বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের শিক্ষার্থীরা তাদের সনদ এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে৷ ওদিকে এই সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সতর্কতা জারি করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন৷
বিজ্ঞাপন
একমাস আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ব্যবসাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নানা অবৈধ কাজ কারবার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তোপের মুখে পড়ে৷ শিক্ষামন্ত্রী এবং মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান টিআইবি-র প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করে প্রতিবেদনটি প্রমাণ করতে অথবা ক্ষমা চাইতে বলেন৷ কিন্তু এবার মঞ্জুরি কমিশনই দেশের ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে৷ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ঐ ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ করে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র এবং অভিভাবকদের সতর্ক থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে তারপর ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে৷
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একদিন
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি ফেসবুক প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে৷ এই প্রকল্প যাদের কাজে আসতে পারে, তাদের দেখতে গিয়েছিলেন আলোকচিত্রি মুস্তাফিজ মামুন৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখি আমরাও৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল
ঢাকার মিরপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে ব্রেইলে লিখছে এক শিক্ষার্থী৷ ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলে এখন শিক্ষা নিচ্ছে ৮০ জনেরও বেশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শিক্ষকরাও কেউ কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণি৷ প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এ স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান চলে৷ এ স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল পড়া
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের এক শিক্ষার্থী ব্রেইলে পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল বইয়ের অভাব
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দুই শিক্ষার্থী মিলে একটি একটি ব্রেইল বই পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে বইয়ের অভাব অনেক বেশি৷ সহজলভ্য না হওয়ায় বেশিরভাগ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাই বইয়ের সংকটে থাকেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমায়রা মিম (বাঁ থেকে চতুর্থ)৷ তার ক্লাসের সব বন্ধুরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী৷ এ স্কুলে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম থাকায় স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন মিম পড়াশুনা করছে এখানে৷ ক্লাসের সব বন্ধরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও ওদের সঙ্গে পড়াশুনা করতে ভালোই লাগে তার৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া নমিতা
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের শিক্ষিকা নমিতা৷ স্বাভাবিক চোখ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি৷ স্কুলে পড়ার সময় বখাটেদের ছোঁড়া অ্যাসিডে ঝলসে যায় মুখ, হারান চোখও৷ এরপরেও থামেনি তার পথ চলা৷ লেখাপড়া শেষ করে এখন তিনি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শেখানো হয় হাতের কাজও
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি শেখানো হয় হাতের কাজও৷ শিক্ষার্থীরা অনেক আগ্রহ নিয়ে এসব কাজ শেখেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ফিজিওথেরাপি
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীকে ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন এক চিকিৎসক৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনেকেরই শারীরিক কিছু সমস্যা থাকে, যেগুলো এই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
হোস্টেলে ফিরছে শিক্ষার্থীরা
স্কুল শেষে হোস্টেলে ফিরছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা৷ ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই আবাসিক৷ স্কুলের অ্যাকাডেমিক ভবনের পাশেই লাগোয়া একটি ভবনে থাকার জায়গা এই সব শিক্ষার্থীদের৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি অনলাইন প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ চলতি বছর দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে৷ ফেসবুকভিত্তিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও বুক এবং ব্রেইল বইয়ের ইউনিকোড সংস্করণ তৈরির কাজ চলছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো – দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়-চট্টগ্রাম, শান্তমারিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি৷
এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকনার দ্বন্দ্বে একই নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে৷ আবার কোনটির রয়েছে একাধিক এমনকি ৫০টির মতো অবৈধ ক্যাম্পাস৷ এছাড়া দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যাদের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়ার পরও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চালান হচ্ছে৷
মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, আদালতের নির্দেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় চলছে তাদের সনদের ব্যাপারে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে৷ মালিকানার দ্বন্দ্বে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আদালতে মামলা করেছে, তাদের ব্যাপারেও আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ আর অবৈধ কাম্পাসের পড়লে বৈধ সনদ পাওয়ার কথা নয়৷ তিনি বলেন, তাঁরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ করেছেন৷
অন্যদিকে যেসব বেরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন শিক্ষা দেয়, তাদের মধ্যে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আইন পেশার সদন পাবে কিনা – তা নিয়ে জটিলতা দেখ দিয়েছে৷ বার কাউন্সিল তাদের আইন পেশার সনদ দেবে কিনা – তা নিয়ে শুনানি হবে ১৫ই সেপ্টেম্বর৷
সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো – দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ৷ এই সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের এ বছর আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্তির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন ফরম দেয়নি বার কাউন্সিল৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন ৭২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে৷