সারা দেশের খুচরা বাজারে হঠাৎ ভোজ্য তেলের সংকট দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে।
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ‘এমভি ওরিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ’ নামের একটি জাহাজ অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে বন্দরে এসেছে এবং সেখান থেকে খালাস প্রক্রিয়া চলছে৷
সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজটিতে সিটি গ্রুপ, সেনা কল্যাণ এডিবল অয়েল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা তেল রয়েছে৷
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক সয়াবিন তেল নিয়ে জাহাজ আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, "খালাসের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে৷”
বিদেশ থেকে আনা এই সয়াবিন তেল প্রথমে পতেঙ্গা ট্যাংক টার্মিনালে রাখা হয়৷ এরপর সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তাদের কারখানায় নিয়ে গিয়ে সেখানে পরিশোধন করে বাজারজাত করে থাকে৷
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পর সারাবিশ্বের মতো সয়াবিনের বাজারে অস্থিরতা শুরু হলে দেশের তেলের বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে তেলের ওপর বিভিন্ন শুল্ক প্রত্যাহার করে এবং দাম নির্ধারণ করে দেয়৷
অস্থিরতার মধ্যেই খোলা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা গিয়েছে৷ বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপ সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় খোলাবাজারের দোকানিরা সয়াবিন তেল নিতে পারছেন না। আবার দোকানিরাও তাদের সংগ্রহে যা আছে, তা ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করছেন৷
সয়াবিন তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়তি, তাই আমদানি করা সয়াবিনের দামও বেশি দরে বাজারে বিক্রি করতে হবে। ঈদের পরে সরকার নতুন দাম ঠিক করে দিলে সে অনুযায়ী দাম ঠিক করা হবে৷’’
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘‘বাজারে সয়াবিনের সাপ্লাই চেইন ঠিক আছে। আমদানিও হচ্ছে, তবে তা বেশি দামে। দাম নিয়ে সরকারের বাইরে যাবার সুযোগ আমাদের নেই। ঈদের পরে সরকার যেভাবে বলবে আমরা সেভাবে দাম ঠিক করবো৷’’
এদিকে ইন্দোনেশিয়া তাদের দেশ থেকে পাম তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশেও পাম তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে৷
এএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম)
বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মুদি বাজার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদি বাজারের মধ্যে তুলনা করা কঠিন৷ মার্কিন এক কোম্পানি সীমিত আকারে সেই চেষ্টা করেছে৷ তাদের দেয়া তথ্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্রোসারি সূচক ২০২১
ব্যক্তিগত লোন দেয়ার মার্কিন অনলাইন কোম্পানি ‘নেটক্রেডিট’ গতবছর ৯ নভেম্বর ২০২১ সালের গ্রোসারি সূচক প্রকাশ করে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপারমার্কেটের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়৷ প্রথমে, বাজারের একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলোর দাম কোন দেশে কেমন, তা জানার চেষ্টা করা হয়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: David McNew/Getty Images
১০টি পণ্যের তথ্য
সূচক তৈরিতে যে ১০টি পণ্যের তথ্য নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো সকালের নাস্তার জন্য সিরিয়াল, ১২টি ডিম, ৫০০ গ্রাম হাড় ছাড়া মুরগীর বুকের মাংস, ৫০০ গ্রাম মাখন, ১ লিটার বোতলজাত ভেজিটেবল তেল, ৫০০ গ্রাম সাদা পাউরুটি, ১ লিটার দুধ, ১ কেজি আলু, ১ কেজি টমেটো, ১ কেজি কলা, ১৪০ গ্রাম ক্যানড টুনা ও বোতলজাত দেড় লিটার পানি৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
বাংলাদেশে খরচ
উপরের পণ্যগুলো কিনতে বাংলাদেশে ১৯৯০ টাকা খরচ হতো বলে জানিয়েছে নেটক্রেডিট৷ বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে নেটক্রেডিট দেখেছে, এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷
ছবি: DW
সবচেয়ে বেশি সুইজারল্যান্ডে, কম জিবুতিতে
এই ১০টি পণ্য কিনতে সুইজারল্যান্ডে খরচ পড়তো প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা৷ আর জিবুতিতে মাত্র ৬০০ টাকা৷
ছবি: ZDF
বাংলাদেশ চার নম্বরে
পণ্য কেনার খরচ বের করার পর নেটক্রেডিট বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি দেশের মানুষের গড় দৈনিক আয় জানার চেষ্টা করেছে৷ এরপর এই দুই তথ্য দিয়ে ‘অ্যাফোরডিবিলিটি পার্সেন্টেজ’ বা সক্ষমতার হার বের করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতার হার ৩৪০ শতাংশ৷ অর্থাৎ ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ হওয়া ১৯৯০ টাকা একজনের দৈনিক গড় বেতনের ৩৪০ শতাংশ৷ তালিকায় বাংলাদেশের উপরে আছে কম্বোডিয়া, কেনিয়া ও নিকারাগুয়া৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সবচেয়ে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ঐ ১০ পণ্য কিনতে খরচ পড়তো ২,২১২ টাকা, যা দেশটির দৈনিক গড় বেতনের মাত্র ১২ শতাংশ৷ এরপর আছে নেদারল্যান্ডস (খরচ ২১১৫ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), লুক্সেমবার্গ (খরচ ২৯৩০ টাকা, সক্ষমতা ১৫ শতাংশ), ফিনল্যান্ড (খরচ ২১৪৬ টাকা, সক্ষমতা ১৬ শতাংশ), সিঙ্গাপুর (খরচ ২৯৩৩ টাকা, সক্ষমতা ১৮ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্য (খরচ ২২২২ টাকা, সক্ষমতা ১৯ শতাংশ)৷
ছবি: Photoshot/picture alliance
তথ্য নেই
গ্রোসারি সূচকে ভারত, পাকিস্তান, জার্মানিসহ অনেক দেশের তথ্য দেয়া হয়নি৷
ছবি: Martin Wagner/imago images
চালের দাম
৯ মার্চ, ২০২২ সালে সার্বিয়ার ক্রাউড-সোর্সড ভিত্তিক বৈশ্বিক ডাটাবেজ কোম্পানি ‘নাম্বেও’র ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি চালের (সাদা) দাম ৬০ টাকা৷ জাপানে দাম সবচেয়ে বেশি ৩৬৯ টাকা৷ এছাড়া যু্ক্তরাষ্ট্রে ৩৪০, সুইজারল্যান্ডে ২৫১, জার্মানিতে ১৮১, যুক্তরাজ্যে ১২৫, পাকিস্তানে ৭৬, ভারতে ৫৯, নেপালে ৬০ ও শ্রীলঙ্কায় ৫১ টাকা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পেঁয়াজের দাম
১০ মার্চ নাম্বেওর ওয়েবসাইটে দেখা যায় বাংলাদেশে এক কেজি পেঁয়াজের দাম সাড়ে ৫৩ টাকা৷ ভারতে ৪০ টাকা, পাকিস্তানে ২৫ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৬৬ টাকা, নেপালে ৪৯ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ২২০ টাকা, যুক্তরাজ্যে ১০৮ টাকা ও জার্মানিতে ১২১ টাকা৷
ছবি: Reuters/L. Niesner
নাম্বেওর গ্রোসারি সূচক
নিউইয়র্ক শহরের বাজারের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারমূল্যের তুলনা করে তালিকা প্রকাশ করে নাম্বেও৷ এতে দেখা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে যে গ্রোসারির দাম ১০০ টাকা৷ বাংলাদেশে সেটা ৩০ টাকায় পাওয়া যায়৷ জার্মানিতে পাওয়া যায় ৫২ টাকায়, যুক্তরাজ্যে ৫৬ টাকা, ভারতে ২৬ টাকা, পাকিস্তানে ১৭ টাকা ও নেপালে ২৬ টাকায়৷ সূচকটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: imago/Levine-Roberts
নাম্বেওর তথ্য বিশ্বাসযোগ্য?
বিশ্বের যে কেউ নাম্বেওর ডাটাবেজে তথ্য ঢোকাতে পারে৷ তাই কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো তথ্য দিতে পারে৷ সে কারণে নাম্বেওর তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ এরপরও নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ইকোনমিস্ট, টাইম ম্যাগাজিনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নাম্বেওর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ নাম্বেও বলছে, গত ১২ মাসে ঢাকার বিভিন্ন জিনিসের দাম নিয়ে মোট ৩,১৩২ বার তথ্য যুক্ত করেছেন ২৭৪ জন নাম্বেও ব্যবহারকারী৷