চাঁদ পৃথিবীর কাছে হলেও সেখানে বসতি গড়তে চান না জেফ বেজোস কিংবা এলোন মাস্ক৷ এর চেয়ে তাঁরা মঙ্গলগ্রহের ব্যাপারে আগ্রহী৷ কারণ চাঁদের চেয়ে মঙ্গলের পরিবেশ মানুষের বসবাসের জন্য বেশি উপযোগী বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন৷
বিজ্ঞাপন
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের তিন প্রথমবারের মতো চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন৷ শনিবার সেই ঐতিহাসিক ঘটনার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে৷ ১৯৬৯ সাল থেকে টানা তিন বছর চাঁদে ছয়টি মনুষ্য মিশন পরিচালনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ এরপর আর কেউ চাঁদে যায়নি৷
তবে সেই চেষ্টা আবার শুরু হচ্ছে৷ ২০২৪ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিজ্ঞানীদের পাঠাতে চায় মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা৷ এই মিশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘আর্তেমিস'৷
পেপলের সাবেক প্রধান নির্বাহী ও টেসলা প্রতিষ্ঠাতা এলোন মাস্ক এবং অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস দুজনই নাসার মিশনের আগে চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন৷
তবে তাঁদের কেউই ভবিষ্যতে চাঁদে বসতি গড়ার কথা ভাবছেন না৷ মাস্ক গতবছর মঙ্গলে বসতি গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন৷ সেখানে অবশ্য তিনি মঙ্গলের আগে চাঁদে যাওয়া যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি স্বীকার করে নিয়েছিলেন৷ কারণ হিসেবে মাস্ক বলছেন, মঙ্গলের দূরত্ব অনেক৷ এই যাত্রাপথের মধ্যে যদি চাঁদে বিরতি দেয়া যায়, তাহলে সেটা ভালো হবে৷ পৃথিবী থেকে মঙ্গলগ্রহে যেতে এখনকার প্রযুক্তিতে প্রায় আট মাস সময় লাগতে পারে৷
নাসা এবং জেফ বেজোসও মাস্কের এই যুক্তি পছন্দ করেছেন৷
চাঁদের চেয়ে মঙ্গল ভালো
এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট জুবরিন মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল স্পেস সোসাইটি'র ম্যাগাজিন ‘অ্যাড অ্যাস্ট্রা'য় একটি প্রবন্ধ লিখেছেন৷ সেখানে তিনি বলেন, চাঁদের চেয়ে মঙ্গলের পরিবেশ মানুষের বসবাসের জন্য বেশি উপযোগী৷ কারণ মঙ্গলে কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে শুরু করে নাইট্রোজেন, পানি ইত্যাদির পরিমাণ অনেক বেশি৷ তিনি বলেন, চাঁদেও কার্বন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি রয়েছে, তবে সেগুলোর পরিমাণ ‘সাগরের পানিতে সোনা' থাকার মতো৷ এছাড়া চাঁদে শস্য ফলানোর মতো যথেষ্ট প্রাকৃতিক সূর্যালোক নেই, যেটা মঙ্গলে আছে, বলেন জুবরিন৷
চাঁদে স্টেশন?
চাঁদে বসতি গড়া না গেলেও সেখানে যেহেতু মঙ্গলে যাওয়ার পথে বিরতি নিতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা, তাই চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে জানাটা জরুরি৷ চাঁদে পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্প্রতি জানা গেছে৷ তবে সেই পানি চাঁদের কোন অংশে এবং কী পরিমাণে আছে, তা এখনও জানা যায়নি৷ ২০২৪ সালে নাসা যে বিজ্ঞানীদের চাঁদে পাঠাতে চাইছেন তাঁরা এসব তথ্য জানার চেষ্টা করবেন৷ চাঁদে যদি স্টেশন পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত পানি থাকে, তাহলে তা মঙ্গলযাত্রার জন্য ভালো হবে বলেই এই চেষ্টা৷
ক্লেয়ার রোথ/জেডএইচ
চাঁদের সাতটি মজার তথ্য
পঞ্চাশ বছর আগে চাঁদে যাওয়ার পর থেকে তা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে বহু মজার তথ্য৷ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ সম্পর্কে এমন সাত তথ্য জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
ছোটো হয়ে যাচ্ছে চাঁদ!
নাসার গবেষণা বলছে, ক্রমান্বয়ে উত্তাপ হারাচ্ছে চাঁদ৷ এ কারণে চাঁদের উপরিভাগ আঙ্গুর থেকে কিশমিশের রূপ ধারণ করছে৷ শুধু তাই নয়, চাঁদের ভেতরের অংশও সঙ্কুচিত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে৷ কয়েক লাখ বছর ধরে এটি দাঁড়িয়েছে ৫০ মিটারে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/B. Lamm
কীভাবে উড়েছিল অ্যামেরিকার পতাকা?
ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা বলে থাকেন, চাঁদে পা রাখার ঘটনা ছিল ভুয়া৷ চাঁদের পরে কোনো একটি মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন নাইল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন৷ কারণ, অলড্রিনের রাখা অ্যামেরিকার পতাকা উড়তেছিল, অথচ মহাশূন্যে তা উড়ার কথা না৷ তবে, পতাকা ওড়ার কারণ হিসাবে নাসা বলছে, বাজ অলড্রিন পতাকার দণ্ড নাড়ানোয় অমন দেখা গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Neil A. Armstrong
চরম গরম, হঠাৎ ঠাণ্ডা
তাপমাত্রার উঠানামায় আমাদের নাভিশ্বাস উঠে, তা ঠিক৷ কিন্তু এই উঠানামা চাঁদের তুলনায় কিছু্ই না৷ কারণ, চাঁদের গায়ে যখন সূর্যের তাপ পড়ে, তখন এর তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে৷ আবার সূর্যের আলো সরলেই মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায় তাপমাত্রা৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Kahnert
চাঁদের বুড়ি
চাঁদের বয়স যত, চাঁদে মানুষ বা বুড়ি আছে এমন রূপকতার বয়সও তত৷ অনেকেই পূর্ণ চন্দ্রের মধ্যে একজন মানুষের মুখ দেখতে পান৷ অনেকে বলেন, পাপ করার কারণে ওই ব্যক্তিকে গ্রাস করেছে চাঁদ৷ চাঁদের বুড়ির গল্পতো কতো শুনতে হয় আমাদের! আর যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এমন গুজব রটার বয়সওতো বেশিদিন হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
দূরে সরে যায় চাঁদ
প্রতিবছর চার সেন্টিমিটার করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায় চাঁদ৷ দূরে সরে গেলে আমাদের কাছে সেটাকে ছোটো দেখায়৷ এভাবে ৫৫০ মিলিয়ন বছর পরে এটাকে সবচেয়ে ছোটো দেখা যাবে৷ এরপর আর কোনো পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে না৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
চাঁদকে পরোয়া করে না নেকড়ে
সিনেমার দৃশ্যের কথা মনে পড়ে? যেখানে চাঁদের দিকে নেকড়ের ভীতিকর গর্জনে শেষ হয় হরর সিনেমা৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পূর্ণ জোৎস্না হলেও নেকড়ের কিছু যায় আসে না৷ এমনকি তারা সেদিকে তাকিয়ে গর্জনও দেয় না৷ তবে, রাতে নেকডের গর্জনের কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা দুটোর সংযোগ ঘটিয়েছেন হয়ত৷
ছবি: Imago/Anka Agency International/G. Lacz
চন্দ্রারোহী সবাই অ্যামেরিকান পুরুষ
এখন পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদে হেঁটেছেন৷ নানান পেশা থেকে আসলেও কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে তাঁদের৷ মিলগুলো হচ্ছে- তারা সবাই অ্যামেরিকান, সবাই সাদা এবং সবাই পুরুষ৷ অ্যামেরিকানের বাইরে কিংবা নারীদের চাঁদে যাওয়ার জন্য আরো অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে বোধহয়৷