চলতি বছর আরও ৩ মামলার রায় কার্যকরের আশা
১৩ এপ্রিল ২০১৫এছাড়া ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে পাঁচটি মামলা৷ এর বাইরে আরো ২০টি মামলায় ৩২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷
সর্বশেষ গত শনিবার রাতে বদর বাহিনীর কমান্ডার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ এর আগে মিরপুরের কসাই বলে পরিচিত জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়৷
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম মৃত্যুবরণ করায় আপিল বিভাগ তাদের মামলা অকার্যকর ঘোষণা করেছেন৷ অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আপিল বিভাগ দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেছে৷ পাঁচজন আসামি পলাতক থাকায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া দণ্ড বহাল রয়েছে৷ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ১৭টি মামলায় ১৮ জনকে দণ্ড দেয়া হয়েছে৷
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা করছেন, এ বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার নিষ্পত্তি হবে৷ এর মধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মামলার শুনানির কাজ শিগগির শুরু হবে বলে জানান তিনি৷ আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির জন্য যে নয়টি মামলা রয়েছে তার মধ্যে আছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মো. মোবারক হোসেন, জাতীয় পর্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা আব্দুল জব্বার৷ এর মধ্যে শুধু জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য সবার ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল৷
আপিল বিভাগে মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির নেতা আবদুল আলীম৷ ২০১৩ সালের ১৫ই জুলাই গোলাম আযমের বয়স ও স্বাস্থ্য বিবেচনায় তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১৷ একই বছরের ৯ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও বয়স বিবেচনায় আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২৷ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ আপিল করে৷ আপিলে রাষ্ট্রপক্ষ চায় ফাঁসি, আসামিপক্ষ চায় খালাস৷ এ দু'টি আপিল নিষ্পত্তির আগেই গত বছরের ৩০ আগস্ট মারা যান ৮৪ বছর বয়সি আবদুল আলীম৷ এরপর ২৩ অক্টোবর মারা যান গোলাম আযম৷ ফলে এ দু'টি আপিলই বাতিল করা হয়েছে৷
এছাড়া জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির ও মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম ইউসুফ মারা যান ট্রাইব্যুনালে মামলা বিচারাধীন অবস্থায়৷ গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ৮৯ বছর বয়সি ইউসুফ মারা যান৷ তখন তার বিরুদ্ধে মামলাটি যুক্তি উপস্থাপনের পর্যায়ে ছিল৷ তার মৃত্যুতে ওই মামলাও বাতিল ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল৷
জাতীয় পার্টির আবদুল জব্বারসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরও ৫ জন পলাতক রয়েছেন৷ তারা হলেন জামায়াতের সাবেক রুকন (সদস্য) ও বাচ্চু রাজাকার বলে পরিচিত ফরিদপুরের আবুল কালাম আযাদ, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির নেতা এম এ জাহিদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান৷ ট্রাইব্যুনাল রায়ে তাদের সবার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন৷ পলাতক থাকায় তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি, ফলে তাদের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা যায়নি৷
জানা গেছে, বর্তমানে দু'টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও পাঁচটি মামলার বিচার কাজ চলছে৷ এতে ৯ জন অভিযুক্ত৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১-এ তিনটি ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ দু'টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে৷ এই নয় আসামির মধ্যে কেউই কোনো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের বা কেন্দ্রীয় নেতা নন৷
‘আক্ষেপ রয়ে গেল'
গত রবিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় নিয়ে আমার আক্ষেপ রয়ে গেল৷ তাকে ফাঁসি দেয়া গেল না৷ সাঈদীকে ফাঁসি দেয়ার সব তথ্য প্রমাণই ছিল৷''
সাংবাদিকরা সাঈদীর মামলার রায়ের রিভিউ করার আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাঈদীর মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশিত হয়নি৷ প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে ফাঁসির রায় পুনর্বহালের আরজি জানানোর চিন্তা করা হবে৷ তিনি আরো বলেন, এই বছরের মধ্যে আরও তিনটি মামলার রায় কার্যকর করা হবে৷ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্ট খুব দ্রুতই এসব মামলা নিষ্পত্তির কাজ করছে৷