চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট আবার সাধারণ রোগীদেরও হবে কবে?
১৩ জুন ২০২৫
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে পুরোদমে হাসপাতালের কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানে আহত রোগীরা শনিবার আবারও হাসপাতালের বেডে ওঠার ঘোষণা দিয়েছে৷ ফলে আরো সংকটময় পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা৷ বর্তমানে জুলাই-আগস্টে আহত ৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন৷ অন্যরা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেছেন৷
শুক্রবার সরেজমিনে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে ভুতুড়ে পরিবেশ৷ গেইটের সামনে আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন৷ ভেতরের বিভিন্ন ফ্লোরে আনসার সদস্যরা বসে আছেন৷ চতুর্থ তলার বি ব্লকে দুইজন নার্সের পাশাপাশি একজন আনসার সদস্যকেও পাওয়া গেল৷ সেখানেই ভর্তি আছেন জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ের আহতরা৷
‘আমাকে সিঙ্গাপুরেও পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সেখানে সঠিক চিকিৎসা হয়নি'
বি ব্লকে ৬৪টি বেড আছে৷ সেখানে শুক্রবার পাওয়া গেল মাত্র ৫ জনকে৷ তিনটি কক্ষে তারা আছেন৷ তাদের একজন ইমরান হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ডান চোখে সমস্যা৷ আমাকে সিঙ্গাপুরেও পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু সেখানে সঠিক চিকিৎসা হয়নি৷ আমার আরো উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন৷ কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থা করছে না৷ এই কারণে আমি হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছি না৷ এখান থেকে চলে গেলে কেউ আর খোঁজ নেবে না৷”
২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট থেকে এই হাসপাতালে আছেন ইমরান৷ তার সঙ্গে আছেন নূর আলম, ফিরোজ, রাজু ও মামুন৷ তাদের সকলের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে৷ আলাপকালে নূর হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যাদের মামা-খালু আছে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে৷ আমি তো উচ্চকণ্ঠে কথা বলতে পারি না, এজন্য আমার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে না৷ আমার দুই চোখেই স্প্লিন্টার রয়ে গেছে৷ সারা শরীরে স্প্লিন্টার আছে৷ এমনকি গোপনাঙ্গেও একটা স্প্লিন্টার আছে৷ কিন্তু আমার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না৷”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হুসাইন মো. মনিরুল আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সরকারের সব এজেন্সি বিষয়টি জানে৷ সরকারের উর্ধ্বতন মহলও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত৷ আমরা আশা করছি, শনিবার থেকে হাসপাতালটির কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা যাবে৷ এখন আর কেউ অযথা ঝামেলা করবে না৷”
অচলাবস্থার কারণ
গত ২৮ মে অভ্যুত্থানের সময় আহত রায়হান নামে এক রোগী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে একজন নারী রোগীর কাগজে সই করিয়ে আনেন৷ এরপর রায়হান যখন সব সিরিয়াল ভেঙে ওই নারী রোগীকে দেখানোর জন্য সামনে নিয়ে যান, তখন হাসপাতালের কর্মচারীরা তাতে বাধা দেন৷ তখন ওই নারী রোগী দাবি করেন, আগে দেখানোর কথা বলে তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছেন রায়হান৷ এ নিয়ে রায়হানের সঙ্গে কর্মচারীদের তর্কাতর্কি হয়৷ এক পর্যায়ে রায়হান অভ্যুত্থানের সময় আহত আরো কয়েকজনকে ডেকে এনে কর্মচারীদের মারধর করেন৷ কর্মচারীরাও একজোট হয়ে প্রতিহত করতে গেলে দু' পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়৷
ওই দিন থেকে কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা৷ জরুরি বিভাগ ছাড়া নিয়মিত অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে সব চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন৷ এ কারণে সকাল থেকেই হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগী ও সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়৷ যাদের পূর্বনির্ধারিত অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল, তাদেরও ফিরে যেতে হয়৷ এতে সেবাপ্রার্থীরা হইহুল্লোড় ও হট্টগোল করতে থাকেন৷ চিকিৎসক ও নার্সদের দিকে তেড়ে যান৷ এসময় আনসার সদস্যরা নিবৃত করতে গেলে হাতাহাতি হয়৷ হাসপাতালের কর্মী ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে মারামারিও হয়৷
এরপর পুরো হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ভেতরের সব ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেট আটকে তালা দিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা৷ বিষয়টি নিজেদের জন্য আতঙ্কের বা আক্রমণাত্মক হতে পারে- এমন আশঙ্কায় উল্টো তালা ভেঙে জুলাই আহতরা লাঠিসোঁটা ও রড হাতে চিকিৎসক, কর্মী ও সেবাপ্রার্থীদের এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন৷ তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন পঙ্গু হাসপাতালে থাকা জুলাই আহতরাও৷ এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ ১৫ জন আহত হন৷ এরপর আতঙ্কে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের বেশিরভাগ দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যান৷ কেউ কেউ ভেতরে আটকা পড়লে সেনাসদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন৷ এরপরই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম৷ কার্যত ওইদিন থেকে পুরো হাসপাতাল জুলাই আহতদের দখলে চলে যায়৷ এরপর থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না চিকিৎসক-নার্স ও অন্য কর্মীরা৷ সেখানে এখন শুধু জুলাই আহতরা অবস্থান করছেন৷ সরকার রুটিনমাফিক তাদের জন্য খাবার সরবরাহ করছে৷
সংকট নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন, সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ অনেকে চেষ্টা করেও বিষয়টি সমাধানের দিকে নিয়ে আসতে পারেননি৷ এরই মধ্যে গত কয়েকদিন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীসহ নানান পক্ষের তৎপরতায় দফায় দফায় বৈঠক হয়, তদন্ত কমিটি কাজ করে৷ অবশেষে গত ৩ জুন হাসপাতালের জরুরি বিভাগটি চালুর সিদ্ধান্ত হয়৷ পাশাপাশি দেশসেরা চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ বলা হয়, মেডিকেল বোর্ড ৪ জুন হাসপাতাল পরিদর্শন করবে৷ একই সঙ্গে বোর্ড জুলাই আহতদের চিকিৎসা সমন্বয় এবং সামগ্রিক কার্যক্রম নির্ণয় করবে৷
প্রতিদিন সেবাবঞ্চিত পাঁচ হাজার মানুষ
সরকারের ৬০০ কোটি টাকার সরঞ্জামসমৃদ্ধ অত্যাধুনিক এ হাসপাতালটি ১৭ দিন ধরে বন্ধ৷ প্রতিদিন পাঁচ হাজার মানুষ সেবাবঞ্চিত হচ্ছে৷ গত ৪ জুন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরাও হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন৷ তারা এসে ২০৭ নম্বর রুমে ভর্তি থাকা ৫৪ জন জুলাই আহতের সঙ্গে চিকিৎসাসংক্রান্ত বৈঠকে বসতে চান৷ আহতদের মধ্যে ৩০ জন তাদের ডাকে সাড়া দেন৷ তাদের সবার চোখ পরীক্ষা করেন বোর্ডের সদস্যরা৷ তাদের সবাইকে ছাড়পত্র (রিলিজ) দেওয়া এবং পুনর্বাসন করার সুপারিশ করে মেডিকেল বোর্ড৷ বাকি ২৪ জন হাজির না হওয়ায় তাদের ব্যাপারে কিছু করা যায়নি৷ জানা গেছে, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা চলে যাওয়ার পর জরুরি বিভাগের সামনে আবাসিক চিকিৎসক (আরএস)-এর রুমে জুলাই আহতরা চিকিৎসকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন৷ জুলাই আহতরা সাফ জানিয়ে দেন, নানান কারণে তাদের ঢাকায় আসতে হয়৷ তারা জানতে চান, ঢাকায় এসে তারা থাকবেন কোথায়? এজন্য তাদের পক্ষে হাসপাতাল ছাড়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দেন তারা৷ এসময় জুলাই আহতদের পক্ষ থেকে রিলিজের যাবতীয় কাগজ ছিঁড়ে ফেলে হাসপাতাল থেকে না যাওয়ার কথাও জানিয়ে দেয়া হয়৷
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত৷ আমাদের মধ্যেও এ বিষয়ে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে৷ আমরাও চাচ্ছি, দ্রুত বিষয়টির একটা সমাধান হোক৷”
কী বলেছে মেডিকেল বোর্ড?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোস্তাক আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এর চক্ষু বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাঈল হোসেন এবং ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের যৌথ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন গত ৪ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর জমা দেওয়া হয়৷
প্রতিবেদনে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে : ১. রোগীদের প্রদত্ত চিকিৎসা এবং চলমান চিকিৎসা সন্তোষজনক; ২. আপাতত রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে প্রয়োজনে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগের জন্য উপদেশ দেওয়া হলো; ৩. বিশেষ ক্ষেত্রে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করার জন্য উপদেশ দেওয়া হলো এবং ৪. তাদের অতিসত্বর যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জন্য জোর সুপারিশ করা হলো৷
প্রতিবেদন মোতাবেক মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত প্রতিপালনে কাজ করতে গিয়ে সেদিন (৪ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম৷ পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তিনি বের হন৷
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসক ডয়চে ভেলেকে বলেন, জুলাই আহতদের কেউ কেউ এত দিন বলেছে, এখানে চিকিৎসা ভালো নয়৷ সরকার এখন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের চেয়ারম্যান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চক্ষু বিভাগের প্রধান এবং ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকার বিভাগীয় প্রধানের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দিলো৷ দেশসেরা এই চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসার বিষয়ে মতামত দিলেন, কিন্তু তারা এটাও মানে না৷
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ ভুয়া হাসপাতাল!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসা জুলাই আহতদের একজন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালকের সামনে বলেছেন, ‘‘ওটা (মাউন্ট এলিজাবেথ) ভুয়া হাসপাতাল৷ আমাদের অ্যামেরিকা বা ইউরোপ পাঠান৷’’
হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তারা (জুলাই আহত) অনেক বড় স্যাক্রিফাইস করেছে৷ তাদের অনেকের দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত, অনেকের এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত৷ আমরা সাধ্যের পুরোটা দিয়েই চিকিৎসা দিয়েছি৷ এমনকি যাদের প্রয়োজন, তাদের বিদেশে পাঠিয়েছি৷ বিদেশ থেকে বিখ্যাত ডাক্তারদের এনেও চিকিৎসা করিয়েছি৷ তাদের এখন প্রয়োজন পুনর্বাসন৷ সেটিও মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায় বলেছি৷ সমন্বিত প্রচেষ্টা চলমান৷ এরই মধ্যে পরপর কয়েকটি ঘটনা তারা ঘটিয়েছে৷ যেসব ঘটনায় আমরা বিব্রত৷ তারপরও তাদের মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম৷ সর্বশেষ গত ২৮ মে তারা যেভাবে চিকিৎসক ও স্টাফদের গায়ে হাত তুলেছে, এতে তারা (ডাক্তার-স্টাফ) অনিরাপদ বোধ করছেন৷ হাসপাতালে আসতে চাইছেন না৷ তদের নিরাপত্তা দেবো কিভাবে?”
ডা. চৌধুরী আরো বলেন, "জুলাই আহতদের চিকিৎসাটা এখন মূলত ফলোআপ বা চলমান চিকিৎসা৷ এজন্য তাদের এনআইওর (জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতাল) মতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই৷ যার যার এলাকায় ফেরত যেতে পারে৷ তাদের অসুস্থতার সিম্পটম দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মেডিকেল কলেজগুলোর চক্ষু বিভাগে যাবে, সেখানে তাদের সেবা দিতে পারবে৷ যদি ওই হাসপাতাল মনে করে অস্ত্রোপচার লাগবে বা বিশেষায়িত কোনো সেবা লাগবে, তারা এনআইওতে রেফার করবে৷ আমরা সেটা করে দেবো৷ অথবা সরকার যদি মনে করে তাদের ঢাকার হাসপাতালে রেখেই সেবা দেবে, তাহলে অন্য হাসপাতালে শিফট করতে হবে৷”
কেন হাসপাতাল ছাড়তে চায় না তারা?
জুলাই আহতরা কেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরও হাসপাতাল ছাড়ছেন না? হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সেটেল' হওয়ার জন্য ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়া অথবা যথাযথ পুনর্বাসনের আশায় থাকা এর অন্যতম কারণ ৷ জুলাই আহদের ধারণা, হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলে সরকার বা কর্তৃপক্ষের নজর তাদের দিকে থাকবে না৷ জুলাই আহতদের মধ্যে দু-একজন অর্থের বিনিময়ে অন্য রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি, অপারেশনের সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়াসহ নানান তদবিরে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ আবার কেউ কেউ সেখানে বসে ওই হাসপাতালসহ ঢাকার অন্য হাসপাতালগুলোর নিয়োগ ও টেন্ডারে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে৷ জোটবদ্ধ হয়ে হাসপাতাল ও বিভিন্ন দপ্তরে যাচ্ছেন তারা৷
এছাড়া হাসপাতালে আছেন এমন দু-একজনের যাওয়ার মতো জায়গা নেই বলে বউ-বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালেই থাকেন৷ তাদের একজনের নামে দুই থানায় মাদক মামলা আছে, অভিযোগপত্র দাখিলও হয়ে গেছে৷ হাসপাতাল থেকে চলে গেলে গ্রেপ্তারের ভয় আছে তার৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের আহ্বানে তাৎক্ষণিক যে কোনো কর্মসূচিতে সবার আগে দৌড়ে গিয়ে যোগ দেন এই হাসপাতালে অবস্থানরত আহতরা৷ এ কারণে তাদের বিষয়ে ছাত্র সমন্বয়করাও কঠোর সিদ্ধান্তে যাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্টদের অনেকেরই ধারণা৷
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের সময়ের এই আহতদের অনেকের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়৷ তাই জুলাই ফাউন্ডেশনসহ নানান জায়গার কাজে তাদের ঢাকায় আসতে হয়৷ কিন্তু ঢাকায় তাদের থাকার জায়গা নেই৷ তাই হাসপাতালটিতে দখলে রাখা সিট তারা ছাড়তে চান না৷