাড়িঘর তৈরি করে আসছেন৷