1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলচ্চিত্রে দুশ্চিন্তার কালোমেঘ

পায়েল সামন্ত
৬ জুলাই ২০১৭

ভারত জুড়ে এখন একটাই রব — জিএসটি৷ এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ একই অবস্থা চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষেত্রেও৷ কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার জন্য জিএসটির যে হার ধার্য করেছে, তা দেখে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমেছে চলচ্চিত্র শিল্পে৷

Indien Narendra Modi, Pranab Mukherjee und Hamid Ansari in Neu-Delhi
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup

দেশে ও দেশের বাইরে বলিউডের ছবি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তার দাপটে বাংলাসহ আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্র কোণঠাসা৷ সেখানে জিএসটি, অর্থাৎ ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স' বা পণ্য ও পরিষেবা করের প্রবর্তন প্রাদেশিক চলচ্চিত্র ব্যবসার নাভিশ্বাস তুলে দিতে পারে৷ একটি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বহু মানুষ৷ শুধু ছবির প্রযোজক বা পরিচালক কিংবা ডাকসাইটে অভিনেতারা নন, বিপুল সংখ্যক কলাকুশলীর প্রয়োজন হয় একটি ছবির নির্মাণে৷ বলিউডের চাপে যখন অধিকাংশ বাংলা ছবিতে মুনাফা অর্জন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন প্রযোজকরা লগ্নি নিয়ে ভবিষ্যতে আসবেন কিনা, সে প্রশ্নই উঠছে৷ বাংলাসহ আঞ্চলিক ভাষার ছবিগুলির ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি ধার্য করা হয়েছে৷ কীভাবে এই কর টিকিটের উপর ধার্য হবে, তা একটি ছোট অঙ্কের মাধ্যমে বোঝানো যেতে পারে৷ যদি টিকিটের দাম একশ' টাকা হয়, সে ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশই খরচ হিসেবে পাওয়া যেত৷ সামান্য পরিষেবা করের সঙ্গে রাজ্য সরকার সংগ্রহ করত ২ শতাংশ বিনোদন কর৷ এইসব ধরনের কর এখন বিলুপ্ত৷ এসেছে একত্রিত কর কাঠামো জিএসটি৷

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

এর ফলে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সামান্য কর আর ছোট অঙ্কে দাঁড়িয়ে নেই৷ ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হবে সিনেমার টিকিটের জন্যে৷ অর্থাৎ প্রযোজককে যদি এই শিল্পের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করতে হয়, তাহলে টিকিটের দাম বাড়াতে হবে৷

কিন্তু আজকের দুনিয়ায় সুলভ বিনোদনের যুগে বাড়তি গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে কেন সাধারণ মানুষ হলমুখী হবেন? এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে সিনেমা হলগুলির হাল ভালো নয়৷ অনেক প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী সিঙ্গেল স্ক্রিন হলগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ যেগুলি এখনও চালু রয়েছে, সেগুলির আর্থিক দৈন্য প্রকট৷ এই পরিস্থিতিতে জিএসটি'র সৌজন্যে টিকিটের দাম বেড়ে গেলে সেই ধাক্কা বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার চলচ্চিত্র শিল্প সামলাতে পারবে তো?

বাংলা ছবির বিশিষ্ট অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় তাই জিএসটি নিয়ে শঙ্কিত৷ উত্তম কুমার থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়– টলিউডের স্বর্ণযুগে দাপিয়ে বেড়ানো প্রবীণ অভিনেত্রী বাংলা ছবির ক্ষয়িষ্ণু দশার সাক্ষী থেকেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ছবির অনেক ক্ষতি হয়েছে, টিকিটের দাম বেড়ে গেলে ক্ষতি তো হবেই! কীভাবে সবকিছু আগের মতো রাখা যায়, সেটা বিবেচনা করে দেখতে হবে৷''

তবে জিএসটি নিয়ে সবাই এখনই এতটা হতাশ হতে রাজি নন৷ অনেকের আশা, যেভাবে ছোট হল থেকে মাল্টিপ্লেক্স তৈরি হয়েছে, দশ টাকা থেকে এখন একশ' টাকায় টিকিট কেটে মানুষ সিনেমা দেখছেন, সেই পরম্পরায় ব্যত্যয় হবে না৷

গোপাল দাস

This browser does not support the audio element.

প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক গোপাল দাসের মতে, ‘‘জিএসটি নিয়ে এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ বিভিন্ন কারণে সব পণ্যেরই দাম বাড়ে৷ আমরা বর্ধিত দামে সেই জিনিস কিনি৷ সিনেমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না৷''

শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে মাল্টিপ্লেক্স সফল হতে পারে, কিন্তু বাংলা ছবির দর্শকরা ছড়িয়ে রয়েছেন প্রান্তিক অঞ্চলেও৷ তাঁদের কাছে মাল্টিপ্লেক্স পৌঁছয়নি৷ এই অংশের দর্শক কি বাড়তি খরচ করতে পারবেন? এ নিয়ে অবশ্য গোপালবাবুও সন্দিহান৷ সুতরাং জিএসটির চাপে বাংলা ছবি দর্শক হারিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে– সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের এই আশঙ্কা অমূলক নয়৷

জিএসটি'র হার ঘোষণার পরই অভিনয় জগতের মানুষজন রাজ্যে রাজ্যে প্রতিবাদে নেমেছিলেন৷ কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে অংশ নেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ প্রতিবাদে দক্ষিণ ভারতের সিনেমা হল বন্ধ রাখা হয়৷ যদিও ভারতের আমজনতার মতো শিল্পী ও কলাকুশলীরা জিএসটি'র প্রভাব নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় সরকার বার বার অভয় দিচ্ছে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ সবমিলিয়ে জিএসটি নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ী থেকে চলচ্চিত্র মহল– সবাই এখন দোটানায়৷

তারই আভাস মিলেছে আর্টিস্ট ফোরামের সম্পাদক, অভিনেতা অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘জিএসটি কীভাবে চলচ্চিত্রে শিল্পে প্রভাব ফেলবে, তা এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়৷ শুধু সিনেমা বলে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও স্পষ্ট নয়৷ তাই কিছুদিন না গেলে এটা বোঝা সম্ভব নয় যে, পরিস্থিতি কী দাঁড়ালো৷''

রথীন বোস

This browser does not support the audio element.

সব ক্ষেত্রেই যে নয়া কর কাঠামো নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে, তা সাধারণ মানুষের কথাতেও উঠে আসছে৷ সিনেমা বিনোদনের উপকরণ, কিন্তু চাল-ডালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে ওষুধ কিংবা বাসস্থান, প্রতি পদে জিএসটি একটা ধাঁধাঁ তৈরি করেছে৷ বারাসত আদালতের আইনজীবী রথীন বসুর ভাষায়, ‘‘বিষয়টি খায়, না মাথায় দেয়, সেটাই দেশের সিংহভাগ মানুষ বুঝতে পারছে না৷ তাই এখনই এর সুফল-কুফল নিয়ে কাটাছেঁড়া করা মুশকিল৷''

কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তিত জিএসটি'র সঙ্গে নীতিগতভাবে সহমত হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তড়িঘড়ি এর বাস্তবায়নের বিরোধিতা করেছে৷ চলচ্চিত্র শিল্প যাতে মন্দার মুখে না পড়ে, সে জন্য কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ ১০০ টাকা বা তার কম দামের টিকিটে কর বসেছে ১৮ শতাংশ৷ ১০০ টাকার চেয়ে বেশি দামের টিকিটে এই হার ২৮ শতাংশ৷ জিএসটি'র ক্ষেত্রে এই করের অর্ধেক কেন্দ্রের ও বাকি অর্ধেক রাজ্যের প্রাপ্য৷ রাজ্যের সিদ্ধান্ত, দু'টি ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের অংশ থেকে কর ছাড় দেবে৷ বাংলা, নেপালি ও সাঁওতালি ছবিতে দুই ধরনের টিকিটের ক্ষেত্রেই মাত্র ২ শতাংশ করে কর নেবে রাজ্য৷ রাজ্যের দাবি, এর ফলে টিকিটের দাম বাড়বে না৷ এর সুবিধা পাবে চলচ্চিত্র শিল্প৷

জিএসটি চালুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রশ্নের জবাব মিলবে, এমনটা আশা করা ঠিক নয়৷ চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষেত্রেও সেই কথাটাই সত্যি৷ বিনোদন দামি হয় কিনা, তার জবাব তাই সময়ের হাতে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ