উত্তর কোরিয়ার সর্বাধুনিক রকেট পরীক্ষার পরের দিন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন৷ ঘাঁটিটি উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েকশ' মিটার দূরে৷
বিজ্ঞাপন
গত জানুয়ারি মাসে উপরাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পেন্স এই প্রথম কোরিয়া উপদ্বীপে পদার্পণ করলেন৷ জাতিসংঘের মার্কিন নেতৃত্বাধীন কমান্ড পোস্ট ক্যাম্প বোনিফাস-এ আসাটা তাঁর আবেগকেও কিছুটা নাড়া দিয়েছে, কেননা তাঁর বাবা কোরিয়া যুদ্ধের সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত ছিলেন৷
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়ে পেন্স বলেন, ‘‘কোরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনী এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের সেনাবাহিনীর মধ্যে মৈত্রী ঐতিহাসিক'' এবং ‘‘আমাদের দুই (দেশের) জনগণের মধ্যে অটল বন্ধনের সাক্ষী৷''
‘‘(দক্ষিণ কোরিয়ার) জনগণের জন্য দেশের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং (অপরাপর) লক্ষ্য অর্জনের জন্য সব সম্ভাব্য পন্থাই বিবেচনা করা হচ্ছে,'' বলেন পেন্স৷ উত্তর কেরিয়া সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য: ‘‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের যুগ শেষ হয়েছে৷''
উত্তর কোরিয়ার মতলব কী?
বিশেষজ্ঞদের অনেক পূর্বাভাষ ভুল প্রমাণ করে এখনো টিকে আছে কিম জং উন-এর স্বৈরাচারী শাসনযন্ত্র৷ শুধু তাই নয়, একের পর এক সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলকে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ এই সাফল্যের রহস্য কী?
ছবি: Reuters/KCNA
পথের কাঁটা দূর করা
কোনো ব্যক্তিকে সামান্যতম হুমকি মনে করলেই পথের কাঁটা হিসেবে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে পিছপা হন না কিম জং উন৷ সম্প্রতি তাঁর সৎ-ভাইকে যেভাবে মালয়েশিয়ায় খুন করা হয়েছে, তার পেছনে এই মনোভাব কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এর আগেও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashi
ঘরে-বাইরে শত্রু
নিজের পারিবারিক শাসনতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখতে ঘরে-বাইরে আস্ফালন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর কিম জং উন৷ ঘরের শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বাইরের জগতকে ক্ষেপণাস্ত্র ও আণবিক অস্ত্র দেখিয়ে ঠেকিয়ে রাখার নীতি অনুসরণ করে চলেছেন ‘মহান নেতা’৷ সেই কৌশল কাজ করছে বলেও অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: Reuters/KCNA
বিফল হলেই বা কী!
উত্তর কোরিয়ার অনেক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বিফল হয়েছে৷ কিন্তু একের পর এক প্রচেষ্টা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার উপর সামরিক হামলার কথাও এতকাল ভাবতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Yeon-Je
পুরানো প্রযুক্তির সুবিধা
প্রশ্ন ওঠে, কার্যত একঘরে হয়ে থাকা একটি দেশ কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আয়ত্ত করছে? সেই ১৯৫০-এর দশকের মার্কিন, রুশ বা চিনা প্রযুক্তির ভিত্তিতেই উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ তাই সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে সাইবার হামলা চালানোরও কোনো উপায় নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kcna
চিনের সঙ্গে দূরত্ব
আন্তর্জাতিক স্তরে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশ উত্তর কোরিয়া সাধারণ সীমান্তসহ একাধিক কারণে চীনের উপর নির্ভরশীল৷ তবে পিয়ংইয়ং ও বেইজিং-এর মধ্যে খোলাখুলি মতবিরোধ এখন আর বিরল ঘটনা নয়৷ এমন অবস্থা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতার স্বার্থে চীন সে দেশের প্রতি সংযম দেখিয়ে চলেছে এবং অন্যান্য দেশকেও সেই পরামর্শ দিচ্ছে৷
ছবি: MARK RALSTON/AFP/Getty Images
চিনের উভয়-সংকট
উত্তর কোরিয়ার উপর প্রভাব কমে যাওয়ায় অন্যান্য দেশগুলিও আর চিনের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই চীনের দোরগড়ায় অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ফলে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে চিনের নিজস্ব স্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/U.S. Department of Defense/Missile Defense Agency
6 ছবি1 | 6
মার্কিন সৈন্যদের সমীপে পেন্স উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে একটি ‘প্ররোচনা' বলে অভিহিত করেন৷ তাঁর দৃষ্টিতে ‘‘প্রত্যেক মার্কিন সৈন্য দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের স্বাধীনতা ও অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষার জন্য বিশ্বের এই অংশে প্রতিদিন যেসব ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে'', এই প্ররোচনা তার সর্বাধুনিক স্মারক বলে মনে করেন পেন্স৷
সোমবার পেন্স দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হোয়াং কিও-আন-এর সঙ্গে ডিমিলিটারাইজড জোন, অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করছেন৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাঁর ১০ দিনের সফরে পেন্স এরপর যাবেন জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায়৷
ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার রবিবার বলেছেন, ‘‘আমার মতে এখন একটি আন্তর্জাতিক সমঝোতা সৃষ্টি হয়েছে – চীনও যার অঙ্গ – যে এটা এমন একটা পরিস্থিতি, যা কোনোমতেই চলতে পারে না৷''
রহস্যময় উত্তর কোরিয়া
বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া৷ জার্মান আলোকচিত্রী ইয়ুলিয়া লিব সে দেশে ঘুরতে গিয়েছিলেন৷ ‘অ্যানোনিমাস কান্ট্রি নর্থ কোরিয়া’ নামে সম্প্রতি তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁরই তোলা কয়েকটি ছবি৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
ট্রাফিক লাইট ছাড়া রাজধানী!
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ নাকি কোনো ট্রাফিক লাইট নেই৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটাই জানিয়েছেন জার্মান আলোকচিত্রী ইয়ুলিয়া লিব৷ সম্প্রতি সে দেশে ঘুরতে গিয়ে তিনি এমন সব স্থানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, যেখানে সাধারণত খুব বেশি পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি নেই৷ ছবিতে পিয়ংইয়ং-এর একজন নারী ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
‘মাস গেমস’
ছবিটি ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন ছোট ছোট অনেকগুলো মুখ দেখা যাচ্ছে৷ এগুলো সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের মুখ৷ তারা নিজেদের হাতে আঁকা প্ল্যাকার্ডগুলো উপরে তুলে ধরেছে৷ ফলে অঙ্কিত হয়েছে বিশাল এই ছবিটি৷ অনেকে মিলে একসঙ্গে এই খেলায় অংশ নেয় বলে এটা ‘মাস গেমস’ নামে পরিচিত৷ বাৎসরিক ‘আরিরাং উৎসব’ -এর অংশ এটি৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
কোরীয় রোমিও-জুলিয়েট
আরিরাং উৎসবের নামটি এসেছে একই নামে থাকা কোরীয় এক লোক সংগীত থেকে৷ দুষ্টু জমিদারের কারণে তরুণ এক জুটির আলাদা হয়ে যাওয়ার করুণ কাহিনি এই গানের মূল কথা৷ দুই কোরিয়ার মধ্যে যে বিভাজন এই উৎসবে সেটা ফুটে ওঠে৷ প্রায় এক লক্ষ মানুষ আরিরাং উৎসবে বিভিন্ন ধরনের মনোরম কসরত দেখিয়ে থাকে৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
শহর নয় যেন মরুভূমি
ছবিতে পিয়ংইয়ং-এর কিম ইল সুং চত্বর দেখা যাচ্ছে৷ অন্য কোনো শহরে এ ধরনের চত্বরগুলো সবসময় লোকে লোকারণ্য থাকলেও উত্তর কোরিয়া বলেই সেটা জনমানবশূন্য৷ আলোকচিত্রী লিব জানিয়েছেন, রাজধানী হলেও পিয়ংইয়ং-এ গাড়ি খুব কমই দেখা যায়, নেই বিজ্ঞাপন সম্বলিত বিলবোর্ড, নেই কোনো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের রেস্তোরাঁ৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
‘জুচ্ছেয়ে’ তত্ত্ব
১৭০ মিটার উঁচু এই টাওয়ারটি উত্তর কোরিয়ার ‘জুচ্ছেয়ে’ ভাবাদর্শের প্রতীক৷ সাবেক নেতা কিম ইল সুং-এর দেয়া এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে ‘স্বনির্ভরতা’৷ দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া এই চিন্তারীতিই মেনে চলে৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
অন্যরকম অভিজ্ঞতা
নবদম্পতির ছবি তোলা হচ্ছে৷ যিনি ছবিটি তুলছেন তিনি ছবি তোলা শেষে লিবের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন৷ উত্তর কোরিয়ায় কোনো বিদেশির কাছে এটা একটা দুর্লভ অভিজ্ঞতা বলে জানান লিব৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
দুই দেশে এক টেবিল!
ছবিটি সেই সীমান্ত এলাকার, যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা চাইলে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হতে পারেন৷ আলোচনার টেবিলটি এমনভাবে বসানো হয়েছে যে, তার দুই পাশে যাঁরা বসবেন তাঁরা শারীরিকভাবে তাঁদের দেশের ভেতরেই থাকবেন৷
ছবি: 2014 Julia Leeb
একাত্মতার প্রতীক
এটি ‘দ্য মনুমেন্ট টু দ্য ফাউন্ডেশন অফ দ্য কোরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি’৷ হাতুড়ি আর কাস্তে হলো কৃষক সমাজের প্রতিচ্ছবি৷ আর মাঝখানের তুলিটি বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে প্রতিনিধিত্ব করছে৷ দেশের নেতা, জনসাধারণ আর দলের মধ্যে একাত্মতা বোঝাতে হাতুড়ি, কাস্তে আর তুলিকে একটি পাথর দিয়ে একসঙ্গে ঘিরে দেয়া হয়েছে৷ আর দুই পাশে যে দুটি ভবন দেখা যাচ্ছে, সেগুলি বিপ্লবী পতাকার প্রতীক৷