চট্টগ্রামে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ২৫ জন৷ বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি৷
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় রোববার সকালে একটি পাঁচতলা ভবনের সামনে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ এতে বাড়িটির সীমানা প্রাচীরের এক অংশ ধ্বসে পড়ে৷ দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে সাত পথচারীর৷ স্থানীয় থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এপি৷
ঘটনাস্থল থেকে আহত অন্তত পঁচিশজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান মহসিন৷ ঘটনার পর উদ্ধারকাজে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস৷ কী কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে ১৭ জনকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পর সেখানে সাতজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী সংবাদ মাধ্যমটিকে জানান, বিল্ডিংয়ের নিচতলায় সীমানা প্রাচীরের পাশেই ওই বাড়ির গ্যাস রাইজার ছিল৷ সেখানেই বিস্ফোরণ হয়েছে৷
তিনি বলেন. ‘‘হয়ত রাইজারে কোনো সমস্যা ছিল, হয়ত লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে জমে গিয়েছিল৷ সকালে বাসায় কেউ আগুন ধরালে তাতে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে৷''
৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাইল বালি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন,‘‘বিস্ফোরণের পর ভবনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে রাস্তায় মানুষের ওপর পড়ে৷ আমরা পিকআপ ভ্যানে করে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি, তাদের মধ্যে পথচারীও ছিল৷ ক্ষতিগ্রস্ত রিকশা এখনও রাস্তায় পড়ে আছে৷''
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন৷ আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সিটি করপোরেশন থেকে বহন করা হবে জানান তিনি৷
নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন৷ বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জে এম শরিফুল হাসানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷
গ্যাস লিক বা বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা ঘটে প্রায়ই৷ অগ্নিকাণ্ড, অগ্নিদগ্ধ কিংবা গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যাটাও ভীষণ উদ্বেগের৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Bernetti
২০১৮ সালে ১০৩ দুর্ঘটনা
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে গ্যাস দুর্ঘটনায় ১০৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে৷ এর মধ্যে গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে ৫৫টি এবং এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে ৪৮টি ঘটনা ঘটেছে৷ ঘটনাস্থলেই মারা গেছে শিশুসহ ছয়জন৷ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৩১ জনকে৷ চিকিৎসাধীন অবস্থায় যাঁরা হাসপাতালে মারা গেছেন, তাঁদের হিসাব ফায়ার সার্ভিসের খাতায় নেই৷
ছবি: bdnews24
২০১৭ সালে দুর্ঘটনা ২৩৮!
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালে চুলা থেকে সৃষ্ট কারণে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে ২৩৮টি৷ আর এ সময় গ্যাস লিকেজের ঘটনা ঘটেছে পাঁচ হাজার ৬৫০টি৷
ছবি: bdnews24
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ
চার সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ এ পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন৷ ফায়ার সার্ভিস বলছে, মসজিদ লাগোয়া গ্যাস লাইনই এই দুর্ঘটনার কারণ৷ পাইপে ছিদ্র দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়েছে৷ পুরো মসজিদ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় গ্যাস মসজিদের মধ্যেই আটকে ছিল৷ ফ্যান চালানোর সময় সুইচবোর্ড থেকে আগুনের ফুলকি বের হয়ে ছয়টি এসিতে আগুন ধরেছে বলে তাদের ধারণা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
অবৈধ গ্যাস লাইন, নাকি মৃত্যুফাঁদ!
গ্যাস দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ অবৈধ সংযোগ৷ ঢাকসহ আশেপাশের এলাকায় ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অবৈধ গ্যাস বিতরণ লাইন শনাক্ত করা হয়েছে, যেখান থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক গ্রাহক৷ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয় বিবেচনা না করেই এমন সংযোগ লাইন করা হয়েছে, যা মৃ্ত্যুফাঁদ তৈরি করেছে৷ এসব লিকেজ থেকে প্রায়শই হচ্ছে দুর্ঘটনা৷
ছবি: bdnews24
চুলায় কাপড় শুকানো
বাংলাদেশে গ্যাস সংযোগ রয়েছে এমন বাড়িতে শীত বা বর্ষাকালে চুলায় কাপড় শুকাতে দেওয়ার অভ্যাস কম-বেশি সবারই আছে৷ আর এভাবেই দুর্ঘটনাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসা হয়৷ কাপড় শুকানোর ঘটনায় অসংখ্যবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ তাই রান্না ছাড়া গ্যাসের চুলায় অন্য যে-কোনো ধরনের কাজকে নিরুৎসাহিত করে তিতাস ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃ্পক্ষ৷
ছবি: bdnews24
সিলিন্ডার, না বিস্ফোরক!
এলপিজি বা সিলিন্ডারের গ্যাস আমাদের অনেকের বাড়িতেই ব্যবহৃত হয় রান্নার কাজে৷ কিন্তু অসাবধানতা ও সিলিন্ডারের ত্রুটির কারণে প্রায়শই এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে৷ চাহিদা ভালো, তাই লিকুডিফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসার জন্য একের পর এক নতুন কোম্পানি আসছে বাজারে৷ কিন্তু এই ব্যবসায়ীরা নিজেদের লাভ বুঝলেও গ্রাহকের নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নেন না৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS
সিলিন্ডার ৪০ লাখ, পরীক্ষাকেন্দ্র ৬টি
শুধুমাত্র ২০১৭-১৮ সালেই দেশে মোট আমদানিকৃত এলপিজি সিলিন্ডারের সংখ্যা ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৮৷ আর অনুমতিপ্রাপ্ত এবং দেশে তৈরি এলপিজি সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ লাখ চার হাজার ৩৪৫৷ দেশে মোট সিলিন্ডার পরীক্ষার কেন্দ্র আছে ছয়টি৷ আর এলপিজি সিলিন্ডার নির্মাণ কারখানা আছে চারটি৷