রাস্তার পাশে অবস্থিত বাড়ির বাসিন্দাদের শব্দদূষণ থেকে মুক্তি দিতে গবেষকরা চেষ্টা করছেন৷ তাঁরা আলকাতরার পরিবর্তে এমন এক উপকরণ তৈরির চেষ্টা করছেন, যেটা রাস্তায় ব্যবহৃত হলে, গাড়ির টায়ার থেকে কম শব্দ তৈরি হবে৷
বিজ্ঞাপন
বেলজিয়ান রোড রিসার্চ সেন্টারের লুক গুবার্ট বলেন, ‘‘আপনি যদি গাড়ি চলাচলের সময় সৃষ্ট শব্দদূষণ কমাতে চান, তাহলে আপনাকে রাস্তার উপরিভাগে পরিবর্তন এনে টায়ারের শব্দ কমানোর চেষ্টা করতে হবে৷ এক্ষেত্রে তিনটি প্যারামিটার আছে – রাস্তার বুনট, তাপমাত্রা শোষণ ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা৷ এর মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে বেশি কাজ হয়নি৷''
বৃষ্টি হলে যেন ঐ উপকরণ দিয়ে তৈরি রাস্তায় গাড়ি চলতে সমস্যা না হয়, তাও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ সেখানে কাজ করা আনেটে নাইডেল বলেন, ‘‘গাড়ির পুরনো টায়ারথেকে পাওয়া রাবার, আর গ্রানাইটের গুঁড়া পলিইউরেথিন আঠা দিয়ে যুক্ত করে এই উপকরণ তৈরি করা হয়েছে৷''
রিসাইকেল করা টায়ার দিয়ে রাস্তার উপরিভাগ ঢেকে দেয়ার পরিকল্পনা নতুন নয়৷ কিন্তু স্থায়িত্ব ও খরচের বিবেচনায় সেগুলো তেমন সফল হয়নি৷ গবেষক হান্স বেন্ডটসেন বলেন, ‘‘আমরা এমন এক উপকরণ তৈরির চেষ্টা করছি, যেটাশব্দদূষণ কমাবে, স্থায়ী হবে, আর দাম হবে কম৷''
নিরাপত্তার জন্য ঘর্ষণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ৷ সুইডেনের এই রাস্তায় তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ শীতের সময় আলকাতরার চেয়ে এই উপকরণের উপর দিয়ে চলাচল বেশি নিরাপদ বলে গবেষণায় দেখা গেছে৷
গবেষক উলফ স্যান্ডব্যার্গ বলেন, ‘‘সাধারণ আলকাতরার চেয়ে এই উপকরণ দিয়ে রাস্তা তৈরি ব্যয়বহুল৷ তবে যেখানে শব্দদূষণ কমাতে বেড়া দেয়ার প্রয়োজন পড়বে, সেখানে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে৷ কেননা বেড়া দিতে তার চেয়ে বেশি খরচ হবে৷''
কিন্তু এটা কি যথেষ্ট টেকসই হবে? এখানে সেটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ কয়েক বছর পর সারফেসটির অবস্থা কেমন হতে পারে, তার একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা চলছে৷ পরিবেশের উপর এর প্রভাবও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে৷
প্রকৌশলী বিয়র্ন কালমান বলেন, ‘‘সাধারণ আলকাতরার মতোই এটি টেকসই৷ এছাড়া এই উপকরণ কী পরিমাণ ধূলা তৈরি করতে পারে, তাও এখানে জানার চেষ্টা চলছে৷ দেখা যাচ্ছে, আলকাতরার চেয়ে কম ধুলাই উৎপন্ন হচ্ছে৷''
শব্দ কম, নির্ভরযোগ্য আর পরিবেশবান্ধব – নিকট ভবিষ্যতে তাই এই উপকরণ ইউরোপজুড়ে বেড়ার বিকল্প হয়ে উঠবে বলে আশা গবেষকদের৷
স্টেফান গাবেল্ট/জেডএইচ
শব্দদূষণই কি হার্ট অ্যাটাকের কারণ?
প্লেন বা রাস্তায় গাড়ির অসহনীয় শব্দ যে স্বাস্থ্যের নানা ক্ষতি করে, তা আজ প্রায় সকলেরই জানা৷ এ সবের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ সবচেয়ে মারাত্মক ও দুঃখজনক৷ অথচ এ সংখ্যা দিনদিনই বাড়ছে৷ এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPhotos
হার্টবিট অনেক দ্রত হতে থাকে
প্রতিদিনই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে সারা বিশ্বে৷ নানা কারণের মধ্যে শব্দদূষণও হার্ট অ্যাটাকের একটি বড় কারণ বলে ডাক্তাররা মনে করেন৷ বিশেষ করে বড় গাড়ি বা প্লেনের বিকট শব্দে অনেক সময় মানুষের হার্টবিট অনেক দ্রত হতে থাকে৷ আর তা থেকে অনেক সময় কারো কারো নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, মাথাও ঘোরে৷ এরপরও অবশ্য মানুষ বোঝে না যে শব্দদূষণই এ সব উপসর্গের প্রধান কারণ৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
মানসিক চাপ থেকে হার্ট অ্যাটাক
জার্মানির গুটেনব্যার্গের স্বাস্থ্যবিষয়ক এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বাইরের অতিরিক্ত শব্দের কারণে অনেকেই মানসিকভাবে চাপ অনূভব করেন৷ আর এই চাপ থেকে হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে৷ জার্মান কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিস্টিয়ান ব্লাউ জানান এ তথ্য৷
ছবি: Peter Atkins - Fotolia.com
লাখো মানুষ হার্ট অ্যাটাকের শিকার
অতিরিক্ত শব্দ, বিশেষ করে প্লেনের শব্দে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ এ তথ্য দেখা গেছে ৩৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সি ১৫,০০০ হাজার নারী-পুরুষ নিয়ে দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে করা এক সমীক্ষায়৷ জার্মানিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ অতিরিক্ত শব্দ, বিশেষ করে প্লেনের শব্দে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন৷
শব্দদূষণ থেকে জার্মানিতে মানুষের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে অতিরিক্ত শব্দ বা প্লেনের শব্দে যে ঝুঁকি বেশি, তা বেশ স্পষ্টভাবেই লক্ষ্যণীয়, জানান ডা. ব্লাউ৷
শব্দদূষণের কারণে যে অসুখ হয়, তাকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে৷ যেমন একদল মানুষ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারেন যে শব্দের কারণে তাঁদের হৃদপিণ্ডে সমস্যা হচ্ছে৷ অন্যদিকে আরেকদলের মধ্যে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, যা পরে হঠাৎ করেই ধরা পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শব্দদূষণে আক্রান্তদের ওষুধ
ডা. ব্লাউ জানান, যাঁদের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে তাঁরা শব্দদূষণে আক্রান্ত, তাঁদের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়৷ এর মধ্যে একটি রক্তে জমাট বাধা বন্ধ করতে এবং অন্যটি হার্টবিট স্থিতিশীল রাখার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.Remmers
ব্লাড প্রেশার মাপা উচিত
হৃদপিণ্ড এবং ব্লাড প্রেশারের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক৷ তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, যাঁদের বাইরের শব্দে খুব বেশি অসুবিধা হয় তাঁদের নিয়মিত প্রেশার বা রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত৷ কারণ মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিছুটা হলেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব৷