1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কবরীর ‘হতাশা’

সুলাইমান নিলয়
৫ জুন ২০১৭

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে সারাহ বেগম কবরী অভিনয় শুরু৷ চট্টগ্রামের মেয়ে মিনা চলচ্চিত্রের লাল-নীল জগতে পা দিয়েই নতুন নাম পান ‘কবরী’৷ অভিনয় শৈলী দিয়ে ‘মিষ্টি মেয়ে’ হয়ে ওঠা এই অভিনেত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎকার৷

চট্টগ্রামের মেয়ে মিনা চলচ্চিত্রের লাল-নীল জগতে পা দিয়েই নতুন নাম পান ‘কবরী’
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলে: আপনি তো ৫ দশকের বেশি সময় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন৷ অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করেছেন৷ শুরুটা কেমন ছিল? কী কী ধরণের বাধা ছিল? কিভাবে মোকাবেলা করতেন?

কবরী: যখন কাজ শুরু করি, তখন আমার বয়স ১৩ বছর৷ ক্লাস সিক্সে পড়ি৷ সুভাষ দত্ত একটা কিশোরীর ভূমিকার জন্য খুঁজে আমাকে পেয়ে যান৷

সাংস্কৃতিক পরিবারে মানুষ হয়েছি৷ আমার মা পুঁথি পড়তেন, ভাই-বোনেরা নাচতেন-গাইতেন, ছোট ভাই তবলা বাজাতেন৷ আমি নাচ করতাম৷ তবে আগে অভিনয় করিনি৷

যখন আমি অফার পেলাম, তখন বাবা খুবই উৎসাহিত হলেন৷ মা দিতে চাননি৷ উনি বললেন, এর পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যাবে৷ পরিবার একটু রক্ষণশীল তো ছিলই৷

আমার মায়ের ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যায়৷ তিনি অনেক দূর পড়াশোনা করতে পারেননি৷ তাই তার খুব শখ ছিল, মেয়েকে পড়াবেন৷

Interview Kabari - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রী কিভাবে তৈরি হয়? কলাকুশলীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টা কেমন আছে?

আমাদের এখানে যে পরিচালকরা ছিলেন, তারা যথেষ্ট শিক্ষিত মানুষ ছিলেন৷ এখন ভারতে স্কুল হয়েছে, বাইরে স্কুল আছে৷ আমাদের দেশে যতক্ষণ পর্যন্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বাইরে থেকে তারা শিক্ষাটা নিয়ে আসতে পারে৷

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মন্ত্রণালয়গুলো সেসব বিষয়ে সোচ্চার না৷ আমাদের শিল্পের উন্নতি করতে হলে, যেসব সাপোর্টিং দরকার, সেসব বিষয় এখানে অনুপস্থিত৷

আমি সুভাষ দত্ত, ফজলে লোহানী, খান আতা, জহির রায়হান থেকে শিখেছি৷ এখন তো সে রকম শিক্ষকও নেই৷

অভিনয়ের জন্য তখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না, এখনো নাই৷ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবকাঠামো তৈরি করা দরকার ছিল কি-না?

অবশ্যই দরকার ছিল৷ এখন অবশ্য কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ক্রিপ্টিং, অভিনয় করায়৷ কিন্তু আমার মনে হয় না, (তাতে) কিছু হয়৷ এখানে পর্যাপ্ত উপকরণ নাই৷ সে ধরণের সরকারি সহযোগিতাও পাচ্ছে না৷ কিংবা যারা জানে, তাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে না৷

ভারতীয় চলচ্চিত্র যদি দেখি, তারা কি সব ছবি ভালো বানায়? না৷ তারা এখন শিল্প হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে৷ অথচ আমাদের এফডিসি'কেও বলা হতো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি৷ কিন্তু এখানে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নাই৷ সরকারিভাবে যে অনুদান দেয়, সেটা মন্ত্রী তার পছন্দমতো লোককে দিয়ে দেয়৷ সেই ছবি মানুষ দেখতেও পায় না৷ কোথায় কোন হলে চলে, সেটা মানুষ জানতেও পারে না৷ বণ্টনটা পকেটস্থ করার একটা ধ্যান-ধারণা হয়ে গেছে৷ এখানে যে উন্নয়ন দরকার, সেটা মন্ত্রী হয় বুঝতে পারেন না বা তার ইচ্ছা নাই৷ আমরা যারা আছি, আমরা অনেকবার বলেছি, আপনি বসেন আমাদের সাথে৷ তাহলে একটা রাস্তা বেরুবে৷

একটা অনুদান দিতো, প্রথমে ১৫ লাখ টাকা, এখন ৫০ লাখ৷ এই টাকা কাকে দিচ্ছে, কোনো মনিটরিং নাই৷ কারণ, ওনারা এই সিস্টেম জানেন না৷ এফডিসিতে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজনকে বসানো হয়, এই ভদ্রলোক কোথা থেকে আসছেন?

এখানে উচ্চ পর্যায়ের কোনো কমিটি নাই৷ অ্যাসোসিয়েশন আছে৷ কিন্তু তিনি তাদের সাথে বসেন না৷ কোনো আলাপ-আলোচনাই হয় নাই৷ কারণ, ওনারা এই লাইনেরই লোক না৷ আমি খুব নিরাশ৷

এমনিতে আমি আশাবাদী, আমি স্বপ্ন দেখি, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দেখতে তো দিন চলে যাবে৷ আমার জন্য তো সময় বসে থাকবে না৷ আমি যদি স্বপ্ন দেখতে থাকি, বাস্তবতায় রূপ না দেই, তাহলে তো কিছুই হবে না৷ 

বাংলাদেশে সিনেমা হল কমে যাচ্ছে৷ এর কারণ কী?

কমে যাচ্ছে না৷ ওই যে নিয়ম-নীতির ধার ধারে না৷ এর সঙ্গে সিনেমা বানানোর সম্পর্ক আছে, স্কুলের বিষয় আছে৷ এটা একটা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যদি থাকে, তাহলে এগুলো মনিটর করতে সুবিধা হয়, কাজ করতে সুবিধা হয়৷ এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মনিটরিং করতে হবে৷ বসতে হবে৷ সমাধান বের করতে হবে৷ সেটা হচ্ছে না দেখেই পুরো জিনিসটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে৷

‘সুস্থ বিনোদন' জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে৷ আমরা কতটা মানসম্মত সুস্থ্ বিনোদন দিতে পারছি৷

এখন কোনো ব্যবসায়ী টাকা লগ্নি করে না৷ আমাদের সময়ে কারা টাকা লগ্নি করতো? সবাই ব্যবসায়ী৷ একটা ছবি না চললে পরবর্তী ছবি থেকে টাকা উঠানো যেত৷ ছবি চলতো৷ সেই সুযোগ এখন আর নাই৷ এখন কালো টাকা যাদের কাছে আছে, তারাও বের করে না৷ টাকা পাচার হয়ে যায়৷ সুইস ব্যাংকে রাখে৷

বিভিন্ন সময়ে যাদের ব্যবসা করে অনেক টাকা হয়, দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত তারা রাজনীতি করতে আসছে৷ এখান থেকেও টাকা লুটতে হবে৷

আসলে রাজনীতি বলেন, মানুষের জীবনযাত্রা বলেন, বিনোদনের জায়গা বলেন, আমরা যে বাঙালি, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, মুক্তিযুদ্ধ, সবকিছু আমাদের আদলেই হয়েছে৷

বর্তমান অবস্থার উত্তরণে কী কী করা দরকার?

এখানে টাকা লগ্নি করতে হবে৷ যথাযথ লোকদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে৷ মন্ত্রণালয়ে ভালো একজন লোক দরকার৷ আমরা চাই, আমাদের সংস্কৃতির উন্নয়ন৷ আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গন কেবল সিনেমা না৷ সব সেক্টর থেকে লোক নিয়ে একটা উচ্চ পর্যায়ের  কমিটি করতে হবে৷ তাহলেই আমরা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারবো

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

সুলাইমান নিলয় বর্তমানে উন্নয়ন পেশাজীবী হিসেবে কাজ করছেন৷ তার আগে দীর্ঘদিন আইন সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ