নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী এসপিডি দলের সমর্থন বেড়ে চললেও ম্যার্কেলের প্রস্থানের পর ক্ষমতার শীর্ষে থাকতে চায় তার রক্ষণশীল শিবির৷ আরমিন লাশেট ও দলের নেতারা জোরালো প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির সাধারণ নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে সামাজিক গণতন্ত্রী দলের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ শুধু রবিবারের টেলিভিশন বিতর্ক নয়, একাধিক জনমত সমীক্ষায় ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে এসপিডি৷ চ্যান্সেলর হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রস্থানের পর ধাকাবাহিকতা বজায় রাখতে বিদায়ী সরকারের ছোট শরিক দলের নেতৃত্বের উপর আস্থা প্রকাশ করছেন বেশিরভাগ সম্ভাব্য ভোটার৷
সোমবার প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এসপিডি দল ও দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ওলাফ শলৎস আরো দুই শতাংশ এগিয়ে ২৫ শতাংশ সমর্থন আদায় করছে৷ অন্যদিকের ম্যার্কেলের রক্ষণশীল শিবির ও শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আরমিন লাশেট তিন শতাংশ হারিয়ে রেকর্ড ২০ শতাংশে নেমে গেছে৷ সোমবারের সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী জোট সরকার গড়ার ক্ষেত্রে লাশেটের তুলনায় শলৎসের হাতে অনেক বেশি সুযোগ থাকবে৷
বার্লিনে নির্বাচনের আমেজ, সাঁটা শুরু পোস্টার
বার্লিনে আঞ্চলিক এবং জাতীয় নির্বাচন শুরু হতে আর দুই মাসও বাকি নেই৷ ফলে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে৷ রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে প্ল্যাকার্ড৷ নির্বাচনি স্লোগানেও উঠে আসছে নানা বড় ইস্যু৷ বাকিটা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু
জার্মানিতে নির্বাচনি প্রচারণা এভাবেই নির্বাচনের তারিখের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে শুরু হয়৷ বিভিন্ন দল এবং প্রার্থীরা সেসময় রাস্তাঘাটে প্ল্যাকার্ড ঝুলানোর অনুমতি পায়৷ ২৬ সেপ্টেম্বর বার্লিনের জেলাগুলোতে স্থানীয় নির্বাচন এবং বিভিন্ন শহরের জনপ্রতিনিধি ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তাই আগামী কয়েক সপ্তাহ রাস্তাঘাট শত শত হাসিমুখের পোস্টারে ভরে থাকবে৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
‘বিচার চায়’ খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী এবং সবুজরা
নির্বাচনি পোস্টারে জটিল বিষয়গুলো এক লাইনের স্লোগানে প্রকাশ করতে হয়৷ ন্যয়েকোল্ন-এর এক থানার সামনে মধ্যডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)-র পোস্টারে জনমতে সাম্প্রতিক পু্লিশবিরোধী মনোভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে৷ দলটি লিখেছে, ‘‘কারণ, আমরা তোমাকে ভালোবাসি, বার্লিন পুলিশ৷’’ অন্যদিকে, সবুজ দলের ভাবনা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে৷ তাদের স্লোগান, ‘‘জলবায়ু নিরাপত্তা ইস্যুতে ন্যায়বিচার প্রয়োজন৷’’
ছবি: Elliot Douglas/DW
এসপিডি-র মুখ ওলাফ শ্যলস
‘‘স্থিতিশীল পেনশন-এর জন্য ভোট দিন’’ - লেখা হয়েছে মধ্যবামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)-র পোস্টারে৷ আর তাতে শোভা পাচ্ছে দলটির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শ্যলস-এর ছবি৷ বার্লিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস-এ সবচেয়ে বড় দল এসপিডি৷ জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ-এ তারা দ্বিতীয় বড় দল৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি দলটি৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
এএফডি’র আকর্ষণীয় স্লোগান
জার্মানির উগ্রডানপন্থি পপুলিস্ট দল জার্মানির জন্য বিকল্প (এএফডি) নির্বাচনী স্লোগানে লিখেছে ‘‘বার্লিন কিন্তু স্বাভাবিক’’৷ দলটি করোনা বিধিনিষেধের বিরোধী৷ এমনকি অনেক দল যখন পরিবেশ বাঁচাতে শহরের মধ্যে গতিসীমা চালু ও বিভিন্নস্থানে গাড়ি নিষিদ্ধের পক্ষে, দলটি নিয়েছে পুরো উল্টো অবস্থান৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাম দল
বাম দল হচ্ছে কয়েকটি দলের একটি, যারা বহুসংস্কৃতির শহর বার্লিনে জার্মান ভাষা ছাড়াও আরো কয়েকটি ভাষায় নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছে৷ এই পোস্টারে দলটি আরবি ভাষায় লিখেছে, ‘‘ভাড়াটেদের রক্ষা করুন!’’৷ তবে জার্মানির এক তৃতীয়াংশ বাসিন্দাই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না, কেননা শুধু জার্মান পাসপোর্টধারীরাই জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন৷ আঞ্চলিক জেলা নির্বাচনে অবশ্য ইইউ নাগরিকরাও ভোট দিতে পারেন৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
এফডিপি-র আহ্বান ব্যবসায়ীদের প্রতি
মুক্তবাজারের পক্ষের দল মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি) এবারের নির্বাচনে নিজেদেরকে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার দল হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় হতে চাচ্ছে৷ দলটির একটি পোস্টারে লেখা হয়েছে ‘‘কেন্দ্রেরও প্রতিরক্ষা দেয়াল দরকার’’৷ এর অর্থ হচ্ছে বার্লিনের কেন্দ্রীয় জেলা মিটে-তে অবস্থানরত অনেক ব্যবসায়ীর জন্যও নিরাপত্তা দরকার৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
ছোট দলগুলোও প্রচারণা চালাচ্ছে
বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা ছয়টি দলের বাইরেও বেশ কয়েকটি ছোট দল নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে৷ কমিউনিস্ট মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট জার্মান পার্টি তাদের একটি৷ দলটির স্লোগান হচ্ছে ‘‘১০০০ আশা, একটি পরিণতি: বিদ্রোহ’’৷ তবে যেহেতু জার্মান সংসদে প্রবেশ করতে অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোটের প্রয়োজন হয়, এসব দলের তাই সংসদে প্রবেশের সম্ভাবনা খুব কম৷
ছবি: Revierfoto/dpa/picture alliance
নাগরিক উদ্যোগ
বার্লিনের নাগরিকদের উদ্যোগে গড়া ‘ডিসপোজেস ডয়চে ভোনেন উন্ড কো.’ বার্লিনের বড় বাড়িওয়ালাদের একটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে যাতে ‘বার্লিনবাসী ঘরে থাকতে পারেন’৷ চলতি বছরের শুরুতে আদালত বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ দেয়, যা বেশ কিছু বছর বন্ধ ছিল৷ সেই ঘটনায় বার্লিনের নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
8 ছবি1 | 8
রক্ষণশীল শিবিরের প্রার্থী লাশেটের এমন করুণ ভাবমূর্তি সত্ত্বেও নেতারা তার প্রতি জোরালো সমর্থন প্রকাশ করছেন৷ বিদায়ী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেন, ভোটারদের মন জয় করতে আগামী চার সপ্তাহে আরো সংগ্রাম চালাতে হবে৷ বিপর্যয় এড়াতে লাশেটের বদলে বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডারকে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে আসরের নামানোর প্রস্তাব তিনি উড়িয়ে দেন৷ স্পান বলেন, ম্যাচের মাঝে কোচ বদল করা হয় না৷
প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করে ম্যার্কেলের শিবিরের প্রার্থী লাশেট মানুষের মন জয় করতে না পারলেও শিবিরের মধ্যে কিছুটা সমীহ আদায় করেছেন৷ এমনকি তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত স্যোডার বলেন, এর ফলে নির্বাচনের আগে রক্ষণশীল শিবির নতুন গতি পাবে এবং প্রচার অভিযানে সক্রিয় দলের নেতা-কর্মীরা উদ্বুদ্ধ হবেন৷ লাশেট নিজেও হাল ছাড়তে প্রস্তুত নন৷ জনমত সমীক্ষায় খারাপ ফলাফল উপেক্ষা করে তিনি বরং অবশিষ্ট সময়ে মানুষের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন৷ লাশেট বলেন, কোন প্রার্থী চ্যান্সেলর হবার যোগ্য ভোটারদেরই সেই সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হোক৷
চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর জনপ্রিয়তার অভাব সত্ত্বেও সেই দুর্বলতা ঢাকতে রক্ষণশীল শিবির মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরার চেষ্টা করছে৷ আবার ক্ষমতায় ফিরলে কর অপরিবর্তিত রাখা, দেশের আধুনিকীকরণে জোরালো গতি, নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা এবং শিল্পজগতের ক্ষতি ছাড়াই পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগের মতো প্রতিশ্রুতি নিয়ে আরও প্রচার চালাতে চায় সিডিইউ ও সিএসইউ দল৷ সেইসঙ্গে বিকল্প জোটের দুর্বলতা সম্পর্কেও ভোটারদের সতর্ক করে দিতে চায় রক্ষণশীল শিবির৷