শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্কের ঝড় তুললেন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রাতে আলিপুর আদালতে অরবিন্দ ঘোষের মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, ''কথায় কথায় চাকরি খাবেন না। চাকরি গেলে খাবে কী?'' তিনি বলেন, ''আমি যদি অন্যায় করে থাকি, তাহলে আমার গালে চড় মারুন। কিছু মনে করব না। কথায় কথায় তিন-চার হাজার চাকরি চলে যাচ্ছে। তাদের সংসার আছে। মা-বাবা আছে। তাদের চলবে কী করে?''
মুখ্যমন্ত্রী জলপাইগুড়িতে দুইজনের আত্মহত্যার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ''যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। কিন্তু খাওয়ার অধিকারটুকু কেড়ে নেবেন না। ছেলেমেয়েগুলো যেন ভিক্টিমাইজ না হয়।'' মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ''আমি ক্ষমতায় এসে সিপিএমের একজনেরও চাকরি কেড়ে নিইনি।''
কলকাতার রাস্তায় কেন দণ্ডি কাটলেন নারীরা?
নারীদিবসের দিন কলকাতার রাস্তায় দণ্ডি কাটতে দেখা গেল এই মেয়েদের। কেন এই কাজ করলেন তারা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিনব প্রতিবাদ
গত ৭২৫ দিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতামান পেরোনোর পরেই দুর্নীতির জন্য তারা চাকরি পাননি বলে অভিযোগ। নারীদিবসে নারীদেরকেই সামনে রেখে তাদের প্রতিবাদ মিছিল এগিয়ে চলে। কালো পোশাক পরা নারীরা দণ্ডি কাটতে কাটতে এগিয়ে যান। কেউ ভেঙে পড়েন কান্নায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুইটি সংগঠনের ডাকে
এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল দুইটি সংগঠন। একটি হলো ময়দানে গান্ধী-মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসা নবম-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদে চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠন। তারা শিয়ালদহ থেকে রওয়ানা হয়ে এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে মঞ্চে ফেরেন। অন্যটি সরকারি কর্মীদের সংগঠন, যারা ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ধর্মতলায় দণ্ডি কাটা
ধর্মতলায় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয় মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের দণ্ডি কাটা। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সেই জন্য রাস্তায় জল ছেটাচ্ছিলেন পুরুষ কর্মপ্রার্থীরা। এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘শুনেছি দণ্ডি কাটলে ভগবানও প্রার্থনা পূরণ করেন। নারীদিবসে আমাদের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর কানে কি এই কাতর আবেদন পৌঁছচ্ছে না?”
ছবি: Subrata Goswami/DW
'দয়া চাই না, চাকরি চাই'
কারও কারও দাবি, তারা লক্ষ্মীর ভান্ডারের ৫০০ টাকার দয়া চান না, চান স্বনির্ভর হতে। বুধবার তিলোত্তমার রাজপথ সাক্ষী ছিল এমনই এক মিছিলের যার পুরোভাগে ছিলেন এসএলএসটি ২০১৬’র বঞ্চিত চাকরিপার্থী নারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সঙ্গী পুরুষরাও
নারীরা একা ছিলেন না। ছিলেন পুরুষ বিক্ষোভকারীরাও। নারীরা যখন দণ্ডি কাটছিলেন, তারা র্সাতয় জল ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। নারী সহযোদ্ধাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে সর্বত্রই ছিলেন পুরুষ কর্মপ্রার্থীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঘুম ভাঙবে কবে?
মিছিলে এক চাকরিপ্রার্থীকে কুম্ভকর্ণ সাজানো হয়। কুম্ভকর্ণ ঘুমিয়ে আছেন আর তাঁর কানের কাছে সমানে শাঁখ ও কাঁসর বাজাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চিৎকার করে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘কুম্ভকর্ণ সরকার, এ বার জাগা দরকার।’ কুম্ভকর্ণ হলেন রামায়ণের চরিত্র ও বারণের ভাই, যিনি ছয় মাস ঘুমাতেন, ছয় মাস জাগতেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতীকী মরদেহ
মিছিলে ছিল কর্মপ্রার্থীদের প্রতীকী মরদেহও। তাদের দাবি এই রাজ্যে যোগ্য কর্মপ্রার্থীদের মৃত্যু হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সফল হননি
তাদের আর্জি নিয়ে বহুবার নানা উপায়ে তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা, কিন্তু এখনো তারা সফল হননি। উল্টে তারা পেয়েছেন পুলিশের মার আর জেলে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা। এবার তারা অভিনব প্রতিবাদ দেখালেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
8 ছবি1 | 8
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন, তার এখন নিজেরই আদালতে গিয়ে সওয়াল করতে ইচ্ছে করে। তবে মুখ্যমন্ত্রী এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, এ সবই তার ব্যক্তিগত মতামত।
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, দুর্নীতিকরে যে সব শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও ডি কর্মীরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের চাকরি বাতিল করা হলো। এদের মধ্যে অনেকে খালি খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছে। অনেকে কম নম্বর পেয়ে চাকরি পেয়েছে। যোগ্যতামান পার হওয়া ছাত্রছাত্রীরা এখন রাস্তায় বসে দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ জানাচ্ছে। আর অযোগ্যরা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে বলে অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝির চাকরি গেছে
এই চাকরি যাওয়ার তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝি বৃষ্টি মুখোপাধ্য়ায়ের নামও আছে বলে বিভিন্ন
সংবাদমাধ্যমের খবর। বৃষ্টি হলেন মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাইয়ের মেয়ে। তিনি কুসুম্বা গ্রামে থাকেন।
বিক্ষোভে রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা, তাদের জীবনে উৎসব নেই
করোনার পর এবার শারদোৎসবে মেতেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। তবে চাকরিপ্রার্থীরা উৎসবের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও প্রতিবাদ
এক বছর পরেও ছবিটা বদলালো না। ২০২১ সালের দুর্গোৎসবেও ঘরবাড়ি ছেড়ে এভাবেই আন্দোলনের মধ্যে কাটিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই বছরও কাটাচ্ছেন। তারা উৎসবে নেই, প্রতিবাদে আছেন। এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে উৎসবের আলাদা তাৎপর্য নেই। তাদের দাবি, পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পরেও দুর্নীতির জন্য চাকরি পাননি। তাই সকলে যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন, ততদিন প্রতিবাদ চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিন দফার প্রতিবাদ
এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৯-এ। তিন দফায় এই আন্দোলনের বয়স আজ সাড়ে পাঁচশ দিন পেরিয়ে গেছে। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে দুর্নীতি ছিল। কতজন এইভাবে চাকরি পেয়েছেন তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঝড়-জল উপেক্ষা করে
এই কয়েকবছরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশের এই ধর্নামঞ্চ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই মানুষগুলোর কাছে অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগারও। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন অবস্থান করে চলেছেন এরা। কেউ অসুস্থ বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে কেউ বা কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে। আন্দোলন এখন এদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও
গত দুইবছর ধরে ধর্না মঞ্চেই কেটেছে উৎসবের দিনগুলি। দুইটি ঈদ, দুইটি দুর্গাপুজার মত বড় উৎসব এভাবে কেটেছে চাকরিপ্রার্থীদের। বস্তুত তাদের জীবনে উৎসব নেই, আনন্দ নেই, আছে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চাকরি পাওয়ার লড়াই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্পিতার কাহিনি
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার অর্পিতা হাজরা। ধর্নামঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য যাতায়াত মিলিয়ে সাতঘণ্টা লাগে অর্পিতার। ভোর পাঁচটায় উঠে রান্না করে তারপর আসেন, আবার বাড়ি ফিরে ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আনন্দ নয়, লড়াই
অর্পিতা জানালেন, ''ছোট্টো মেয়েটাকে নিয়ে যখন জামাকাপড়ের দোকানে গিয়ে শপিং করার কথা, পুজোর চারদিন কীভাবে কাটাব সেই পরিকল্পনা করার কথা, সেই সময় বসে রয়েছি রাস্তার ধারে। পুজোটা আমাদের কাছে প্রবল যন্ত্রণার। সকলকে আনন্দ করতে দেখে আরও যন্ত্রণা পাই ভেতরে ভেতরে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঈদও কেটেছে এখানেই
সরকারিভাবে বসতে নিষেধ ছিল, তাও এইবছর দুপুরের পরে এখানে বসেই ঈদ পালন করেছে কামরুজ্জামান, বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করাও হয়ে ওঠেনি। অন্যান্যবার দুর্গাপুজোতেও মুর্শিদাবাদের বাড়ির সামনের পুজোতেই হাজির থাকে কামরুজ্জামান। এইবছর ধর্নামঞ্চেই কাটবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরানন্দ পিঙ্কি
হুগলির পিঙ্কি সাধুখাঁ জানালেন, ''আমাদের এবারের পুজোর দিনগুলো এভাবে কাটার কথা ছিল না। চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাচ্চার হাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে অনন্দ করে বেড়ানোর কথা ছিল। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমরা দুর্নীতির শিকার, সেদিন থেকে আমাদের জীবনের আনন্দ চলে গিয়েছে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
সীমার প্রশ্ন
পুজোমণ্ডপে না গিয়ে কোলের বাচ্চা নিয়ে ধর্নামঞ্চে অবস্থান করছেন সীমা। তিনি বললেন, ''নিজের মনেই যদি আনন্দ না থাকে বাচ্চাকে কীভাবে আনন্দ দেব বলতে পারেন?''
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসব আর নেই
আশিকুল ইসলাম জানালেন, ''যোগ্য হয়েও চাকরি পাইনি। এই আনন্দে এখন আর কোনও উৎসাহ পাই না। দিনলিপি থেকে মুছে গেছে উৎসব।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুর্গারা পথে
মুর্শিদাবাদের রহুল বিশ্বাস বললেন, ''একদিকে দেবী দুর্গা পুজিত হচ্ছেন আর এখানে দুর্গারা বঞ্চিত হয়ে পথের ধারে পড়ে আছে। সরকার চাইলে যেকোনও সময় আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরুপায় তপতী
বাড়িতে সন্তানকে রেখে চুঁচুড়া থেকে প্রতিদিন এই ধর্নামঞ্চে আসেন তপতী দাস। পুজোমণ্ডপে গেলেও মন পড়ে থাকবে এই ধর্নামঞ্চে। তিনি জানালেন, ''আমরা নিরুপায়। বাধ্য হয়ে একটা আশা নিয়েই দিনের পর দিন বসে রয়েছি এখানে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চোখে জল জয়ন্তের
সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা ফোনে তাকে বার বার বাড়িতে আসতে বলছে। বাবার কোলে চড়ে ঠাকুর দেখার বায়না ছোট্ট ছেলেটার। কথাগুলো বলতে বলতে চোখ মুছতে থাকে বীরভূমের জয়ন্ত। ''যখন সারা কলকাতা আলোর রোশনাইতে মেতে উঠেছে, আমরা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে, অন্ধকারেই পড়ে আছি। দুইটি পুজো এভাবেই কেটেছে, চাকরির নিয়োগপত্র হাতে না পেলে জীবনের সব পুজো এখানেই কাটাতে পারি।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চাই
বনগাঁর সোমা মালাকার বললেন, ''দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তারা আজ পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে পুজো কাটাচ্ছে। অথচ আমরা যোগ্য হয়েও পথে পড়ে রয়েছি। চাকরির নিয়োগপত্রই আমাদের কাছে পূজার প্রসাদ। যেদিন হাতে পাব সেদিনই আমাদের সত্যিকারের পুজো।'' বললেন, বনগাঁর সোমা মালাকার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
বিজেপি নেত্রী কেয়া ঘোষ বঙ্গ টিভিকে বলেছেন, ''নিজের পরিবারকে তো আগে দেখতে হবে। পরকে সেবা করার আগে নিজের সেবা করতে হবে। তাই ভাইঝি চাকরি পেয়েছিলেন এবং সেই চাকরি গেছে। তার নিজের ভাইপোকে নিয়ে হাজারো অভিযোগ।''
কেয়া বলেছেন, ''তার ভাইয়ের বউ সমাজসেবা করে কোটি কোটি টাকা করেছেন। কী সমাজসেবা করলে কয়েক কোটি টাকা পাওয়া যায় আমার জানা নেই। নিন্দুকরা বলে কালীঘাট এলাকায় সব প্লট, বাড়ি সবই না কি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। আগে নিজের সেবা, তারপর পরের সেবা।''
তীব্র প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর কথার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ''মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণদের কথাই ভাবছেন। যোগ্যরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাদের কথা ভাবছেন না। যারা শূন্য পেয়েছে, তাদের চাকরিতে রাখার কথা ওঠে কী করে।''
সিপিএম জানিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে তারা তৃণমূল, যারা চাকরি পেয়েছে, তারা অযোগ্য এবং পয়সা দিয়ে চাকরি পেয়েছে।
গত এক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে শাসকদলের প্রভাবশালীদের। গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত হেভিওয়েটরা। এই আবহে এবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির থিমেই তৈরি হলো সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পার্থ-অর্পিতা
কয়েকমাস আগে ইডি তল্লাশিতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। সেই ঘটনাকে তুলে ধরতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি বসানো হয়েছে সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এবং দাড়িপাল্লা
সেই দুই মূর্তির সামনে রাখা আছে দাড়িপাল্লা। একপ্রান্তে নোটের বান্ডিল আর সোনার গয়না। অপরপ্রান্তে দাড়িপাল্লার টাকা এবং গয়নার ভারে হালকা হয়েছেন দেবী সরস্বতী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বঙ্গে বিক্রি বিদ্যা
কাঁকুরগাছি রেল ব্রিজ লাগোয়া এই মণ্ডপের সরস্বতী পুজোর থিম হলো বঙ্গে বিক্রি বিদ্যা'। মণ্ডপের ফ্লেক্সে লেখা 'এখানে সুলভ মূল্যে ফেলু মাস্টারদের সরকারি শিক্ষক বানানো হয়। অপা এডুকেশন সেন্টার।'
ছবি: Subrata Goswami/DW
থিমে ধর্নামঞ্চ
মণ্ডপের অন্য পাশে তৈরি হয়েছে একটি ধর্না মঞ্চ। সেখানে বিভিন্ন দাবিদাওয়া লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে ধরে ধর্না দিচ্ছেন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরিপ্রার্থীরা মঙ্গলবার সশরীরে উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উদ্যোক্তাদের বক্তব্য
পুজোর মূল উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সরকার জানালেন, একসময়ে এই পুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন তারই ভাই কাঁকুরগাছির নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। গত বিধানসভা ভোটের পর যাঁকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। ইতিমধ্যে সেই খুনের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। ভাইয়ের খুন ও দুর্নীতির প্রতিবাদেই এই থিম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আগেও হয়েছে এমন
এর আগে দুর্গাপুজোর সময়েও একাধিক রাজনৈতিক থিম দেখা গেছিল পুজো মণ্ডপে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, পুজোর মধ্যেও রাজনীতি ঢোকানো কতটা রুচিসম্মত?
ছবি: Subrata Goswami/DW
অশান্তির আশঙ্কা
সরস্বতী পুজোর এমন থিম নিয়ে অশান্তির আশঙ্কা আছে। বৃহস্পতিবার দিনভর মণ্ডপের বাইরে ছিল পুলিশি প্রহরা। শুক্রবারও থাকবে পুলিশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
8 ছবি1 | 8
''মুখ্যমন্ত্রী কেন এক পক্ষের কথা বলবেন?''
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী কেন এক পক্ষের হয়ে কথা বলবেন? বিচার চলছে। বিচারপতিরা কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তখন কেন মুখ্যমন্ত্রী সেই বিষয়ে মন্তব্য করবেন? কেনই বা নিজের ভাইঝির চাকরি যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর তিনি সোচ্চার হলেন?''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল তখন মুখ্যমন্ত্রী কেন এই ধরনের কথা বললেন। ভারতীয় আইন তো বলে, কেউ অন্যায় করলে, আইন ভাঙলে শাস্তি পেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাহলে কী করে ওই কথা বললেন? কী শাস্তি হবে সেটাও তিনি বলে দেবেন!''
আদালত আবমাননার অভিয়োগ
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এই সব কথা বলে আদালত অবমাননা করেছেন। তখন বিচারপতি শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য জানান, বিষয়টি নিয়ে বিকাশ ভট্টাচার্য মামলা করতে পারেন।