বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মৃত্যুর শোক সামলানোর আগেই এলো আরেক চিরবিদায়ের খবর৷ বুয়েটের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক খালেদা একরামও চলে গেলেন না ফেরার দেশে৷ ফেসবুকে এই নিয়ে লিখেছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই প্রথম প্রকাশ হয় নারীদের জন্য পত্রিকা ‘বেগম'৷ সেই সময় এমন এক পত্রিকা বের করা ছিল প্রচণ্ড সাহসের ব্যাপার৷ সুফিয়া কামাল ছিলেন সেই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক৷ আর সদ্য কলেজ থেকে বের হওয়া নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক৷ পরবর্তীতে পত্রিকাটির পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন এই মহিয়সী নারী৷ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্বপালন করছেন তিনি৷
নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ তাঁর জীবনের নানাদিক নিয়ে ফেসবুকেও হচ্ছে লেখালেখি৷ কেউ কেউ তুলে ধরেছেন তাঁর সঙ্গের নানা স্মৃতি৷ সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন,
‘‘সম্ভবত ১৯৯৩ সালে বাংলাবাজার পত্রিকা থেকে আমাকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলো মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে রিপোর্ট করতে৷ তখন তিনি শতবর্ষ পেরিয়েছেন৷ নারিন্দার বাসায় গেলাম৷ নাসিরউদ্দিন কানে শুনতেন না৷ আমি প্রশ্ন করতাম, নূরজাহান বেগম তাঁর বাবার কানের কাছে চিৎকার করে তা বলতেন, তারপর নাসিরউদ্দিন জবাব দিতেন৷ তার সব কথা আমি বুঝতাম না৷ নূরজাহান বেগম আবার আমাকে সেটা বুঝিয়ে দিতেন৷ অগ্রসর বাপ-বেটির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা৷''
সাংবাদিক শেখ রোকন নূরজাহানের প্রয়ানের পর অন্যদের আলোচনার ধরণ বিশ্লেষণ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘তাঁর প্রয়াণে ব্যক্তি নূরীর চেয়ে বেশি আলোচিত 'বেগম' পত্রিকা, সমকালীন নারী সমাজ, দেশ বিভাগ প্রভৃতি৷ কেউ কেউ তাঁকে ‘ওপার বাংলার' মানুষ হিসেবে শনাক্ত করছেন, দেখলাম৷ আদতে তিনি নদীভাঙনপীড়িত; আল মাহমুদের ভাষায় ‘তার এপার-ওপার নেই৷'''
শেখ রোকন আরো লিখেছেন, ‘‘পৈত্রিক গ্রাম পাইকারদী মেঘনাগর্ভে চলে গিয়েছিল তার জন্মেরও আগে৷ বাবা ছিলেন স্টিমার কোম্পানির সহকারী স্টেশন মাস্টার; ভিটে-মাটি নদীতে গেলে নদী ছেড়ে বীমা কোম্পানির চাকরি নেন কলকাতায়৷ মা গিয়ে ওঠেন মেঘনাপাড়েই আরেকটি গ্রাম চালিতাতলী, বাবার বাড়িতে৷ শিশু নূরী দুই দফা পানিতে পড়লে পরে তারা কলকাতায় চলে যান৷ সেই চালিতাতলীও কয়েক দফা নদীভাঙনের কবলে পড়েছে৷ বস্তুত তিনি সারাজীবন ভাঙনই দেখলেন; শৈশবে নদীর পর যৌবনে দেশভাঙন তো বটেই, তিনি যে নারীমুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন, সেটাও সম্ভবত ভাঙনপ্রবণই রেখে গেলেন৷''
লেখা হয়েছে, ‘‘এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে তিনি, এবং ভিসি হিসেবে সামান্য কিছু দিনের দায়িত্ব পালন কালে যে অসামান্য অবদান রেখে গেলেন তার জন্য বুয়েট তাঁকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে৷ আর সেই অবদান হচ্ছে বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা সঠিক সময়ে শুরু করে সঠিক সময়ে শেষ করা৷''
সংকলন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর ব্যক্তিগত জীবন
তিনি সুপার মার্কেটে বাজার করেন, নাপিতের দোকানে অন্যদের পাশে বসে অপেক্ষা করেন, এমনকি সরকারি ভবন নয়, নিজের বাড়িতে থাকাই তাঁর পছন্দ৷ তিনি আর কেউ নন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ম্যার্কেলের নাপিত উডো ভালৎস
২০১৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ উডো ভালৎস (ছবিতে মাঝখানে) গত দশ বছর ধরে ম্যার্কেলের চুল কাটেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘চ্যান্সেলার হওয়ার আগেও তিনি যেমন সেলুনে অন্যদের সাথে বসতেন, এখনও তাই করেন৷ তাঁকে কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় না৷ অর্থাৎ তিনিও অন্যদের মতো ৬৫ ইউরো দেন৷ একদম আগের মতো আছেন তিনি৷’’
ছবি: picture-alliance/schroewig
নিজেদের বাড়িতেই থাকেন
বার্লিনের ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’-এর একটি জাদুঘরের কাছে নিজস্ব, কিন্তু পুরানো একটা ফ্ল্যাটে থাকেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ার৷ শুধু নিরাপত্তার জন্য দু’জন পুলিশ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে৷ এছাড়া কিন্তু সব কিছু আগের মতো আছে৷ এই যেমন, ছুটি পেলে আজও কাছের উকারমার্ক নামের ছোট্ট শহরে চলে যান দু’জনে৷ সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেই বাজার করেন
চ্যান্সেলার ম্যার্কেল সাধারণ সুপার মার্কেটেই বাজার করতে যান, বিশেষ করে যেগুলো একটু বেশি সময় খোলা থাকে৷ বাজার করা সম্পর্কে আঙ্গেলা ম্যার্কেল একবার এক দোকানিকে বলেছিলেন, ‘‘আমার এই অল্প অবসর সময়ে বাজার করার মতো সব কাজই করার চেষ্টা করি, যেমনটা আগে করতাম৷ অবশ্য যখন নিজে পারি না, তখন বাজারের লিস্ট তৈরি করে স্বামীর হাতে তুলে দেই৷’’
ছবি: picture-alliance/Markus C. Hurek
তিনিই ‘চ্যান্সেলার’
দোকানের একজন নারী কর্মী জানান, ‘‘চ্যান্সেলার ম্যার্কেল অন্যান্য ক্রেতার মতোই কিছু খুঁজে না পেলে কোথায় কী রাখা আছে, তা সাধারণ গৃহিনীদের মতোই জানতে চান৷ তাঁর নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী সাথে না থাকলে কেউ হয়ত বুঝবেই না যে তিনিই আমাদের ‘অ্যাঞ্জি’৷’’ কর্মীটি আরো জানান, ‘‘শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু চ্যান্সেলারের মুখে হাসিটুকু লেগে থাকে, যা ভীষণ ভালো লাগে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
চ্যান্সেলারের পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ
জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ভীষণ পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ বা পনির, যা তিনি নিজেই কিনতে ভালোবাসেন৷ আর সে’কথাই গর্ব করে জানান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের একজন কর্মী৷
হাতে দামি ব্যাগ নেওয়ার চেয়ে ভালো খাওয়া-দাওয়া ম্যার্কেলের কাছে বেশি গুরত্বপূর্ণ৷ যখন তিনি রান্না করার সময় পান না, তখন স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ারকে নিয়ে বার্লিনের ‘কাসামবালিস’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান৷ দামি খাবারের চেয়ে অবশ্য ‘গ্রিক মিটবল’-এর মতো সাধারণ খাবারই বেশি পছন্দ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই নারীর৷
ছবি: picture alliance/Markus C. Hurek
বিলাসিতা পছন্দ নয়
অন্যান্য রাজনীতিকদের মতো বিলাসিতা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের তেমন পছন্দ নয়৷ বরং সাধারণ জীবনযাপনই তাঁর বেশি ভালো লাগে৷ তাই তিনি যতটা সম্ভব সেভাবেই চলার চেষ্টা করেন স্বামীকে নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Fusco
চাই মুক্ত হাওয়া আর হাঁটা-চলা
আঙ্গেলা ম্যার্কেল সময় সুযোগ পেলে স্বামীকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হন৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ‘ফিট’ থাকতে মুক্ত বাতাসে হাঁটা-চলা যে ভীষণ জরুরি – সেটা তিনি যেন সকলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন৷ এই না হলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/AP Photo/C. De Luca