গতকাল চট্টগ্রামের মাসুদ স্টোর নামে একটি মুদিদোকানের গুদাম থেকে দ্বিতীয় দফায় এক হাজার লিটার টিসিবির সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত৷
বিজ্ঞাপন
রোববার রাতে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয় সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জোড়আমতল বাজারে মাসুদ স্টোরের গুদাম থেকে৷একই দোকান থেকে গতকাল বিকেলে এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়৷
ভ্রাম্যমাণ আদালত খোলা বাজারে অবৈধভাবে টিসিবির সয়াবিন তেল বিক্রির দায়ে মাসুদ স্টোরের মালিক মোহাম্মদ মাসুদকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়৷
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহাদাত হোসেন আর তাঁকে সহযোগিতা করেন সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খুরশিদ আলম৷
তেল রচনা
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া ভোজ্য তেল হচ্ছে পাম তেল৷ এরপরেই আছে সয়াবিন, রাইসরিষা ও সূর্যমুখী তেল৷
ছবি: picture-alliance/Okapia/H. Reinhard
পাম তেল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত, ব্যবহৃত ও বিকিকিনি হওয়া তেল এটি৷ পাম, সয়াবিন, রাইসরিষা ও সূর্যমুখী - বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া এই চার ভোজ্য তেলের মোট সরবরাহের ৪০ শতাংশই হচ্ছে পাম তেল৷ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ ইউএসডিএর হিসেবে এ বছর সাত কোটি ৭০ লাখ টন পাম তেল উৎপাদিত হওয়ার কথা৷
ছবি: Eko Siswono Toyudho/AA/picture alliance
পামের রাজা ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বে পাম তেলের সবচেয়ে বড় উৎপাদক ইন্দোনেশিয়া৷ এই তেলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক ও ব্যবহারকারীও তারা৷ বিশ্বের মোট পাম তেলের ৬০ শতাংশ সরবরাহ আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে৷ এরপরে আছে মালয়েশিয়া (২৫ শতাংশ)৷
ছবি: Lim Huey Teng/REUTERS
পামের ক্রেতা ভারত
ভারতে মোট ভেজিটেবল তেল ব্যবহারের ৪০ শতাংশ হচ্ছে পাম তেল৷ দেশটি বিশ্বে এই তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক৷ এছাড়া চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর ও কেনিয়াও এই তেলের বড় ক্রেতা৷
ছবি: Imago Images/ZumaPress
সয়াবিন তেল
ভোজ্য তেল উৎপাদিত হওয়ার তালিকায় পামের পরেই আছে সয়াবিন তেল৷ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের হিসেবে এ বছর পাঁচ কোটি ৯০ লাখ টন সয়াবিন তেল উৎপাদিত হওয়ার কথা৷
ছবি: Mark/EPA/dpa/picture alliance
সয়াবিন বিক্রেতা আর্জেন্টিনা
সয়াবিন তেল সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করে চীন (এক কোটি ৬০ লাখ টন)৷ তারপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র (এক কোটি ২০ লাখ টন), ব্রাজিল (৯০ লাখ টন) ও আর্জেন্টিনা (৮০ লাখ টন)৷ তবে এই তেলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক আর্জেন্টিনা৷ তারপর ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র৷ আর পামের মতো ভারতও সয়াবিন তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা৷
ছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA/picture alliance
রাইসরিষা
মূলত ইউরোপ, ক্যানাডা ও চীনে এই তেল উৎপাদন হয়৷ এ বছর দুই কোটি ৯০ লাখ টন তেল উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই তেল সবচেয়ে বড় আমদানিকারক৷
ছবি: Benjamin Nolte/dpa/picture alliance
সূর্যমুখী তেল
রাশিয়া ও ইউক্রেনে বিশ্বের ৫৫ শতাংশ সূর্যমুখী তেল উৎপাদিত হয়৷ আর মোট রপ্তানির ৭৬ শতাংশ করে এই দুটি দেশ৷ চীন, ভারত ও ইউরোপ এই তেলের প্রধান আমদানিকারক৷ ভারতের আমদানি করা সূর্যমুখী তেলের ৯০ শতাংশ আসে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে৷
ছবি: Gustavo Cuevas/dpa/picture-alliance
7 ছবি1 | 7
ইউএনও শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দোকানটিতে অভিযান চালিয়ে এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধারের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মালিককে দণ্ড দেওয়া হয়৷ মাসুদের গুদামে আরও এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল আছে বলে তাকে জিজ্ঞাসা করে জানা যায়৷
পরে আবারও অভিযান চালিয়ে এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়৷ মাসুদ তেল বোতল থেকে খুলে খোলা বাজারে বিক্রি করছিলেন৷ যদি এ ঘটনায় টিসিবির কেউ জড়িত থাকে তাঁদেরও আনা হবে আইনের আওতায়৷
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)
বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মুদি বাজার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদি বাজারের মধ্যে তুলনা করা কঠিন৷ মার্কিন এক কোম্পানি সীমিত আকারে সেই চেষ্টা করেছে৷ তাদের দেয়া তথ্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্রোসারি সূচক ২০২১
ব্যক্তিগত লোন দেয়ার মার্কিন অনলাইন কোম্পানি ‘নেটক্রেডিট’ গতবছর ৯ নভেম্বর ২০২১ সালের গ্রোসারি সূচক প্রকাশ করে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপারমার্কেটের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়৷ প্রথমে, বাজারের একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলোর দাম কোন দেশে কেমন, তা জানার চেষ্টা করা হয়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: David McNew/Getty Images
১০টি পণ্যের তথ্য
সূচক তৈরিতে যে ১০টি পণ্যের তথ্য নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো সকালের নাস্তার জন্য সিরিয়াল, ১২টি ডিম, ৫০০ গ্রাম হাড় ছাড়া মুরগীর বুকের মাংস, ৫০০ গ্রাম মাখন, ১ লিটার বোতলজাত ভেজিটেবল তেল, ৫০০ গ্রাম সাদা পাউরুটি, ১ লিটার দুধ, ১ কেজি আলু, ১ কেজি টমেটো, ১ কেজি কলা, ১৪০ গ্রাম ক্যানড টুনা ও বোতলজাত দেড় লিটার পানি৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
বাংলাদেশে খরচ
উপরের পণ্যগুলো কিনতে বাংলাদেশে ১৯৯০ টাকা খরচ হতো বলে জানিয়েছে নেটক্রেডিট৷ বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে নেটক্রেডিট দেখেছে, এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷
ছবি: DW
সবচেয়ে বেশি সুইজারল্যান্ডে, কম জিবুতিতে
এই ১০টি পণ্য কিনতে সুইজারল্যান্ডে খরচ পড়তো প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা৷ আর জিবুতিতে মাত্র ৬০০ টাকা৷
ছবি: ZDF
বাংলাদেশ চার নম্বরে
পণ্য কেনার খরচ বের করার পর নেটক্রেডিট বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি দেশের মানুষের গড় দৈনিক আয় জানার চেষ্টা করেছে৷ এরপর এই দুই তথ্য দিয়ে ‘অ্যাফোরডিবিলিটি পার্সেন্টেজ’ বা সক্ষমতার হার বের করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতার হার ৩৪০ শতাংশ৷ অর্থাৎ ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ হওয়া ১৯৯০ টাকা একজনের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷ তালিকায় বাংলাদেশের উপরে আছে কম্বোডিয়া, কেনিয়া ও নিকারাগুয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সবচেয়ে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ পড়তো ২,২১২ টাকা, যা দেশটির দৈনিক গড় বেতনের মাত্র ১২ শতাংশ৷ এরপর আছে নেদারল্যান্ডস (খরচ ২১১৫ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), লুক্সেমবার্গ (খরচ ২৯৩০ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), ফিনল্যান্ড (খরচ ২১৪৬ টাকা, সক্ষমতা ১৬ শতাংশ), সিঙ্গাপুর (খরচ ২৯৩৩ টাকা, সক্ষমতা ১৮ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্য (খরচ ২২২২ টাকা, সক্ষমতা ১৯ শতাংশ)৷
ছবি: Photoshot/picture alliance
তথ্য নেই
গ্রোসারি সূচকে ভারত, পাকিস্তান, জার্মানিসহ অনেক দেশের তথ্য দেয়া হয়নি৷
ছবি: Martin Wagner/imago images
চালের দাম
৯ মার্চ, ২০২২ সালে সার্বিয়ার ক্রাউড-সোর্সড ভিত্তিক বৈশ্বিক ডাটাবেজ কোম্পানি ‘নাম্বেও’র ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি চালের (সাদা) দাম ৬০ টাকা৷ জাপানে দাম সবচেয়ে বেশি ৩৬৯ টাকা৷ এছাড়া যু্ক্তরাষ্ট্রে ৩৪০, সুইজারল্যান্ডে ২৫১, জার্মানিতে ১৮১, যুক্তরাজ্যে ১২৫, পাকিস্তানে ৭৬, ভারতে ৫৯, নেপালে ৬০ ও শ্রীলঙ্কায় ৫১ টাকা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পেঁয়াজের দাম
১০ মার্চ নাম্বেওর ওয়েবসাইটে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি পেঁয়াজের দাম সাড়ে ৫৩ টাকা৷ ভারতে ৪০ টাকা, পাকিস্তানে ২৫ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৬৬ টাকা, নেপালে ৪৯ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ২২০ টাকা, যুক্তরাজ্যে ১০৮ টাকা ও জার্মানিতে ১২১ টাকা৷
ছবি: Reuters/L. Niesner
নাম্বেওর গ্রোসারি সূচক
নিউইয়র্ক শহরের বাজারের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারমূল্যের তুলনা করে তালিকা প্রকাশ করে নাম্বেও৷ এতে দেখা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে যে গ্রোসারির দাম ১০০ টাকা৷ বাংলাদেশে সেটা ৩০ টাকায় পাওয়া যায়৷ জার্মানিতে পাওয়া যায় ৫২ টাকায়, যুক্তরাজ্যে ৫৬ টাকা, ভারতে ২৬ টাকা, পাকিস্তানে ১৭ টাকা ও নেপালে ২৬ টাকায়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: imago/Levine-Roberts
নাম্বেওর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য?
বিশ্বের যে কেউ নাম্বেওর ডাটাবেজে তথ্য ঢোকাতে পারে৷ তাই কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো তথ্য দিতে পারে৷ সে কারণে নাম্বেওর তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ এরপরও নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ইকোনমিস্ট, টাইম ম্যাগাজিনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নাম্বেওর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ নাম্বেও বলছে, গত ১২ মাসে ঢাকার বিভিন্ন জিনিসের দাম নিয়ে মোট ৩,১৩২ বার তথ্য যুক্ত করেছেন ২৭৪ জন নাম্বেও ব্যবহারকারী৷