1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘুসের বিনিময়ে ডিসি নিয়োগের অভিযোগ

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ অক্টোবর ২০২৪

দুই ধাপে ৫৯ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে নতুন নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই উঠতে থাকে ঘুসের বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগ৷ কয়েকজন সমন্বয়কের নাম ভাঙিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার অভিযোগও উঠছে৷

ঘুসের প্রতীকী ছবি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দৈনিক কালবেলায় একটি প্রতিবেদন হয়েছে। তিনি অবশ্য অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেনছবি: Privat

সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দৈনিক কালবেলায় একটি প্রতিবেদন হয়েছে। তিনি অবশ্য অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তবে কালবেলার প্রতিবেদকের দাবি, নিশ্চিত হয়েই তিনি রিপোর্ট করেছেন।
দূর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মোখলেস উর রহমানের দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধে ঘুস লেনদেনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তদন্তের জন্য তিনজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত দায়িত্বশীল জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যাবে না। এটাও আমাদের অনুশাসনের অধীনে আনতে হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তিনজনের কথা বলা হয়েছে, এর মানে এই নয় যে, অন্যরা এতে যুক্ত হতে পারবেন না। একটি কমিটি করে এটা তদন্ত করা হবে।” 
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই ধাপে ৫৯ জেলা প্রশাসকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ব্যাপক যাচাই-বাছাই শেষে গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দুই ধাপে জারি প্রজ্ঞাপনে সেসব জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা অভিযোগ আসতে থাকে। অভিযোগ ওঠে ‘আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে’ প্রশাসনের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এবং আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিষয়টি তুলে ধরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হওয়া কর্মকর্তারা ব্যাপক হট্টগোল করেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জেলার ডিসির প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং চারজনকে রদবদল করে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “প্রশাসনে যে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে এটি তার একটি প্রমাণ। এত মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ, সেখানে এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা প্রত্যাশা করি, উপদেষ্টা পরিষদ এ ব্যাপারে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবেন।”
দৈনিক কালবেলার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোখলেস উর রহমান এবং দু’জন যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযম ঘুস লেনদেনে সরাসরি জড়িত। তাদের হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে উঠে এসেছে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও। যে কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশটও প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল কালবেলা। 
কালবেলার রিপোর্টে বলা হয়েছে, আলাপচারিতায় সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান যুগ্ম সচিব জিয়াকে হোয়াটসঅ্যাপে কথা না বলে সরাসরি কথা বলতে বলেন। কারণ, এখন তিনি সংবেদনশীল চেয়ারে আছেন এবং তাকে গোয়েন্দারা নজরে রাখছে বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু সরকার পতনের পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগের মতো ‘সক্রিয় নয়’ দাবি করে ড. জিয়া সিনিয়র সচিবকে আশ্বস্ত করেন। এরই মধ্যে তারা হোয়াটসঅ্যাপ কলেও কথা বলেন। আলাপচারিতার একটি খুদেবার্তায় (মেসেজ) ডিসি নিয়োগ নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে এবং এখন কেউ কিছু করতে পারবে না বলে সচিবকে আশ্বাস দেন জিয়া। একটি মেসেজে সচিব নিজেকে ‘নির্লোভ’ দাবি করে ৫ কোটির একটি ‘আবদার’ করেন। জিয়া তাকে সুখবর দিয়ে বলেন ১০ কোটি রাখার কথা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে সচিব তাকে বলেন, ‘‘আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার যেটা ভালো মনে হয়।’’ তবে টাকা-পয়সার প্রতি নিজের তেমন লোভ নেই বলেও জিয়াকে জানান সচিব। আলাপে সচিব গোয়েন্দা সংস্থাকে ‘গিরগিটি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন জিয়াকে। এ বিষয়ে জিয়া ওই সিনিয়র সচিবকে অভয় দিয়ে কোনো টেনশন না নিতে বলেন। আলাপে সচিব অর্ধেক ডলারে আর বাকিটা তার লোকের কাছে নগদে (ক্যাশ) দিতে বলেন।
ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে প্রকাশিত খবরটি ‘ভুয়া’ এবং যে অভিযোগ উঠেছে তা মূল্যহীন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে স্ক্রিনশট প্রকাশ করা হয়েছে, তা আইফোনের কিন্তু তিনি স্যামসাং ফোন ব্যবহার করেন। পদত্যাগ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যদি নিউজ করতে চান, স্টান্টবাজি নিউজ করতে চান, তাহলে এ প্রশ্ন করতে পারেন। এতদিন আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, বিন্দু-বিসর্গ যেখানে সত্যতা নেই। এই প্রশ্ন করার আগে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, কতটুকু যৌক্তিক হচ্ছে আমাকে এই প্রশ্ন করা। এই অভিযোগটি আমি মূল্যহীন মনে করি। এটা ভুয়া নিউজ।’’
হোয়াটসঅ্যাপে আলাপচারিতার এই তথ্য যে তাদের মোবাইল ফোনের- সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রসঙ্গে কালবেলার সিনিয়র রিপোর্টার জাকির হোসেন লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা যে তথ্য উল্লেখ করেছি, সেটা কিন্তু কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে কয়েকদিন ধরেই ঘুরছে। সেই তথ্যগুলো নিয়ে আমরা বিভিন্নভাবে নিশ্চিত হয়েছি, এগুলো তাদেরই কথোপকথন। তারপরই আমরা রিপোর্টটি ছেপেছি। এর আগেও এই বিষয়ে দু-একটি মিডিয়ায় রিপোর্ট হয়েছে। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকেই প্রমাণ করতে হবে এই কথপোকথন তার নয়। আর তিনি যেটা বলছেন, তার আইফোন নেই, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবারই একাধিক নম্বর রয়েছে। ফলে ফরেনসিক পরীক্ষা করালেই বোঝা যাবে সত্য ঘটনা কী।”
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ও কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের অবিশ্বাস্য রকম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন মিডিয়ায় সম্প্রতি যেসব তথ্যনির্ভর খবর পরিবেশিত হয়েছে, তা জেনে আমরা স্তম্ভিত ও উদ্বিগ্ন। বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী কর্মচারি ঐক্য ফোরামের সমন্বয়ক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এ. বি. এম. আব্দুস সাত্তার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, তারা উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন ‘সমন্বয়কারীর’ নাম ভাঙিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। তাদের এই অপকর্ম বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার, সমগ্র জনপ্রশাসন, দেশ ও জাতিকে গভীরভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। আমরা তাদের এ কুকর্মকে কখনোই মেনে নিতে পারি না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ও দায়ী অতি. সচিব ও যুগ্ম-সচিবকে চাকরি থেকে অপসারণপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানান আব্দুস সাত্তার।
সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ ওঠা খুবই গুরুতর বিষয়। সরকারের উচিত হবে দ্রুত এ ব্যাপারে তদন্ত করে মানুষকে সত্য ঘটনা জানানো। দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে কেউ অনৈতিক কাজে লিপ্ত হবেন এটা হতে পারে না। আবার কারো বিরুদ্ধে রিপোর্ট হলেই যে তিনি দোষী হয়ে গেলেন বিষয়টি এমনভাবে ভাবাও ঠিক হবে না। ফলে সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।”
তবে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, “রিপোর্টের যে ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। একজন ডিসি হিসেবে পদায়ন পেতে কেন লাখ লাখ টাকা ঘুস দেবেন? তবে আমাদের প্রশাসন ব্যবস্থার আইনেই গলদ রয়েছে। ২০১৮ সালে যে সরকারি কর্মচারি বিধিমালা করা হয়েছে, সেখানে একজন সরকারি কর্মকর্তা এক বছর জেল খেটে এসেও আবার আগের পদে যোগদান করতে পারবেন। কোনো কর্মকর্তার যদি হাজার কোটি টাকা জরিমানা হয় তারপরও তিনি চাকরিতে বহাল থাকবেন। আবার শৃঙ্খলা আপিল বিধিমালা যেটা ২০১৮ সালেই করা হয়েছে, সেখানেও প্রথম দফায় দুর্নীতির অভিযোগে কেউ অভিযুক্ত হলে তার শাস্তি শুধু তিরস্কার। কোন সভ্য দেশে এই ধরনের আইন থাকতে পারে? ফলে আইনের মধ্যেই দুর্নীতির সুযোগ রাখা হয়েছে। এটা সংশোধন করতে হবে।”
তবে মিডিয়ায় কোনো প্রতিবেদন হলেই সেটা সত্যি বলে ধরে নেওয়ার পক্ষে নন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “কোনো ঘটনা সামনে এলে সেটার তদন্ত হতে পারে। কিন্তু সেটা সত্য বলে ধরে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়। এআই’র যুগে এখন অনেক কিছুই বানানো সম্ভব, সেটাও আমাদের মনে রাখতে হবে।”

বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না: ফিরোজ

This browser does not support the audio element.

বিভিন্নভাবে নিশ্চিত হয়েছি এগুলো তাদেরই কথোপকথন: জাকির

This browser does not support the audio element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ