ফ্রান্সের এক শিল্পী বেশ কিছু বাস্তব দৃশ্যের প্রায় হুবহু ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করে দর্শকদের বিস্মিত করে চলেছেন৷ এমনকি এমন শিল্পকর্ম নিয়ে আস্ত একটা মিউজিয়াম তৈরি করেছেন তিনি৷ এক একটি দৃশ্য তৈরি করতে এক বছরও সময় লেগে যায়৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের এক শিল্পী বেশ কিছু বাস্তব দৃশ্যের প্রায় হুবহু ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করে দর্শকদের বিস্মিত করে চলেছেন৷ এমনকি এমন শিল্পকর্ম নিয়ে আস্ত একটা মিউজিয়াম তৈরি করেছেন তিনি৷ এক একটি দৃশ্য তৈরি করতে এক বছরও সময় লেগে যায়৷
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মাক্সিম রেস্তোরাঁ বিশ্ববিখ্যাত৷ কিন্তু সেখানে টেবিল প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও কোনো পরিচারক বা গ্রাহক চোখে পড়ছে না কেন? কারণ এই রেস্তোরাঁ আসলে ডান ওলমানের তৈরি মিনিয়েচার বা ক্ষুদ্র সংস্করণ৷ এক বছর ধরে হাতে করে তিনি সেটি তৈরি করেছেন৷ ওলমান মনে করিয়ে দেন, ‘‘বহু শতাব্দী ধরে মিনিয়েচার সংস্করণ তৈরির ঐতিহ্য চলে আসছে৷ এমনকি মিশরের পিরামিডেরও এমন সংস্করণ ছিল৷ সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতেও তথাকথিত মিনিয়েচার পেন্টিং-এর মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হতো৷ এই শিল্পশাখা আসলে জীবনেরই প্রতিফলন৷ এক ধরনের পেন্টিং হলেও সেটি ত্রিমাত্রিক৷''
এককালে কাঠের মিস্ত্রি ও ইন্টিরিয়র ডেকরেটর হিসেবে কাজ করলেও গত শতাব্দীর আশির দশকে তিনি থিয়েটার ও অপেরার জন্য মঞ্চসজ্জা তৈরির কাজ শুরু করেন৷ সেই লক্ষ্যে তাঁকে ছোট আকারের মডেল তৈরি করতে হতো৷ সেই কাজ থেকে প্রেরণা পেয়ে তিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে মিনিয়েচার তৈরি করে চলেছেন৷
লোকচক্ষুর আড়ালে ডান ওলমান নিত্যনতুন সৃষ্টির কাজে মেতে থাকেন৷ নিখুঁত পরিমাপ বজায় রেখে মিনিয়েচার সৃষ্টি করতে তাঁকে বেশ কয়েক মাস ধরে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়৷ তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টি আসল দৃশ্যের হুবহু নকল৷ সব বৈশিষ্ট্য নথিভুক্ত করে তিনি ১২ গুণ ছোট সংস্করণ তৈরি করেন৷ সেই কাজে পরিশ্রম সম্পর্কে ডান বলেন, ‘‘কখনো শুধু চেয়ার তৈরি করতেই আমার এক মাস সময় লেগে যায়৷ প্রায়ই নতুন করে অনেক কিছু করতে হয়৷ তবে চাপ সত্ত্বেও বেশ সন্তুষ্টি পাওয়া যায়৷ অনেক ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়৷ কিছুটা সাহস সম্বল করে লেগে থাকতে হয়৷ শেষ পর্যন্ত কাজ হয়ে গেলে মন আনন্দে ভরে যায়৷ কখনো কাজ শেষ করতে এক বছরও সময় লাগে৷''
২০০৫ সালে ডান ওলমান লিয়ঁ শহরের পুরানো অংশে নিজের মিনিয়েচার মিউজিয়াম খোলেন৷ ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথমবার নিজের শিল্পকর্ম ভরা তিনটি ট্রাকে করে সেখানে এসেছিলেন৷ দুই সপ্তাহের প্রদর্শনীতে যোগ দিতে এসে ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম শহরের প্রেমে পড়ে যান তিনি৷ ডান বলেন, ‘‘সারা বছর ধরে আমার লিঁয় শহরের পুরানো অংশে থাকার সৌভাগ্য হয়৷ মধ্যযুগীয় এই এলাকা সত্যি অসাধারণ৷ ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় সেটি স্থান পেয়েছে৷ চোখে দেখলেই বোঝা যায় কত সুন্দর৷ অনেকটা মিনিয়েচারের মতো৷''
প্রায় দুই হাজার বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে দর্শকরা ইউরোপের অনেক মিনিয়েচার শিল্পীর তৈরি একশোটিরও বেশি দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন৷ তবে বেশিরভাগ শিল্পকর্ম স্বয়ং ডান ওলমানের তৈরি৷
ইয়োসেফিন গ্যুন্টার/এসবি
বাস্তবের ১২গুণ ক্ষুদ্র সংস্করণ
03:21
জার্মানির অদ্ভুত সব জাদুঘর
নির্যাতনের বস্তু আর মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রস্রাবের পাত্র– এমন অদ্ভুত সব বিষয় নিয়েও জাদুঘর আছে জার্মানিতে৷ ছবিঘরে পরিচিত হোন এমন কিছু জাদুঘরের সঙ্গে৷
ছবি: Mittelalterliches Foltermuseum, Rüdesheim
শিকারি কুকুরের জাদুঘর
জার্মানির বহু মানুষের কাছে কুকুরের খুব কদর৷ আবার অনাদিকাল থেকে শিকারি কুকুর নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই মানুষের৷ শিকারি কুকুর নিয়ে জার্মানির পাসাউ শহরে রয়েছে একটি জাদুঘর৷ ‘ডাকেলমুজিয়ুম’-এ দেখা মিলবে সাড়ে চার হাজার নানা রকমের শিকারি কুকুরের৷ ২০১৮ সালে চালু হয় বিশ্বের প্রথম এই শিকারি কুকুরের জাদুঘরটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Weigel
থলের জাদুঘর
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন বস্তুগুলোর একটি বস্তা বা থলে৷ নিহাইম এলাকার থলে জাদুঘরে আছে ৭ হাজার রকমের থলের প্রদর্শনী৷ সময়ের ধারাবাহিকতায় এসবের বিবর্তনও দেখা যাবে সেখানে৷ উপরের ছবিতে ক্ষুদ্র একটি ‘মেল- ব্যাগ’ দেখা যাচ্ছে , যা ব্যবহৃত হয়েছিল ১৯৩০ সালে৷
রাতে প্রস্রাব করার জন্য অনেক দেশে বিছানার নীচে ছোট পাত্র রাখা হয়ে থাকে৷ এ ধরনের ৬০০টি পাত্র নিয়ে একটি জাদুঘর গড়ে তুলেছেন সৌখিন সংগ্রাহক এলিজাবেথ হেসে৷ লোয়ার স্যাক্সনির ভাসব্যুটেল এলাকায় অবস্থিত তাঁর এই ব্যক্তিগত জাদুঘর৷ ছবিতে রয়েছে, এলিজাবেথের সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে পুরাতন প্রস্রাব পাত্র৷ ১৮৭৫ সালের প্রস্রাব পাত্র এটি৷
ছবি: Elisabeth Hesse
শেষ বিদায় জাদুঘর
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নানাবিধ সংস্কৃতি নিয়ে জার্মানির ক্যাসেলে আছে একটি বিরল জাদুঘর৷ ‘মিউজিয়াম ফর সেপালক্রাল কালচার’ নামে জাদুঘরটি চালু হয় ১৯৯২ সালে৷ এতে কয়েক শতাব্দী ধরে পৃথিবীর নানাপ্রান্তে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিবর্তন দেখানো হয়েছে৷ অলঙ্কিত শবযান, কফিন, মৃতের ধ্বংসাবশেষ, খাটিয়া, শবযাত্রার গয়নাসহ বহু জিনিসপত্রের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে সেখানে৷
ছবি: Museum für Sepulkralkultur Kassel
মধ্যযুগের নির্যাতন নিয়ে জাদুঘর
বেত্রাঘাতের খাম্বা আর ফাঁসির মঞ্চ থেকে শুরু করে ন, তাক, আংটা কী নেই সেখানে! মধ্যযুগে নির্যাতনে ব্যবহৃত এসব জিনিসপত্র নিয়ে জার্মানির রুডেসহাইমে গড়া হয়েছে মধ্যযুগীয় নির্যাতন জাদুঘর (মেডিয়াভেল টর্চার মিউজিয়াম)৷ এর পাশাপাশি চিত্রের মাধ্যমে তদন্তের সময় ক্যাথলিক চার্চের নানা নির্যাতনের বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে ওই জাদুঘরে৷
ছবি: Mittelalterliches Foltermuseum, Rüdesheim
কর্কস্ক্রু জাদুঘর
ওয়াইনের বোতল খুলতে খুব প্রয়োজনীয় যন্ত্র ‘কর্কস্ক্রু’৷ ১ হাজার রকমের কর্কস্ক্রু নিয়ে ফগ্টসবুর্গে শহরে এই জাদুঘর গড়েছেন বার্নহাড মাউয়ার৷ আদিকালের সাধারণ কর্কস্ক্রু থেকে শুরু করে বর্তমানের যান্ত্রিক ‘ওপেনার’ দিয়ে জাদুঘরটি সাজিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Korkenzieher Museum Kaiserstuhl
আঙুলের টোপরের জাদুঘর
হাতে সেলাইয়ের সময় আঙুলে পরা হয়ে থাকে টোপর৷ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ব্যবহৃত বহুবিধ টোপর নিয়ে জাদুঘর আছে দক্ষিণ জার্মানির ক্রেগলিংগেন-এ৷ সাধারণ টোপর থেকে শুরু করে চমৎকার কারুকাজের বহু টোপরের সন্নিবেশ ঘটেছে সেখানে৷
ছবি: Fingerhutmuseum Creglingen
ছুরি-চামচের জাদুঘর
স্টিলের পণ্যের জন্য সুপরিচিত পশ্চিম জার্মানির জোলিংগেন শহর৷ ছুরি-চামচের জাদুঘর তৈরির জন্যও তাই উপযুক্ত এটি৷ জার্মান ব্লেড মিউজিয়ামে ছুরি-চামচের প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে এসবের বিবর্তন৷ প্রাচীন যুগে হাড় দিয়ে তৈরি চামচ আর ব্রোঞ্জ যুগের পণ্যের সঙ্গে বর্তমানের ছুরি-চামচের নানা দিকও ফুটে উঠেছে সেখানে৷
ছবি: Deutsches Klingenmuseum
হপ মিউজিয়াম
হপ-সহ বিয়ার তৈরির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে এই জাদুঘর৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হপ উৎপাদনকারী রাজ্য বাভারিয়া-ই তো উপযুক্ত এই জাদুঘরের জন্য৷ বাভারিয়ান হালারটাউ-তে এই জাদুঘরটি অবস্থিত৷