1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলতি বছর ক্রসফায়ারে ৩৬১ জনের মৃত্যু

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহতের সংখ্যা কমছে না৷ নভেম্বরেই অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন৷ মানবাধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের মতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে ক্রসফায়ারের পক্ষে এক ধরনের অবস্থান আছে৷ যে কারণে এমন ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না৷

Bangladesch Razzien gegen Drogenhändler
ছবি: bdnews24.com

মানবাধিবার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেব বলছে, অক্টোবরে দেশে ‘ক্রসফায়ারে' ৩১ জন নিহত হয়েছেন৷ সব মিলিয়ে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি করা বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৬১ জন৷

সর্বশেষ সাতক্ষীরায় যে দুইজন নিহত হয়েছেন তারা ছাত্রলীগের সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিকের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত৷ তাদের নাম দীপ আজাদ ও সাইফুল ইসলাম৷ স্থানীয় সংসদ সংসদ সদস্য জানান তারা কোনো ধরনের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তার জানা নেই৷ তবে পুলিশ দাবি করেছে দীপ ও সাইফুল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী৷ সম্প্রতি এক ব্যক্তির ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন৷

তার আগে ২৮ নভেম্বর নোয়াখালীতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ইব্রাহিম খলিল নামের এক ব্যক্তি৷ তার বিরুদ্ধে মাদক, চোরাকারবারসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে বলে সংবাদমধ্যমকে জানিয়েছে পুলিশ৷

নূর খান

This browser does not support the audio element.

সবচেয়ে বেশি পুলিশ

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে ২০১৬ সালে মোট ১৭৭ জন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৭ সালে এই সংখ্যা কমে ১৪১ জনে নেমে আসে৷ এরপর থেকে গতি আবার বাড়তে শুরু করে৷ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন এবং মাদকবিরোধী অভিযান ক্রসফায়ারের নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করে৷ গত বছর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৪২১ জন, যা আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি৷

২০১৯ সালেও এই ধারা অব্যাহত আছে৷ বছরের একমাস বাকি থাকতেই ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৬১ জনে৷ আসক বলছে সবশেষ মাসের তথ্য তারা সংবাদপত্র থেকে সংগ্রহ করেছে৷ তাই নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়ে বেশি হতে পারে৷

চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ক্রসফায়ারে নিহতদের মধ্যে ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন৷

বছরের প্রথম ১০ মাসের ক্রসফায়ারের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ২৪৫ জনই আটকের আগেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন৷ আটকের পরে নিহত ৭৭ জন৷ সরাসরি গুলিতে হত্যার শিকার হয়েছেন ১০ জন৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ক্রসফায়ারের ঘটনা সাথে সম্পৃক্ত ছিল পুলিশ৷ এরপর রয়েছে র‌্যাব, বিজিবি ও ডিবি৷

ক্রসফায়ারের পক্ষে নীতি নির্ধারকদের অবস্থান আছে

ড. মিজানুর রহমান

This browser does not support the audio element.

মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকা আর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের ‘শর্টকাট' নীতিকে দায়ী করেছেন আসক-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়তই ভূত দেখার মতো সব কিছুতেই ভয় পায়৷ ফলে এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখতে চাইছে৷ যাতে মানুষ তাদের কোনো দাবি দাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস না পায়৷'' 

তিনি বলেন, ‘‘বিচারের প্রতিও মানুষের এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে৷ সেটার একটা সমাধান হিসেবেও ক্রসফায়ারকে বেছে নেয়া হচ্ছে৷''

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক প্রতিবেদনে অবিলম্বে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ বন্ধে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে৷ তাদের হিসাবে গত বছর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূতভাবে মোট ৪৬৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঘোষিত ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে৷ অ্যামনেস্টি বলছে, এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত না করে সরকার বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ারকে উল্টো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷ পুলিশ এইসব ঘটনায় বানোয়াট প্রত্যক্ষদর্শী তৈরি করে তাদের কাছ থেকে মিথ্যা বিবৃতি আদায় করছে বলেও অভিযোগ সংস্থাটির৷

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘কোনোভাবেই এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না৷ সরকারের মধ্যে একটি মনোভাব কাজ করছে যে উন্নয়নের স্বার্থে এগুলো মেনে নিতে হবে৷ কিন্তু মানবাধিকারের অবনতি ঘটিয়ে কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না৷ মানবাধিকার ছাড়া উন্নয়ন হয় না৷''

প্রতিটি ক্রসফয়ারের তদন্ত হয় বলে সরকার দাবি করে৷ কিন্তু ড. মিজান বলেন, ‘‘যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারাই এর তদন্ত করে৷ তাই এটা গ্রহণযোগ্য নয়৷ আমরা বারবারই স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে আসছি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘উদ্বেগের বিষয় হলো একজন সাবেক মন্ত্রী যিনি আবার আইনের ছাত্র তিনি সংসদে বলেছেন পেঁয়াজের যারা দাম বাড়িয়েছে তাদেরও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মত ক্রসফায়ারে দিতে হবে৷ একজন মন্ত্রী যখন সংসদে এই ধরনের কথা বলেন সেখানেতো ক্রসফায়ার কমার কোনো কারণ নেই৷ সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে ক্রসফায়ারের পক্ষে এক ধরনের অবস্থান আছে৷''

২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ