১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জাগিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে আমফান৷ ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ ‘সুপার সাইক্লোন’ ভূখণ্ডে উঠে আসবে৷
বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত উপকূলীয় জেলাগুলোর ১৩ লাখ ৬৪ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার এ কাজ অব্যাহত আছে বলে জানান জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কেন্দ্রের উপসচিব কাজী তাসমীন আরা আজমিরী৷
তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার যাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছিল রাতে ঝড় আসেনি বলে তাদের অনেকে বাড়ি চলে যায়৷ আবার তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে৷ লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে৷’’
আমফান দুর্গতদের আশ্রয় দিতে মোট ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ যেখানে ৫১ লাখ ৯০ হাজার ১৪৪ জন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যেতে৷
কিন্তু দেশে এখন কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ যে কারণে ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান৷
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
ছবি: AFP/District Administration of Bhola
ঝড়ের অবস্থান
ঘূর্ণিঝড় আমফান বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে৷ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৬৫ কালোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৯০ এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো৷ এ কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে৷ ছবিতে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের একটি উপকূল দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
কখন আঘাত হানবে?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সুপার সাইক্লোনটি আজ সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
ছবি: AFP/M. U. Zaman
বাতাসের বেগ
বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
জলোচ্ছ্বাসের আশংকা
আমফানের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ১০ থেকে ১৫ ফুটেরও বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. UZ/Zaman
ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
ঐসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাসসহ অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে৷ তাই উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা নৌযানগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে৷
ছবি: AFP/D. Sarkar
২২ লাখ মানুষকে অপসারণ
উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে ২২ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ তবে করোনা ভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব মানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: AFP/District Administration of Bhola
করোনা ভাইরাস
করোনা ভাইরাসের কারণে প্রস্তুতি প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলছে৷ সামাজিক দূরত্ব, নির্দিষ্ট পোশাক সবদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছেন কর্মীরা৷
ছবি: AFP/District Administration of Bhola
নিরাপত্তা
খুলনায় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে দুর্ঘটনার আশংকায় বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড থেকে তারপোলিন সরাচ্ছেন এক কর্মী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সিডরের চেয়ে শক্তিশালী
এই ঘূর্ণিঝড়টি ২০০৭ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়েও শক্তিশালী বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ সিডরের আঘাতে (ছবি) প্রাণ হারিয়েছিলেন সাড়ে তিন হাজার মানুষ৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন
এ যাবতকালের রেকর্ডের মধ্যে ভারত মহাসাগরের উত্তর পূর্বাঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটিকে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন বলছেন আবহাওয়াবিদেরা৷ (ফাইল ছবি)
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
10 ছবি1 | 10
দুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য উপকূলীয় এলাকার স্কুল-কলেজ ভবন খুলে দেওয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে৷ বাগেরহাট জেলা প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নজরদারি করছে৷ স্থানীয় প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি আশ্রয়কেন্দ্রের এসব মানুষদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও মোমবাতি সরবরাহ করেছে৷ এছাড়া গবাদি পশুও আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷
বুধবার স্থানীয় সকাল ৯টায় আবহওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আমফান এগিয়ে এসে বাংলাদেশ উপকূলের ৩৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছে৷ এ সময় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরেও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস৷
বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড়পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ তখন এর বাতাসের শক্তি থাকতে পারে ঘণ্টায় প্রায় দেড়শ কিলোমিটার বা তার বেশি৷
ঝড়ের সময় উপকূলীয় জেলার দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে৷
গত ১৬ মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া আমফান ধাপে ধাপে শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনের রূপ নেয়৷ তবে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার পথে কিছুটা শক্তি হারিয়ে এটি এখন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে রয়েছে৷
ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার সময় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে৷ সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে৷
এসএনএল/কেএম(বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়
ছবিঘরে ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়ের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অ্যাটলান্টিকের হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুন এবং ভারত মহাসাগরের সাইক্লোন নামে পরিচিত৷ সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: Getty Images
২০০৮: নার্গিস (মিয়ানমার)
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস৷ ২০০৮ সালের মে মাসে যেটি মিয়ানমারে আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়৷
ছবি: Hla Hla Htay/AFP/Getty Images
১৯৯১ সাল: বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেটি ২৯শে এপ্রিল ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হেনেছিল৷ সমুদ্রের পানির উচ্চতা পৌঁছে গিয়েছিল সাত মিটার উঁচুতে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছিল উপকূলের অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷
ছবি: AFP/Getty Images
১৮৭৬: দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ
১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বরিশালের বাকেরগঞ্জে৷ সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৭৫: নিনা টাইফুন, চীন
যদিও চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, তবুও ১৯৭৫ সালের ৩১ শে জুলাই চীনের হেনান প্রদেশে টাইফুন নিনার ভয়াবহতা সব ঝড়কে পেছনে ফেলে দেয়৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Zc
১৮৮১ সাল: হাইফোং, ভিয়েতনাম
১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ভয়াবহ টাইফুন আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ৩ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/J. Aznar
১৯৩৭ এবং ১৮৩৯ সাল: ভারত
১৭৩৭ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ধেয়ে এসে কলকাতায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড়৷ বেশিরভাগ ইউরোপীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় তিন লাখ মানুষ৷ কিন্তু সেসময় কলকাতায় মাত্র ১০ হাজার মানুষ বসবাস করত৷ তাই এই সংখ্যাটি নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে৷ ১৮৩৯ সালের নভেম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশের কোরিঙ্গা এলাকায় বিধ্বংসী ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত তিন লাখ মানুষ৷ নষ্ট হয়েছিল ২৫ হাজার জাহাজ৷
ছবি: Reuters
১৯৭০ সাল: ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ
বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে৷ ১৯৭০ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন৷ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে এক লাখই ছিলেন জেলে৷