সত্যিকারের শীত দেখতে চান তো রাশিয়ার ইয়াকুশা অঞ্চলের ওইমিয়াকন গ্রামটিতে চলুন৷ ১৬ই জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে সেখানে পারদ নেমেছিল মাইনাস ৬৭ ডিগ্রিতে৷ আর এর মধ্যে একদল চীনা পর্যটক উষ্ণ জলে খালি গায়ে স্নান করছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেই দেখানো হয়েছে, ওইমিয়াকন গ্রামে কিভাবে থার্মোমিটারের সব দাগ ছাড়িয়ে অতলে চলে যাচ্ছে – থার্মোমিটারেরই বা দোষ কি, তার মাপার ক্ষমতা যে মাইনাস ৫০ ডিগ্রিতেই শেষ৷
ভাবুন, এ এমন শীত যে, ইয়াকুশাতেও সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; পুলিশ বাবা-মায়েদের বলেছে, ছেলেপিলেদের বাড়ির ভিতরে রাখতে৷ তবে যে শীতে থার্মোমিটার জমে যায়, সে শীতে কি আর পাড়ার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া যাবে?
সপ্তাহান্তেই তো ইয়াকুশায় দু'জন মানুষ তাদের গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার দরুণ পায়ে হেঁটে গ্রামে ফিরছিলেন – কিন্তু পৌঁছতে পারেননি৷ তার আগেই শীতে ‘জমে গিয়ে' প্রাণ হারিয়েছেন৷ আবার এ-ও সত্যি যে, ওই দু'জনের সঙ্গে যে আরো তিনজন ছিলেন, আরো বেশি গরম জামাকাপড় পরা থাকায়, তাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন৷
রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৩,৩০০ মাইল পূর্বে ইয়াকুশিয়ায় লাখ দশেক মানুষের বাস ও তারা সবাই সাইবেরিয়ার শীতে অভ্যস্ত৷ চলতি শৈত্য প্রবাহ (!) সম্পর্কে ইয়াকুশিয়ার গভর্নর বলেছেন, কুছ পরোয়া নেহি, সব বাড়িতে আর অফিস-কাছারিতে সেন্ট্রাল হিটিং আছে, বাড়তি জেনারেটর আছে৷
তবে এই অবস্থার মধ্যে চীনের কয়েকজন পর্যটক একটু বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছেন৷ খালি গায়ে খোলা জায়গায় স্নান করছিলেন তারা৷ তবে পানিটা ছিল গরম৷ তাই ইন্ডেপেনডেন্ট এর এই ভিডিও প্রতিবেদনটি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি৷
ইয়াকুশা, মস্কো থেকে ৩ হাজার ৩শ’ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত৷ সেখানে মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতেও স্কুল খোলা থাকে৷ রবিবার সেখানে প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে মারা গেছেন দুইজন৷ গাড়ি নষ্ট হওয়ায় রাস্তায় বের হওয়ার পর তারা ঠান্ডায় জমে যান৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/sakhalife.ru
বিশ্বের শীতলতম গ্রাম
ইয়াকুশা’র গ্রাম ওইমিয়াকনে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাইনাস ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ মানুষের বসতি আছে এমন স্থানের মধ্যে শীতলতম ওইমিয়াকন৷
ছবি: Reuters
পারদভাঙা ঠান্ডা
মাইনাস ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ডিজিটাল থার্মোমিটার ধারণ করতে পারে না, অর্থাৎ ভেঙে যায়৷ কেননা, এই থার্মোমিটারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেয়া আছে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
ছবি: Reuters
স্কুল ছুটি
এরকম প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়লে স্থানীয়রা আশ্রয়শিবিরে চলে যান৷ স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ রাস্তায় হঠাৎ দু’ একজনকে চোখে পড়ে, তারা হয়ত সেলফি তোলার জন্য বের হন, অর্থাৎ চোখের পাতা জমে কেমন হয় সেটার ছবি তোলেন৷
প্রত্যন্ত এই গ্রামটি সবসময়ই বরফে ঢাকা থাকে৷ কিন্তু শীতকালে ভয়াবহ ঠান্ডা পড়ে সেখানে৷ এই গ্রামে থাকেন প্রায় ৫০০ জন মানুষ৷ গ্রীষ্মের সময়ে আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকত ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, ২০১০ সালে সেই তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷
ছবি: Valery Titievsky/AFP/Getty Images
১৯৩৩ সালের রেকর্ড
এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডটটি ছিল ১৯৩৩ সালে, মাইনাস ৬৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ মানুষের বসতি আছে এমন স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড এটি৷ নাসা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড অ্যান্টার্কটিকায়, মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে৷