1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চট্টগ্রামে ১২০ পাহাড় নিশ্চিহ্নকারীদের দাপট বাড়ছে

২৭ জানুয়ারি ২০২৩

চট্টগ্রামে যারা পাহাড় কেটে খাল ভরাট করছে, যাদের কারণে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানিও হচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়? পরিবেশবিদরা বলছেন, ১২০টি পাহাড় নিশ্চিহ্ন হবার পরও দখলদারদের রোখার মতো একটি পদক্ষেপও দৃশ্যমান নয়৷

ছবি: Aliur Rahman

বৃহস্পতিবার পাহাড় কেটে খাল ভরাটের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷ তখন তার গাড়িবহরে হামলা হয়৷ হামলায় নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে  স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে৷ রিজওয়ানা হাসান বাদি হয়ে শহরের আকবর শাহ থানার কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷ বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি৷

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে ছিলেন দৈনিক ‘আমাদের নতুন সময়’-এর বিশেষ প্রতিনিধি ও বেলা'র নেটওয়ার্ক মেম্বার আলীউর রহমান৷ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে সৈয়দা রিজওয়ানা আপার সঙ্গে চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী মনিরা পারভিন, কর্মসূচি প্রধান ফিরোজুল ইসলাম, চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহী এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আবুল মনসুরও ছিলেন৷ আমরা আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় যাই৷ মূলত অবৈধভাবে পাহাড় কাটা এবং কালির ছড়াখাল ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম৷ এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর জসিমের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন৷ আমরা কেন সেখানে গিয়েছি, কোথা থেকে এসেছি এসব প্রশ্ন করতে থাকেন৷’’

আলীউর বলেন, ‘‘তাদের আক্রমণের প্রস্তুতি দেখে আমরা পাহাড়ের নীচে নামিনি৷ পরে আমরা পথ পরিবর্তন করে বায়েজিদ লিংক রোডের সুপারি বাগান গাউছিয়া হোটেলের সামনে ৫ নম্বর ব্রিজের কাছে অবস্থান নেই৷ এ সময় আমাদের গাড়িটিকে ঘুরিয়ে বায়েজিদ লিংক রোডে আসতে বলা হয়৷ গাড়িটি আসার পথে লেকসিটি আবাসিকের প্রধান গেটে তারা আটকে দেয় এবং অস্ত্রের মুখে সেটিকে আবাসিকের অফিসে নিয়ে যায়৷ তখন রিজওয়ানা আপা আকবর শাহ থানায় ফোন দিলে একটি টিম এসে গাড়িটিকে উদ্ধার করে৷ উদ্ধারের পর গাড়িটিতে আমরা ওঠার সময় কাউন্সিলরের লোকজন ঢিল ছোঁড়ে৷ এতে গাড়িটির ক্ষতি হয়৷’’

কাউন্সিলর ক্ষমতাবান হওয়ার কারণে স্থানীয়রা তাকে কিছু বলতে পারছেন না: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

This browser does not support the audio element.

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম নিজেই ঘটনাস্থলে আসেন৷ আমাদের স্থানীয় লোকজন বলেছেন, কাউন্সিলর নিজে পাহাড় কেটে কালির ছড়াখাল ভরাট করছেন৷ সেখানে তিনি প্লট করে বিক্রি করছেন৷ কাউন্সিলর ক্ষমতাবান হওয়ার কারণে স্থানীয়রা তাকে কিছু বলতে পারছেন না৷ শুধু স্থানীয় লোকজনই আমাদের বলেনি, সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে স্থানীয় মামলাও করেছে৷ আমাদের দুর্ভগ্য হলো, এই ধরনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার কথা, কিন্তু সেটা হচ্ছে না৷ কাউন্সিলরকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার কথা, সেটাও হয়নি৷ আমাদের গাড়িটি কাউন্সিলরের লোকজন আটকে রেখেছিল৷ তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল৷ পরে থানায় ফোন দিলে একদল পুলিশ এসে গাড়ি এবং ড্রাইভারকে উদ্ধার করে৷ এ সময় কাউন্সিলর বিভিন্ন মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু আমি কথা বলিনি৷ পরে আমরা গাড়িতে ওঠার সময় কাউন্সিলরের লোকজন হামলা করে৷’’

তবে ডয়চে ভেলের কাছে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের কালির ছড়াখাল যাওয়ার কথা৷ কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকা মানুষজন ভুল বুঝিয়ে আমার খামারের কাছে নিয়ে আসে৷ তারা তাদের কাজ করে চলে গেছেন৷ হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ ঘটনার সময় আমি খামারের অফিসে বসে ছিলাম৷ সেখানে ১৬টি সিসিটিভি রয়েছে৷ সেগুলোর ফুটেজ দেখলে বোঝা যাবে৷ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়৷ আমিও এই ঘটনার তদন্ত দাবি করছি৷’’

আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়: কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম

This browser does not support the audio element.

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালিউদ্দিন আকবর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান থানায় যে এজাহার জমা দিয়েছেন সেটা আমরা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছি৷ সেখানে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ পরিচয় না থাকায় গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় যেতে পারিনি৷ এখন তদন্ত চলছে, দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’ এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলায় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷

চার দশকে ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত

চার দশক আগে চট্টগ্রামে ২০০টি পাহাড় ছিল, যার ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ ১২০টিই ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ মেসবাহুজ্জামানের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷

গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে টিকে থাকা পাহাড় রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ সিটি কর্পোরেশন এক হয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই৷ পাহাড় হচ্ছে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার খুঁটির মতো, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করার পাশাপাশি মানুষ এবং জীব-বৈচিত্র্যের সুপেয় পানির আধার৷ ক্রমাগত পাহাড় ধ্বংস হয়ে গেলে চট্টগ্রাম মহানগরী পরভূমিতে পরিণত হবে৷ ক্রমবর্ধমান ইট-কংক্রিটের সৃষ্ট উত্তাপ পরিশোধন করার বিকল্প না থাকায় নগরীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে৷ পাহাড় কেটে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন করে মানুষ আর্থিকভাবে যতটুকু লাভবান হচ্ছে বাস্তবে প্রাকৃতিক ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি৷

২০০৭ সালে পাহাড় ধ্বসে ১২৯ জন মারা যাওয়ার পর শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ পাহাড় রক্ষায় বেলার দায়ের করা মামলায় ২০১২ সালে সুনির্দিষ্ট রায় দেন হাইকোর্ট৷ রায়ে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ে নির্মিত স্থাপনাসমূহ গুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল৷ কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন হাইকোর্টের সেই আদেশ বাস্তবায়ন করেনি৷

কেন পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না, জানতে চাইলে পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপলস ভয়েস-এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি শরীফ চৌহান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা বন্ধ না হওয়ার পেছনের কারণ হচ্ছে মোটা দাগে এখানে বিশাল অংকের বাণিজ্য আছে৷ এই বাণিজ্যের সঙ্গে সবসময় যুক্ত থাকেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা৷ স্থানীয় কোনো কোনো জনপ্রতিনিধিও এর সঙ্গে আছেন৷ আরেকটি কারণ হলো, যারা পাহাড় কাটছেন বা দখল করছেন, তাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি৷ কারণ, এর সঙ্গে যারা যুক্ত তারা সবসময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকেন৷ এখানে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন৷ প্রশাসনের যে উদ্যোগ, সেটা আরও বাড়াতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ