বাংলাদেশে ঘুস ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য কঠিন হয়ে পড়েছে। ছোট- বড় সব ধরনের ব্যবসা বা শিল্পে সেবা ও নানা ধরনের অনুমোদন পেতে অর্থ ছাড়া কাজ হয় না। এই ঘুসই এখন ব্যবসা বণিজ্যের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস) নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণায় বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যাক্তাদের ৭৭.৯ ভাগকে ব্যবসা পরিচালনা করতে কোথাও না কোথাও ঘুস দিতে হয়। ওই জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের ৬০.১ শতাংশ রাজনৈতিক চাপ এবং ৪৬.৩ শতাংশ চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে এই রিপোর্ট প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন,"উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। এই দুর্নীতি কমলে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।” তিনি আরো বলেন,"দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা দমন করতে পারলে অর্থনীতির অগ্রগতি হবে। বাংলাদেশে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা গেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে ভালো করতে হলে দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে।”
সিজিএসের গবেষণায় আরো জানা গেছে যে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ৪৩.৯ শতাংশ ব্যবসায়ীকে স্বজনপ্রীতি এবং ৪৩.১ শতাংশ ব্যবসায়ীকে অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার আশ্রয় নিতে হয়। দেশে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ১০ জনের মধ্যে নয় জন মনে করেন, এই খাতে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার হয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ৬২.৪ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, পুরো ব্যবস্থাই দুর্নীতিতে আক্রান্ত। ৭১.৩ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, দুর্নীতিকে সঙ্গে নিয়েই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
‘ব্যবসার নীতিমালাই এমন যে ব্যবসা কররলে ঘুস দিতে হবে’
৪২ ঘাটে ঘুস!
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ জহুর। তিনি জানান, সারাদেশের ৮০০ উদ্যোক্তার মধ্যে এই গবেষণাটি করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ঢাকায় আবার এসএমই উদ্যোক্তদের মধ্যে শেয়ার করে মতামত নেয়া হয়। বিষয়গুলো সরকারকেও জানানো হয়। তিনি বলেন,"১০ লাখ টাকার একটি ব্যবসা শুরু করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪২টি স্বাক্ষর লাগে। প্রতিটির জন্যই ঘুস দিতে হয়। ঘুস দিলে কাজ দ্রুত হয়, না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। যারা ঘুস দেননা তাদের সময় বেশি লাগার কারনে কস্টিং বেড়ে যায়। আবার কোনো কোনো ব্যবসা আছে যেখানে সময় গেলে সেই ব্যবসা বা ব্যবসার উপকরণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ব্যবসা বাঁচাতে তারা ঘুস দিতে বাধ্য হন। হয় ঘুস দিতে হবে, না হলে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব থাকতে হবে।”
তার কথা," নতুন ব্যবসা শুরু করা, ব্যবসার বিভিন্ন ধরনের সেবা নেয়া আবার বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স নবায়ন করা- সবখানেই দ্রুত কাজ পেতে হলে ঘুস দিতেই হবে। এটা একটা কালচারে পরিণত হয়েছে।”
২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর এশিয়ার ১৭টি দেশের পর্যন্ত মোট ২০ হাজার মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবেদন৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এশিয়ার মানুষ৷ মোট ৩৮ শতাংশ সমীক্ষার অংশগ্রহণকারী মনে করেন, গত এক বছরে তাদের দেশে দুর্নীতি বেড়েছে৷ ২৮ শতাংশের মত, যেমন ছিল তেমনই রয়েছে দুর্নীতির হার৷ ৩২ শতাংশ মনে করেন কমেছে দুর্নীতি৷
ছবি: DW/C.Vieira Teixeira
যে যে দেশের তথ্য রয়েছে
মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও তাইওয়ান থেকে মানুষ এই সমীক্ষায় অংশ নেন৷ এই সমীক্ষায় নেই পাকিস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশের তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
সরকারের দুর্নীতি
ইন্দোনেশিয়া থেকে সমীক্ষায় যারা অংশ নেন, তার মোট ৯২ শতাংশ মনে করেন দেশের সরকারই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত৷ এই সংখ্যা ভারতের জন্য ৮৯ শতাংশ, বাংলাদেশের জন্য ৭২ শতাংশ৷ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশের মত, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত সংসদসদস্যরা নিজেই৷
ছবি: Colourbox
সরকারের পদক্ষেপে খুশি, অখুশি যারা
দুর্নীতি দমনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে খুশি বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ মানুষ৷ মাত্র ১১ শতাংশ মনে করেন, সরকার তার কাজে বিফল৷ ভারতীয়দের মধ্যে ৬৩ শতাংশ মনে করেন সরকার দুর্নীতি দমনে সফল৷ ৩৪ শতাংশ এর বিরোধী৷ মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে থেকে সমীক্ষায় অংশ নেন যারা, তাদের ৯৩ শতাংশই সরকারের কাজে খুশি৷ মাত্র সাত শতাংশের মত, দুর্নীতিদমনে যথেষ্ট সচেষ্ট নয় সরকার৷
ছবি: picture-alliance/U.Baumgarten
ঘুসের তালিকায় যারা
সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৮৪ কোটি মানুষ গত বছরে কোনো না কোনো সরকারি কাজের ক্ষেত্রে ঘুস দিয়েছেন৷ ঘুস দেবার হারে এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবার আগে ভারত৷ মোট ৩৯ শতাংশের মত, গত এক বছরে ঘুস দিয়েছেন তারা৷ বাংলাদেশি সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের ঘুস দেবার কথা৷
ছবি: Privat
ভারতের পরিস্থিতি
ভারতের অংশগ্রহণকারীদের ১১ শতাংশ মানুষ কখনো না কখনো কোনো কাজ করাতে যৌন সুবিধা দেওয়া বা নেওয়ার পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন৷ পাশাপাশি, চেনাশোনা বা পরিবারের লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার তালিকাতেও ভারত সবার ওপরে (৪৬ শতাংশের মত)৷ ১৮ শতাংশ মনে করেন, দেশে ভোটও কেনাবেচা হয়৷ ৫১ শতাংশের মধ্যে সরকারের প্রতি অনাস্থা রয়েছে৷
ছবি: AP
বাংলাদেশ নিয়ে যা বলছে প্রতিবেদন
সমীক্ষার বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীদের ৮২ শতাংশের মত, সাধারণ নাগরিকের প্রতিবাদ দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ আট শতাংশের মত, নির্বাচনে ভোট কেনাবেচা হয় বাংলাদেশে৷ সমীক্ষা বলছে, এশিয়ার সব দেশেই, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে ঘুস দেবার হার আড়াই গুণ বেশি৷
ছবি: bdnews24.com
7 ছবি1 | 7
আরো জরিপ আছে:
এদিকে গত জানুয়ারি মাসে একই ধরনের একটি জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশে এই জরিপ পরিচালনা ও ফলাফল প্রকাশ করে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে তারা এই জরিপ করে। জরিপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় কৃষি উৎপাদন ও সেবা খাতে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন ব্যবসায়ী অংশ নেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৪.৬ শতাংশ জানিয়েছেন ব্যবসা সম্প্রসারণ করার এখন প্রধান বাঁধা দুর্নীতি। এছাড়া ৪৪.৬ শতাংশ মনে করছেন, ব্যবসায় আরেকটি বাধা অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল না পাওয়া। ৪৩.১ শতাংশ বলছেন. আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে তারা ব্যবসায় সুফল পাচ্ছেন না।
দুর্নীতির বিষয়ে ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন কর দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন।
ঘুসের চাপ কে বহন করে:
এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, "যেকোনো ধরনের শিল্প বা ব্যবসার নীতিমালাই এমনভাবে করা হয়েছে যে যিনি ব্যবসা করবেন তাতে ঘুস দিতেই হবে। যেমন ধরুন, এলপিজি স্টেশনের যে নিয়ম করা হয়েছে সেখানে চারপাশে অনেক জায়গা ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। এটা ঢাকা শহরে সম্ভব নয়। তাই ৭০-৮০ ভাগ স্টেশনই অবৈধভাবে চলে ঘুস দিয়ে। আরো যত নিয়ম আঝে সেগুলোও একইভাবে জটিল। আর সেই সুযোগ নেয় লাইসেন্স ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ঘুস দিলে পাওয়া যাবে, না দিলে পাওয়া যাবেনা। তাই আমরা এখন এটাকে ঘুস না বলে ব্যবসার স্পিড মানি হিসেবে ধরে বিনিয়োগের মধ্যেই রাখছি।”
ঘুসের ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ দেশগুলো
ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুসবিরোধী বৈশ্বিক সংগঠন ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল৷ এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: Colourbox/W. Zwanzger
কেমন করে এই সূচক
সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক মিথস্ক্রিয়া, ঘুস-বিরোধী তত্ত্ব ও প্রয়োগ, সরকার ও সিভিল সার্ভিসের স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ প্রকাশে সুশীল সমাজের সক্ষমতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা- প্রধানত এই চারটি ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বিবেচনায় ১-১০০’র মধ্যে স্কোরের ভিত্তিতে ঘুসের ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়েছে৷ এই সূচকে ২০০টি দেশের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে৷
ভালো-মন্দ বিবেচনায় ১-১০০’র মধ্যে যে দেশের স্কোর বেশি সেই দেশে ঘুসের ঝুঁকি সবথেকে বেশি৷ আর যে দেশের স্কোর সব থেকে কম সে দেশে ঘুস লেনদেনের ঝুঁকিও তত কম৷
ছবি: Colourbox/W. Zwanzger
শীর্ষে সোমালিয়া
ট্রেস ইন্টারন্যাশনালের ২০১৯ সালের সংস্করণে ঘুসের ঝুঁকির ক্ষেত্রে ৯৪ স্কোর নিয়ে সব থেকে তলানিতে রয়েছে সোমালিয়া৷ এর অর্থ হলো এই দেশে ঘুসের ঝুঁকি সব থেকে বেশি৷
ছবি: AFP/Getty Images/Y. Chiba
দক্ষিণ সুদান
ঘুস দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি ৯২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Messara
উত্তর কোরিয়া
পূর্ব এশিয়ার এই রাষ্ট্রটি ৮৬ স্কোর নিয়ে ঘুস লেনদেনের ঝুঁকির তালিকায় খারাপের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A. Khitrov
ইয়েমেন
মধ্যপ্রচ্যের এই দেশটি ৮৫ স্কোর নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে৷
ছবি: Colourbox
ভেনেজুয়েলা
ক্যারিবীয় সাগরের তীরে অবস্থিত এই রাষ্ট্রটি ঘুস লেনদেনের ঝুঁকির তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে৷ চারটি ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বিবেচনায় এই দেশের স্কোর ৮৫ হলেও অন্যান্য সূচক বিবেচনায় দেশটির অবস্থান ইয়েমেনের নিচে৷
ছবি: Reuters/S. Moraes
চাড
মধ্য আফ্রিকার এই দেশটিতে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের বসবাস৷ ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় ৮৪ স্কোর নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় এর অবস্থান ষষ্ঠ৷
ছবি: Reuters/Emmanuel Braun
লিবিয়া
যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটি ৮২ স্কোর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুসবিরোধী বৈশ্বিক সংগঠন ট্রেস ইন্টারন্যাশনালের ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Honda
তুর্কমেনিস্তান
লিবিয়ার সমান পয়েন্ট (৮২) হলেও অন্যান্য সূচক বিবেচনায় ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় তুর্কমেনিস্তানের অবস্থান অষ্টম৷
ছবি: DW/S. Tanka Shokran
ইকুয়েটোরিয়াল গিনি
স্কোর ৮২ হলেও প্রধান চারটিসহ অন্যান্য সূচক বিবেচনায় মধ্য আফ্রিকার দেশটির অবস্থান নবম স্থানে৷
ছবি: picture alliance/ANP
ডিআর কঙ্গো
আফ্রিকা মহাদেশের যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্র কঙ্গোর স্কোর ৮২ হলেও অন্য সূচক বিবেচনায় তালিকায় এর অবস্থান দশম৷ বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঘুসের ঝুঁকির বিষয়ে ব্যবসায়ী মহলে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্যের প্রয়োজন মেটাতে ২০১৪ সালে প্রথম এই সূচক প্রকাশ করে ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: Colourbox
কম ঝুঁকির ৫ দেশ
এই সূচকে সবচেয়ে কম ঘুসের ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি দেশ হলো- নিউজিল্যান্ড (৪ পয়েন্ট), নরওয়ে (৭ পয়েন্ট), ডেনমার্ক (৭ পয়েন্ট), সুইডেন (৮ পয়েন্ট) এবং ফিনল্যান্ড (৯ পয়েন্ট)৷ সব থেকে খারাপ অবস্থানে থাকা সোমালিয়ার স্কোর ৯৪৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
বাংলাদেশ ১৭৮তম
ঘুসের ঝুঁকির ক্ষেত্রে গতবারের চেয়ে দুই পয়েন্ট বেড়ে এবার ৭২ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১৭৮তম অবস্থানে আছে৷ এর অর্থ হলো- এদেশে ঘুসের ঝুঁকি আগের চেয়ে বেড়েছে৷ এই তালিকায় ৪৮ স্কোর নিয়ে ভারত ৭৮তম এবং ৬২ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১৫৩তম অবস্থানে আছে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
14 ছবি1 | 14
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, "করোনার সময় সরকার যে লোন দিলো তার মধ্যে একটি শর্ত লেখা ছিলো। আর তা হলো ব্যাংকগুলো সুসম্পর্কের ভিত্তিতে এই লোন দেবে। এখন এই সুসম্পর্ক যার আছে সে পাবে। যার নাই তার সুস্পর্ক করতে হবে। সেটা তো আর অর্থ ছাড়া হয় না।”
"আমাদের প্রত্যেক টেবিলে টেবিলে তো ঘুস দিতেই হয়, তারপর প্রত্যেক দপ্তরের অফিস সহায়কদেরও দিতে হয়। তা না হলে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যায় না,”বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
তার কথা," যারা বড় শিল্প বা ব্যবসার মালিক তারা সরকারকে বলতে পারেন। তারা হয়তোবা একটি উপায় বের করতে পারেন। কিন্তু যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাদের কিছু করার থাকে না। তাদের ঘুস দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।”
আর কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন মনে করেন, "ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের এই যে ঘুস দিতে হয় তার চাপ শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সাধারণকেই নিতে হয়। এর ফলে তাদের পণ্য ও সেবার উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তারা তাই দাম বাড়িয়ে পুষিয়ে নেন।”
তার কথা,"পণ্য ও সেবার এই যে বেশি দাম তার প্রধান কারণ এই খাতে ঘুস ও দুর্নীতি। এটা বন্ধ করা গেলে ক্রেতাদের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমত।”