ফ্রান্সের নিস শহরে ছুরিকাঘাতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান জার্মানির রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ তবে এও বলেছেন, কোন রাষ্ট্র যেন ঘৃণা ও ভিন্নদের প্রতি ভয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রত্যুত্তর না দেয়৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে শুক্রবার জার্মান রাষ্ট্রপতি নিসের ঘটনার নিন্দা জানান৷ তিনি বলেন, তিনি এখন শুধুই মৃতদের পরিবারের কথাই ভাবছেন৷ একই সাথে তিনি বলেন যে, এই ধরনের ঘটনার প্রত্যুত্তর কখনোই ঘৃণা ও ‘জেনোফোবিয়ার’ (ভিন্নদের প্রতি ভয়) দ্বারা চালিত হওয়া উচিত নয়৷
ঘৃণার বিপরীতে কখনোই পাল্টা ঘৃণা নয়, এমনটাই মনে করেন স্টাইনমায়ার৷ সহিংসতার বিরুদ্ধে কিভাবে লড়তে হবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, শুধু ফ্রান্স নয়, গোটা ইউরোপেই আমাদের এখন এই ধরনের হিংস্র আচরণ ও তার পেছনের উগ্র ইসলামপন্থি মনোভাবের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়া উচিত৷ কিন্তু আমাদের মত গণতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া যেন ঘৃণা ও জেনোফোবিয়া দ্বারা পরিচালিত না হয়৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘পারস্পরিক সম্মান আমাদের সমাজের অংশ৷ এই ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েও আমাদের উদারতা থেকে সরলে চলবে না৷ সেটা আরেকটি চ্যালেঞ্জ৷’’
ফ্রান্সের নিস শহরে গির্জার সামনে হামলা চালায় যে ব্যক্তি, সে ইটালি থেকে ফ্রান্সে প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে৷ ২১ বছর বয়েসি সেই হামলাকারী তিউনিশিয়ার নাগরিক৷ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মতো তিউনিশিয়া থেকেও এই হামলার তীব্র নিন্দা উঠে এসেছে৷
রোজালিয়া রোমানিয়েক, রেবেকা স্টাউডেনমায়ার/এসএস
মুসলিম বিশ্বে ফ্রান্সের গির্জায় হত্যার প্রতিবাদ
মুসলিম বিশ্বেও চলছে নিস শহরে ছুরি মেরে তিনজনকে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ৷ ছবিঘরে দেখুন কী বলছে মুসলিম বিশ্ব...
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
কী ঘটেছিল?
ফ্রান্সের নিস শহরের এক গির্জায় ছুরি হামলায় তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আহত হয়েছেন কয়েকজন৷ তিউনিশিয়া থেকে আসা হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে৷
ছবি: Gaillard Eric/abaca/picture alliance
ফ্রান্সের মুসলিম সংগঠনের নিন্দা
ফ্রান্সের মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল ফর দ্য মুসলিম ফেইথ-এর মুখপাত্র বলেন, ‘‘মৃতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ও মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আমরা ফ্রান্সের সকল মুসলমানকে (ঈদে মিলাদুন্নবী) উদযাপন স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’ এই হামলার নিন্দাও জানায় সংগঠনটি৷
ছবি: NorbertScanella/PanoramiC/imago images
৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসি-র বক্তব্য
অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বলেছে এই হামলার ঘটনায় তাদের ‘‘কড়া অবস্থান, যা সব ধরনের চরমপন্থা ও স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে৷’’ জোটের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘‘কারণ যা-ই হোক না কেন, আমাদের অবস্থান সব ধরনের ঘৃণা ও হিংসার বিরুদ্ধে৷’’
ছবি: Laily Rachev/Biro Pers Setpres
তুরস্ক যা বলেছে
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়াভাষায় এই হামলার সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে৷ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘কাউকে মেরে ফেলা বা সহিংসতার জন্য কোনো কারণই যথেষ্ট নয়৷ একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থানে যারা এই কাজ করেছে, তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ধর্মীয়, মানবিক বা নৈতিক গুণ নেই৷’’
ছবি: picture-alliance/TASS/dpa/S. Bobylev
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিন্দা
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ এক টুইটে বলেন, এই ধরনের হামলা আসলে ধারাবাহিক উসকানি ও সহিংসতার অংশ, যা অবলিম্বে বন্ধ হওয়া উচিত৷ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই চলমান ঘৃণা, উসকানি ও সহিংসতার ধারাবাহিকতাকে যুক্তি দিয়ে থামাতে হবে৷ আমাদের বুঝতে হবে যে, চরমপন্থা থেকে কেবল চরমপন্থাই জন্ম নেয়, এমন উসকানির মাধ্যমে শান্তি সম্ভব নয়৷’’
মিশরের রাজধানী কায়রোর আল-আজহার গ্রান্ড মুফতি আহমেদ আল-তায়েব বলেছেন, ‘‘এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না৷ এর সাথে উসলাম বা মহানবির কোনো সম্পর্ক নেই৷’’
হামলাকারীর দেশ তিউনিশিয়াও কড়া ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ তিউনিশিয়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই সন্ত্রাসবাদী কাজের তীব্র নিন্দা করছে এবং পুরোপুরি ফ্রান্সের পাশে আছে৷
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল
যুক্তরাজ্যের মুসলিম কাউন্সিল টুইট করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ টুইটে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে একটি ধর্মীয় স্থানে, কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/empics/D. Dawson
এবং সৌদি আরব
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও টুইটারে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেশটি বলেছে, সৌদি আরব ‘‘এমন সব আচরণকেই পুরোপুরি নাকচ করে, যা সব ধর্মীয় ও মানবিক বিশ্বাসের বিরোধী৷’’