1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ মে ২০১৯

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকুলে আঘাত হানতে পারে৷ গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে৷ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোয় প্রধান চ্যালেঞ্জ লোকজনকে সাইক্লোন সেন্টারে নেয়া৷ 

ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Str

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের জরুরি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অতীতে আমরা দেখেছি, যারা দুর্যোগের আশঙ্কার মধ্যে থাকেন, তাদের একটি অংশ নানা কারণে সাইক্লোন সেন্টারে যেতে চান না বা যান না৷ এবার আমরা নির্দেশ দিয়েছি শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে সাইক্লোন সেন্টারে যেতে হবে৷ যাঁরা যেতে চান না বা যাবেন না, তাদের আমরা নিয়ে যাবো৷ এজন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং ভলান্টিয়ারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ কেউ যেতে না চাইলে জোর করে নেয়া হবে৷''

ফণী'র আঘাতে বাংলাদেশের উপকুলীয় ১৯ জেলার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে উপকুলীয় এলাকায়৷ জেলাগুলো হলো, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর৷

কেউ যেতে না চাইলে জোর করে নেয়া হবে: হাফিজুর রহমান

This browser does not support the audio element.

উপকুলীয় জেলা পিরোজপুরের সাংবাদিক দেবদাস মজুমদার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘যাঁরা একদম উপকুলবর্তী এলাকায় থাকেন, তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে যান৷ কিন্তু যাঁরা উপকুল থেকে একটু দূরে থাকেন, তাঁরা তাঁদের বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পদ রেখে, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না৷ তাঁরা অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও নিজেদের বাড়ি-ঘরে অবস্থান করেন এবং দুঃখজনক ঘটনা ঘটে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দূরত্বও একটা কারণ৷ সব কিছু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে না পারায় অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নেন৷ আবার এখন উপকুলীয় এলকাকায় অনেক পাকা বাড়ি হয়েছে৷ কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে প্রতিবেশীদের পাকা ভবনে আশ্রয় নেন৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে সিডরের পর উপকূলীয় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অনেক উন্নত হয়েছে৷ কোনো কোনোটি তিন তলা৷ সেখানে গবাদি পশু রাখারও ব্যবস্থা আছে৷ স্কুল-কলেজগুলোকেও আশ্রয় কেন্দ্রের রূপ দেয়া হয়েছে৷ আর এবার আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের খবরের কারণে উপকুলীয় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে৷ সচেতনতা বেড়েছে৷ ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার হার এবার বেশি৷’’

সিডরের পর আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অনেক উন্নত হয়েছে: দেবদাস মজুমদার

This browser does not support the audio element.

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘শুক্রবার (৩ মে) বিকাল নাগাদ ফণী ভারতের ওড়িষা উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে৷ সেই হিসেবে সন্ধ্যার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার কথা৷’’

তিনি  বলেন, ‘‘এখন ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার৷ তবে ভারত উপকূল হয়ে এলে ফণীর গতি কিছুটা কমতে পারে৷ আমাদের ধারণা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এটি হয়তো ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে যেতে পারে৷’’

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেশের ১৯ জেলায় ১৯টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে৷ ঢাকায় মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে আরো দু'টি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে৷ পুলিশ,  কোস্ট গার্ড এবং ভলান্টিয়ার প্রস্তুত আছে৷ মোট ৫৬ হাজার ভলান্টিয়ারের মধ্যে ১০ হাজার এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন৷

উপকুলীয় জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷ দেশের নৌপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ সমূদ্র ও নৌবন্দরে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে৷

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা তিন পর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়েছে– ঝড়ের আগে, ঝড়ের সময় এবং ঝড়ের পরে৷ খাদ্য, মেডিকেল টিম, যানবাহন সবই প্রস্তুত আছে৷ জেলা প্রশাসকরা প্রতিটি জেলায় এই দুর্যোগ মোকাবেলা কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷

পর্যাপ্ত খাদ্য এবং ওষুধ মজুদ আছে: আশরাফুল আশরাফ

This browser does not support the audio element.

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আশরাফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলা টিমগুলোর বৈঠক করে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি৷ দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে৷ ভলান্টিয়ার প্রস্তুত আছে৷ মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিস ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুত আছে৷ আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এরইমধ্যে খুলে দিয়েছি৷ সেখানে আমাদের লোকজন আছেন৷’’

তিনি জানান, ‘‘কক্সবাজারে মোট ৭ হাজার ভলান্টিয়ার প্রস্তুত আছেন৷ এর বাইরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আছেন আরো দেড় হাজার ভলান্টিয়ার৷ মোট ৭৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র আমরা প্রস্তুত রেখেছি৷ আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য এবং ওষুধ মজুদ আছে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি আশ্রয় কেন্দ্রে না যেতে চান এবং আমরা যদি মনে করি তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন আছে, তাহলে তাঁদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাবো৷’’

দুর্যোগে হতাহতের সংখ্যা যাতে শূন্য রাখা যায় সেই প্রস্তুতি নিয়েছি: মন্ত্রী

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে  উপকুলীয় এলাকায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র আছে৷ তাছাড়া ওইসব এলাকার স্কুল ও মাদ্রাসা ও সরকারি ভবন এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ঘূর্ণিঝও ও জলোচ্ছাসের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ সাধারণভাবে উপকুলীয় জেলাগুলোর  শতকরা ১০-১২ ভাগ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের  নিয়ন্ত্রণ কক্ষের জরুরি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হফিজুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র আছে৷’’

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা এই দুর্যোগে হতাহতের সংখ্যা যাতে শূন্য রাখা যায়, সেই প্রস্তুতি নিয়েছি৷  আমরা ১৯টি জেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সার্বিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করেছি৷ প্রত্যেক জেলায় খাদ্য, অর্থ, ওষুধ এবং জরুরি সহায়তা পাঠানো হয়েছে৷ ৪,০৭১ টি আশ্রয় কেন্দ্রে সোলার বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে৷ প্রচলিত মিডিয়ার বাইরেও কমিউনিটি রেডিও'র মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায়  প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবেশন করা  হচ্ছে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘যাঁর প্রয়োজন, তাঁকে সাইক্লোন সেন্টারে যেতেই হবে৷ প্রয়োজনে কোলে করে নিয়ে যাবো৷ আমরা কাউকে মৃত্যুর মুখে রাখতে পারি না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ