রাস্তায়-ঘরে জল-পানিতে নাকাল চট্টগ্রাম৷ এই সমস্যার সমাধানে ৯০'র দশকের মাঝামাঝি সময়ে করা ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে ফিরতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সমস্যাকে দেখিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা পৃথক পৃথকভাবে নানা প্রকল্প নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা উলটো ফল বয়ে আনতে পারে৷ এটা না করে দরকার সমন্বিত একটি উদ্যোগ৷
ভারী বর্ষণ আর জোয়ারে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বহু এলাকাই এখন কোমর থেকে বুক পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে৷ এটাকে স্মরণকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা বলে আখ্যায়িত করছেন অনেকে৷
সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত এই নগরীর প্রাকৃতিকভাবে সাগর-নদী-খালের সাথে যুক্ত৷ অল্প জোয়ারে ভেসে যায় অনেক এলাকা৷ এবারে সেই জোয়ারের উচ্চতাও বেশি৷ তার সাথে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি৷ নগরীর আবর্জনায় ভরা ড্রেন, দখল হয়ে যাওয়া খাল পরিস্থিতিকে করেছে শোচনীয়৷ ডয়চে ভেলের সাথে আলাপে চট্টগ্রামের এই প্রকৌশলীর মুখে উঠে এসেছে এ সব কারণ৷
‘চমৎকার একটা মাস্টার প্ল্যান, কিন্তু কেউ এটাকে ধারণ করে না’
তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টিপাতের পানি এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি নামার জন্য যে নালা, সেটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে৷ হয়েছে অপদখলও৷ বদ অভ্যাসের কারণে আমরা ড্রেনকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছি৷''
শুধু তাই নয়, ড্রেন ভরে যাওয়ার জন্য পাহাড় থেকে ক্ষয়ে আসা বালুকেও দায়ী করেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরের কিছু কিছু এলাকা সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে আড়াই থেকে তিন মিটার উঁচু৷ কিন্তু এখানে সাড়ে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে জোয়ার আসার ইতিহাস রয়েছে৷''
দেলোয়ার জানান, গতকাল এখানে জোয়ারের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৮৮ মিটার৷ সে কারণে শহরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে৷ এ সময় ড্রেনের পানিও নদী বা সাগরে নামতে পারে না৷ ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে সক্ষমতা হারানোর কারণে ভাটা পড়লেও সেই সময়টা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারে না৷ তখন দেখা যায় কর্ণফুলী খালি, কিন্তু পানি নামতে পারছে না৷
চট্টগ্রামের এই সমস্যা সমাধানে ১৯৯৫ সালে করা মাস্টার প্ল্যানে ফিরতে বললেন এই প্রকৌশলী৷ বলেন, ‘‘এটা চমৎকার একটা মাস্টার প্ল্যান৷ এটা সংসদেও অনুমোদিত হয়েছে৷ কিন্তু এখন কেউ এটাকে ধারণ করে না৷'' এখানে পাহাড় থেকে আনা বালি ব্যবস্থাপনার কথাও বলা হয়েছে৷
দেলোয়ারের নিজের ভাষায়, ‘‘ড্রেন-খাল অপদখলকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কোথাও পর্যাপ্ত খাল না থাকলে খনন করার কথা বলা হয়েছে৷ একইভাবে বৃষ্টি ও জোয়ার ব্যবস্থপনার কথা বলা হয়েছে৷''
ঢাকা-চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা চলছেই
যে দেশে নদী আছে জালের মত, নগর গড়ে উঠে নদীর তীরে, নগরে পানি নিষ্কাশনের জন্য থাকে প্রাকৃতিক খাল, সেই দেশে বছরের পর বছর ধরে নগরে চলে জলাবদ্ধতা৷
ছবি: bdnews24.com
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার শুরু
সমুদ্রের খুব কাছে থাকায় খাল-নদীর এই নগরের মানুষ জোয়ারের সঙ্গে পরিচিত নগরীর গোড়াপত্তন থেকেই৷ জলাবদ্ধতার ইতিহাস নিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী মত হচ্ছে, এখানে এই সমস্যার শুরু হয়েছে ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে৷ এরপর সময়ে সময়ে এটা কেবল বেড়েছে৷ বৃষ্টি ও আটকে যাওয়া জোয়ারের পানিতে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়৷ এ জন্য খাল দখল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
চাক্তাই খাল
এক সময় চট্টগ্রামের চাক্তাই খাল ছিলো নগরীর প্রাণ৷ কয়েক দশক পূর্বেও এই খাল দিয়েই বহদ্দারহাট পর্যন্ত যেতো সওদাগরী নৌকা৷ তবে এখন আর সেই অবস্থায় নেই এই খাল৷ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অংশে খালটি দখল হয়ে আছে৷ অভিযোগ রয়েছে, দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই তাদেরকে উচ্ছেদ করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয় না৷ এখন এই খালকে বলা হয় নগরীর দুঃখ৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন দুঃখ মহেশখালের বাঁধ
২০১৫ সালের চট্টগ্রামে নতুন এক দুঃখ যুক্ত হয়েছে৷ জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে নগর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মহেশখালে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে৷ পরের বছরই এটি নগরীর বিশাল একটি এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ২০১৬ সালে এই বাঁধ অপসারণে সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সাধারণ মানুষ বাঁধটি কাটতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়৷ এবার মেয়র বলছেন, সেখানে স্থায়ী স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে৷
ছবি: bdnews24.com
খালের নৌকা রাস্তায়
চট্টগ্রাম নগরে মোট ১৭টি খাল রয়েছে৷ অধিকাংশ খালই বেদখল হয়ে নৌ চলাচল কঠিন বা অসম্ভব হয়ে গেছে৷ তবে বর্ষায় সেই নৌকা প্রায় প্রতি বছরই রাস্তায় ওঠে আসে৷ অবশ্য কারো কারো মতে খালের সংখ্যা ২৫টি৷
ছবি: bdnews24.com
মূল ইস্যু, তবু দৃষ্টি নেই
নগরীর এই জলাবদ্ধতাই সেখানকার নির্বাচনসহ জনপরিসরের অন্য আলোচনায় প্রাধান্য পেলেও এই সমস্যা থেকে উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ নেই৷ অবশ্য জনপ্রতিনিধি হলেও বর্তমান কাঠামোয় নগর শাসনে সিটি কর্পোরেশনের একক ক্ষমতাও নেই৷ সরকারি নানা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হয়৷ খাল উদ্ধারে গেলে প্রভাবশালীদের চাপে কর্পোরেশনের কর্তারাও পিছুটান দেন৷ এমনকি খালের জায়গায় কর্পোরেশনের ভবন থাকার অভিযোগও রয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
পানিতে ডোবে রাজধানীও
যে ঢাকা নগরে এখনো সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে, মানুষকে ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে পানি খেতে হয়, সেই নগরে এখনো অল্প বৃষ্টিই বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ডুবে যায় নগরীর বিভিন্ন সড়ক৷
ছবি: bdnews24.com
হাতিরঝিলের রাস্তায়ও পানি
ভীষণ অপরিকল্পিত শহর ঢাকার জলাধার রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে৷ নগরীর চারপাশ দখল উৎসবের মাঝে অবশ্য উচ্চ আদালত হাতিরঝিলে গড়ে উঠা একটি স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোরভাবেই আদেশ দিয়েছে৷ যদিও সেই আদেশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি৷ তবুও নগরীর জলাধার ব্যবস্থাপনায় হাতিরঝিলকেই সবচেয়ে পরিকল্পিত এলাকা মনে করা হয়৷ তবে বৃষ্টির পানি জমে এই প্রকল্পের রাস্তায়ও৷
ছবি: bdnews24.com
উন্নয়ন দুর্ভোগ
বাংলাদেশে অর্থ বছর শুরু হয় জুলাই থেকে৷ নগরের বাৎসরিক বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থ ছাড়ের পর কাজ শুরু করতে করতে বর্ষা এসে যায়৷ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছরই এটা জলাবদ্ধতার সাথে নতুন মাত্রা যোগ করে৷
ছবি: bdnews24.com
খাল দখল ঢাকায়ও
ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের পাশে মৃতপ্রায় একটি পুকুর রয়েছে৷ তবে চমক হচ্ছে, এক সময় এটি ছিল একটি খাল৷ ঢাকার বহুল আলোচিত হাতিরঝিল নদী ছিল৷ পূর্বের বালুনদী থেকে পশ্চিমে তুরাগ পর্যন্ত এটি বিস্তৃত ছিলো৷ নড়াই নামে এই নদীর পূর্বাংশ এখনো স্বনামে রয়েছে৷ পশ্চিমে কোথাও এটা রামপুরা খাল, কোথাও হাতিরঝিল, কোথাও বেগুনবাড়ি খাল নামে পরিচিত৷ বাকি অংশ হারিয়ে গেছে৷ পুরাতন এই নদীর দুই তীরে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
9 ছবি1 | 9
‘‘বৃষ্টি এবং জোয়ার একসাথে হলে জোয়ারকে নগরীর বাইরেই আটকে দেয়া এবং বৃষ্টির পানির সরিয়ে নিতে জলাধার নির্মাণের কথা বলা হয়েছে এখানে৷ খুব প্রতিকূল অবস্থার জন্য পাম্প রাখার প্রস্তাবও রয়েছে এতে৷''
‘‘পানির লাইন, গ্যাস লাইন যে সব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, সেটা অপসারণ করতে বলা হয়েছে৷ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এটা বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরীর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷''
বর্তমানে প্রতি বছর ৫০০-৭০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দিলে ১২ বছরে এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা যাবে বলেও নিজের হিসাব তুলে ধরেন তিনি৷ এছাড়া এই সমস্যার সমাধান না হওয়ার পেছনে ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে' কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন দেলোয়ার৷ চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায়ও এই সমস্যা সমাধানে বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন তিনি৷
আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কিভাবে কাজকে পিছিয়ে দেয়, তাঁর দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিগত মেয়রের আমলে বড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত একটি খাল খনন প্রকল্প পাস হয়ে আসে৷ এটি এখনো শুরুই হয়নি৷
‘‘এ জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় আছে৷ এ জন্য পুরো টাকা হাতে না পেলে জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে না৷ আর অর্থ মন্ত্রণালয় পুরো টাকা এক সাথে ছাড় দেয় না৷''
‘‘সময় চলে গেলে রিভাইজড প্রকল্প পাঠাতে হয়৷ তখন পাস হয়ে আবার খন্ডিত টাকা আসে৷ তখন আবার একইভাবে অধিগ্রহন আটকে যায়৷''
তিনি বলেন, অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের কাজের মাধ্যমে অনেক সময় পানি নামার পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাদের উপর সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ নেই৷
‘‘ইদানীং নতুন একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ নানা প্রকল্প নিচ্ছে৷ এতে প্রজেক্ট ওভারলেপিং হবে৷ কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আগে হয়ে যেতে পারে৷ এই ধরনের নতুন একটি সংকট দেখা দেখা দিচ্ছে৷ এ কারণে মনে হচ্ছে, চটগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রলম্বিত হবে৷''
সমস্যা সমাধান পথ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে৷ পর্যাপ্ত তহবিল দিতে হবে৷ ভূমি অধিগ্রহণে হয় সরকার সমুদয় অর্থ একত্রে দেবেন বা সমুদয় অর্থ না দিয়েও যাতে কাজ শুরু করা যায় সেই ব্যবস্থা করবেন৷
‘‘সিটি কর্পোরেশন প্রকল্প নিলে ৩০ শতাংশ নিজেদের অর্থায়ন করতে হয়৷ বর্তমানে ১৬শ' কোটি টাকার প্রকল্প পাইপলাইনে আছে৷ তাঁর জন্য ৪০০ কোটির বেশি টাকা দিতে হবে৷ এই সামর্থ্য তাদের নেই৷''
তাই ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান তিনি৷ বলেন, এটা বাস্তবায়নে সরকারকে সিটি কর্পোরেশনের পাশে দাঁড়াতে হবে৷ আইনি জটিলতা দূর করতে হবে৷ পর্যাপ্ত বাজেট দিতে হবে৷ তাতে তিন বছরে সহনীয় পর্যায়ে আনা যাবে৷ সাত বছরে মোটামুটি মুক্ত হতে পারবো৷ ১২ বছরে ৫০-৬০ বছরের জন্য এই নগরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব৷
দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ শহরের বিরাট অংশের মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ৷ বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং সশস্ত্র বাহিনীও বিশাল বিশাল অংশের ভূমির মালিক৷ এদেরকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে৷ তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তাঘাট নষ্ট করবে সবাই, আর মেরামত করবে সিটি কর্পোরেশন৷ এটা হতে পারে না৷ বন্দরের কারণে এখানে মানুষ আসে৷ গাড়ি আসে৷ নর্দমা ভরে যায়৷ তারা দায়িত্ব নেয় না৷ তাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে৷ তাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ অথবা আয়ের একটা অংশ সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে৷ এখন তারা কেবল ভূমিকর দিচ্ছেন৷''
ঢাকায় জলাবদ্ধতার ১২ কারণ
দিনে দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতার চিত্র৷ ঘণ্টা প্রতি ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই এই শহরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যায়৷ বর্ষায় পরিস্থিতি হয়ে ওঠে ভয়াবহ৷ ঢাকায় জলাবদ্ধতার বারো কারণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
অপরিকল্পিত নগরায়ন
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মহানগরীতে এখন প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস করছেন৷ এই শহরের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ নানা অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে৷ ফলে শহরের বেশিরভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা
ঢাকা শহরের অনেক এলাকাতেই এখনো ময়লা ফেলা হয় খোলা জায়গায়৷ এসব ময়লা আবর্জনা, বিশেষ করে কঠিন বর্জ্যের একটা অংশ সরাসরি ড্রেনে গিয়ে প্রবাহ বন্ধ করে দেয়৷ ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় রাস্তাঘাটে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষায় খোড়াখুড়ি
ঢাকা শহরের সড়কগুলোতে খোড়াখুড়ির মহোৎসব শুরু হয় বর্ষা মৌসুমের ঠিক আগে থেকে৷ পুরো বর্ষা মৌসুম ধরেই চলে এসব খোড়াখুড়ি৷ সামান্য বৃষ্টিতেই তাই জলাব্ধতার সৃষ্টি হয় শহরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদী ভরাট
ঢাকা শহরের চারপাশে অবস্থিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতালক্ষ্যা প্রভৃতি নদীগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট করে ফেলেছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা৷ আর তাই বিশাল জনসংখ্যার এ শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
খাল দখল
ঢাকা নগরীর ৬৫টি খাল এক সময়ে এ মহানগরীর পানি নিষ্কাশনে বিশেষ ভূমিকা রাখত৷ কিন্তু রাজধানীর এই খালগুলো এখন খুঁজে পাওয়াও কঠিন৷ বেশিরভাগই চলে গেছে দখলদারদের হাতে৷ অনেকগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে৷ যে দু’য়েকটি টিকে আছে সেগুলোও দখলে জর্জরিত৷
ছবি: DW/M. Mamun
জলাশয় ভরাট
ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট করে আবাসান ব্যবস্থা গড়ে তোলায় বড় এই শহরের পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুড়িগঙ্গা দূষণ আর দখল
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী দখল আর দূষণে জর্জরিত৷ দখলে এ নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্থ হয়েছে আর দূষণে নদীর তলদেশে নানান বর্জ্য্ জমে এর গভীরতা কমিয়েছে৷ ফলে পানির প্রবাহ বাড়লেই তা উপচে পড়ে৷
ছবি: Reuters/M. P Hossain
অপরিকল্পিত বক্স কালভার্ট
রাজধানীর জলাবদ্ধতা রোধে ঢাকা ওয়াসা বিভিন্ন সময়ে যেসব বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেছে, তার বেশিরভাগই অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত৷ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তৈরি এসব বক্স কালভার্ট প্রয়োজনের তুলনায় সরু হওয়ায় বৃষ্টির পানি অপসারণে তেমন কাজে আসে না৷ অনেক ক্ষেত্রে এসব কালভার্টে অপচনশীল কঠিন বর্জ্য আটকে গিয়ে পানি নির্গমন পথও বন্ধ হয়ে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সমন্বয়হীন সংস্কার কাজ
ঢাকা শহরে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজে কোনো সমন্বয় না থাকায় সারা বছরই সড়ক খোড়াখুড়ি চলতেই থাকে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ওয়াসা স্যুয়ারেজ নির্মাণের জন্য একটি সড়ক খোড়া হলো, সে কাজ শেষ হতে না হতেই আবার খোড়াখুড়ি শুরু করল গ্যাস কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগ৷ ফলে সারা বছর সড়কগুলোতে এ ধরনের কাজ চলায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
পলিথিনের অবাধ ব্যবহার
ঢাকা শহরে চলছে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার৷ পলিথিন ব্যবহার না করার আইন থাকলেও তার সামান্যটুকুও মানা হয় না৷ ফলে দুই কোটি মানুষের এই শহরে প্রতিদিন যে বর্জ্য তৈরি হয় তার অধিকাংশজুড়েই থাকে পলিথিন৷ এসব পলিথিন পানি নিষ্কাশনের পথগুলো বন্ধ করে দেয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ড্রেনের ময়লা ড্রেনে
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ড্রেন থেকে ময়লা তুলে সেগুলো দিনের পর দিন ড্রেনের পাশেই ফেলে রাখা হয়৷ ফলে বৃষ্টি হলেই সে ময়লার পুনরায় ঠিকানা হয় ড্রেন৷ সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন আতঙ্ক ফ্লাইওভার নির্মাণ
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ফ্লাই ওভার নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রিতা৷ ঢাকার মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের ফলে এ এলাকার রাস্তাঘাটের দিনের পর দিন যে ক্ষতি হয়েছে, তার কখনোই সংস্কার না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা৷