চাঁদে ল্যান্ডিং-এর জন্য পাঠানো ভারতের প্রথম মহাকাশযান চন্দ্রযান-২ এর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ হারিয়েছে দেশটির মহাকাশ সংস্থা৷ চাঁদ স্পর্শ করার ঠিক আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়৷ ফলে মিশন ব্যর্থ হয়েছে কিনা, তাও এখনও স্পষ্ট নয়৷
ছবি: picture-alliance/Z. Naijie
বিজ্ঞাপন
শনিবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা ছিল চন্দ্রযান-২ এর৷ এখন পর্যন্ত মিশন সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়নি৷
২২ জুলাই চাঁদের উদ্দেশ্যে নিক্ষিপ্ত হয় চন্দ্রযান-২৷ চাঁদের মাটি স্পর্শ করতে পারলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পর কেবল চতুর্থ দেশ হিসেবে নাম লেখাতো ভারত৷ কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে ভারতের সে অপেক্ষা আরো কিছুদিন বাড়লো বলেই মনে হচ্ছে৷
মিশন কন্ট্রোল রুম থেকে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন- আইএসআরও এর চেয়ারম্যান কাইলাসাভাদিভু সিভান বলেছেন, ‘‘বিক্রম ল্যান্ডার পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগিয়ে যাচ্ছিলো, সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল৷ কিন্তু হঠাৎই গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে৷ আমরা সব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখছি৷''
ইন্দো-এশিয়ান নিউজ এজেন্সি- আইএএনএস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইএসআরও কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এখনই মহাকাশযানটির ভাগ্য নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘অভিযানের কেবল পাঁচ শতাংশ আমরা হারিয়েছি৷ বিক্রম ল্যান্ডার ও প্রজ্ঞান রোভারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে৷ কিন্তু চাঁদের কক্ষপথে এখনও চন্দ্রযান-২ প্রদক্ষিণ করছে৷ এটা একটা সাফল্য৷''
তিনি জানান, কক্ষপথ থেকে ল্যান্ডারের ছবি তুলে পাঠাতে পারবে চন্দ্রযান-২৷
মহাকাশে ভারতের কয়েকটি সাফল্য
৭ সেপ্টেম্বর ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয় পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বাড়লো৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
চন্দ্রমিশন
ভারতের প্রথম চন্দ্রমিশন চন্দ্রযান-১৷ চাঁদে নামার উদ্দেশ্য এর ছিল না৷ এটি শুধু অর্বিটে ঘুরেছে৷ ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর রওয়ানা হয়েছিল এটি৷ দশ মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল৷ এরপর ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট হঠাৎ করে চন্দ্রযান-১ এর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়৷ তবে এই সময়ের মধ্যে অভিযানের মূল উদ্দেশ্যের ৯৫ ভাগ কাজ সম্পাদিত হওয়ায় একে সফল অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ চাঁদে পানির উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছিল চন্দ্রযান-১৷
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
চন্দ্রযান-২
২০১৯ সালের ২২ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিল চন্দ্রযান-২৷ ৭ সেপ্টেম্বর তার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
রকেট
স্যাটেলাইট প্রেরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা স্পেসএক্স-এর মতো বাণিজ্যিক কোম্পানির রকেটের উপর নির্ভরশীল৷ তবে ভারতের রয়েছে নিজস্ব রকেট, নাম জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক- থ্রি (জিএসএলভি এমকে-থ্রি)৷ এতে করেই চন্দ্রযান-২ পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
জিপিএস-এর পরিবর্তে নাভিক
‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএস ছাড়া জীবন যাপন আজকাল কঠিন৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের এই সিস্টেম কোনো দিন কোনো কারণে বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হবে? এই অবস্থায় যেন সমস্যায় পড়তে না হয় তাই ভারত নিজেই একটি সিস্টেম গড়ে নিয়েছে, যার নাম ‘নাভিক’ (ন্যাভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনসটেলেশন)৷ এটি ভারত ও তার সীমান্তের আশেপাশে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারে বলে দাবি করা হয়৷
ছবি: Reuters/U.S. Marine Corps
মঙ্গলযান
পোশাকি নাম ‘মার্স অর্বিটার মিশন’ বা এমওএম৷ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ভারতের মঙ্গলযান৷ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গলের কক্ষপথে যেতে সক্ষম হয় ভারত৷ এছাড়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম প্রচেষ্টাতেই কক্ষপথে ঢুকতে সফল হয় মঙ্গলযান৷ ভারতের আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মঙ্গলের কক্ষপথে গিয়েছিল৷ মঙ্গলযান এখনও কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
স্যাটেলাইট
১৯৮৮ সালে ভারত প্রথম মহাকাশে রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট পাঠায়৷ এরপর একে একে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে৷ এগুলোর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ থেকে শুরু করে টেলিভিশন সম্প্রচার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজ করা হচ্ছে৷ বর্তমানে ভারতের ১৫টি রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট রয়েছে৷
ছবি: ISRO
6 ছবি1 | 6
প্রশংসায়পঞ্চমুখমোদি
ল্যান্ডিং দেখতে শনিবার বেঙ্গালুরুর আইএসআরওতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘‘জীবনে উত্থান-পতন আছেই৷ আপনাদের কঠোর পরিশ্রম আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং পুরো দেশ আপনাদের নিয়ে গর্বিত৷ যোগাযোগ আবার স্থাপন করা গেলে আমাদের যাত্রা চলবে৷''
আইএসআরওতে ভাষণ দেয়ার পর সংস্থার প্রধান সিভানকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন মোদি৷