‘‘যারা পয়সা দিয়ে চাকরিতে আসে, তারা তো প্রথমেই সেই পয়সা ওঠানোর চেষ্টা করবে৷ তারা তো সেবা দেবে না৷ তাই বিধি মোতাবেক নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত নিয়োগ হতে হবে৷’’ ডয়চে ভেলেকে বললেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা৷
বিজ্ঞাপন
‘‘যারা পয়সা দিয়ে চাকরিতে আসে, তারা তো প্রথমেই সেই পয়সা ওঠানোর চেষ্টা করবে৷ তারা তো সেবা দেবে না৷ তাই বিধি মোতাবেক নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত নিয়োগ হতে হবে৷’’ ডয়চে ভেলেকে বললেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা৷
ডয়চে ভেলে: পুলিশ বাহিনীর জনবল নিয়মিত বাড়ছে, পুলিশকে আরো শক্তিশালী করার জন্য কী করা উচিত?
নুরুল হুদা: দেখতে হবে নিয়োগটা যেন যথাযথভাবে, আইনসম্মতভাবে এবং বিধিসম্মতভাবে হয়৷ এর সঙ্গে তাদের প্রশিক্ষণও যথাযথভাবে হতে হবে৷ পুলিশের কাজটাকে বিনিয়োগ মনে করতে হবে৷ আর নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পদায়ন হতে হবে বিধি মোতাবেক৷
গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে আপনার কোনো পরামর্শ?
গোয়েন্দা কার্যক্রম তো বাড়ানোর কিছু নেই৷ এটা তো সব সময়ই দরকার হয়৷ সেটা যেন গোপনে হয়, সেজন্য নিরবে কাজ করতে হবে এবং তথ্যের উপরে বেশি জোর দিতে হবে যাতে বেশিরভাগ ঘটনাকে প্রতিরোধ করা যায়৷ প্রতিকার নয়, ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সেই বন্দোবস্ত করতে হবে৷
সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের প্রস্তুতি
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক কালেও একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বিশেষ সন্ত্রাস-দমন বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
হামলার শিকার ইউরোপ
প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস – ইউরোপের একের পর এক শহরের মানুষ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে৷ শোক সামলে নেওয়ার পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে, এমন হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত? অথবা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো?
ছবি: Reuters/E. Gaillard
জার্মানির ‘জিএসজি ৯’
বন শহরের কাছে জার্মানির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘জিএসজি ৯’-এর ঘাঁটি৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইউনিট জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, যেমনটা সম্প্রতি মিউনিখে দেখা গেছে৷ ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরায়েলি পণবন্দি নাটকের পর এই বাহিনী গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
অস্ট্রিয়ার ‘একো কোবরা’
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর এই ইউনিট সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ জার্মানির মতোই অস্ট্রিয়াও মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার পরও নড়েচড়ে বসে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথমে ‘জিইকে’ নামের বাহিনী তৈরি হয়৷ ২০০২ সালে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘একো কোবরা’৷
ছবি: Getty Images
ফ্রান্সের ‘জিআইজিএন’
ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সন্ত্রাসী হামলা, জিম্মি পরিস্থিতি, জাতীয় হুমকি ইত্যাদির সময় হস্তক্ষেপ করে৷ এই বাহিনী গঠনের পেছনেও কাজ করেছে ১৯৭২ সালে মিউনিখ হামলার ঘটনা৷ ১৯৭৪ সালে ‘জিআইজিএন’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷
ফ্রান্সের আদলে ইটালিতেও ১৯৭৭ সাল থেকে এক ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সক্রিয় রয়েছে৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে আকাশপথে দ্রুত মোতায়েন করা যায় এই বিশেষ বাহিনী৷ ভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজেও লাগানো হয় এই বাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
নেদারল্যান্ডস-এর ‘ডিএসআই’
২০০৬ সালে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় ‘ডিএসআই’ নামের এই বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ গঠন করা হয়৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ এর আগে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে এই ইউনিট গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Van Dijl
স্পেনের ‘ইউইআই’
স্পেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য ‘ইউইআই’ নামের ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ কাজ করছে ১৯৭৮ থেকে৷ সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জিম্মি নাটক – যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ইউনিটকে৷ এই বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্যে বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Saez
7 ছবি1 | 7
অর্থাৎ প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে৷ সে জন্যই তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দেয়া প্রয়োজন৷ এই কাজগুলো সাজ সাজ রব বা হৈ চৈ করে নয়, নিরবে করতে হয়৷ পেশাদারি মনোভাব নিয়ে করতে হবে৷ গোয়েন্দা কার্যক্রমে কোনোরকম রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে না৷ এই কাজ করতে হবে একমাত্র রাষ্ট্রের স্বার্থে৷
গুলশানে এবং শোলাকিয়ায় যে ঘটনা ঘটে গেল, সেক্ষেত্রে পুলিশের কি কোনো ব্যর্থতা ছিল?
ঘটনা ঘটে গেলেই যদি ব্যর্থতা হয়, তাহলে গোটা দুনিয়াতেই তো পুলিশ বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে৷ কিছু ঘটনা তো ঘটবেই৷ মানুষের অসুখ হয়৷ এটা তো আর ডাক্তারের ব্যর্থতা না৷ ঘটনা ঘটবে, কিন্তু ঘটনা যাতে কম ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ প্রতিরোধমূলক ও প্রতিকারমূলক – দুই ধরনের বন্দোবস্তই নিতে হবে৷ তাছাড়া জঙ্গিদের এই তৎপরতা শুধু তো আর বাংলাদেশে হচ্ছে না৷ বিশ্বের সব জায়গাতেই ঘটনা ঘটছে৷ প্রতিবেশী ভারতে হচ্ছে, পাকিস্তানের নাম যত কম বলা যায় ততই ভালো৷ উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের ফ্রান্সে হচ্ছে, বেলজিয়ামে হচ্ছে, অ্যামেরিকায় হচ্ছে৷ এ থেকে কারো রেহাই নেই৷ সেজন্য ঘটনা ঘটলেই ব্যর্থতা বলতে হবে, এটা ঠিক নয়৷ বরং এর থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে৷ যা বললাম, তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দিতে হবে৷ তথ্য থাকলে ভালো৷ যেমন শোলাকিয়ায় তো আমরা অনেক বড় ক্ষতি থেকে রেহাই পেয়েছি৷ একটা খবর এসেছিল যে, এখানে এমন হামলা হতে পারে৷ তাই আগে থেকেই জানতে হবে, কোথায় কোথায় এটা হতে পারে৷ এটাকে আমি ব্যর্থতা বলব না৷
পুলিশের জনবল কম থাকা কি এই ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিতে পারার কারণ?
গোয়েন্দা তথ্য বা জঙ্গিদের প্রতিরোধ করার সঙ্গে জনবলের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এটা জনবলের কাজ না৷ আসলে ঠিকমতো তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন৷ আর এর জন্য কারিগরি জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার করা দরকার৷ এর সাথে অধিক জনবলের কোনো সম্পর্ক নেই৷
নিরাপত্তা নিয়ে যা ভাবছে দেশের মানুষ
বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও ভিন্ন ধর্মের মানুষ খুন হচ্ছে৷ পুলিশ এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললেও, দেশের মানুষ খুব উদ্বিগ্ন৷ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে রিকশা চালক – আজ কতটা নিরাপদ আমরা?
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
আব্দুল্লাহ রিফাত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ রিফাত৷ তার মতে, বাড়ি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় – কোথাও তেমন নিরাপদ না কেউই৷ তবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবছেন না এই মুহূর্তে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
নাফিউল হাসান, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিউল হাসান মনে করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউই নিরাপদ নয়৷ আমরা একরকম ভয়ের মধ্যেই বসবাস করছি৷ যতক্ষণ বাইরে থাকি, বাসায় অভিভাবকরা চিন্তায় থাকেন৷ অনেক সময় তো স্বাভাবিক ঘোরাফেরাও বন্ধ করতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
প্যারিস তালুকদার, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্যারিস তালুকদার মনে করেন, গত দুই বছরের আগ পর্যন্ত নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো ভাবিনি, গভীর রাত পর্যন্তও ঘুরে বেড়াতাম বিভিন্ন জায়গায়৷ তবে গত দিনগুলোর নানান ঘটনায় আমার নিজেরই খুব ভয় হয়৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
ফারিয়া রিফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী
বেশ নির্ভিক টাইপের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ফারিয়া রিফাত৷ কিন্তু দেশের বর্তামান পরিস্থিতিটা তার কাছে খুবই ঘোলাটে মনে হচ্ছে৷ প্রত্যেক দিনই বড় কোনো অঘটন ঘটছে৷ পত্রিকা খুললেই খুন-খারাবির খবর, মনে হচ্ছে ‘মার্ডার’ করাটা এখন সহজ ক্রাইম৷ আমরা প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ ঘর থেকে বেড়িয়ে আবার যে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারব, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আরিফ জেবতিক, ব্লগার
ব্লগার আরিফ জেবতিক বললেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই আছি৷ ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছি সাবধানে থাকার চেষ্টা করছি৷ জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে৷ এই যেমন, ‘পাবলিক প্লেসে’ যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি৷ সিনেমা দেখতাম, নাটক দেখতাম, জগিং করতাম৷ এখন এগুলো আর করতে পারি না৷ যেহেতু পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই, তাই এভাবেই সাবধানে থাকতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হযরত আলী, ব্যবসায়ী
পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী হযরত আলী৷ তাঁর মতে, দেশের কোনো শ্রেণির মানুষেরই নিরাপত্তা নেই৷ দিনে-দুপুরে খুন-খারাবি চলছে৷ তাই দিন কিংবা রাত – কখনোই নিরাপদ নই আমরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হারিছ মিয়া, ফল ব্যবসায়ী
মাদারীপুরের হারিছ মিয়া গত প্রায় ১৭ বছর ধরে ঢাকায় ফলের ব্যবসা করেন৷ গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে খুন-খারাবি বেড়ে যাওয়ায় খুবই চিন্তিত তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আক্কাস আলী, দিনমজুর
পুরনো ঢাকায় ঠেলাগাড়ি চালান আক্কাস মিয়া৷ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর৷ আপাতত সন্তানদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে পালেই সন্তুষ্ট তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আব্দুর রহমান, রিকশা চালক
লালমনির হাটের আব্দুর রহমান ঢাকায় রিকশা চালান গত প্রায় ছ’বছর ধরে৷ জীবনের নিরাপত্তার চেয়েও তাঁর কাছে বেশি চিন্তার বিষয় ছিনতাই৷ রাস্তায় থাকা হয় বলে প্রতিনিয়ত অনেক ছিনতাইয়ের সাক্ষী তিনি্৷ কিন্তু জীবনের ভয়ে সেগুলোর প্রতিবাদ না করে নিরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করতে হয় তাঁকে৷ কিন্তু এতে খুবই মনোকষ্টে ভোগেন বিদ্যালয়ের প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে না পারা এই রিকশা চালক৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আবুল কালাম, অটোরিকশা চালক
শেরপুরের আবুল কালাম অটোরিকশা চালান ঢাকা শহরে৷ তাঁর কথায়, দেশে কোনো নিরাপত্তা নেই৷ যে যেভাবে পারছে খুন-খারাবি করে যাচ্ছে৷ অপরাধীরা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ অনেকে ধরা পড়ার খবর শুনলেও তাদের বিচারের আর কোনো খবর পান না বলে জানালেন এই অটোরিকশা চালক৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
10 ছবি1 | 10
অধিক জনবলের সম্পর্ক সেখানে আছে, যেখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয় বা যে সমস্ত কাজে লোকজন বেশি লাগে৷ এটা সেরকম কোনো বিষয় নয়৷ জনবল বাড়ালেই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা আরো উন্নত, আরো ভালো হয়ে যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ বরং প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে পারলে তা কাজে লাগবে৷ পুলিশকে যে সম্পদ দেয়া হয়, সেটাকে যেন বিনিয়োগ মনে করা হয়৷ কারণ এর একটা ‘রিটার্ন’ আছে৷ তবে এই ‘রিটার্ন’ চোখে দেখা যায় না৷
আপনি তো বারবার বলছেন, নিয়োগ হতে হবে বিধি মোতাবেক৷ বাংলাদেশে গত ৬-৭ বছরে প্রায় ৫০ হাজার নতুন সদস্য পুলিশে যোগ দিয়েছে৷ তা এই সব নিয়োগে কোনো ধরনের ঘাটতি আপনার চোখে পড়েছে কি?
ঘাটতি কী হয়েছে, সেটা আমি বলতে পারবো না৷ তবে খালি লোক নিয়োগ করলেই তো হবে না৷ তাঁদের প্রশিক্ষণের বিষয়টাও তো দেখতে হবে...৷ সর্বশেষ ভুয়া সনদ নিয়ে ১৯-২০ জনকে ধরা হয়েছে৷ আসলে যারা মিথ্যা বলে পুলিশে ঢুকবে, তারা তো আর ভালো কাজ করবে না৷ খবরের কাগজে অভিযোগ দেখা যায় যে, চাকরি নিতে হলে নাকি পয়সা দিতে হয়৷ তা যারা পয়সা দিয়ে চাকরিতে আসবে, সে তো প্রথমেই তার পয়সাটা উঠানোর চেষ্টা করবে৷সে তো সেবা দেবে না৷ সেজন্য বিধি মোতাবেক, নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত নিয়োগ হতে হবে৷ তবে এই ৫০ হাজারের নিয়োগ সেভাবে হয়েছে কিনা, সেটা এখন যারা চাকরি করছে তারা বলতে পারবে৷
আপনি তো পুলিশ বাহিনীর প্রধান ছিলেন৷ এই বাহিনীর সদস্যদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
‘মব়্যালিটি’ তো আর বায়বীয় পদার্থ নয়৷ মনোবল ঠিক রাখতে হলে পুলিশের বেতন-ভাতা ইত্যাদি বাড়াতে হবে৷ তবে যেহেতু তার কাজটা অন্যদের থেকে আলাদা, বেতন বাড়ালেই যে সে ভালো হয়ে যাবে তা নয়৷
আইজিপি নুরুল হুদা
এখানে তার প্রশিক্ষণটা ঠিক হতে হবে, তার ‘মোটিভেশন’-এর প্রক্রিয়ায় জোর দিতে হবে, যাতে নীতিজ্ঞান সম্পন্ন লোকেরা এই চাকরিতে থাকে৷ তাদের ‘সুপারভাইজারি’ প্রক্রিয়ায় খুব সজাগ থাকতে হবে৷ অন্যায় করলেই তাকে প্রথম চোটে ধরতে হবে, সতর্ক করতে হবে৷ একবার-দু’বার দেখতে হবে৷ কিন্তু এরপরেও না শোধরালে তাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে হবে৷ আর চাকরির প্রথম থেকেই এগুলো দেখতে হবে, যাতে অসততা বা বেআইনি কাজ-কর্ম বেড়ে না উঠতে পারে৷ সিনিয়রদের জুনিয়রদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে৷ কিছু লোক তো খারাপ থাকবেই৷ তবে তাদের সংখ্যা যাতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি যে, পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে ‘পলিটিসাইজ’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে৷ আপনাদের সময়েও কি এ সমস্যা এতটা প্রকট ছিল?
এটা আমাদের সময় যে একেবারেই ছিল না – এমন বলা যাবে না৷ তবে এটা ব্যক্তির বিচ্যুতি৷ সংগঠন তাকে কখনোই বলে না ‘পলিটিসাইজ’ হতে৷ উল্টে সংগঠন তাকে বলে আইন মোতাবেক কাজ করতে৷ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সে৷ আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী মানে তাকে আইন মোতাবেক কাজ করতে হবে৷ এই আইন মোতাবেক কাজ করতে গিয়ে কেউ যদি তাকে বেআইনি কথা বলে, সেটা মানার ব্যাপারে তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ এরপরেও সে যদি বেআইনি কাজে মদদ দেয়, তবে সেটা তার ব্যক্তিগত দুর্বলতা, ব্যক্তিগত বিচ্যুতি৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
8 ছবি1 | 8
এটার সাথে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এছাড়া রাজনৈতিক নির্বাহী যাঁরা, তাঁদেরও দেখতে হবে, রাষ্ট্রীয় এই অরগ্যান যেন পলিটিসাইজ না হয়৷ চূড়ান্ত বিচারে সরকারের হাত বদল হয়, কিন্তু রাষ্ট্রের হাত বদল হয় না৷ সে কারণে তদন্তটা যাতে ঠিকমতো হয়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ এক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব বিরাট৷ আর সংশোধনীমূলক এই প্রতিষ্ঠানে যারা নিয়োগ পাচ্ছে, তাদের যেন প্রভাবমুক্ত রাখা হয়৷ পুলিশে যাঁরা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন, তাঁদের দায়িত্ব বেশি (৭০-৮০ ভাগ)৷ বাকি ২০ ভাগ দায়িত্ব রাজনৈতিক নির্বাহীদের৷ তাই নিয়োগ যাতে প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ হয়, তা তাঁদেরও নিশ্চিত করতে হবে৷
সাবেক প্রধান হিসেবে বর্তমানে যাঁরা পুলিশে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি আপনার আহ্বান কী?
এঁরা যথেষ্ট অ্যালার্ট, ম্যাচিওর৷ এঁরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানেন৷ এঁদের বুঝতে হবে যে, তারা একটা শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করেন৷ তাই তাদের যথাযথ দায়িত্ববোধ দেখাতে হবে রাষ্ট্রের প্রতি, সমাজের প্রতি৷ এই সমাজের প্রতিও যে তাঁর একটা ‘কমিটমেন্ট’ আছে, এই দায়িত্ব পালন করার জন্য যে তাঁদেরও একটা দায়িত্ববোধ থাকা উচিত, সেটা বুঝতে হবে৷ বলা বাহুল্য, এই দায়িত্ববোধটা প্রতিফলিত হবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার মাধ্যমে, আইন মোতাবেক কাজ করার মাধ্যমে এবং তার সাথে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করার মাধ্যমে৷ এই নীতিকথাগুলো ‘ফলো’ করলেই হবে৷ এভাবে কাজ করলে নিজের কাজের প্রতি একটা সন্তুষ্টিবোধ থাকবে, তাঁরা যে সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রের হয়ে একটা গুরুদায়িত্ব পালন করছে – সেটা উপলব্ধি করবে৷ এর সঙ্গে তারা যে জনগণের সেবা করছে – এই বোধটা থাকলে নিজে থেকেই দায়িত্ব বাড়বে৷ আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর যারা অফিসার-ক্যাডার আছে, তাদের সেই দায়িত্ববোধও আছে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷