বাংলাদেশে চাকমা ভাষায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘মর থেঙ্গারি' বা ‘মাই বাইসাইকেল' নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সেনাবাহিনী৷ তাই ছবিটি শেষ পর্যন্ত সেন্সর বোর্ড পেরিয়ে প্রদর্শনের অনুমতি পাবে কিনা, তা নিয়ে হতাশায় আছেন পরিচালক অং রাখাইন৷
বিজ্ঞাপন
অং রাখাইন ‘মাই বাইসাইকেল'-এর জন্য গত দশ বছর ধরে কাজ করলেও ছবির দৃশ্যধারণ শুরু করেন ২০১২ সালে৷ এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম প্রদর্শিত হয় ‘মর থেঙ্গারি'৷
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাখাইন জানান, ‘‘বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে চাকমাদের জীবন নিয়েই চাকমা ভাষায় নির্মাণ করা হয়েছে এই চলচ্চিত্রটি৷ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বা তাদের জন্য আপত্তিকর কোনো চিত্র বা সংলাপ এই সিনেমায় নেই৷''
অং রাখাইন
‘‘ছবিতে শুধুমাত্র একটি প্রতীকী দৃশ্য আছে, যেখানে বাহিনীর সদস্যরা হেঁটে যাচ্ছেন৷ যদিও এটা বিশেষ কোনো বাহিনীকে নির্দেশ করে না৷'' এরপরেও ‘‘আমাকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে কিছু অংশ নিয়ে সেনাবাহিনীর আপত্তির কথা জানানো হয়'', বলেন অং রাখাইন৷
অন্যদিকে সেন্সর বোর্ডের সচিব মুন্সী জালালউদ্দিন জানান, ‘‘আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে চিঠি পেয়েছি, তাতে সেনাবাহিনীর আপত্তির কথা বলা হয়েছে৷ চলচ্চিত্রটির সংলাপ এবং দৃশ্যায়নে সেনাবাহিনী নিয়ে আপত্তিকর বিষয় আছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়াই ২০১৪ সালে চলচ্চিত্রটি ঢাকায় দেখানো হয়, যা সেন্সর আইন বিরোধী৷ তারপরও আমরা সিনেমাটি সেন্সরের তালিকাভুক্ত করেছি৷ এমনকি সেন্সর শো-র সময়ও দেয়া হয়েছিল, তবে তা তথ্য মন্ত্রণালয় স্থগিত করেছে৷''
মুন্সী জালালউদ্দিন
পরিচালক অং রাখাইন জানান, ‘‘এরইমধ্যে আমার সিনেমাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে৷ আমি এখন বাংলাদেশে ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে দেখাতে চাই৷ কিন্তু সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না৷''
তাঁর কথায়, ‘‘আমি হতাশ হয়ে পড়ছি৷ কারণ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অজুহাত যুক্ত করা হচ্ছে৷ ২০১৪ সালে চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো করা হয়েছিল, ঠিক৷ কিন্তু সেই শো করতে তো সেন্সর ছাড়পত্র লাগে না৷ অথচ এখন এটাকেই আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে৷
বন্ধুরা, আপনি কি ঢাকার প্রেক্ষাগৃহে ‘মাই বাইসাইকেল' দেখতে চান? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷
আদিবাসীদের কথা
জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বে প্রায় ৩৭ কোটি আদিবাসী রয়েছে৷ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় পাঁচ শতাংশই এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথা৷
ছবি: picture-alliance/Sandra Gätke
কায়াপো
ব্রাজিলের কায়াপো গোষ্ঠীর এই সদস্যকে দেখলে মনে হতে পারে তাঁরা বোধ হয় অনেক আধুনিক৷ কিন্তু না৷ আসলে তাঁদের অবস্থান বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিতদের দলে৷
ছবি: AP
ইনুইট
ছবিতে গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট-দের একজনকে দেখা যাচ্ছে৷ মেক্সিকো ও মধ্য অ্যামেরিকার মায়া গোষ্ঠী থেকে শুরু করে আফ্রিকা কিংবা উপমহাদেশ, প্রায় সব জায়গায় আদিবাসীদের বাস৷ জানা গেছে, ৯০টি দেশে প্রায় পাঁচ হাজার আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
ব্যারব্যার
মরক্কোর ব্যারব্যার বা বর্বর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এঁরা৷ উত্তর আফ্রিকার প্রায় নয়টি দেশে এই আদিবাসীদের বাস৷ তাঁদের অনেকেই ‘তামাঝিঘট’ ভাষায় কথা বলেন যেটা আফ্রো-এশিয়ান ভাষা পরিবারের অন্তর্গত এবং প্রাচীন মিশরীয় ও ইথিওপীয় ভাষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ আরবি সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে ব্যারব্যারদের অনেক লড়তে হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
ওয়াওরানি
ইকুয়েডরের অ্যামাজন রেনফরেস্ট এলাকায় ওয়াওরানিদের বসবাস৷ সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের একটা অংশ ‘ইয়াসুনি ন্যাশনাল পার্ক’-এ নির্মিত ঘরবাড়িতে বসবাস শুরু করেছে৷ তবে আরেকটা অংশ এখনও বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী নয়৷ এর চেয়ে বানর আর পাখি শিকার করে জীবন কাটাতেই পছন্দ করছেন তাঁরা৷
ছবি: AP
ডংগ্রিয়া কোধ
ভারতের ওড়িশার এই আদিবাসীরা সম্প্রতি ব্রিটিশ এক কোম্পানির প্রস্তাবিত খননকাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন রুখে দিয়েছে৷ এই খননকাজে নিজেদের পবিত্র পাহাড় কাটা পড়ার বাস্তবতা তাঁরা মেনে নেননি৷ তবে বিশ্বের অন্য সব আদিবাসীদের পক্ষে যে এভাবে উন্নয়নের নামে এমন সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হয়েছে তা নয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বরং উল্টোটাই হয়েছে৷
ছবি: Survival International
শিক্ষার অভাব
আদিবাসী নারী ও মেয়েরা অনেকসময় গুণগত শিক্ষা পায় না৷ তবে পেরুর কুসকো অঞ্চলের আদিবাসীদের শিক্ষা দিতে ‘প্ল্যান’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা উদ্যোগ নিয়েছে৷ সংস্থাটি আদিবাসীদের শিক্ষা কার্যক্রমে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা করছে৷