মহাকাশে অথবা চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহে দীর্ঘকাল থাকতে হলে খাদ্যের জোগান একটা সমস্যা হতে পারে৷ কিন্তু বিশেষ ধরনের এক কৃষি পদ্ধতি কঠিন পরিস্থিতিতেও তাজা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
হাইড্রোপনিক্স সম্পর্কে মহাকাশ গবেষকদের আগ্রহের একটা বিশেষ কারণ রয়েছে৷ অত্যন্ত কম উপাদান ব্যবহার করে কৃষিকাজের এ রকম বাস্তবসম্মত পদ্ধতির জুড়ি মেলা ভার৷ এ ক্ষেত্রে গাছের শিকড় শূন্যে ঝোলে৷ শুধু চারাগাছগুলিকে ধরে রাখতে গবেষকদের এক কাঠামো সৃষ্টি করতে হয়েছে৷
গবেষণাগারে সবকিছু গাছের আদর্শ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এমনকি আলোর রংও চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত৷ শিকড় মাটি থেকে পুষ্টি ও পানি গ্রহণ করতে পারে না৷ তার বদলে প্রতি মিনিটে একবার করে পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্প্রে করা হয়৷ ফলে প্রচলিত কৃষিপদ্ধতির তুলনায় ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি ও সারের সাশ্রয় ঘটে৷ কোনোকিছুই অব্যবহৃত হিসেবে মাটির নীচে তলিয়ে যায় না৷ জার্মান এয়ারোস্পেস এজেন্সির ডানিয়েল শুবার্ট বলেন, ‘‘গাছ যে পুষ্টি পান করে না, তা আবার ফিরে আসে৷ সেটি আবার নতুন করে সাজিয়ে গাছকে দেওয়া হয়৷ এমনকি গাছের গা থেকে যে পানি বেরিয়ে আসে, সে সবও সংগ্রহ করে গাছকে পান করতে দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ যেটুকু পানি এই প্রণালী ত্যাগ করে, তা শুধু তাজা খাদ্য হিসেবে কাজে লাগে৷ বাকি সবকিছু প্রণালীর মধ্যে থেকে যায়৷''
চাঁদের পথে ইসরায়েল
চাঁদে মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ করেছে ইসরায়েল৷ শুক্রবার ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল থেকে মহাকাশযানটি চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়৷ ছবিতে তারই কিছু দৃশ্য...
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Renna
দুটি রেকর্ড
ইতোমধ্যে চাঁদে রওনা হওয়া এই ইসরায়েলি স্পেসশিপ দুটো রেকর্ড করতে যাচ্ছে৷ প্রথমবারের মতো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাঁদে রকেট পাঠাচ্ছে৷ দ্বিতীয় রেকর্ডটি হচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রথম চন্দ্রাভিযান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Renna
প্রতিষ্ঠানের নাম স্পেসআইএল
ইসরায়েলের বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসআইএল’৷ ২০১১ সালে স্পেসআইএল যাত্রা শুরু করে৷ চন্দ্রাভিযানে যাওয়ার জন্যে মহাকাশযান নির্মাণে তিন কোটি ডলার খরচ করছে প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: imago stock&people
মিশন মুন অব ইসরায়েল
চাঁদে এ মহাকাশযান গবেষণার কাজে ব্যবহার হবে৷ তবে অন্য কিছু করার আগে ইসরায়েল চাঁদের মাটিতে নিজেদের একটি পতাকা স্থাপন করবে৷ মিশনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘মুন অব ইসরায়েল’৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/I. B. Zion
বারোশিট
স্পেসআইএল রকেটটির নাম দিয়েছে ‘বারোশিট’৷ যেটি ‘মুন অব ইসরায়েল’ মিশন নিয়ে চাঁদে অবতরণ করবে৷ আর ‘বারোশিট’ শব্দটির অর্থ হিব্রু ভাষায় ‘শুরু’৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Denemark
গুগলের প্রতিযোগিতা
ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান স্পেসআইএলের এ কাজের শুরু হয় গুগল লুনার এক্সপ্রাইজের অংশ হিসেবে৷ কম খরচে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর পুরস্কার হিসেবে বিজ্ঞানীদের ৩০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা বলেছিল গুগল৷ এ প্রতিযোগিতায় যোগদান করে স্পেসআইএল৷ প্রতিযোগিতায় কেউ না জিতলেও স্পেসআইএল নিজ উদ্যোগে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টায় অটল থাকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Schalit
মহাকাশযানের বিস্তারিত
মনুষ্যবিহীন এ মহাকাশযানের ওজন ৫৮৫ কিলোগ্রাম৷ এটির আকার হচ্ছে ব্যাসার্ধে ছয় ফুট এবং উচ্চতায় চার ফুট৷ চাঁদে যেতে এ মহাকাশযানটির এক হাজার পাউন্ড জ্বালানির প্রয়োজন হবে৷ স্পেসএক্স ফ্যালকন নাইন রকেটের সহযাত্রী হয়ে মহাকাশযানটি চাঁদে অবতরণ করবে৷
ছবি: Reuters/J. Skipper
চতুর্থ দেশ ইসরায়েল
এ নিয়ে ইসরায়েল চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের লক্ষ্যে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলো৷ এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদে রকেট পাঠিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মোট খরচ ৯৫০ লাখ ডলার
২০১১ সালে স্পেসআইএল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৫০ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে৷ এ প্রকল্পে সরকারি সহায়তা নেই৷ ইসরায়েলের বিলিওনেয়ার মরিস কান ব্যক্তি উদ্যোগে এর খরচ দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/T. Baur
8 ছবি1 | 8
বাস্তবে এই প্রণালী পরীক্ষা করতে গবেষকরা এক হাইড্রোপনিক্স কনটেনার নির্মাণ করেছেন৷ সেটি এমনকি চাঁদের বুকেও বসানো চলে৷ গবেষকরা সাফল্যের সঙ্গে তার মধ্যে চারাগাছ চাষ করতে পেরেছেন৷ কন্টেনারের মধ্যে লেটুস পাতা, মুলা, টমেটো, শসা বেড়ে ওঠে৷
সেই শাকসবজির স্বাদও বেশ ভালো বলে গবেষকরা দাবি করেন৷ তাছাড়া খেতের তুলনায় গাছ অনেক দ্রুত বেড়ে ওঠে৷ কয়েক সপ্তাহ পরেই তাঁরা প্রথমবার খাদ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন৷ গাছপালা শুধু ভালোভাবে বেড়ে ওঠেনি, সেগুলির মধ্যে অনেক কম রোগ দেখা গেছে৷ তাছাড়া কীটপতঙ্গের মোকাবিলার কোনো প্রয়োজনই পড়েনি৷ ডানিয়েল শুবার্ট বলেন, ‘‘পৃথিবীর বুকে সব সময়ে নানা বায়োলজিকাল প্রক্রিয়া চলতে থাকে৷ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, ছত্রাক রয়েছে৷ গাছপালাকে সবসময়ে এ সব হামলার মোকাবিলা করতে হয়৷ এ ক্ষেত্রে শিকড় মুক্তভাবে ঝুলে থাকায় অনেক নির্মল পরিবেশ পাচ্ছে৷ ফলে গাছের বৃদ্ধিও অনেক ভালোভাবে হচ্ছে৷''
এর ইতিবাচক প্রভাব হলো, গাছপালার সুরক্ষার জন্য গবেষকদের কিছুই করতে হচ্ছে না৷ এই প্রক্রিয়ার আওতায় নীতিগতভাবে মহাকাশচারীরা তাজা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পেতে পারেন৷ কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াই সে সব উৎপাদন করা হচ্ছে৷ তাছাড়া এই প্রণালীর নিজস্ব চাহিদা অত্যন্ত কম৷
আরও ছোট আকারেও এই প্রণালী গড়ে তোলা সম্ভব৷ ডানিয়েল শুবার্ট সাধারণ মানুষের জন্যও হাইড্রোপনিক্সের একটি সেট নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ মাত্র ৬০ ইউরো দিয়ে সেটি কেনা যায়৷ তাতে পানির মধ্যেই সব পুষ্টিকর উপাদান ভরে দেওয়া হয়েছে, সবকিছু প্যাকেটেই পাওয়া যায়৷
মহাকাশে তিন লাখ নতুন ছায়াপথ আবিষ্কার
‘লোফার’ রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে নতুন প্রায় তিন লাখ ছায়াপথ আবিষ্কার করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা৷ বিজ্ঞানীদের আশা, এর মাধ্যমে কৃষ্ণগহ্বর এবং ছায়াপথ কীভাবে সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে৷
ছবি: LOFAR/Maya Horton
লাল আলোকচ্ছটা
‘হেটডেক্স’ এলাকার এই ‘মোন্টাজ’ এ অনেকগুলো ছায়াপথ দেখা যাচ্ছে৷ ১৮টি দেশের ২০০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী এই লাখো ছায়াপথ আবিষ্কার করেছেন, যা আগে অন্য কেউ কখনও দেখেনি৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা রেডিও টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক ‘লো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যারে’ বা ‘লোফার’ এর মাধ্যমে উত্তর আকাশে একটি নতুন মানচিত্র তৈরি করেছেন৷
ছবি: LOFAR/Judith Croston
জ্যোতির্ময় পাখা
রেডিও উৎস ‘বিথ্রি জিরো ওয়ান ফাইভ সেভেন প্লাস ফোর জিরো সিক্স’ উৎসের চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কে বিশাল আকারের আলোড়নের উপস্থিতি নির্দেশ করে৷ অনেকেই এটাকে পাখার আকৃতি হিসেবে দেখতে পায়৷
ছবি: LOFAR/Maya Horton
সর্পিল ছায়াপথ
এই উজ্জ্বল বর্ণিল লেজটি সর্পিল ছায়াপথ ‘এম ওয়ানজিরোসিক্স’ এর৷ গবেষকদের বিশ্বাস, অগ্নিশিখার মতো দেখতে এই কাঠামো ছায়াপথের কেন্দ্রীয় বিশাল আকারের কৃষ্ণগহ্বরের কর্মকাণ্ডের ফলাফল৷ হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ মারকুস ব্রুগেন বলেন, ‘‘লোফারের মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করছি, ছায়াপথের যেখানে কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে, সেখানে এটা থাকার কারণ কি?’’
ছবি: LOFAR/Cyril Tasse
‘ঘূর্ণাবর্ত ছায়াপথ’
এমফিফটিওয়ান ‘ঘূর্ণাবর্ত ছায়াপথ’ নামে পরিচিত বলে জানিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা৷ এর অবস্থান পৃথিবী থেকে দেড় থেকে সাড়ে তিন কোটি আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে৷ এর কেন্দ্রে রয়েছে বেশ বড় আকারের কৃষ্ণগহ্বর৷
ছবি: LOFAR/Sean Mooney
রক্তচক্ষু
‘সিআইজেডএ জেটুটুফোরটু পয়েন্ট এইট প্লাস ফাইভ থ্রি জিরো ওয়ান’ ছায়াপথ গুচ্ছের এই নাম দেয়া হয়েছে৷ গবেষকদের আশা, লোফারের নতুন তথ্য ছায়াপথ গুচ্ছ কীভাবে সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কেও ধারণা দেবে৷
ছবি: LOFAR/Duy Hoang
মহাকাশে বিস্ফোরণ
ছায়াপথ ‘আইসি থ্রিফোরটু’ এর সর্পিল বাহুতে সুপারনোভার বিস্ফোরণের ছবি আপনারা দেখছেন এখানে৷ নতুন আবিষ্কৃত ছায়াপথগুলো সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানী সাইরিল টাসে জানালেন, ‘‘এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন দিক উন্মোচিত হলো৷’’
ছবি: LOFAR/Maya Horton
চমকপ্রদ তারকাপুঞ্জ
লোফারের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অপূর্ব কিছু ছবির জন্য মাঝে মাঝে কৌশলের আশ্রয় নেন৷
ছবি: LOFAR/Cyril Tasse
এক কোটি ডিভিডি
ছায়াপথ গুচ্ছ ‘অ্যাবেল ওয়ানথ্রিওয়ানফোর’ পৃথিবী থেকে অন্তত ৪৬ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত৷ লোফারের গবেষকরা এটি সহ অন্তত তিন লাখ নতুন ছায়াপথের অনেক তথ্য সংগ্রহ করছেন৷ জার্মানির বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডোমিনিক সোয়ার্ৎস জানালেন, ‘‘আমরা এত তথ্য পেয়েছি যা অন্তত এক কোটি ডিভিডিতে ধারণ করা যায়৷ আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি৷’’
ছবি: LOFAR/Amanda Wilber
8 ছবি1 | 8
এলইডি বাতি গাছপালার জন্য আদর্শ আলো নিক্ষেপ করে৷ সূক্ষ্ম নুড়িপাথর গাছকে স্থিতিশীলতা দেয়৷ যে কোনো রান্নাঘরে এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্রের মধ্যে লতাগুল্ম রাখা চলে৷ জার্মান এয়ারোস্পেস এজেন্সির ডানিয়েল শুবার্ট বলেন, ‘‘বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে প্রায় ৩০ শতাংশ অপচয় ঘটে৷ শুধু গ্রিনহাউস থেকে গ্রাহকের কাছে পরিবহণের সময়ই এমনটা ঘটে৷ আমাদের এই গ্রিনহাউস প্রণালীর মাধ্যমে সেই অপচয় যতটা সম্ভব কম রাখতে সাহায্য করতে পারি৷''
ডানিয়েল শুবার্ট ও তাঁর সহকর্মীরা এর মধ্যে অ্যান্টার্কটিকার চরম শীতল পরিবেশে এক বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের গবেষণাগারে পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ সেখানে ২০০ কিলোগ্রামেরও বেশি লেটুস পাতা, শসা ও টমেটো উৎপাদিত হয়েছে৷ অ্যান্টার্কটিকায় যা সম্ভব, তা মহাকাশেও প্রয়োগ করা যাবে বলে গবেষকদের আশা৷