1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘূর্ণিঝড়ে বিপন্ন সুন্দরবন: তিন বছরে ক্ষতি দেড় লক্ষ কোটি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৭ নভেম্বর ২০২২

বদলে যাচ্ছে দুই বাংলার সুন্দরবন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন পরিবেশ-প্রকৃতি-মানুষ।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা সুন্দরবন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপন্ন।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা সুন্দরবন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপন্ন। ছবি: Al-emrun Garjon/AP/picture alliance

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। সাম্প্রতিক বছরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে জীবন ও সম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়েছে বিপন্ন সুন্দরবন এই এলাকায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবনের আবহাওয়া পাল্টে যাচ্ছে ক্রমশ। তাতে বিপদ বাড়ছে।

জিরো কার্বন অ্যানালিটিক্স নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু সংক্রান্ত যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে শোনা যাচ্ছে সেই বিপদঘন্টি। এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত চার দশকে ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনে। এর মধ্যে দেড় লক্ষ কোটি টাকার বেশি জীবন ও সম্পত্তিজনিত ক্ষতি হয়েছে গত তিন বছরে। এ জন্য দায়ী চারটি বড় আকারে ঘূর্ণিঝড়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে ভয়াল ঝড়ের সম্ভাবনা। গত ২১ বছরে সুন্দরবনে ১৩টি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্মৃতি ধরা আছে বাংলাদেশের উপকূলবাসীদের মনে। ২০০৭ সালে সেদেশে হানা দিয়েছিল সিডর। গত মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর তার ১৫ বছর পূর্তি হয়েছে।

একেই এই অরণ্যের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝড়ের তকমা দিচ্ছেন ডব্লিউডব্লিউএফ-এর সুন্দরবন প্রোগ্রাম অধিকর্তা অনামিত্র অনুরাগ দণ্ড। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সিডরের মতো ঝড় কিন্তু আমরা এখনো টের পাইনি। এই ধরনের ঝড়ে গাছপালার বিপুল ক্ষতি হয়। ওই ঝড় বাংলাদেশের দিকে ছিল, আমাদের দিকে আসেনি।”

‘এখানকার ছেলেরা দক্ষিণ ভারত, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে চলে যায়’

This browser does not support the audio element.

১৮৮১ থেকে ২০০১ সালে সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৪১ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে ঝড়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে ৫০ শতাংশ। তার ফলে সুন্দরবনের প্রকৃতি ও মানুষের স্থায়ী ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রাও বাড়ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক শতকে এখানে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। অথচ বদলের প্রক্রিয়া এতো দ্রুত হচ্ছে যে ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে পারে প্রায় চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। জলের তাপমাত্রা বাড়লে ভূমিক্ষয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।

প্রকৃতির পরিবর্তনের ফলে গত দুই দশকে ১১০ বর্গ কিলোমিটার ম্যানগ্রোভ অরণ্য উধাও হয়ে গিয়েছে। যেখানে ভূমি টিকে আছে, সেখানেও ম্যানগ্রোভ বিপন্ন। এই বনভূমি হারিয়ে যাওয়ার ফলে বাঁধ দুর্বল হচ্ছে। বাঁধ সহজেই ভেঙে পড়ছে দুর্যোগের সময়। এতে নোনা জলের গ্রাসে চলে যাচ্ছে জমি, যা চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর ফলে ৭২ লক্ষ মানুষের বাসস্থান ক্রমশ বেঁচে থাকার জন্য কঠিন এক কুরুক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে।

এ সবের অনিবার্য ফল স্থানীয় স্তরে কাজের সুযোগ হ্রাস। বছরের পর বছর ধরে যে এই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন রাজ্যের সাবেক সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এখানকার ছেলেরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যায়। দক্ষিণ ভারত, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে চলে যায়। খেতমজুরি থেকে আয় খুব কম। অন্যান্য জীবিকা থেকেও আয় কমছে। তাই ৬০-৭০ শতাংশ তরুণ ভিন রাজ্যে চলে যায়।”

জিরো কার্বন অ্যানালিটিক্স-এর সমীক্ষা বলছে, দুই বাংলাতেই জল ও জমিতে লবণের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৯৮৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় ছয় থেকে ১৫ গুণ বেশি লবণাক্ত হয়েছে জমি। এর ফলে জীবিকায় টান পড়েছে। গত আড়াই দশকে ১৫ লক্ষ মানুষ সুন্দরবন ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।

এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানের অধিকর্তা, অধ্যাপক তুহিন ঘোষ। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ঝড় এলে অনেকের লাভ হয়। তাই সুন্দরবন রক্ষায় না আছে সঠিক নীতি, না আছে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ। ২০০৯ সালে আয়লার পর থেকে চাল বিলি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের দুর্দশার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা নেই।”

সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি পরিবেশবিদদের চিন্তায় ফেলেছে। রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে গাছ ধ্বংস হয়। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী মারা পড়ে। জমি দুর্যোগের গ্রাসে চলে যায়। সব মিলিয়ে কত ক্ষতি, তা আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় আঁচ করা যাচ্ছে।”

ক্ষতির খতিয়ান যে দুই লক্ষ কোটিরও বেশি, এমনটা আগে অনুমান করা যায়নি। এই অঙ্ক যত বাড়বে, ততই বিপন্ন হবে সুন্দরবন।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ