1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রামবাসী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ

প্রণব বল
১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ২০০ ছাত্র ও শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছে।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী পাশের জোবরা গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে আসছেন যুগ যুগ ধরে। আবার এই গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধও অনেক দিনের পুরোনো। বিভিন্ন সময়ে দু'পক্ষ সংর্ঘষে জড়িয়েছে অতীতে।ছবি: AFP/Getty Images

দ্বিতীয় দিনের সংঘর্ষের জন্য তারা আইন-শৃংখলা বাহিনীকে দুষছেন। সংঘর্ষে ৩০ জনের বেশি গ্রামবাসীও আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামে শনিবার রাতে একজন ছাত্রীকে ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছেন - এমন অভিযোগ ওঠার পর শুরু হয় সংঘর্ষ। রাতভর শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মারামারির পর রোববার দুপুরে পুনরায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।

বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার পর হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার আদেশ' জারি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটসহ সংলগ্ন এলাকায়। তবে বিজ্ঞপ্তিতে রোববার বেলা দুইটা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার কথা বলা হয়।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রোববার ৮৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হয়। এর আগে শনিবার রাতের ঘটনায় একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৩০ জনকে। এছাড়া দুটি বেসরকারি হাসপাতালে আরো ৬৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের কারো মাথা ফেটেছে, কারো হাত ভেঙেছে, কারো বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ছিল। আহতদের মধ্যে উপ -উপাচার্য কামাল উদ্দিন, উপ-উপচার্য (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, প্রক্টর তানভির মো. হায়দার আরিফ এবং কয়েকজন সাংবাদিকও আছেন।

সংঘর্ষে লাঠি ও ইটপাটকেলের পাশাপাশি রামদাসহ ধারালো অস্ত্রের ব্যবহারও হয়েছে। দু' পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জোবরা গ্রামে বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার রাতে এবং রোববার বিকেলে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

শনি ও রোববারের সংঘর্ষের সময় পুলিশের প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া এই ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ইন্ধন রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দাবি করেছেন। তিনি ছাত্রদেরও সংঘর্ষ থেকে নিবৃত্ত করতে পারেননি বলে স্বীকার করেন।

সংঘর্ষ সম্পর্কে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর গায়ে দারোয়ান হাত তুলবে কেন? তার শাস্তি দাবি করছি। সংঘাতটাকে আরো খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগে থেকে যারা ছিল কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ সক্রিয় ছিল। তাদের শাস্তি দাবি করছি।''

‘পুলিশ ইচ্ছে করলে আসতে পারতো। কিন্তু তাদের বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই’: সাইফুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামে শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় এক ভাড়া বাসায় ঢোকা নিয়ে একজন ছাত্রীর সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীর বাকবিতণ্ডা হয়। ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জোবরা গ্রামে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। পরে দু'পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। রাত তিনটা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় অন্তত ৭০ জনের মতো আহত হয়। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাতে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওই ঘটনার জের ধরে রোববার সকাল থেকে ক্যাম্পাস এবং জোবরা গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করে। জোবরা গ্রামের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররাও পুনরায় জোবরা গ্রামের কাছে জড়ো হতে থাকে। গ্রামবাসীও নতুন করে অবস্থান নেন বিভিন্ন গলিতে। দু' পক্ষের পুনরায় মারমুখী অবস্থান দেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়ে।

উপ-উপাচার্য কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক সকাল ১০টার দিকে জোবরা গ্রামে যান। তারা ছাত্র ও গ্রামবাসীকে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়ানোর অনুরোধ জানান। এ সময় তারা সেখানে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অবস্থানরত ছাত্র -ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। এক পর্যায়ে দু'পক্ষ সম্মত হয়। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। টানা ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।

সংঘর্ষে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ফাহাদ। ফাহাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সহপাঠীদের ওপর হামলার খবর শুনে রোববার দুই নম্বর গেট এলাকায় যাই। সেখানে ইটের আঘাত লাগে। হামলাকারীরা ধানক্ষেতে নেমেও শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ছিল। হামলাকারীরা কাউকে কুপিয়েছে, কাউকে মারধর করেছে। হামলায় আমাদের প্রো-ভিসি স্যারও আহত হয়েছেন।''

ছবি: DW

হামলাকারীদের মধ্যে বহিরাগতরা ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।

তবে জোবরা গ্রামের একটি প্রাচীন সামাজিক সংগঠন নবযুগ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ উদ্দিন ইকবাল বলেন, ‘‘যখন সমঝোতার আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে, তখন হঠাৎ ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এরপর সংঘর্ষ বাধে। দুই পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়, পাশাপাশি ঢিল ছোড়াছুড়ি করতে থাকে। একই সময়ে এলাকার দোকানপাট ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। আমাদের ক্লাবটিও ভেঙে ফেলা হয়।''

এই ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা-কর্মীরা এক হয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়ায়। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এ সময় কোনো পুলিশ বা আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ছিল না বলে অভিযোগ।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব রিজাউর রহমান ডয়েচে ভেলেকে বলেন, "গ্রামবাসী সমঝোতায় আসেনি। তারা ১২টার দিকে হামলা শুরু করে। তারা আমাদের শিক্ষকদের ওপরও হামলা করে। তারা আক্রমণ আগে করেছে - স্পষ্ট প্রমাণ আছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বাসার গেট ভেঙে এনে তাদের মারা হচ্ছিল। দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসী ভয়ংকর দানবে রূপ নিলো। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

সংঘর্ষ চলাকালে উপ-উপাচার্য কামাল উদ্দিন আহত হয়ে ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে ক্যাম্পাসে চলে আসেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে তাৎক্ষণিক বক্তব্য দিয়ে দু'পক্ষকে সংঘর্ষ বন্ধ করার অনুরোধ জানান।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের সকল শিক্ষককে মারছে। আমার সকল ছাত্রকে মেরেছে। এখনো মারছে। আমরা মেডিকেলে (চবি মেডিকেল সেন্টার) জায়গা দিতে পারছি না। চট্টগ্রাম মেডিকেলে তিনটা গাড়ি পাঠিয়েছি। এসব গাড়িতে করে আমাদের প্রায় ১০০ আহত ছাত্র গেছে। আমার স্যারদেরকে মারছে। আমরা কোন জগতে আছি?''

পুলিশের অনুপস্থিতি এবং অস্ত্র লুট

রোববার সকাল থেকে দু পক্ষের উত্তেজনা প্রশমনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ সময় ঘটনাস্থল ২ নম্বর গেট ও জোবরা গ্রাম এলাকায় পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বার বার যোগাযোগ করেও পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি বলে অভিযোগ।

সহকারি প্রক্টর নাজমূল হোসাইন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব পক্ষের সাথে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠকে বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রদের একাংশকে নিয়ে ২ নম্বর গেটের দিকে চলে আসি আর একটা অংশ চলে যায় পূর্ব পাশে, সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। পরিস্থিতি খারাপ হলে সেখান থেকে ওসি সাহেবের সাথে কথা বলি। আরো খারাপ হলে প্রোভিসি (এডমিন) স্যারের সাথে কথা বলি। বলি, স্যার, আপনি সেনাবাহিনী কল করেন। পরিস্থিতি আউট অব কন্ট্রোল চলে যাচ্ছে, আমরা হাটহাজারী থানা থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। ''

সহকারি প্রক্টর নাজমূল হোসাইন আরো বলেন, ‘‘(২০২৪ সালের) ৫ আগস্টের পরে আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৬০পিস রাম দা কালেক্ট করি। এই অস্ত্রাগারকে লুট করার জন্য ৬টি তালা ভাঙা হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। উনারা ছাত্রদের পায়ে পড়েছেন। প্রোভিসি এডমিন স্যার শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন, তোমরা প্লিজ এটা করবা না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটা ভালো দেখাবে না। অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু সেটা আমরা কিছু করতে পারিনি। প্রায় ১৩০ পিস রামদা আমাদের অস্ত্রাগার থেকে লুট হয়েছে। সেটার জন্য আমাদের সকল ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতা চাই। এবং সেটা কখনো হয়ত আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য বুমেরাং হয়ে যেতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।''

নাজমূল হোসাইন বলেন, ‘‘আরেকটা ভয়ংকর বিষয় এখানে বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আমরা জানি না হয়েছে কিনা, ২০ রাউন্ডের মতো শর্টগানের গুলি আমরা ফুটিয়েছি। কেন? কারণ হচ্ছে, ছাত্রদেরকে ব্যাকআপ দিয়ে পিছনের দিকে নিয়ে আসার জন্য। বারবার ছাত্রদের বলেছি, ফায়ার হবে উপরের দিকে, তোমরা ব্যাকে যাবা। এই কথাটা আমাদের কোনো ছাত্র শোনে নাই। ওরা বরঞ্চ আরো বেশি পরিমাণে সংঘর্ষে পূর্ব দিকে চলে যায়। আমাদের ছাত্ররা হয়তোবা মোমেন্টামের কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর অস্ত্রগুলো বারবার নিয়ে নিচ্ছিল। এটা ভয়ংকর একটা বিষয়। যে-কোনো সময় একটা মিস ফায়ার হয়ে যেত পারতো।''

রোববার দুপুরে সংঘর্ষ চলাকালে গণমাধ্যমের সময় কথা বলার সময় উপ-উপাচার্য কামাল উদ্দিন দাবি করেন, "সকল ছাত্রলীগের ক্যাডাররা, সকল বড় বড় ক্যাডাররা এখানে ঢুকে ঢুকে মেরেছে। তারা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে মারছে।'' এ সময় পুলিশের অনুপস্থিতির বিষয়েও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি, ‘‘কোনো পুলিশ নাই। আমরা জিওসির সাথে কথা বলেছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কথা বলেছি। ২ ঘণ্টা চলে গেছে। এখনো আমাদের মাঝে কেউ আসে নাই। আমরা আর ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। এখনো মারছে আমাদের।”

একই অভিযোগ করেছেন রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সাইফুল ইসলাম বলেন, "আজ (রোববার) সকালে আমরা পরিদর্শনে গিয়েছি। গতকাল রাতে তাদের ওই এলাকাতে (জোবরা গ্রামে) বেশ ভাংচুর হয়েছে। আমরা দেখেছি। অনেক ক্ষয়ক্ষতিরে চিহ্ন লক্ষ্য করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় হয়তো এলাকাবাসী আজ সকালে বিক্ষুব্ধ হয়েছে।”

রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, "সকালে পরিদর্শন শেষে অফিসে এসে আমরা যখন করণীয় ঠিক করতে আলোচনা করছিলাম, তখনই খবর পাই আবার ছাত্ররা আক্রান্ত হচ্ছে। তারাও আবার সেদিকে যাচ্ছে। সকালে হাটহাজারী থানার ওসি এখানে ছিল। উনাকে বললাম ২০০ পুলিশ দরকার। কিন্তু তিনি বললেন, এত পুলিশ কোথায় পাব। ডিআইজির সাথেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন ফোর্স পাঠাচ্ছি।”

"পুলিশ ইচ্ছে করলে আসতে পারতো। কিন্তু তাদের বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই। তারা বলে, সবসময় ফোর্স রেডি থাকে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা আরো বেশি প্রয়োজন ছিল। বারবার তাগাদা দিয়েও পুলিশ আসেনি।”

এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে ‘ব্যর্থ' হয়েছেন বলেও স্বীকার করেন সাইফুল ইসলাম।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব রিজাউর রহমানও সকাল থেকে পুলিশ অনুপস্থিত ছিল বলে অভিযোগ করেন।

হাটহাজারী থানার ওসি আবু মাহমুদ কাওসার হোসেন রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত আছেন বলে জানান। তবে দিনভর সংঘর্ষে পুলিশের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পুলিশের নিস্ক্রিয়তা নিয়ে জানতে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. রাসেলকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।

এই ঘটনার পর রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইন-শৃংখলা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক হয়। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, "বৈঠকে আছি দীর্ঘ সময় ধরে। পুলিশ

বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। বৈঠকে ছাত্ররা নিরাপত্তাসহ অনেক দাবি দিয়েছে। আলোচনা চলছে।”

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সোমবার ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

‘দুই পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়, পাশাপাশি ঢিল ছোঁড়াছুড়ি করতে থাকে’: পারভেজ উদ্দিন ইকবাল

This browser does not support the audio element.

বিএনপি নেতা বহিষ্কার

এদিকে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোবরা গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় উপস্থিত থেকে এলাকাবাসীর পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। রোববার বিকালে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। উদয় কুসুম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি জোবরা গ্রামের বাসিন্দা।

বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, বিশৃঙ্খলাসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় গঠনতন্ত্রের বিধান মতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

এর আগে দুপুরে সংঘর্ষ চলাকালে জোবরা গ্রামে উদয় কুসুম গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, "২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের বিচার না হলে জোবরার সমস্ত জনগণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করবো। এর জন্য জীবন গেলে জীবন দেবো। আমার মানের চেয়ে জীবন বড় নয়। এখানে কোনো দল নেই। আমরা এলাকার নাগরিক, আমাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা এক ও অভিন্ন। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও পেশী শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করবো না।”

বহিষ্কারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উদয় কুসুম বড়ুয়া একটি পোস্ট দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, "দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি অনুগত। তবু এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা হোক।”

বারেবারে সংঘর্ষ গ্রামবাসীর সাথে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী পাশের জোবরা গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে আসছেন যুগ যুগ ধরে। আবার এই গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধও অনেক দিনের পুরোনো। বিভিন্ন সময়ে দু'পক্ষ সংর্ঘষে জড়িয়েছে অতীতে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৪টি ছাত্রাবাস আছে, যা আবাসনের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকে আশেপাশের গ্রামে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন।

গত ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী রেলস্টেশন এলাকায় একটি দোকান নির্মাণ করতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন চাঁদা দাবি করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের হাতাহাতিও হয়।

এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবরে দোকান দখল নিয়ে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। স্থানীয় যুবলীগের কয়েকজন নেতা ওই দোকান দখল করতে গেলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর ক্যাম্পাসে গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। অক্টোবরের ওই ঘটনার পর স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার নামে পরিচিত হানিফের গরুর খামারের গরু শিক্ষার্থীরা নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তুলেছিল গ্রামবাসী।

তার আগে গত বছরের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার বাজারে ইফতার সামগ্রী কিনতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের এক কর্মচারীর মোটরসাইকেলের সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে এর জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন সময় গাড়ি ভাড়াসহ নানা ইস্যুতে স্থানীয়দের সাথে বিরোধে জড়ায় শিক্ষার্থীরা।

তবে এবারের সংঘর্ষ অতীতের সবগুলোর চেয়ে ভয়াবহ এবং ব্যাপক বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা মনে করছেন।

‘পরিস্থিতি শান্ত আছে’: আবু মাহমুদ কাওসার হোসেন

This browser does not support the audio element.

চাকসু নির্বাচনের আগে শক্তি প্রদর্শন?

আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ৩৫ বছর পর এই নির্বাচন হবে।  আজ সোমবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে এই সংঘর্ষের ঘটনায় নিজেদের অস্তিত্ব এবং ভূমিকা জানান দিতে চেয়েছে কোনো কোনো দল। স্থানীয়দের সঙ্গে সংর্ঘষটি এ জন্য এড়ানো যায়নি বলেও মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।

তাদের মতে,  এই ঘটনাকে পুঁজি করে ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি অংশ নিজেদের ভূমিকার জানান দিতে চেয়েছে,  যাতে চাকসু নির্বাচনে এই সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের ভূমিকার প্রভাব থাকে। এ কারণে স্থানীয়দের সঙ্গে সমঝোতা শেষ মুহুর্তে ভেস্তে যায়।

এই অবস্থায় সুষ্ঠু চাকসু নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

থমথমে ক্যাম্পাস

প্রোভিসি কামাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বা পরীক্ষা নেই। তবে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। পরিস্থিতি থমথমে। পুরুষ শূন্য জোবরা গ্রাম। পুলিশ, সেনা, বিজিবি টহল দিচ্ছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ