চলচ্চিত্রের পর্দায় বিখ্যাত শিল্পীদের জীবন বার বার তুলে ধরা হয়েছে৷ কিন্তু তাঁদের আঁকা ছবির আদলে তৈরি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে কি? বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী ভিনসেন্ট ফান গখ-এর অঙ্কনশৈলির ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে এমনই এক অভিনব চলচ্চিত্র৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমাদের ছবিই আমাদের কথা বলবে'' – ভিনসেন্ট ফান গখ মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে নাকি এই বাক্য লিখেছিলেন৷ ‘লাভিং ভিনসেন্ট' নামের ছবির নির্মাতারা তাঁর সেই উক্তি আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করেছেন৷ ৬০,০০০-এরও বেশি ছবি দিয়ে এই অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছে৷ প্রতিটি ছবি হাতে আঁকা৷ এত বড় আকারে এমন কোনো প্রকল্প কখনো চালানো হয়নি৷ ছবির প্রযোজক শন ববিট বলেন, ‘‘কাজটা মোটেই সহজ ছিল না৷ লগ্নিকারীদের বোঝানো কঠিন কাজ ছিল৷ যখন বললাম আমরা ছবি এঁকে চলচ্চিত্র তৈরি করছি, তখন প্রশ্ন উঠলো কম্পিউটারে করছো না কেন৷ কিন্তু ঘটনা হলো, কম্পিউটারে অবশ্যই এটা করা যায়৷ কিন্তু বড় পর্দায় তার তুলনা হয় না৷ তাছাড়া ফান গখ-এর অঙ্কনশৈলি অত্যন্ত পরিচিত৷ মানুষ তাঁর চোখ দিয়েই জগতটা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷''
চলচ্চিত্রের পর্দায় শিল্পীর তুলি
02:34
শিল্পীরা তিনটি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন৷ সবচেয়ে বড় কাজ চলছে পোল্যান্ডের গেডানস্ক শহরে৷ গোটা বিশ্বের প্রায় ৫,০০০ মানুষ এই প্রকল্পে কাজ করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন শিল্পী পরীক্ষায় পাশ করেন৷ তারপর তিন সপ্তাহের ইন্টেনসিভ কোর্স৷ তাতে ফান গখ-এর শৈলিতে আঁকা শেখানো হয়৷
মেক্সিকোর শিল্পী মায়রা অ্যারনান্দেস রিয়োস প্রশিক্ষণের শেষ সপ্তাহে পৌঁছে গেছেন৷ ২৬ বছর বয়স্ক এই শিল্পীর কাছে এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ বিশাল এক সম্মান৷ তবে কাজটা বেশ কঠিন৷ মায়রা বলেন, ‘‘আমার কাছে সঠিক রং খুঁজে পাওয়া এবং বিভিন্ন ছবির জন্য তা ব্যবহার করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ হয়তো তা দিয়ে ২০০ ফ্রেম তৈরি হবে৷''
প্রথমে অভিনেতা সহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা হয়৷ তার ভিত্তিতেই শিল্পীরা ফান-গখ শৈলিতে ছবি আঁকেন৷ ১২টি ছবির সমন্বয়ে চলচ্চিত্রের এক সেকেন্ড তৈরি হয়৷ ছবিটির ট্রেলার ইন্টারনেটে ১০ লক্ষেরও বেশি বার দেখা হয়েছে৷
শিল্পীর চোখে মঙ্গোলিয়ার মরুকরণ
সবুজ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে, ক্রমশ বিস্তীর্ণ এক মরু হয়ে যাচ্ছে মঙ্গোলিয়া৷ সরকারি তথ্যই বলছে, এমন চলতে থাকলে মধ্য এশিয়ার দেশটির পুরোপুরি মরুভূমি হতে বেশিদিন লাগবেনা৷ শিল্পী দায়েসুং লি-র চোখে দেখুন মঙ্গোলিয়ার মরুকরণ৷
ছবি: Daesung Lee
ঐতিহ্যে পরিবর্তন
মরুকরণের ছাপ মঙ্গোলিয়ার যাযাবর ঐতিহ্যেও পড়ছে৷ ছবিতে প্যারিস ভিত্তিক শিল্পী দায়েসুং লি-র আঁকা মরুভূমির বড় একটি ছবি বসানো হয়েছে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠে৷ ঘাসের ওপর দিয়ে সেই ল্যান্ডস্কেপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন মানুষ৷ মঙ্গোলিয়াও কিন্তু এভাবেই সবুজ ছেড়ে মরুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে৷
ছবি: Daesung Lee
মরুর বুকে তৃণভোজী
মঙ্গোলিয়া সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দশকে ব্যাপক সবুজ-নিধন হয়েছে৷ এ সময়ে রাশিয়া এবং চীনের প্রতিবেশী দেশটির প্রায় এক তৃতীয়াংশই হয়ে গেছে মরুভূমি৷ এখানে এক মরুপ্রান্তরে শিল্পীর আঁকা ছবি, ছবিতে ঘাসহীন প্রান্তরে খাদ্যের সন্ধান করছে দুটি ঘোড়া৷
ছবি: Daesung Lee
পানি চাই, পানি...
প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানি সরবরাহ করা না গেলে মঙ্গোলিয়ার মরুকরণ রোধ করা যাবে না৷ তা বোঝাতেই সবুজ মাঠের মাঝখানে বসানো মরুভূমির এই ছবিটি এঁকেছেন দায়েসুং লি৷ ওপর থেকে ছবির মরুভূমিতেই পানি ঢালছেন একজন৷
ছবি: Daesung Lee
পানি যেখানে, সেখানেই জীবন
মরুভূমির বুকে স্বপ্ন কিংবা অতীত এঁকেছেন শিল্পী৷ এই মরুতেও এক সময় ছিল সবুজ-শ্যামলিমা৷ এখানেও ছিল ফুল, ফল, পাখির কলতান৷ এখন শুধু বালি আর বালি৷ বালির ওপর দিয়ে একজন হেঁটে যাচ্ছেন শিল্পীর আঁকা ছবির দিকে৷ ছবিতে জলরাশি আছে, সবুজ আছে, বসতি আছে, জীবনের স্পন্দন আছে৷ পানি আছে বলেই সব আছে৷
ছবি: Daesung Lee
‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’
একসময় এই মরুভূমিও মরুভূমি ছিল না৷ শিল্পী ছবি এঁকে দেখিয়েছেন, এখানেও এসে কেমন সুন্দর, রোম্যান্টিক সময় কাটিয়েছেন তরুণ-তরুণী৷ তাঁদের বিয়ে হয়েছে, সন্তান হয়েছে৷ সন্তানদের নিয়ে এসেছেন বাবা-মা৷ কিন্তু সন্তানদের জন্য এই মাঠে এখন আর কোনো হাসি নেই, আনন্দ নেই৷
ছবি: Daesung Lee
টান...
এখানেও মরুভূমিতে শিল্পীর আঁকা সবুজ প্রান্তর৷ সবুজে বিচরণ করছে সুস্থ-সবল গবাদি পশু৷ ছবির বাইরে একটি ক্ষুধার্ত গরু৷ রাখাল তাকে দূরে নিতে চাইছে, কিন্তু মন মানছে না তার, সবুজ ঘাসের আকর্ষণে ছবির দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে গরুটি৷
ছবি: Daesung Lee
সব সুন্দরই স্বর্গীয় নয়
নীল আকাশ, নীচে ঝিকিমিকি বালু৷ অনেকেরই মন ছুঁয়ে যাবে মরুর এই সৌন্দর্য৷ কিন্তু কখনো কখনো কারো কারো জন্য এই সুন্দরই কদাকার, নিষ্ঠুর৷ ছবিতে এ বারতাই সবার কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন শিল্পী৷