চরম দক্ষিণপন্থিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সুফল কি পাওয়া যাবে?
২২ জানুয়ারি ২০২৪
জার্মানি জুড়ে এএফডি দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সত্ত্বেও জনমত সমীক্ষায় সেই শক্তির প্রতি সমর্থন এখনো কমছে না৷ বিশ্বের অন্য কিছু দেশের মতো জার্মানির সমাজও কি চরম বিভাজনের দিকে এগোচ্ছে?
বিজ্ঞাপন
চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দল জার্মানিতে চরম বিভাজন সৃষ্টি করছে৷ একদিকে জনমত সমীক্ষায় এখনো দ্বিতীয় স্থান দথল করে সেই দল আগামী নির্বাচনগুলিতে অভূতপূর্ব সাফল্যের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলছে, অন্যদিকে প্রবল শীত সত্ত্বেও গোটা দেশ জুড়ে লাখ লাখ মানুষ সেই দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷
সপ্তাহান্তেও জার্মানির বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীরা সোচ্চার ছিলেন৷ শুধু শুক্রবার ও রোববারের মধ্যে প্রায় একশ' জায়গায় এএফডি-বিরোধী বিক্ষোভ আয়োজিত হয়েছে৷ আয়োজকদের মতে, সব মিলিয়ে ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ তাতে অংশ নিয়েছেন৷ রোববার মিউনিখ শহরে প্রায় এক লাখ মানুষ এএফডি দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিতে উপস্থিত হলে নিরাপত্তার খাতিরে আয়োজকদের শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ বাতিল করতে হয়েছে৷ বার্লিনেও রোববার সন্ধ্যায় প্রায় এক লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন৷
গত ১০ই জানুয়ারি প্রকাশিত এক সংবাদের সূত্র ধরেই জার্মানি জুড়ে এএফডি দলের বিরুদ্ধে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ দলের কিছু সদস্য সমমনস্ক উগ্র দক্ষিণপন্থি ব্যক্তিদের সঙ্গে জার্মানি থেকে বিদেশিদের বিতাড়ন করতে এক ষড়যন্ত্রের রূপরেখা রচনা করেছিলেন বলে ‘কারেক্টিভ' নামের এক অনুসন্ধানী সংবাদ সূত্র জানিয়েছিল৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে তিনটি রাজ্যের নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে ভোটারদের সামনে এএফডি দলের ‘প্রকৃত চরিত্র' তুলে ধরতে আয়োজকরা দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করছেন৷ বিশেষ করে যে সব মানুষ শুধু প্রতিষ্ঠিত দলগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এএফডি দলকে সমর্থন করছেন, বিক্ষোভের মাধ্যমে তাদের মতবদলের আশা করা হচ্ছে৷ একাধিক রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ফুটবল ব্যক্তিত্ব চরম দক্ষিণুন্থিদের বিরুদ্ধে মানুষকে অবস্থান নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন৷
বিপুল জনসমর্থন ধরে রাখতে পারলে পূবের স্যাক্সনি ও টুরিঙ্গিয়া রাজ্যে নির্বাচনে এএফডি দল এমনকি ক্ষমতায় আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে আগামী বছর ফেডারেল নির্বাচনের আগে ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে দলটি দেশের বাকি অংশেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সমর্থনের মুখ দেখে আগামী সংসদে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে৷ সেই ‘অঘটন' এড়াতে আইনি পথে নানা রকম পদক্ষেপের প্রস্তাব শোনা যাচ্ছে৷ তবে এএফডি দল, দলের নির্দিষ্ট কিছু অংশ বা কয়েকজন নেতার অধিকার খর্ব করার প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ বিশেষ করে দলটিকে সংবিধানবিরোধী হিসেবে তুলে ধরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷ তাঁদের মতে, বরং রাজনৈতিক আঙিনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলের প্রকৃত অ্যাজেন্ডা তুলে ধরে প্রতিবাদী ভোটারদের মনে এএফডি সম্পর্কে সংশয় জাগিয়ে তোলাই সঠিক পথ৷
কট্টর-ডানপন্থি দল এএফডির উত্থানে উদ্বেগ বাড়ছে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ অভিবাসনবিরোধী দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন শহরের প্রতিবাদ, বিক্ষোভে৷
ছবি: Michael Kuenne/ZUMAPRESS/picture alliance
কোলনে ৩০ হাজার মানুষ
মঙ্গলবার কোলন শহরে এএফডি-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হন৷ টানা পাঁচদিন ধরে জার্মানির বিভিন্ন শহরে চলছে এই প্রতিবাদ৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
‘ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রীদের জোট’
কোলন শহরে জড়ো হওয়ারা বিভিন্ন বার্তা নিয়ে হাজির হন৷ একজন প্ল্যাকার্ডে ‘ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে সব গণতন্ত্রীদের জোট’ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ নানা ইস্যুতে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা হ্রাস আর ডানপন্থি দলের সমর্থন বাড়ায় কেউ কেউ লিখে এনেছেন, ‘বর্ণবাদীরা বিকল্প হতে পারে না৷’
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
চ্যান্সেলরের সমর্থন
কোলনের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও৷ তিনি বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ ও সাহস জোগাতে বার্তা দিয়েছেন৷ দেবেন ই বা না কেন? এএফডির উত্থানে যে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীনেরা৷
ছবি: Marc John/IMAGO
‘নাৎসিদের সরকারে নয়’
একইদিনে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ এসেনে অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডি দলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন৷ ‘নাৎসিদের সরকারে নয়’, ‘ধূসর নয়, রঙিনকে বেছে নিন’, এমন স্লোগান দেন তারা৷
ছবি: David Young/dpa/picture alliance
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লাইপসিশ
এএফডি ছাড়াও উগ্র-রক্ষণশীল দল ভ্যালুস ইউনিয়ন নামের আরেকটি দলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন পূর্বের শহর লাইপসিশের মানুষ৷ মোবাইলে আলো জ্বালিয়ে শহরের ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্টের সামনে জড়ো হন তারা৷ ‘ফ্যাসিবাদ আর কখনো নয়’, ‘এএফডিকে না’, ‘এএফডি নাৎসি দল’, এমন স্লোগান দেন তারা৷ সোমবার এই বিক্ষোভে পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
গ্য়োটিঙেনে মুখোমুখি
শনিবার গ্য়োটিঙেনে বিক্ষোভ করেছেন উগ্র ডানপন্থার পক্ষ ও বিপক্ষের মানুষ৷ ডানপন্থাবিরোধী জোট নামে একটি পক্ষ পুলিশের বাধার সামনে রাস্তায় বসে পড়েন (ছবিতে)৷ একই সময়ে ডানপন্থি ১০টি সংগঠনের সদস্যরা লোয়ার স্যাক্সনির শহরটিতে পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন৷
ছবি: Swen Pförtner/dpa/picture alliance
বার্লিনে ঐক্যের ডাক
তার আগে রোববার বার্লিনে প্রতিবাদে শামিল হন ২৫ হাজার মানুষ৷ ফ্রাইডে ফর ফিউচারসহ বিভিন্ন এনজিও ও আন্দোলনকর্মীরা এতে অংশ নেন৷ কট্টর ডানপন্থার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের মূল্যবোধের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ঐক্যের ডাক দেন তারা৷
ছবি: Rainer Keuenhof/picture alliance
প্রতিবাদে সরকারও
এএফডির কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তায় আছে সরকারও৷ একদিকে তাদের জনপ্রিয়তা কমছে, অন্যদিকে ডানপন্থিদের বাড়ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব রক্ষায় জোট সরকারের তিন দলের নেতারাও ডানপন্থা ঠেকানোর দাবিতে মানুষের সাথে শামিল হয়েছেন৷ রোববার পটসডামে এসপিডির নেতা জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস, গ্রিন পার্টির নেত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও বিক্ষোভে অংশ নেন।
ছবি: Sebastian Gollnow/dpa/picture alliance
যে কারণে ক্ষোভ
অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম কারেকটিভ জানিয়েছে, সম্প্রতি পটসডামে এএফডিসহ উগ্র ডানপন্থি দলগুলো একটি বৈঠক করে৷ নির্বাচনে জয়লাভের পর ‘রিমাইগ্রেশন’ বা জার্মানিতে আসা অভিবাসীদের কীভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়- সেই কৌশল নিয়ে তারা আলোচনা করে৷ এই বৈঠকে জার্মান পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে কারেক্টিভ৷ এমন পরিস্থিতিতে এএফডিকে নিষিদ্ধ করার দাবি আবারো জোরালো হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷