1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলতি মাসেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জুন ২০২২

চলতি জুন মাসেই মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে৷ এক বছরের মধ্যে পাঠানো হবে দুই লাখ শ্রমিক৷ তবে সিন্ডিকেট না উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ থাকবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷

Malaysia Covid-19 Pandemie Maßnahmen Impfung
প্রতীকী ফাইল ফটোছবি: Syaiful Redzuan/AA/picture alliance

চার বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার সমঝোতা স্মারক সই করলেও তার কী পদ্ধতিতে নেবে সেটা ঝুলে ছিল৷  গত জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্বাচিত করে বাংলাদেশকে জানালে বাংলাদেশ তাতে আপত্তি জানায়৷ বাংলাদেশ এভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে না পাঠিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানোর পক্ষে অবস্থান নেয়৷ আর সেই প্রেক্ষাপটেই মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান ঢাকায় এসে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷  বৈঠক শেষে বিকেলে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানান,"চলতি জুন মাসেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হবে৷ আগামী পাঁচ বছরে তারা পাঁচ লাখ শ্রমিক নেবে৷ আমরা আশা করছি প্রথম বছরেই আমরা দুই লাখ কর্মী পঠাতে পারব৷”
এদিকে সিন্ডিকেট না উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কর্মী নেয়া হবে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে  মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান বলেন,"আমরা মালয়েশিয়া গিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব৷ আমাদের মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে৷”
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার  মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে কাজ করা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার হাতে এক হাজার ৫২০ টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্টের তালিকা দেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানান,"এই তালিকা থেকে মালয়েশিয়া ঠিক করতে কাদের তারা সেখানে জনশক্তি রপ্তানির জন্য অনুমতি দেবে৷”
বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া জনশক্তি নেয়৷ কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া আর সব দেশ নিজেরাই রিক্রুটিং এজেন্ট ঠিক করে দেয়৷ বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম কেন? এর জবাবে ইমরান আহমেদ বলেন," আমাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার যে এমওইউ হয়েছে তাতে মালয়েশিয়া রিক্রুটিং এজেন্টদের বাছাই করবে বলা আছে৷”
বাংলাদেশের অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্ট মনে করে  ২৫টি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট হলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাবে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হবে এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার সম্মিলিত ফ্রন্ট বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে,"এর মাধ্যমে সিন্ডিকেট ২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে৷”
তাদের অভিযোগ,"২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রপ্তানির ফলে দেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে৷ তখন শ্রমিক রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল ১৫ লাখ৷ কিন্তু হয়েছে মাত্র দুই লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ জন৷ এতে করে নিশ্চিত চাকরির সুযোগ হারিয়েছে ১২ লাখ ২৫ হাজার কর্মী৷”
সংগঠনের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক  বলেন, "অভিবাসন ফি বাবদ নেয়ার কথা ছিল জন প্রতি এক লাখ ৬০ হাজার টাকা৷ কিন্তু নেয়া হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা৷ জনপ্রতি অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে৷ এভাবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে বিদেশে পাচার করেছে ১০ সদস্যর সিন্ডিকেট৷ আর সেসময়ে ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এক হাজার ২০০ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি৷”
এখনো অভিবাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না হলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বৃহস্পতিবার যা বলেছেন তাতে সিন্ডিকেটের আভাসই দেয়া হচ্ছে৷ তবুও মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকে তারা তাকিয়ে আছেন৷ তারা আশা করছেন মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা প্রতারকদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে না৷
বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার আশঙ্কা করছেন, এবার সিন্ডিকেট হলে ৩০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট হলে বঞ্চিত হবে প্রায় এক হাজার ৬০০ রিক্রুটিং এজেন্ট৷ তিনি বলেন," ২০১৮ সালে এই সিন্ডিকেটের কারণেই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো মালয়েশিয়া৷ তারা তখন কাজ প্রার্থী মানুষের কাছে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়৷ সেই সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলো ১০-১২টি এজেন্সি৷ এখন আগেরগুলোসহ ২৫টি এজেন্সির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করা হয়েছে৷ ”
তার কথা,"ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে৷ আর ওই সিন্ডিকেটের জন্যই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করেছিলো মাহাথির মোহাম্মদ৷ সিন্ডিকেটের সাথে ওই দেশের কিছু প্রভাবশালী লোকও জড়িত৷ তারা হাজার হাজার কোটি টাকা এবারো হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে৷”
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অভিবাসন ব্যয় চূড়ান্ত হয়নি৷ তবে বাংলাদেশের মন্ত্রী বলেছেন,"আমরা চেষ্টা করছি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে৷ আমরা চাচ্ছি শূণ্য অভিবাসন ব্যয়৷”
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন," ১৯৭৮ সাল থেকে মালয়েশিয়া বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়া শুরু করে৷ এরপর বেশ কয়েকবার তারা শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে৷ ২০১৮ সালেও একই অভিযোগে বন্ধ করা হয়৷ গত ডিসেম্বরে শ্রম বাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর কিন্তু সেই মালয়েশিয়ার মন্ত্রী গত জানুয়ারি মাসে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠায় বাংলাদেশের কাছে৷ তাহলে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে তারও জড়িত৷ যদি আবার সিন্ডিকেট হয় আর সামনের নির্বাচনে মালয়েশিয়ার এই সরকার ক্ষমতায় না থাকে তাহলে বাংলাদেশ থেকে আবার শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি৷”
তিনি বলেন,"সিন্ডিকেট করে অভিবাসন ব্যয় বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়৷ আর অভিবাসন ব্যয় বাড়ানো আইএলও কনভেনশন বিরোধী৷ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ট্রাান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালও কথা বলেছে৷”
মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের বক্তব্যকেও সিন্ডিকেটের পক্ষে বলে মনে করেন তিনি৷ তার কথা, "১৩টি দেশের মধ্যে ১২টি দেশ উন্মুক্ত পদ্ধতিকে লোক পাঠায় মালয়েশিয়ায়৷ বাংলাদেশের ব্যাপারে কেন তারা নির্ধারণ করে দেবে৷”
তিনি মনে করেন," মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনো নিয়ম নীতি মানছে না৷  বাংলাদেশ সরকারের উচিত শক্ত অবস্থানে যাওয়া৷”
বিএমইটির হিসাব মতে এর আগে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে প্রায় ১১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী গেছেন৷

শরিফুল হাসান

This browser does not support the audio element.

আবুল বাসার

This browser does not support the audio element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ