1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যৌথ ‘প্রতারণা'র অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে

৩০ জুন ২০১৭

চলচ্চিত্রাঙ্গনে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, সমালোচনার জন্ম দিয়েছে যৌথ প্রযোজনার বিষয়টি৷ জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘নবাব' ও ‘বস টু' ছবি দু'টি সেন্সর ছাড়পত্র পাবার পর এই সমালোচনা তুঙ্গে ওঠে৷

Screenshot Youtube Allah Meherbaan Item Song
ছবি: youtube.com - Jaaz Multimedia

বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েছে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো৷ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন তাঁরা৷ আন্দোলনকারীদের প্রধান উদ্যোক্তা চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, শিগগিরই সাক্ষাৎ পাবার আশা করছেন তাঁরা৷ সাক্ষাৎ পেলে অভিযোগগুলো তুলে ধরা হবে৷

তিনি বলেন, ‘‘তথ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে যেহেতু কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না, তাই প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই৷'' বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি৷

ছবি দুটির সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া না পাওয়া নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় কিছুদিন ধরে বাকবিতন্ডা চলছে৷ সিনিয়রদের নিয়ে ‘কটূক্তি' করে আবারো সমালোচিত হয়েছেন নায়ক শাকিব খান৷ এফডিসি ভিত্তিক সংগঠনগুলো আবারো বহিষ্কার করেছে তাঁকে৷

মানা হচ্ছে না নীতিমালা

যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ বিষয়ে ২০১২ সালের সংশোধিত নীতিমালার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে, ‘যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবির জন্য মুখ্য শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা যৌথ প্রযোজকগণই নির্ধারণ করবেন৷ এক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের কলাকুশলীর সংখ্যানুপাত সাধারণভাবে সমান রাখতে হবে৷ একইভাবে চিত্রায়নের লোকেশন সমানুপাতিক হারে রাখতে হবে৷'

আইনের এই ধারায় থাকা ‘যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবির জন্য মুখ্য শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা যৌথ প্রযোজকগণই নির্ধারণ করবেন' - অংশটির অপব্যবহার হচ্ছে, এমন অভিযোগ আছে৷ তারপর সমানুপাতিক হারে শিল্পী কলাকুশলীদের রাখার বিষয়টিও অনেক সময়ই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে৷

এই নিয়ম না মানার উদাহরণ আগে দেখা গেলেও এটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি করে ২০১৪ সালের মে মাসে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' ছবিটি মু্ক্তির পর৷ মুক্তির সময় পরিচালকের নামের তালিকায় কলকাতার নির্মাতা অশোক পাতি ও বাংলাদেশের অনন্য মামুনের নাম থাকলেও ওপার বাংলায় ছবির প্রচার থেকে শুরু করে প্রদর্শন পর্যন্ত নির্মাতা হিসেবে কেবল অশোক পাতির নামটিই দেখা যায়৷ এছাড়া ছবির নায়ক-নায়িকা দু'চরিত্রেই অভিনয় করেছেন কলকাতার শিল্পীরা৷ সবশেষ ‘নবাব' ও ‘বস টু' ছবি দু'টি নিয়ে আবারো নাড়া পড়েছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে৷ এই সাড়া পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো মুক্তির ফলে আদতে কার লাভ হচ্ছে? এছাড়া এটি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির যে সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, তা এই শিল্পকে কতটা হুমকির মুখে ফেলছে?

‘তথ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের ওপর চাপ তৈরি করা হয়’

This browser does not support the audio element.

যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ

এই ধারণা বাংলাদেশে নতুন নয়৷ স্বাধীনতার পর থেকেই ‘ধীরে বহে মেঘনা' ও ‘তিতাস একটি নদীর নাম' –এর মতো বিখ্যাত সব ছবি নির্মিত হয়েছে৷ এসব ছবি করলে কলাকুশলীদের যেমন বড় বাজেটের ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়, তেমনি ভিন্ন দেশের শিল্পী-কলাকুশলী, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে কাজ করার সুযোগ হয়৷ সেদিক থেকে একে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন না, এমন কেউ নেই৷ কিন্তু নিয়মনীতি না মেনে শুধু ভিন্ন দেশের ছবিকে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়ার বিপক্ষে অনেকেই৷

‘বস টু' সিনেমায় নায়ক কলকাতার অভিনেতা জিৎ৷ আর বাংলাদেশের অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া দুই নায়িকার একজন৷ অন্যদিকে শাকিব খান ও কলকাতার শুভশ্রী অভিনীত ছবি ‘নবাব'৷ এই দুই ছবির বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, মুখ্য চরিত্রের নামে বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন মাত্র শিল্পীকে স্থান দেয়া হয়েছে৷ আর পুরো ছবিই নির্মিত হয়েছে কলকাতার প্রেক্ষাপটে৷ কিন্তু নায়ক শাকিব খান দাবি করেছেন, ‘নবাব' ছবিতে বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে অনেক উচ্চতায় দেখানো হয়েছে৷ তবে যৌথ প্রযোজনার নামে কলকাতার ছবি বাংলাদেশে চালিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে৷

কাঠগড়ায় জাজ মাল্টিমিডিয়া ও তথ্যমন্ত্রী

যৌথ প্রযোজনার প্রিভিউ কমিটির আপত্তি ও এফডিসিভিত্তিক চলচ্চিত্রের ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখেও সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত দুই ছবি ‘নবাব' ও ‘বস টু'৷ সম্প্রতি এ নিয়ে বৈঠক করে তারা৷ এরপর সংবাদ সম্মেলন করে চিত্রনায়ক শাকিব খান ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার ও প্রযোজক আবদুল আজিজসহ নিয়মভঙ্গ করে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ঐক্যজোটের সংগঠনগুলো থেকে অব্যাহতি ও এফডিসিতে তাদের অবাঞ্ছিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানায়৷ এছাড়া তথ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর পদত্যাগও দাবি করা হয়৷ সংগঠনগুলো নিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার'-এর পক্ষ থেকে সংগঠনের আহ্বায়ক চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার সেদিন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন৷

ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত লাগাতেই এই আন্দোলন

This browser does not support the audio element.

ডয়চে ভেলেকে দেয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘সমস্যার শুরু ‘বস টু' ছবি নিয়ে৷ ঈদে মুক্তির জন্য জমা দেয়া এই ছবিটি নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি৷ এ কারণে এটি নিয়ে আমরা সেন্সর বোর্ডের একাধিক সদস্য আপত্তি জানাই৷ পরে তথ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের ওপর চাপ তৈরি করা হয়৷ ছবিটির বাংলাদেশি প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়া, যাদের সারা দেশের পৌনে তিনশ হলের মধ্যে প্রায় আড়াইশ'টিতেই নিজস্ব প্রজেক্টর রয়েছে, অন্য কোন ছবি চালাতে অস্বীকার করে৷ দেশীয় ছবি মুক্তি না পেলে দর্শক বঞ্চিত হবেন এবং ছবির নির্মাতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এসব চিন্তা করে আমরা জাজের যৌথ প্রযোজনার একটি ছবি মুক্তির অনুমোদন দিই৷ শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশি ছবিগুলোও হলগুলোতে মুক্তি দিতে হবে৷ কিন্তু তারা সেই শর্ত ভঙ্গ করে শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব' ছবিটিও মু্ক্তি দেয় এবং বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত বাংলাদেশি ছবি ‘রাজনীতি' মুক্তি পায় শুধু যমুনা ফিউচার পার্কে৷'' এরপরই আন্দোলনে যাবার পথ বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান গুলজার৷

জাজ মাল্টিমিডিয়া দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে ‘জিম্মি' করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন গুলজার এবং এই বিষয়টিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রতি এই মন্ত্রীর দূর্বলতা আছে বলে অভিযোগ করে গুলজার বলেন, জাজের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল আজিজের সঙ্গে এই মন্ত্রীর রাজনৈতিক দলের এক নেতার পারিবারিক সম্পর্ক আছে৷

এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন৷ বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ৷ ছবি ছাড়ের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই৷ যৌথ প্রযোজনার যে কোনো ছবি ছাড়পত্র দেবার আগে তার চিত্রনাট্য প্রিভিউ কমিটিতে জমা দিতে হয়৷ প্রিভিউ কমিটি সেই চিত্রনাট্য ছাড় দেয়৷ ছবি নির্মাণের পর সেই চিত্রনাট্য অনুযায়ী ছবি নির্মাণ করা হয়েছে কি না, শর্ত পালন করা হয়েছে কি না তা আবার দেখে তারা৷ এরপর যায় সেন্সর বোর্ডে৷ এসব প্রক্রিয়া শেষ করেই ছবিগুলো ছাড় পেয়েছে৷ আন্দোলনের নেতা গুলজারও সেই প্রিভিউ কমিটিতেই ছিলেন৷ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন একটি চক্রান্ত৷'' এরপরও আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে পরামর্শ দেন তিনি৷ আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই চলচ্চিত্রের সঙ্গে এখন আর সংশ্লিষ্ট নেই বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী৷

‘জনগনই জবাব দিয়েছে’

This browser does not support the audio element.

চলচ্চিত্র শিল্পকে ‘জিম্মি' করে রাখার অভিযোগের বিষয়ে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজের সঙ্গেও৷ কিন্তু দু'দিন চেষ্টার পরও তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়৷ জানা গেছে, তিনি ভারতে আছেন৷ এছাড়া কোম্পানির ওয়েবসাইটে থাকা তাদের অফিসের নম্বরেও অনেকবার চেষ্টা করলেও কেউ ধরেনি৷ এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, যারা কোন কাজ করেন না, তারাই যারা কাজ করছেন তাদের টেনে ধরছেন৷ আন্দোলনকারীরা ‘নেতাগিরি' করার জন্য এসব করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি৷

শাকিব খান প্রসঙ্গ

এদিকে, ‘নবাব' ছবিটি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি এই আন্দোলনকারীদের এক হাত নেন শাকিব খান৷ তিনি তাদের ‘স্টুপিড' বলে মন্তব্য করেন৷ এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা চিত্রনায়ক ফারুক ও আলমগীর শাকিবের এমন আচরণকে ‘শিক্ষার অভাব' বলে মন্তব্য করেন৷ গুলজার অভিযোগ করেন, ‘‘শাকিব খান দেশীয় নির্মাতাদের অনেক ভোগান৷ সেটে আসেন দেরি করে৷ ছবি অর্ধেক করে আরো অর্থ দাবি করেন৷ কিন্তু যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোতে তাঁকে সকাল সাতটাতেই সেটে পাওয়া যায়৷'' সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় তার সঙ্গে এফডিসিভিত্তিক জোটবদ্ধ ১৭ সংগঠনের কেউই আর কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷ এ বিষয়ে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করে চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই৷ আপনারা দেখেছেন জনগণই গ্রহণ করেছে ‘নবাব' ছবিটি৷ তারাই জবাব দিয়েছে৷''

চলচ্চিত্র শিল্পে দুষ্টচক্র

গুলজার বলেন, ছবি ভালো চললেও দেশীয় ডিস্ট্রিবিউটর, প্রজেক্টর ও হল মালিকদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত আনা খুবই কঠিন৷ যেসব ছবি অনেক ভালো চলেছে, যেমন মনপুরা, আয়নাবাজি সেসব ছবির ক্ষেত্রেও এসব সত্য৷ ‘‘তাই অনেক পরিচালক-প্রযোজকই একটি ছবি নির্মাণ করার পর আর ছবিতে অর্থ লগ্নি করতে পারেন না,'' বলেন তিনি৷ এ চক্র থেকে বেরুতে না পারলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আর কখনো দাঁড়াতে পারবে না বলে শঙ্কা তাঁর৷ এ অবস্থায় যৌথ প্রযোজনার নামে যা করা হচ্ছে, তা জরাজীর্ণ এই শিল্পের ওপর শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়ার মতোই বলে মনে করেন তিনি৷

তবে আন্দোলনকারীরা যৌথ প্রযোজনার বিপক্ষে নন৷ তারা বলছেন, এই ছবিগুলো যেন যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়, সেজন্যই তাদের এই আন্দোলন৷ আর তা যেহেতু করা যাচ্ছে না, এর সমাধানে প্রধানমন্ত্রীই শেষ ভরসা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ