1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ৫৪ হাজার রোহিঙ্গা মা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা ৫৪ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন৷ ঝুঁকিতে আছে শিশুরা৷ প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং পুষ্টি সহায়তা পাচ্ছে না তারা৷

ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন থেকে চার লাখ ১২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছেন৷ তাঁদের মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার নতুন অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় পেয়েছেন৷ দুই লাখ ৩৩ হাজার কক্সবাজার এলাকায় নানাভাবে নিজেদের উদ্যোগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন৷ আর ২১ হাজার আগে আসা রোহিঙ্গার কাছে আশ্রয় পেয়েছেন৷

নতুন আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় তিন লাখের জরুরি ভিত্তিতে পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন৷ আর যাদের এই পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন তাদের মধ্যে এক লাখ ৫৫ হাজার আছে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু৷ ১৪ হাজার শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে৷

৫৪ হাজার গর্ভবতী মা এবং স্তন্যদানকারী মা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য এবং পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে গর্ভবর্তী মা রয়েছেন ২২ হাজার৷ তাঁদের মধ্যে ১৭৮ জন গর্ভকালীন জটিলতায় আক্রান্ত৷  ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিকে ১১ জন নারী সন্তান প্রসব করেছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দাবি করছে, এখন পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে কোনো মা ও শিশু মারা যায়নি৷ একটি শিশু মারা গেছে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার কারণে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম জানায়, ২৫ আগস্ট থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে মোট ভর্তি হওয়া রোহিঙ্গা রোগীর সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি৷ তাদের মধ্যে ডায়রিয়ায় এক হাজার ৫৪১ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ২৯৩ এবং চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২৫ জন৷ এর বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭ হাজার ৬৮৫ জন রোহিঙ্গা৷ ইপিআই আক্রান্ত রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৪ জনকে৷

কক্সকাজরের উখিয়া সদর হাসপাতালের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিয়ানমার থেকে আসা নারীদের একটি বড় অংশ গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা৷ তাঁরা অপুষ্টিতে ভুগছেন৷ তাঁদের অনেকেই এর আগে মাতৃসেবা পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না৷ তাঁরা ঠিকমতো খাবারও পাননি৷ তাঁদের প্রয়োজনীয় টিকাও দেয়া হয়নি৷ আর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসায় তাঁরা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছেন৷ আমাদের এখানে এ পর্যন্ত ১৪ টি শিশু জন্ম নিয়েছে৷ আমরা হাসপাতালগুলোতে ২৪ ঘন্টা সন্তান প্রসবের জন্য চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি৷ আমরা চেষ্টা করছি ক্যাম্পের ভিতরেও কিছু সেন্টার খুলতে৷’’

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসায় তাঁরা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছেন: ডা. আহমেদ

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এই অবস্থায় রোহিঙ্গা মায়েরা যাতে নতুন করে গর্ভবতী না হন আমরা সেদিকেও জোর দিচ্ছি৷’’

শিশুদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমার থেকে আসা পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি অপিুষ্টিতে ভুগছে৷ এটা আমরা এর আগেও লক্ষ্য করেছি যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের শিশুরা চরম অপুষ্টির শিকার৷ আমরা তাদের  ৮৪ হাজার শিশুকে হাম ও রুবেলা টিকা দেয়ার কাজ শুরু করেছি৷ আশা করি ৪-৫ দিনের মধ্যেই এই টিকা দেয়ার কাজ শুরু করতে পারব৷’’ তিনি আরো জানান, ‘‘রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প এলাকায় ৩২টি মেডিক্যাল টিম পালা করে কাজ করছে৷ বেসরকারি পর্যায়েও মেডিক্যাল টিম আছে৷ এর বাইরে উপজেলা, ইউনিয়ন এবং কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন৷’’

এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশু যারা অপুষ্টির শিকার, তাদের জন্য আলাদা কোনো পুষ্টিকর খাবার বিতরণের ব্যবস্থা নাই৷ তারা যা পাচ্ছেন, তাই খাচ্ছেন৷ তাদের সড়কের পাশে ত্রাণের জন্য অপক্ষো  করতে হচ্ছে৷ সরকারী উদ্যোগে লঙ্গরখানা খুলে ১২টি স্পটে রান্না করা খবার বিতরণ করা হচ্ছে৷ শিশু খাদ্য বা মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ব্যক্তিগত এবং বেসরকারি উদ্যোগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিতরণ করা হচ্ছে৷

এদিকে রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এক অনুষ্ঠানে ৭০ হাজার গর্ভবতী নারীর কথা বললেও পরে তিনি তাঁর বক্তব্য থেকে সরে আসেন৷ এবং তাঁর দপ্তরের মাধ্যমে ফোনে এই সংখ্যা ২২ হাজার বলে জানান হয়৷

আমরা এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার গর্ভবতী মাকে শনাক্ত করেছি: ডা. সালাম

This browser does not support the audio element.

কক্সকাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, গর্ভবতী মায়েদের সেফ ডেলিভারির জন্য৷ খুব জটিলতা হলে আমরা স্ট্যান্ডবাই অ্যাম্বুলেন্স রেখেছি যাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া যায়৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী মা এ শিশুদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পুষ্টি সমস্যা৷ কিন্তু সবাইকে একই ধরনের খাবার দেয়া হচ্ছে৷ এখনো তাদের জন্য আলাদা করে পুষ্টিকর খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়নি৷ আমরা ফুড ডিপার্টমেন্ট এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলেছি৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার গর্ভবতী মা-কে সনাক্ত করেছি৷’’

এদিকে ইউনিসেফের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দুই লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু বাংলাদেশে এসেছে৷ তাদের মধ্যে দেড় লাখ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে৷ তাদের অাশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত মোট ছয় লাখ শিশু বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হবে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ