1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের পুনর্বিন্যাসের সময় এসেছে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে বলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স পুর্নবিন্যাসের সময় এসেছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান৷

ছবি: DW/S. Kumar Dey

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩৫-৪০ করা এবং অবসরের বয়সও ৬৫ করা যেতে পারে৷ এটা নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি৷

ডয়চে ভেলে : করোনার সময়ে দেশে বেকার সংখ্যা কেমন?

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান : আমরা জানতাম যারা দারিদ্রসীমার নিচে, অর্থাৎ কাজবিহীন তারা বেকার৷ করোনার আগে এই সংখ্যা ছিলো ২০ শতাংশ৷ করোনার কারণে অনেক মানুষের কাজ নেই৷ শহরে যারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করতেন, তারা কর্মহীন হয়ে গেছেন৷ সিপিডি ও পিআরআইসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসেবে এটা ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল৷ এখন তো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে৷ ফলে এখন আর ৩৫ নেই, আবার ২০ ভাগেও আসেনি৷ আমার মনে হয়, এটা ২২ থেকে ২৫ শতাংশ হবে৷ এখনো কোন পরিসংখ্যান হয়নি৷ যেহেতু পরিসংখ্যান ব্যুরো আমার আওতায় আছে তাই খুব শিগগিরই আমরা একটা হিসাবের কাজে হাত দেবো৷

‘গড় আয়ু বাড়লে যেটা হয়, অবসরের পরও কাজ করার সামর্থ্য থাকে’

This browser does not support the audio element.

চাকরির বর্তমান বয়সসীমা যখন নির্ধারণ করা হয়েছিলো তখন তো গড় আয়ু কম ছিলো, এখন আয়ু বেড়েছে৷ বয়সসীমা নতুন করে নির্ধারণের কোন ভাবনা আছে কি-না?

সরকারের কোনো ভাবনা আমি বলতে পারব না৷ আমার জানা মতে মন্ত্রিসভায় এমন কোনো কাগজ উপস্থাপিত হয়নি৷ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, আমার জানা মতে সেটা সেই অবস্থাতেই আছে৷

গড় আয়ুর সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্কটা কেমন?

গড় আয়ু বাড়লে যেটা হয়, অবসরের পরও কাজ করার সামর্থ্য থাকে৷ আগে এক সময় অবসরের বয়স ছিলো ৫৬, এখন সেটা ৬০ করা হয়েছে৷ গড় আয়ু তখন ছিলো ৫৫-৫৬, এখন ৭২ বছর প্রায়৷ এই যে বাড়তি ১৫ বছর, মানুষ তো কিছু করে খেতে চায়৷ এখন কিন্তু মানুষের দৈহিক ক্ষমতাও বেড়েছে৷ এখন মানুষ ভালো খায় আগের তুলনায়৷ গড় আয়ু বাড়ায় আমাদের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গেছে৷ ফলে এটা আমাদের বেকারত্বের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এটাও এক ধরনের বেকারত্ব৷ অবসরে যাওয়ার পরও এখন মানুষ কাজ খোঁজে৷ তারা কিন্তু অভিজ্ঞ, কাজ করে খেতে চায়৷ বর্তমান চিত্রটা কিন্তু এমনই৷

সেই হিসেবে চাকরিতে ঢোকার বয়স সীমা বাড়ানো উচিত কি-না?

আমি আমার চিন্তার কথা বলতে পারি৷ কারণ সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অর্থনৈতিক বিষয়, সামাজিক বিষয় চিন্তা করতে হয়৷ উন্নত দেশে আমাদের মতো ক্যাডার, বয়স বা নিয়মকানুন নেই৷ আমাদের এখানে ব্রিটিশরা যে মানষিকতা থেকে এটা করেছিল, এখন সেটা আর খাটে না৷ আমাদের বয়স বেড়েছে, স্বাধীনতা বেড়েছে, সক্ষমতা বেড়েছে, বিদ্যাবুদ্ধি বেড়েছে, সুতারাং এটার পুনর্বিন্যান প্রয়োজন বলে আমি মনে করি৷ আমার ব্যক্তিগত মত, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩৫-৪০ করা যেতে পারে৷ আবার অবসরের বয়সও ৬৫ করে একটা পুনর্বিন্যাসের সময় এসেছে৷ অনেক চাকরিতে কিন্তু এটা আছে৷ এটা নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি৷

অনেক জায়গায় তো চাকরিতে ঢোকার বয়স নেই?

সেটাই বলছিলাম, পশ্চিমা যারা উন্নত তাদের ওখানে এটা নেই৷ আমরা এখনো ওই পর্যায়ে উন্নত হয়নি৷ কোন বাধা না থাকা সেটা হয়তো আমাদের জন্য একটু বেশি উদার হয়ে যাবে৷ তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে একটু বাড়ানো উচিৎ বলে আমি মনে করি৷ যদিও এটা সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার৷

চাকরিতে ঢোকার বয়স সীমা বাড়ালেই কি কর্মসংস্থান বাড়বে?

চাকরিতে ঢোকার বয়স বাড়ালে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাবে৷ এখন কারো বয়স ৩০ পার হলে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ছিটকে পড়েন৷ এখন বয়স বাড়ালে আরও বহু নতুন মুখ সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন৷ এতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে৷

করোনার কারণে তো নিয়োগ বন্ধ ছিল৷ এখন কি নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে কি-না?

পুরোপুরি বন্ধ ছিল না৷ কিছু কিছু নিয়োগ হয়েছে৷ নন ক্যাডার কিছু চাকরি হয়েছে৷ আমার মন্ত্রণালয়েও আগে যে নিয়োগগুলো পেন্ডিং ছিলো সেগুলোও প্রক্রিয়া করেছি৷ সামনে ধীরে ধীরে বাড়বে৷

অবসরের সময় বাড়ালে নতুনদের চাকরি পেতে তো সমস্যা হবে৷ এক্ষেত্রে সমন্বয় হওয়া উচিৎ কি-না?

অবসরের বয়স বাড়ালে নিচের দিকে বয়স না বাড়ালে একটা অসম ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যাবে৷ আর যদি উপরের দিকে বাড়িয়ে নিচের দিকেও বাড়াই তাহলে একটা ব্যালেন্স হবে৷ তবে আবারও বলি, এটা বিশেষজ্ঞদর অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে৷ আমি বিশেষজ্ঞ নই, তবে এটুকু বুঝতে পারি নতুন একটা ক্ষেত্র তৈরী হবে৷ এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, চাপও বাড়বে সেটা মোকাবেলা করতে হবে আমাদের৷

কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপায় কী?

আমার হাতে কোন ম্যাজিক নেই৷ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷ বিনিয়োগ বলতে বড় বড় কোম্পানী বিনিয়োগ করবে তা নয়৷ গ্রামে একজন জামির মালিক, তিনি যদি পাঁচ বিঘা জমি বেশি চাষ করেন, বর্গা নিয়ে করলেও সে কিছু শ্রমিককে কাজ দিতে পারে৷ এইভাবে কর্মসংস্থান হয়৷ গ্রামে একটা ছেলে বেকার সে উদ্যোক্তা হয়ে মাছ বা সবজি চাষে নেমে যেতে পারে৷ এই সম্ভাবনা দেশে বেড়েছে এখন৷ আবার একটা মেয়ে কাঁথা সেলাই, চাদর সেলাইসহ এই ধরনের কাজ সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের সমাজে৷ এগুলোও কাজ৷ আমরা মনে করি, সরকারি চাকরি, যার চেয়ার থাকবে, টাওয়েল থাকবে৷ নয়টা-পাঁচটা অফিস করে বাড়ি চলে যাব৷ এখন আর এই ধরনের মানসিকতার চাকরি সম্ভব হবে না৷ এখন চাকরি হবে কাজ ভিত্তিক৷ আমাকে নেবে, পয়সা দেবে, কাজ শেষে বাড়ি চলে যাব৷ চাকরি একটা বাজারের মতো৷

সরকারী চাকরিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য কেমন?

বৈষম্য তো ঐতিহাসিকভাবে ছিলো৷ নারী বলে নয়, তারা এমনিতেই সংখ্যায় কম আসতেন৷ তাদের ঘর থেকে বের হওয়ার একটা সাংস্কৃতিক বাধা ছিলো৷ কোন ধরনের কাজ, বাড়ি থেকে কতদূর গিয়ে কাজ করবে সেই ধরনের চিন্তা ছিলো৷ ছেলেদের সঙ্গে একই ঘরে বসে কাজ করবে এটার মানষিক বাধা বিপত্তি ছিলো৷ শিক্ষক, চিকিৎসা, নার্সিং ছাড়া অন্য পেশায় তারা আসতেন না৷ এখন নারীরা পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব ধরনের কাজেই আসছেন৷ তবে ঐতিহাসিক যে ঘাটতি ছিলো সেটা রাতারাতি পার হওয়ার নয়৷ শিক্ষা-চাকরিতে তারা এগিয়ে আসছে, কিন্তু বিশাল ফারাক রয়ে গেছে৷ দুশো- আড়াইশ' বছরের ফারাক ক্লিয়ার করতে আরো ২০-২৫ বছর লাগবে৷ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় আমরা দ্রুত গতিতে নারীদের কাজে আনছি৷ বর্তমান সরকারের যে পলিসি রয়েছে সেটা আরো কিছুদিন চললে এই বৈষম্য আমরা কমিয়ে আনতে পারব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ